×

মুক্তচিন্তা

সাইবার অপরাধ দমনে পুলিশের দক্ষতা বাড়াতে হবে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ এপ্রিল ২০১৯, ০৮:২৭ পিএম

সাইবার অপরাধ বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুক ব্যবহার করে অপরাধ বেড়েই চলছে। দেশে প্রচলিত সাইবার সুরক্ষা ব্যবস্থা ও প্রচলিত আইন রুখতে পারছে না অপরাধীদের। তথ্যপ্রযুক্তি অপরাধ শনাক্তে দুর্বল জেনে অপরাধী চক্র দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। বিষয়টি নিঃসন্দেহে আতঙ্কের।

গতকাল ভোরের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ৬ বছরে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন থানায় মামলা হয়েছে ৩ হাজার ৬৫৯টি। এর মধ্যে সাইবার ট্রাইব্যুনালে গেছে ১ হাজার ৫৭৫টি মামলা। নিষ্পত্তি হয়েছে ৫২২টির। আসামিদের সাজা হয়েছে মাত্র ২৫টি মামলায়। এই চিত্রটি বলে দেয় অপরাধীর কাছে সাধারণ মানুষ কতটা জিন্মি।

প্রযুক্তির এই যুগে কম্পিউটার, ইন্টারনেট, মোবাইল ফোন ছাড়া জীবনযাপন প্রায় অসম্ভব। প্রযুক্তি জনমুখী হয়ে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলেছে মানুষকে। এটা যেমন সত্য এবং যুগের বাস্তবতা, তেমনি এর অপব্যবহারও হয়ে উঠছে মানুষের যন্ত্রণার অন্যতম কারণ।

আমাদের দেশে ইন্টারনেট কেন্দ্রিক যে অপরাধগুলো ঘটছে, এর মাঝে বেশি হলো- সামাজিক যোগাযোগ সাইটের মাধ্যমে বন্ধুত্ব তৈরি করে মিথ্যা সম্পর্কের আশ্বাস বা অন্য কোনো প্রলোভন দেখিয়ে অন্যের কাছ থেকে সুবিধা আদায় করা বা প্রতারণার মাধ্যমে ফাঁদে ফেলা; কারো কোনো অন্তরঙ্গ বা আপত্তিকর অবস্থার ছবি বা অন্যকোনো একান্ত ব্যক্তিগত বা গোপনীয় তথ্য ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়া বা ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি প্রদান করে জিম্মি করা।

স্কুল-কলেজ পড়–য়া অল্পবয়সী মেয়েরাই এসব প্রতারণার শিকার হচ্ছে বেশি। শুধু যে নারী নিগ্রহের লক্ষ্যেই সাইবার অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে তা নয়, আর্থিক ক্ষেত্রেও সাইবার অপরাধীরা ভয়ঙ্কর অপরাধ করে চলেছে। মোবাইল ফোনে ভুয়া মেসেজ দিয়ে নম্বর হ্যাক করে ব্যাংক একাউন্ট থেকে অর্থ লোপাট করার মতো ঘটনা প্রায়ই ঘটছে।

এ ছাড়া আরেকটি বড় অপরাধ প্রবণতা হলো- ইন্টারনেটে রাষ্ট্রীয়, সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানো। আমরা প্রায়ই সংবাদ মাধ্যমে ইন্টারনেট-কেন্দ্রিক প্রতারণা ও অপরাধের খবর পাচ্ছি। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্টরাই বলছেন, এ সংক্রান্ত অপরাধের মাত্রা আরো বেশি, অনেক অপরাধের খবরই সংবাদ মাধ্যমে আসে না।

মানসম্মানের ভয়ে অনেকে এরকম অপরাধের শিকার হয়েও থানা পুলিশ কিংবা অন্য কোনো সংস্থার কাছে অভিযোগ করছেন না। ফলে অনেক ঘটনাই বিচারের আওতায় আসছে না আর যেগুলো আসছে, সেগুলোরও অনেক ক্ষেত্রে অপরাধীদের শনাক্ত করা যায় না। এ ক্ষেত্রে আমাদের প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

মনে রাখতে হবে, সাইবার অপরাধ যেমন বাড়ছে তেমনি তা দমনেও অপরাধ তদন্ত বাহিনীকে প্রশক্ষিত হওয়া দরকার। প্রায় প্রতিদিনই নতুন নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন হচ্ছে এবং অপরাধীরা সে প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে অপরাধ করে চলেছে। যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে যারা মাঠ পর্যায়ে অপরাধ তদন্তে কাজ করছেন তাদেরও এ ব্যাপারে দক্ষতা বাড়াতে হবে।

দেশের নিরাপত্তা এবং সুনাম রক্ষার স্বার্থে, সাইবার অপরাধী শনাক্ত এবং দমনে প্রযুক্তিপূর্ণ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গড়ে তোলার বিকল্প থাকতে পারে না। সরকার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করবে বলে আশা করি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App