×

মুক্তচিন্তা

সুষম বণ্টনে নজর দিন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ এপ্রিল ২০১৯, ০৮:৩১ পিএম

জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে সাফল্যে বাংলাদেশ বিশ্বে অপ্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছে। চলতি অর্থবছরে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়াবে ৭ দশমিক ৩ শতাংশে। সরকার প্রাক্কলিত হিসাবের তুলনায় কম হলেও এর মধ্য দিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতবর্ধনশীল পাঁচ দেশের অন্যতম হয়ে উঠবে বাংলাদেশ। এ তালিকার অন্য চারটি দেশ হলো ইথিওপিয়া, রুয়ান্ডা, ভুটান ও ভারত।

গত অর্থবছরে দেশের প্রবৃদ্ধি ছিল বাজারভিত্তিক। চলতি অর্থবছরে এটি হবে রপ্তানি ও শিল্পভিত্তিক। ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট : টুওয়ার্ডস রেগুলেটরি প্রেডিক্টেবিলিটি ২০১৯’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়া এবং মাথাপিছু আয়ের ঊর্ধ্বগতি খুবই আশাব্যঞ্জক।

স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে বাংলাদেশ জাতিসংঘের প্রাথমিক স্বীকৃতি পেয়েছে। সেই স্বীকৃতির প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে দেশের অর্থনীতিতেও। স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে মাথাপিছু আয় ও মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বা জিডিপির প্রবৃদ্ধি রেকর্ড পরিমাণে অর্জিত হয়েছে বর্তমান সরকার আমলে। এমন অর্জন সরকারের মুকুটে সাফল্যের পালক যোগ করেছে। এর জন্য সরকারের অভিনন্দন প্রাপ্য।

গত অর্থবছর ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পাওয়ার পর ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ঠিক করেছিল সরকার। কিন্তু চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসের (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) তথ্য বিশ্লেষণ করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো যে প্রাক্কলন করেছে, তাতে অর্থবছর শেষে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে রেকর্ড ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ।

উল্লেখ্য, একদিন আগে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) জানায়, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৮ শতাংশ। তবে প্রকট বৈষম্যের এ সমাজে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির সুফল সবাই পাচ্ছেন কিনা, সেটা বড় প্রশ্ন।

বিশ্লেষকদের মতে, জিডিপি বাড়লেও ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য প্রকট আকার ধারণ করেছে। তাই ধনীরা সম্পদের পাহাড় গড়লেও সুযোগ-সুবিধার অভাবে দরিদ্ররা দরিদ্রই থেকে যাচ্ছে। সামাজিক বৈষম্যের এই দুষ্টচক্র ভাঙতে না পারলে সংকট আরো তীব্র হতে পারে।

একদিকে দারিদ্র্য কমছে, অন্যদিকে ধনী-গরিবের মধ্যে আয়ের ক্ষেত্রে বৈষম্য বাড়ছে। এটি খুবই উদ্বেগের বিষয়। মূলত সম্পদের অসম বণ্টন এবং অবৈধ আয়ের উৎসের কারণে আয় বৈষম্য প্রকট হচ্ছে। জিডিপির ঊর্ধ্বগতির সুফল সমাজের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে পৌঁছে দেয়ার জন্য ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য কমিয়ে আনতে হবে।

এজন্য ঘুষ, দুর্নীতি, কর ফাঁকির বিষয়টি কঠোরভাবে প্রতিরোধ করতে হবে। বর্তমান সরকার যে দারিদ্র্য বিমোচনে তৎপর সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই। নানা বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও অর্থনীতির ক্ষেত্রগুলোতে উন্নতির ধারা অব্যাহত রয়েছে। জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধিসহ কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামো, বাণিজ্য, বৈদেশিক আয় ইত্যাদি খাতেও ব্যাপক উন্নয়ন ঘটেছে। মানুষের সচেতনতাও বেড়েছে আগের তুলনায়।

আমরা অবশ্যই প্রত্যাশা করি, এই অর্থনৈতিক অগ্রগতির ধারা অব্যাহত থাকুক। পাশাপাশি জরুরি হচ্ছে, বৈষম্য কমাতে টেকসই পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন। বৈষম্য বিলোপ সম্ভব হলেই জিডিপি বৃদ্ধির শতভাগ সুফল দেশবাসী পেতে পারে, যা নিশ্চিত করতে হবে সরকারকেই।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App