×

জাতীয়

শপথ ঘিরে অস্থিরতা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ এপ্রিল ২০১৯, ১০:৫১ এএম

শপথ ঘিরে অস্থিরতা
জোটের সিদ্ধান্ত অমান্য করে দুই নেতা শপথ নেয়ায় অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়েছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটে। এ ইস্যুতে ভাঙনের মুখে পড়তে যাচ্ছে জোট দুটি। যে কোনো সময় বহিষ্কার পাল্টা বহিষ্কারের খেলায় মেতে উঠতে পারেন উভয় জোটের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা যা রাজনীতিতে কোণঠাসা বিএনপিকে আরো বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিতে পারে। গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে মাত্র ৮টি আসন পায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এর মধ্যে ৬টি পায় বিএনপি, একটি গণফোরাম, অন্যটি জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া। গত ৩ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দল ও জাতীয় পার্টির নির্বাচিতরা শপথ নেন। কিন্তু নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে সেদিন শপথ নেয়া থেকে বিরত থাকেন বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে নির্বাচিত ৮ জন। এমনকি জোটের পক্ষ থেকে নতুন নির্বাচন দাবি করে শপথ না নেয়ার ঘোষণাও দেয়া হয়। কিন্তু গত ৭ মার্চ দল ও জোটের সিদ্ধান্ত অমান্য করে শপথ নেন মৌলভীবাজার-২ আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ। ঐদিনই সিলেট-২ আসন থেকে নির্বাচিত মোকাব্বির খানেরও শপথ নেয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার দল গণফোরামের চরম বিরোধিতার মুখে পিছু হটেন মোকাব্বির। তবে দল ও জোটের সব বাধাকে উপেক্ষা করে অবশেষে গতকাল মঙ্গলবার শপথ নেন মোকাব্বির। এ নিয়ে গণফোরামে বিস্ফোরণমুখ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি এডভোকেট সুব্রত চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু মোকাব্বিরের শপথ নেয়ার ঘোর বিরোধী। তারা সুলতান মনসুরের পর এবার মোকাব্বিরকে দল থেকে বহিষ্কারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। যদিও দলটির সভাপতি ড. কামাল হোসেন শপথের পক্ষে মৌন সমর্থন দিচ্ছেন বলে দাবি করেছেন মোকাব্বির। এমন পরিস্থিতিতে সভাপতির বিরুদ্ধেও চটেছেন সুব্রত ও মন্টু। পরিস্থিতির বাস্তবতায় দল থেকে ড. কামাল হোসেন ও মোকাব্বিরকে বহিষ্কার করার মতো ঘটনা ঘটতে পারে, গণফোরামে এমন গুঞ্জন রয়েছে। কেননা ড. কামাল হোসেন দলের শীর্ষ নেতা হলেও এ দলের নীতি-নির্ধারণ করে মূলত প্রেসিডিয়াম। প্রেসিডিয়ামের অধিকাংশ সদস্যই ড. কামালের বর্তমান অবস্থানকে সমর্থন করছেন না। তারা দলকে নিজস্ব গঠনতন্ত্র মোতাবেক পরিচালনার পক্ষে মত দিয়েছেন। এদিকে একে একে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দুই নেতা শপথ নেয়ায় বিএনপি ও ২০ দলের মধ্যে শুরু হয়েছে অস্থিরতা। বিএনপির একটি অংশ সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেনÑ এমনটাই যদি হবে, তাহলে কেন গঠন করা হলো জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। আর ২০ দলীয় জোটের অধিকাংশ দলের শীর্ষ নেতারা প্রশ্ন তুলেছেন, ২০ দলকে গুরুত্বহীন করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট করে কি ফায়দা পেল বিএনপি? বিএনপির ঐ অংশের দাবি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে বিএনপি যেন বের হয়ে আসে। অথবা ড. কামালকে বাদ দিয়ে আ স ম রব, কাদের সিদ্দিকী, মাহমুদুর রহমান মান্না ও মোস্তফা মহসিন মন্টুকে নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সক্রিয় রাখে যার মূল নেতৃত্ব থাকবে বিএনপির হাতে। আর ২০ দলীয় জোটের দাবি, নিষ্ক্রিয় ২০ দলকে আবারো সক্রিয় করে সরকারবিরোধী আন্দোলনে রাজপথে কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলন বেগবান করা। জোটটির নেতাদের মতে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট যেভাবে বিএনপি ও জাতির সঙ্গে বেইমানি করেছে তাতে তাদের সঙ্গে এক মুহূর্তও থাকা নিরাপদ নয় বিএনপির জন্য। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের এমন বাস্তবতার পরও শপথ নেয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে আছেন বিএনপি থেকে নির্বাচিত ৬ নেতা। তারা দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের গ্রিন সিগনালের অপেক্ষায় রয়েছেন। এই দুই নেতার ইঙ্গিত পেলে শপথ নিতে পারেন ঠাকুরগাঁও-৩ থেকে নির্বাচিত জাহিদুর রহমান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ থেকে নির্বাচিত আমিনুল ইসলাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ থেকে নির্বাচিত হারুনুর রশীদ, বগুড়া-৪ থেকে নির্বাচিত মোশাররফ হোসেন, বগুড়া-৬ থেকে নির্বাচিত মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ থেকে নির্বাচিত আবদুস সাত্তার ভুঞা। বিএনপির এই ৬ নেতা শপথ নেয়ার জন্য যুক্তি হিসেবে তুলে ধরছেন, নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে এটা রাস্তায় না বলে জাতীয় সংসদে গিয়ে বলা ভালো। জাতীয় সংসদে সরকারের অত্যাচার-নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরা যাবে। খালেদা জিয়ার প্রতি অবিচার করা হচ্ছে, তা জাতীয় সংসদে তা তুলে ধরা হবে। পাশাপাশি সংসদে যোগদানে নির্বাচিতদের অনুমতি দিতে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রভাবশালীদের ওপর ক‚টনীতিকদের দিয়ে কৌশলে চাপ দিচ্ছেন বলেও গুঞ্জন রয়েছে। ঐক্যফ্রন্ট ও জোটে যাই ঘটুক খালেদা জিয়ার মুক্তি, জামিন অথবা প্যারোলের বিনিময়ে সংসদে যোগ দেয়ার অনুমতি আসতে পারে বিএনপির হাইকমান্ডের তরফ থেকে সরকারের সঙ্গে এমন সমঝোতার ইঙ্গিতও পাওয়া যাচ্ছে। তেমনটি হলে সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে সহসাই সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিতে দেখা যেতে পারে বিএনপি থেকে নির্বাচিত ৬ নেতাকে। বিনিময়ে কারাগারের বাইরে খালেদা জিয়ার পছন্দের দেশের কোনো হাসপাতাল কিংবা বিদেশে চিকিৎসার জন্য যেতে দেখা যেতে পারে খালেদা জিয়াকে। মোকাব্বির খানের শপথ নেয়া প্রশ্নে গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী বলেন, আমাদের দলীয় সিদ্ধান্ত শপথ না নেয়া। সেটা এখনো বহাল আছে। কোনো পরিবর্তন হয়নি। এর বাইরে গিয়ে শপথ নিজ দায়িত্বে নিয়েছেন তিনি। এর সঙ্গে দলের কোনো সম্পর্ক নেই। বিএনপির মহাসচিব ও ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, মোকাব্বির খান সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিয়ে জনগণের সঙ্গে বেইমানি করেছেন, প্রতারণা করেছেন। এটা তার নিজের দলের সঙ্গে, জনগণের সঙ্গে এবং ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে প্রতারণা। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এবং ২০ দলীয় জোটের অধিকাংশ নেতা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরকারের সঙ্গে আঁতাত করেছেন বলে অভিযোগ করে ২০ দলীয় জোটের শরিক লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বলেছেন, তা না তাহলে এমন পরিস্থিতি হতো না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App