×

জাতীয়

কেন্দ্রীভূত স্বাস্থ্যসেবা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ এপ্রিল ২০১৯, ০৪:০১ পিএম

কেন্দ্রীভূত স্বাস্থ্যসেবা
সংবিধানের ১৮ ধারায় সব মানুষকে মৌলিক চিকিৎসাসেবা পৌঁছাবার ব্যবস্থা করার কথা উল্লেখ আছে। কিন্তু দেশের সব এলাকায় সমানভাবে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছেনি। এক জরিপের তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশের ৪০ শতাংশ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা সরকারি হাসপাতালনির্ভর। বাকি ৬০ শতাংশকে বাধ্য হয়ে বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিক থেকে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা নিতে হয়। চাহিদা থাকায় ব্যাপক হারে সারা দেশে প্রসারিত হয়েছে বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা। কিন্তু দেশের সব এলাকায় সমানভাবে পৌঁছেনি সরকারি স্বাস্থ্যসেবা। এখনো দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ঢাকাকেন্দ্রিক। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং সেকেন্ডারি ও টার্শিয়ারি সুবিধার দিক থেকে আটটি বিভাগের মধ্যে এগিয়ে রয়েছে ঢাকা বিভাগ। আর সুবিধাবঞ্চিত বিভাগের মধ্যে রয়েছে ময়মনসিংহ। এরপর রয়েছে সিলেট ও বরিশাল বিভাগ। হেলথ বুলেটিনের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকায় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সংখ্যা ৬টি এবং সেকেন্ডারি ও টার্শিয়ারি সুবিধা রয়েছে ৩৭টিতে। ময়মনসিংহে এ সংখ্যা যথাক্রমে এক ও ৪টি। বরিশাল ও সিলেটে এ সংখ্যা এক ও ৭টি করে। এ ছাড়া চট্টগ্রামে ২টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং সেকেন্ডারি ও টার্শিয়ারি সুবিধা রয়েছে ১৮টিতে। খুলনায় ২ ও ১৪, রাজশাহীতে ২ ও ১৩ এবং রংপুরে এ সংখ্যা যথাক্রমে ২ ও ১০টি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবার অবকাঠামো যথেষ্ট ভালো রয়েছে। কিন্তু শুধু ভবন থাকলেই তো হবে না। চিকিৎসক, যন্ত্রপাতি, ওষুধ ইত্যাদি থাকতে হবে। স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে সরকারের সদিচ্ছা থাকা সত্তে¡ও বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় বর্তমানে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে এসবের ঘাটতি দেখা যায়। এ ছাড়া দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় কার্যকর রেফারেল পদ্ধতি চালু না থাকায় কোন রোগী কোথায় যাবেন, কোন ডাক্তারকে দেখাবেন, কতটুকু অসুস্থ হলে কোন পর্যায়ের হাসপাতালে যাবেন কোন চিকিৎসক কোন রোগী দেখবেন তা বুঝতে পারেন না। এতে রোগীর সময় ও অর্থ যেমন বেশি ব্যয় হয়, তেমনি শারীরিক পরিশ্রমও বেশি হচ্ছে। এ ছাড়া সাধারণ এসব রোগগুলো চিকিৎসা করতে বিশেষজ্ঞ বা অধ্যাপক চিকিৎসকদের প্রচুর সময় নষ্ট হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশীদ-ই-মাহবুব বলেন, স্বাস্থ্যসেবার মূল জায়গা সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। একে সচল রাখতে হবে। স্বাস্থ্য খাতে আমাদের অনেক অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে অনেক অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি বসানো হয়েছে। কিন্তু আধুুনিক যন্ত্রপাতি চালানোর মতো দক্ষ জনবলের ঘাটতি রয়েছে। ঘাটতি রয়েছে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও নার্সের। স্বাস্থ্যসেবার বিকেন্দ্রীকরণের ওপর জোর দেন তিনি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের সাবেক আঞ্চলিক পরিচালক অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক জানান, রেফারেল পদ্ধতিতে একজন সাধারণ চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য রোগীকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে পাঠান। একজন বিশেষজ্ঞ অন্য বিশেষজ্ঞর কাছেও রোগী পাঠান। এমনকি, এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালেও রোগী পাঠাতে পারেন। তৃণমূল পর্যায়ে অর্থাৎ কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে রেফারেল পদ্ধতি চালু করা সম্ভব হলে জেলা পর্যায়ের হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, স্নাতকোত্তর ইনস্টিটিউটের মতো টার্শিয়ারি হাসপাতালগুলোর সাধারণ রোগীর চাপ কমবে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় ইতিবাচক পরিবর্তনও আসবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ জানান, নতুন নতুন মেডিকেল কলেজ ও বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণ, হাসপাতালগুলোকে যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তিনির্ভর করে তুলতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। তবে জনবল সংকটের কথা স্বীকার করেন তিনি। তিনি বলেন, বিভিন্ন বিষয়ের বিশেষজ্ঞের অনুপাত বা সংখ্যা সঠিকভাবে হয়নি। তাই কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমাদের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাব রয়েছে। আগামী দুয়েক বছরের মধ্যে এ সমস্যার সুরাহা হবে। আশা করি, আগামী ৫ বছরের মধ্যে স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় আনুপাতিক জনবল দেয়া যাবে। রেফারেল পদ্ধতি সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা প্রতিটি মানুষের হেলথ রেকর্ড ইলেকট্রনিকভাবে সংরক্ষণ করব। দেশে রেফারেল সিস্টেম চালু হলে মানুষ যেখানে বাস করেন সেখানে যদি তার চিকিৎসার উপযুক্ত ব্যবস্থা না থাকে তাহলে তাকে অন্য হাসপাতালে রেফার করা হবে। অর্থাৎ আমাদের তত্ত্বাবধানে ওই ব্যক্তি পরবর্তী হাসপাতালে যাবে। সার্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় ২০৩০ সালের মধ্যেই এ লক্ষ্য আমরা অর্জন করতে পারব বলে আশা করি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App