×

মুক্তচিন্তা

ড. কামালকে ধন্যবাদ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ এপ্রিল ২০১৯, ০৮:৩৭ পিএম

ড. কামালকে ধন্যবাদ
ড. কামালকে ধন্যবাদ

সরকারকে বিনা চ্যালেঞ্জে ছেড়ে দিয়ে এ কোন রাজনীতি করতে চাইছে এই দলটি? বাস্তবে বিএনপি এখন একটি মৃত দলে পরিণত হয়েছে। ড. কামাল হোসেনের জোটের দুজন নির্বাচিত নেতা ইতোমধ্যেই সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিয়েছেন। তাদেরও সাধুবাদ জানাই। আশা করছি তারা সংসদে নিজের অবস্থানকে পরিষ্কার করবেন এবং জনকল্যাণমুখী কাজে নিয়োজিত হয়ে প্রকৃত বিরোধী দলের ভূমিকায় কাজ করবেন।

ড. কামালকে নিয়ে প্রচুর লেখালেখি করেছি। সামনে হয়তো আরো অনেকবার তিনি বিষয়বস্তু হয়ে উঠবেন। আর এর পুরোটাই হচ্ছে তার রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে। এবারের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় উঠে আসা ড. কামাল হোসেনের বিএনপিপ্রীতি এবং জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের রাজনীতি গড়ে তোলা সবকিছুই ছিল বিতর্কিত। দুর্নীতির দায়ে আদালতের রায়ে শাস্তি পাওয়া কারাবাসী বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পক্ষে একজন আইনজীবী হয়েও তিনি দাঁড়িয়েছেন এবং খালেদার মুক্তির জন্য লড়াই করে যাবেন বলে নিজের মত ব্যক্ত করেছেন। এর পুরোটাই যে তার রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বকে প্রকাশ করে সেটি আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

তবে একটি কারণে তিনি ধন্যবাদ পেতে পারেন বলে আমার মনে হয়েছে। গত ৩১ মার্চ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় যখন বিএনপির নেতারা স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে জিয়ার নাম উচ্চারণ করে যাচ্ছিলেন তখন ব্যতিক্রম থেকেছেন খালেদার মুক্তির সভায় উপস্থিত ও সে দিনের আলোচনা সভার সভাপতি ড. কামাল হোসেন। বিএনপির নেতারা চেয়েছিলেন তার মুখ দিয়ে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে জিয়ার নামটিকে প্রকাশ করতে। আর এ কথা বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় যে বঙ্গবন্ধুর এককালের ঘনিষ্ঠ ও স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান প্রণেতাদের অন্যতম একজনের মুখ দিয়ে যদি একবার এই মিথ্যাকে বের করা যেত তাহলে সেটিকেই রেফারেন্স হিসেবে গোটা বিশ্বের কাছে বিক্রি করত মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতিকারী রাজনৈতিক দল বিএনপি। আর এর জন্য চেষ্টার কোনো ত্রুটি রাখেনি তারা। নিজেরা যখন পারছিলেন না তখন গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টুকে দিয়ে ড. কামালকে রাজি করানোর চাপ দিতে থাকে।

মন্টু যখন ড. কামালের কানের কাছে গিয়ে কিছু বলার চেষ্টা করছিল তখনই মন্টুকে ধমক দিয়ে উঠেন ড. কামাল। তিনি কারো বানানো কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান মঞ্চের মাঝেই। সংবাদে জানা যায় যে, উপস্থিত বিএনপির কর্মীদের মাঝেও কেউ কেউ দাবি করতে থাকে জিয়াকে ঘোষক বলে বক্তৃতা দেয়ার জন্য। কিন্তু নতি স্বীকার করেননি ড. কামাল। উপস্থিত সবার সামনেই অস্বীকার করে তিনি প্রমাণ করেছেন যে সংবিধানের সঙ্গে তিনি বেইমানি করতে পারেন না। নিজের হাতে যে ইতিহাস তিনি লিপিবদ্ধ করেছেন অন্তত সে জায়গাটুকুতে তিনি অসততার পরিচয় দেননি। আর যদি করতেন তাহলে তিনি জানেন নৈতিকভাবে তিনি আর জাতির সামনে দাঁড়ানোর মতো অবস্থায় থাকতেন না।

একজন প্রমাণিত আসামির পক্ষে দাঁড়িয়ে আইনজীবী হিসেবে তিনি নিজের পেশার প্রতি অসম্মান দেখিয়েছেন ঠিকই কিন্তু ইতিহাসকে বিকৃতির হাত থেকে বাঁচিয়ে দিয়ে হয়তো তিনি নিজের কফিনকে বাঁচাতে পেরেছেন। আর এই যে তিনি তারেক জিয়ার নির্দেশের কাছে নতি স্বীকার করেননি এর জন্য তাকে ধন্যবাদ না দিলে ইতিহাসও ক্ষমা করবে না। ড. কামাল প্রমাণ করেছেন সবকিছু নিয়ে রাজনীতি করতে নেই। যে সত্য ইতিহাসের অংশ তাকে মিথ্যা করতে চাওয়া মানে আপনি দেশের অস্তিত্বকে অস্বীকার করছেন।

লন্ডনে বিএনপির স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরে বেড়াচ্ছে যেখানে দেখা যাচ্ছে একজন বক্তা যখন বলছেন ৩০ লাখ শহীদ ও ২ লাখ মা-বোনের নির্যাতনের কথা তখন মঞ্চে বসে থাকা আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী ও আইএসের চর তারেক জিয়া সেই নেতাকে ধমক দিয়ে বক্তব্য পাল্টাতে বাধ্য করছে। সেই নেতা বক্তব্যকে পাল্টাতে না চাইলেও তারেকের নির্দেশে অবশেষে অনিচ্ছাকৃতভাবে শহীদের সংখ্যাটিও পাল্টে দিয়েছিল। এই তো বিএনপির রাজনীতি। একটা বিষয় একদম বুঝতেই পারি না যে শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিএনপির কেন এত অস্বস্তি? তারা তো এই হত্যার সঙ্গে যুক্ত ছিল না। ছিল পাকিস্তানিরা আর এ দেশের কিছু অকৃতজ্ঞ মানুষ যারা রাজাকার, আলবদর নামে পরিচিত। বিএনপি একদিকে স্বাধীনতার ঘোষক নিয়ে বিতর্ক করে আবার আরেকদিকে শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক তৈরি করে। সমস্যাটা কোথায়? ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে জামায়াতকে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করার সুযোগ দিয়ে তারা নিজেদের সর্বনাশ ডেকে এনেছিল যার ফলাফল ছিল জনগণ কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত। সে সময় নজরুল ইসলাম দাবি করেছিলেন বিএনপি একটি মুক্তিযোদ্ধাদের দল। অথচ এই দলটিই প্রতিনিয়ত শহীদের সংখ্যাসহ মুক্তিযুদ্ধের মীমাংসিত বিষয়গুলো নিয়ে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে।

তারেক জিয়ার কাছে জানতে চাই শহীদের সংখ্যা কমিয়ে তার লাভটা কী? নাকি তার বাবাই যুক্ত ছিল সেসব হত্যার সঙ্গে আর তাই শহীদের সংখ্যা দেখলেই নিজের মধ্যে যন্ত্রণা তৈরি হয়? তারা যদি স্বাধীনতা যুদ্ধের চেতনাকেই ধারণ করে থাকে তাহলে অন্তত মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বা শহীদের সংখ্যার মতো সেনসিটিভ বিষয়গুলো নিয়ে গোটা বিশ্বের সামনে এ ধরনের অযাচিত বিতর্ককে জিইয়ে রাখত না। তারেক জিয়া নিজে কোনোদিন বাংলাদেশকে ধারণ করেছে বলে মনে হয় না। তিনি কোনোদিনও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে নিজের মধ্যে ধারণ করেনি। যেমনটা করেনি তার পিতা ও মাতা। একদিকে জামায়াতের মতো একটি স্বাধীনতাবিরোধী দলকে আপন ভাই বানিয়ে প্রতিষ্ঠিত করা অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে কলুষিত করার অপচেষ্টা- এসবই হয়ে উঠেছে বিএনপি নামক দলটির বর্তমান রাজনীতির অবস্থা। অথচ একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে তাদের উচিত ছিল এই মুহূর্তে মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনাকে প্রতিষ্ঠিত করার লড়াই করা, জনগণের নানা ইস্যু নিয়ে সরকারের সঙ্গে বিতর্কে যাওয়া। সরকারকে বিনা চ্যালেঞ্জে ছেড়ে দিয়ে এ কোন রাজনীতি করতে চাইছে এই দলটি? বাস্তবে বিএনপি এখন একটি মৃত দলে পরিণত হয়েছে। ড. কামাল হোসেনের জোটের দুজন নির্বাচিত নেতা ইতোমধ্যেই সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিয়েছেন। তাদেরও সাধুবাদ জানাই। আশা করছি তারা সংসদে নিজের অবস্থানকে পরিষ্কার করবেন এবং জনকল্যাণমুখী কাজে নিয়োজিত হয়ে প্রকৃত বিরোধী দলের ভূমিকায় কাজ করবেন।

লীনা পারভীন : কলাম লেখক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App