×

জাতীয়

যে কারণে সাজার হার নগণ্য

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ এপ্রিল ২০১৯, ০৩:৫০ পিএম

যে কারণে সাজার হার নগণ্য
ইন্টারনেটের মাধ্যমে যেসব অপরাধ সংঘটিত হয় তাকেই সাইবার ক্রাইম বা প্রযুক্তিসংক্রান্ত অপরাধ বলা হয়। দেশে সাইবার অপরাধের মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে। সাইবার অপরাধের শিকার ৭০ ভাগই নারী। গত ৬ বছরে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন থানায় মামলা হয়েছে ৩ হাজার ৬৫৯টি। এর মধ্যে সাইবার ট্রাইব্যুনালে গেছে ১ হাজার ৫৭৫টি মামলা। নিষ্পত্তি হয়েছে ৫২২টির। আসামিদের সাজা হয়েছে মাত্র ২৫টি মামলায়। সাইবার অপরাধ দিন দিন বাড়লেও এর প্রতিরোধ নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন আছে সংশ্লিষ্টদের। সাধারণত ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, গুগল, স্কাইপে ভুয়া আইডি খুলে বিভিন্ন অনলাইন পোর্টাল ও বøগে মিথ্যা ও মানহানিকর তথ্য প্রচার, অশ্লীল ছবি ও ভিডিও আপলোড এবং মেসেজ পাঠিয়ে প্রতারণার ঘটনাগুলোই মোটা দাগে সাইবার অপরাধ হিসেবে পরিচিত। সাইবার অপরাধ প্রতিরোধে আছে কঠোর আইন। কিন্তু তদন্তে ত্রæটি, মামলার একপর্যায়ে বাদীর অনীহা, আদালতে সাক্ষীর হাজির না হওয়া, বাদী-বিবাদীর মধ্যে আপস ইত্যাদি কারণে মামলা খারিজ হয়ে যাচ্ছে। মামলার বিচারে সাজার হারই তার প্রমাণ দিচ্ছে। জানা যায়, দেশে ১৩ ধরনের সাইবার অপরাধের ঘটনা ঘটছে। এর মধ্যে আছে, পারিবারিক বিদ্বেষ সৃষ্টি, স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া, বন্ধু-বান্ধবের মধ্যে বিরোধ তৈরি, উগ্র ও বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য প্রচার, ইউটিউবে অন্তরঙ্গ ভিডিও ও ছবি আপলোড, ফেক অ্যাকাউন্ট তৈরি, পাসওয়ার্ড বা গোপন নম্বর অনুমান করে আইডি হ্যাক, মোবাইল ব্যাংকিং, ই-কমার্স, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি, অনলাইন এমএলএম (মাল্টি লেভেল মার্কেটিং), অনলাইনে প্রশ্নপত্র ফাঁস ও অনলাইন গ্যাম্বলিং (জুয়া)। এসব অপরাধ নিয়ে কাজ করছে পুলিশ সদর দপ্তরের ল’ফুল ইন্টারসেপশন সেল (এলআইসি), কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল (সিসিটিসি) ইউনিটের সাইবার সিকিউরিটি এন্ড ক্রাইম বিভাগ, অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সাইবার পুলিশ সেন্টার, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) সাইবার অপরাধ তদন্তবিষয়ক সেল, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি), তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের সাইবার হেল্প ডেস্ক ও ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি)। পুলিশের ক্রাইম ডাটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের (সিডিএমএস) পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৩ সালে ৩৫টি ও ২০১৪ সালে ৬৫টি মামলা হয় সারা দেশে। ২০১৪ থেকে ২০১৫ সালে মামলা হয় ৫৯৭টি, যার মধ্যে ১৩৭টি ঢাকায়। ২০১৬ সালে সারা দেশে মামলা হয় ৮৭৯টি, যার মধ্যে ঢাকায় ২০৬টি। ২০১৭ সালে মামলা হয় ১০২৮টি। এর মধ্যে ঢাকায় ২৩৬টি। ২০১৮ সালে মামলা হয় ১০৫৫টি, যার মধ্যে ৩৩৩টি ঢাকায়। তথ্য বলছে, ২০১৫-১৮ সালে শুধু ঢাকায় মামলা হয়েছে ৯১২টি। সাইবার অপরাধের শিকার ব্যক্তিদের বয়সভিত্তিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, অপরাধের শিকার হওয়া শতকরা ৩৪ ভাগের বয়স ১৯ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে। ৩১ ভাগের বয়স ২৬ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। ২৭ ভাগের বয়স ৩৬ থেকে ৫৫ বছরের মধ্যে। ছয় ভাগের বয়স শূন্য থেকে ১৮ বছরের মধ্যে। আর দুই ভাগের বয়স ৫৫ বছরের বেশি। সাইবার অপরাধে ক্ষতিগ্রস্তদের ৫৩ ভাগ নারী, পুরুষ ৪৭ ভাগ। ২৩ থেকে ২৫ বছর বয়সী নারীরাই সবচেয়ে বেশি সাইবার অপরাধের শিকার হন। সাইবার অপরাধের বিচার হয় সাইবার ট্রাইব্যুনালে। এই ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠিত হয় ২০১৩ সালের ২৮ জুলাই। ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) এডভোকেট নজরুল ইসলাম শামীম জানান, ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, গুগল, স্কাইপ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সরকারের কোনো চুক্তি নেই। ফলে মামলার আলামতের জন্য তাদের কাছে সহযোগিতা চেয়ে পাওয়া যায় না। তিনি বলেন, মামলা করার সময় বাদী সাইবার অপরাধ সংশ্লিষ্ট আলামতের স্ক্রিনশট, লিংক, অডিও বা ভিডিও ফাইল অথবা সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র জমা দেন। কিন্তু মামলা হওয়ার পর দেখা যায়, আসামি সংশ্লিষ্ট আলামত যেমন স্ক্রিনশট, লিংক, অডিও বা ভিডিও ফাইল মুছে ফেলে দাবি করেন তিনি কোনো অন্যায় করেননি। এ ক্ষেত্রে ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, গুগল, স্কাইপের ভ‚মিকা গুরুত্বপূর্ণ। তারা আসামির মুছে ফেলা নথি সরবরাহ করলে তা দালিলিক প্রমাণ হিসেবে আদালতের কাছে গুরুত্ব পাবে এবং আসামির সাজা নিশ্চিত হবে। পুলিশ সদর দপ্তরের একজন সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া) বলেন, অপরাধের ধরন ও ধাঁচের যে ভিন্নতা তার সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই পুলিশের সক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। সাইবার অপরাধ মোকাবিলার জন্য পুলিশের প্রতিটি ইউনিটে একটি করে সাইবার মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে। এই ধরনের অপরাধ মোকাবিলায় পুলিশের সক্ষমতা দিন দিন বাড়ছে। সংযোজন করা হচ্ছে সর্বশেষ প্রযুক্তি। কর্মকর্তাদের সক্ষমতা বাড়াতে বিদেশে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও হচ্ছে। এ বিষয়ে এডভোকেট তুহিন হাওলাদার বলেন, সাইবার অপরাধ প্রমাণে আলামতের পাশাপাশি সাক্ষীও গুরুত্বপূর্ণ। এই অপরাধের মামলা দেশের বিভিন্ন থানায় হয়। মামলার অভিযোগপত্র দাখিলের পর ঢাকায় বিচার শুরু হলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সাক্ষী উপস্থিত থাকেন না। সাইবার আইন নিয়ে কোনো ধারণা না থাকার পাশাপাশি ঢাকায় যাতায়াতের খরচের বিষয়টিও সাক্ষীর কাছে গুরুত্ব পায়। আর সাক্ষীর অনুপস্থিতির সুবিধা নেন আসামি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App