×

মুক্তচিন্তা

স্বাধীনতা ও মুজিব বাহিনী

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ এপ্রিল ২০১৯, ০৮:৪২ পিএম

মুজিব বাহিনী তেমন একটি বাহিনী। স্বাধীনতার এত বছর পরও এই বাহিনীর কোনো স্বীকৃতি নেই। এই বাহিনীর কেউ কেউ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পেলেও বেশির ভাগই কোনো ধরনের স্বীকৃতিও পাননি। অনেকেই সনদপত্রের জন্য আবেদনও করেননি। মুজিব বাহিনী যে স্বপ্ন নিয়ে যুদ্ধ করেছিল তা কেবল মুজিবের আদর্শেই রয়েছে। এমনকি এটিও সম্ভবত বিশ্লেষণ করা দরকার যে মুজিব তার শাসনকালে যে দ্বিতীয় বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন তারও আবেদন ফুরিয়ে যায়নি।

পর্ব-চার.

বঙ্গবন্ধুর সৈনিক যুবনেতাদের সম্পর্কে উবানের ধারণা ছিল অত্যন্ত উঁচু। বিএলএফের প্রধান দুই নেতা সম্পর্কে তার মন্তব্য এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে। শেখ ফজলুল হক মনি সম্পর্কে তিনি বলছেন : ‘হালকা-পাতলা গড়নের মানুষটি যেন এক জ¦লন্ত মশাল। মুক্তিযোদ্ধাদের স্বাভাবিক নেতা বলে মনে হতো তাকে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রতি অত্যন্ত নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন এবং যে কোনো আত্মত্যাগের জন্য প্রস্তুত ছিলেন তিনি। তোফায়েল আহমেদ ও আবদুর রাজ্জাক তাকে শ্রদ্ধা করতেন। শাজাহান সিরাজও তা করতেন, কিন্তু মাত্র অল্প পরিমাণে। প্রায়ই আলোচনা গরম হয়ে উঠত। সিরাজ অপেক্ষা করতে চাইতেন না। কিন্তু সব সময় তারা একটা টিম হয়ে কাজ করতেন এবং যৌথ নেতৃত্বের ভালো উদাহরণ তুলে ধরতেন। তিনি র‌্যাডিকেল ধ্যান-ধারণা পোষণ করতেন। আপসহীন মনোভাবের ছিলেন। যুদ্ধ করতেন বাঘের মতো। কাজ করতেন নিবেদিতপ্রাণ ক্রীতদাসের মতো। একসঙ্গে অনেক দিন তিনি না খেয়ে না ঘুমিয়ে শুধু চায়ের ওপর থাকতে পারতেন। বক্তৃতা দিতে তিনি পছন্দ করতেন না। কথা এমন বলতেন যে, বোঝা যেত তিনি কাজের লোক, কথার নয়। তৃণমূল কর্মীর মতো তিনি কথা বলতেন। তিনি প্রচার অপছন্দ করতেন। মুখ বুজে কাজ করে যেতে চাইতেন। চিরকুমার। বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলার ধরন ছিল আক্রমণাত্মক। তিনি এমন মানুষ যাকে ভালোবাসতে হয়। তিনি আত্মোৎসর্গের প্রতীক। আমার শুধু এই ভয়ই ছিল যে দারিদ্র্যমুক্তির পথের ধীরগতিতে তিনি সন্তুষ্ট হতে পারবেন না এবং হয়তো রূঢ় ও অগ্রহণযোগ্য ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে অপ্রিয় হয়ে যাবেন।

মহিউদ্দিন আহমদ তার বইতে লিখেছেন, ‘বিএলএফের (তখনো মুজিব বাহিনী নামকরণ হয়নি) প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা হয়েছিল উবানের সরাসরি তত্ত্বাবধানে স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্সের (এসএফএল) একদল প্রশিক্ষকের হাতে। এর দুটি প্রশিক্ষণকেন্দ্র ছিল, একটা দেরাদুনের চাকরাতা, অন্যটি আসামের হাফলং। প্রশিক্ষণার্থী বাছাই করার জন্য চারটি ট্রানজিট ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। এগুলোর অবস্থান ছিল দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জন্য ব্যারাকপুর। আঞ্চলিক অধিনায়ক ছিলেন তোফায়েল আহমেদ। তার সহকারী ছিলেন নূরে আলম জিকু। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ট্রানজিট ক্যাম্প ছিল জলপাইগুড়ির কাছে পাংগা নামক স্থানে। এই অঞ্চলের অধিনায়ক ছিলেন সিরাজুল আলম খান। তার সহকারী ছিলেন মনিরুল ইসলাম (বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের কাছে তিনি মার্শাল মনি নামে পরিচিত ছিলেন)। মধ্যাঞ্চলের ক্যাম্প ছিল মেঘালয়ের তুরা শহরে। এ অঞ্চলের অধিনায়ক ছিলেন আবদুর রাজ্জাক। তার সহকারী ছিলেন সৈয়দ আহমদ। পূর্বাঞ্চলের (ঢাকাসহ) ক্যাম্প ছিল আগরতলায়। এই অঞ্চলের অধিনায়ক ছিলেন শেখ ফজলুল হক মনি। সহকারী ছিলেন আ স ম আবদুর রব। কাজী আরেফ ছিলেন বিএলএফের গোয়েন্দাপ্রধান। বিএলএফের পক্ষ থেকে প্রবাসী সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার কাজটি করতেন শাজাহান সিরাজ। চার যুবনেতা নিজেদের নতুন নামকরণ করলেন। তারা নতুন নামেই অনেক জায়গায় নিজেদের পরিচয় দিতেন। নামগুলো সংক্ষেপে ছিল মনো (মনি), সরোজ (সিরাজ), রাজু (রাজ্জাক) ও তপন (তোফায়েল)। বিএলএফের চার আঞ্চলিক অধিনায়ককে লে. জেনারেল মর্যাদা ও প্রটোকল দেয়া হয়েছিল।

প্রশিক্ষণার্থী বাছাই করা হতো মূলত ছাত্রলীগের সদস্যদের মধ্য থেকে। এ ছাড়া শ্রমিক লীগের অনেক সদস্যকেও প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। প্রশিক্ষণ দেয়ার কাজটি শুরু হয় মে মাসের শেষ সপ্তাহে এবং তা একটানা চলে অক্টোবর পর্যন্ত। প্রশিক্ষণ ছিল ছয় সপ্তাহের। প্রশিক্ষণে হালকা ও মাঝারি অস্ত্র চালনা, বিস্ফোরক তৈরি ও পরিকল্পনা- এই তিনটি বিষয়েই গুরুত্ব দেয়া হয়। মোট কতজন প্রশিক্ষণ পেয়েছিলেন, তার সঠিক হিসাব জানা যায়নি। উবানের হিসাব মতে, সংখ্যাটি ১০ হাজার। প্রকৃত সংখ্যাটি ছিল সাত হাজার। নির্দেশ ছিল, প্রশিক্ষণ শেষে দেশের ভেতরে গিয়ে প্রত্যেক সদস্য আরো ১০ জনকে প্রশিক্ষণ দেবেন এবং এভাবেই ৭০ হাজার সদস্যের একটি যোদ্ধা বাহিনী গড়ে উঠবে। দেশের ভেতরে গিয়ে ছাত্রলীগের কর্মীদের খুঁজে বের করা, চারটি বেইস ক্যাম্প চালানো, প্রশিক্ষণার্থীদের বেইস ক্যাম্পে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা ইত্যাদির খরচ মেটানোর জন্য ৭৬ লাখ টাকার একটা বাজেট তৈরি করে উবানের হাতে দেয়া হয়। বরাদ্দ হয়েছিল ৭০ লাখের কিছু বেশি। কয়েক কিস্তিতে টাকাটা দেয়া হয়।

অস্ত্র চালনার পাশাপাশি রাজনৈতিক মতাদর্শের ওপর প্রশিক্ষণ দেয়ার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়েছিল। ছাত্রলীগের চারজন নেতাকে প্রশিক্ষণার্থীদের নিয়মিত রাজনৈতিক পাঠ দেয়ার জন্য বাছাই করা হয়। তারা হলেন হাসানুল হক ইনু, শরীফ নুরুল আম্বিয়া, আ ফ ম মাহবুবুল হক ও মাসুদ আহমেদ রুমি। তারা সবাই ছিলেন সিরাজপন্থি। আওয়ামী লীগের নেতারা প্রথাগত সরকার-পদ্ধতির বাইরে অন্য কিছু ভাবার অবকাশ পাননি। তাদের অনেকেই মনে করতেন, দলের মধ্যকার ‘চরমপন্থি যুবকদের হঠকারী কার্যকলাপের’ ফলেই তাদের ভারতের মাটিতে এত কষ্ট করতে হচ্ছে। এ জন্য তারা বিএলএফের ব্যাপারে খুবই ক্ষুব্ধ ছিলেন। সেক্টর কমান্ডাররা, যারা অস্থায়ী সরকারের নিয়ন্ত্রণে ছিলেন, বিএলএফের ব্যাপারে তাদেরও অনেক ক্ষোভ ছিল। তারা যুবকদের জন্য যার যার সেক্টরে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছিলেন। কিন্তু তাদের হাতে সম্পদ ছিল অপ্রতুল। অন্যান্য অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা ছিল না বললেই চলে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তারা পাঁচ-ছয়দিনের একটা মামুলি প্রশিক্ষণের পর তরুণদের নামমাত্র অস্ত্র দিয়ে দেশের ভেতরে পাঠিয়ে দিতেন। তারা চেয়েছিলেন বিএলএফ আলাদা বাহিনী হিসেবে না থেকে তাদের কমান্ডে থাকুক। তারা এটা বুঝতে অক্ষম ছিলেন যে বিএলএফ প্রথাগত সেনাবাহিনী নয়, এটা একটা রাজনৈতিক সংগঠন। তাজউদ্দীন আহমদ বিএলএফের কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত ছিলেন। কিন্তু তিনি না পারতেন এদের তার নিয়ন্ত্রণে আনতে, না পারতেন এদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নিতে। তিনি ভালো করেই জানতেন, বিএলএফ ছিল শেখ মুজিবের নির্দেশিত একটি ‘অপশন’।

মুজিব বাহিনী প্রসঙ্গে আলাপচারিতায় আবদুর রাজ্জাক বলেছিলেন : ১৮ ফেব্রুয়ারি ৭১ বঙ্গবন্ধু আমাদের চারজন- মনি ভাই, সিরাজ ভাই, আমি আর তোফায়েলকে ডাকলেন। ব্রিফিং দিলেন : ওরা আমাদের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দেবে না, তোমার প্রস্তুতি সংঘবদ্ধ করো, সশস্ত্র বিপ্লব করে দেশ স্বাধীন করতে হবে। তাজউদ্দীন ভাই একা উপস্থিত ছিলেন। আরো বললেন, ‘আমি না থাকলে এই তাজউদ্দীন হবে তোমাদের নেতা।’ মহিউদ্দিন আহমদ তার বইতে মুজিব বাহিনী সম্পর্কে বেশ কিছু মন্তব্য করেছেন। বিশেষ করে মুজিব বাহিনী গঠন ও তার কার্যক্রম নিয়ে তার পর্যবেক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে বিবেচিত হতে পারে। তার মতে, ভুল বোঝাবুঝির জন্য মুজিব বাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর মাঝে কয়েক স্থানে সংঘাত হয়। বিশেষ করে তিনি ২ নম্বর সেক্টরের কথা উল্লেখ করেছেন। মহিউদ্দিন মনে করেন শেখ মনি, তাজউদ্দীন ও খালেদ মোশাররফ উভয়ের সঙ্গে একমত ছিলেন না। তার অভিযোগ ছিল, খালেদ তার সেক্টরে বামপন্থি ছাত্রদের প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র দিচ্ছেন। দেশের অন্য তিনটি অঞ্চলে এ ধরনের কোনো সংঘাত ছিল না। সেসব অঞ্চলে তারা সবাই পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে কাজ করতেন। দেখা গেছে, অনেক জেলায় মুক্তিযোদ্ধাদের প্রধান নেতা ছিলেন বিএলএফের কমান্ডার। খুলনা, যশোর, বগুড়া, রংপুর- এসব জেলায় বিএলএফের জেলা ও মহকুমা কমান্ডাররা সব মুক্তিযোদ্ধারাই নেতৃত্ব দিয়েছেন। সেসব জেলায় মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে কোনো বিভাজন ছিল না।

২নং সেক্টরে ক্যাপ্টেন আইনউদ্দিনের বাহিনীর সঙ্গে বিএলএফের একটি দলের সংঘর্ষ হয়েছিল। বিষয়টি সুরাহা করার জন্য আওয়ামী লীগের নেতা মিজানুর রহমান চৌধুরী আইনউদ্দিনের কাছে গেলে তিনি বাংলাদেশ সরকারের একটা চিঠি দেখান। চিঠিতে লেখা ছিল, ‘আমাদের সরকারি বাহিনীর অনুমতি ছাড়া কেউই সশস্ত্র অবস্থায় দেশের ভেতরে যেতে পারবে না। এ ব্যাপারে উবানের সঙ্গে ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলের অধিনায়ক লে. জেনারেল অরোরার কথা হয়। সিদ্ধান্ত হয়, সীমান্তের ভেতরে ২০ মাইল পর্যন্ত এলাকায় মুক্তিবাহিনী কার্যকর থাকবে এবং বিএলএফ দেশের অভ্যন্তরে দায়িত্ব পালন করবে। দেশের ভেতরে যাতায়াতের জন্য সীমান্তে বিএলএফের সদস্যরা নির্দিষ্ট কয়েকটা করিডর ব্যবহার করবেন। বামপন্থিদের ব্যাপারে প্রবাসী সরকারের উৎকণ্ঠা ছিল। বামপন্থিদের অভিযোগ ছিল, বিভিন্ন সেক্টরে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দেয়ার ক্ষেত্রে বামপন্থি, বিশেষ করে ছাত্র ইউনিয়নের কর্মীদের সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। বিএলএফের নেতারাও সতর্ক ছিলেন, যাতে বামপন্থিরা ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র না পায়।’

মহিউদ্দিন আহমেদ মুজিব বাহিনীর ভেতরের অনেক তথ্য দিয়েছেন এবং এর ফলে এই বাহিনীটি সম্পর্কে অনেক ভালো ধারণা পাওয়া যেতে পারে। আলোচনায় ভাসানীপন্থি বা চীনের প্রতি অনুরক্তদের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ার কিঞ্চিৎ আভাস থাকলেও মুক্তিযুদ্ধে ছাত্র ইউনিয়ন ঘরানার অংশগ্রহণ করার বিষয়ে তেমন কোনো আলোকপাত নেই। গত ২৩ মার্চ ২০১৫ দৈনিক প্রথম আলোতে প্রকাশিত একটি খবর থেকে জানা যায় যে, ছাত্র ইউনিয়নের পক্ষ থেকেও একটি বিশেষ গেরিলা বাহিনী গড়ে তোলা হয়েছিল। খবরে বলা হয়, ‘মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে মুক্তিবাহিনী গঠনের শুরু থেকে ন্যাপ, ছাত্র ইউনিয়ন, কমিউনিস্ট পার্টির ছাত্র-যুবকরা মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন এবং প্রশিক্ষণ নিয়ে সশস্ত্র সংগ্রামে অংশ নেন। একাত্তরের মে মাসে কমিউনিস্ট পার্টি, ন্যাপ ও ছাত্র ইউনিয়ন ‘সশস্ত্র সংগ্রামে নিজ উদ্যোগে পরিপূর্ণ অংশগ্রহণের’ সিদ্ধান্ত নেয়। এ সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়নের যৌথ বিশেষ গেরিলা বাহিনী গঠন করা হয়। ভারত ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন সরকারের সাহায্যের ফলে গেরিলা বাহিনী প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র পায়। বিশেষ গেরিলা বাহিনীর প্রশিক্ষণ নেয়ার প্রধান স্থান ছিল ভারতের আসাম রাজ্যের তেজপুরে। এ ছাড়া ভারতের ত্রিপুরা, মেঘালয় ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭৩ সালে অনুষ্ঠিত সিপিবির দ্বিতীয় কংগ্রেসের রাজনৈতিক প্রতিবেদন অনুসারে, কমিউনিস্ট পাটিং, ন্যাপ ও ছাত্র ইউনিয়নের যৌথ উদ্যোগে প্রায় ১৭ হাজার তরুণ মুক্তিযোদ্ধা গেরিলা বাহিনী ও মুক্তিবাহিনীতে যোগ দিয়ে সশস্ত্র সংগ্রামে অংশ নেন। এর মধ্যে মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেন প্রায় ১২ হাজার, বিশেষ গেরিলা বাহিনীতে ছিলেন প্রায় পাঁচ হাজার।

খবরে এই বাহিনীর সদস্যদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। খবরটিতে বলা হয়, মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে ঘোষণাপত্র পড়ে শোনান ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য। এতে বলা হয়, ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়নের বিশেষ গেরিলা বাহিনীর সদস্যদের রাষ্ট্রীয় মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার প্রক্রিয়া বর্তমানে এক অসম্মানজনক ও অমর্যাদাকর অবস্থায় রয়েছে। এ কার্যক্রম দেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে শক্তির সংহতিকে দুর্বল করছে। সমাবেশে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের উপদেষ্টামণ্ডলীর একমাত্র জীবিত সদস্য অধ্যাপক মোজাফফর আহমদকে সম্মাননা জানানো হয়। তবে ৯৩ বছর বয়সী এ রাজনীতিক অসুস্থতার কারণে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না। সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, বাংলাদেশ বাম রাজনীতির বিকাশ ও মুক্তিযুদ্ধসহ এ অঞ্চলের রাজনীতিতে অবদানের কথা স্মরণ করে মোজাফফর আহমদকে এ সম্মাননা দেয়া হচ্ছে।

সমাবেশে প্রবীণ রাজনীতিক অজয় রায়, সিপিবির উপদেষ্টা মনজুরুল আহসান খান, বিশেষ গেরিলা বাহিনীর কমান্ডার শাহ আলমসহ শতাধিক গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা উপস্থিত ছিলেন। পরে একটি মিছিল দোয়েল চত্বর-প্রেসক্লাব ঘুরে পল্টন মোড়ে শেষ হয়। বস্তুতপক্ষে ১৯৭১ সালে একটি সার্বজনীন মুক্তিযুদ্ধ হলেও আওয়ামী লীগ ও মস্কোপন্থি রাজনৈতিক দলসমূহের আলাদা সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলা হয়। নিজস্ব রাজনৈতিক ধ্যান-ধারণার প্রভাব বিস্তার ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধ করাকালীন নেতৃত্ব এ ধরনের উদ্যোগ নিয়েছিল। তবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন যুদ্ধের নয় মাসের আগেই ভিন্নভাবে নিজেদের সংগঠিত করার চেষ্টা করে আসছিল।

মুজিব বাহিনী তেমন একটি বাহিনী। স্বাধীনতার এত বছর পরও এই বাহিনীর কোনো স্বীকৃতি নেই। এই বাহিনীর কেউ কেউ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পেলেও বেশির ভাগই কোনো ধরনের স্বীকৃতিও পাননি। অনেকেই সনদপত্রের জন্য আবেদনও করেননি। মুজিব বাহিনী যে স্বপ্ন নিয়ে যুদ্ধ করেছিল তা কেবল মুজিবের আদর্শেই রয়েছে। এমনকি এটিও সম্ভবত বিশ্লেষণ করা দরকার যে মুজিব তার শাসনকালে যে দ্বিতীয় বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন তারও আবেদন ফুরিয়ে যায়নি। মুজিব বাহিনী জাতির পিতার দ্বিতীয় বিপ্লবের বিপ্লবী হতে পরে। (সমাপ্ত)

মোস্তাফা জব্বার : তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, কলাম লেখক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App