×

মুক্তচিন্তা

স্বাধীনতা ও মুজিব বাহিনী

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩০ মার্চ ২০১৯, ০৮:৩৩ পিএম

মুজিবের নামে বাহিনী গঠন করার চাইতে শ্রেষ্ঠতম কোনো অর্জন আমাদের কাছে মনে হয়নি। এর সবচেয়ে সঙ্গত কারণ হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধে আমাদের যোগদানের ঐকান্তিক প্রেরণায় ছিলেন শেখ মুজিব। বিশেষ করে ৬৮ থেকে ৭১ সময়কালে মুজিবকে সারাদেশের একমাত্র নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হই আমরা। তার সমসাময়িক নেতা মাওলানা ভাসানী বা মোজাফফর আহমদ বা কমরেড মণি সিংহ আর যাই হোন তাদের অনুসারীদের কাছেও অবিসংবাদিত নেতা ছিলেন না, দেশের মানুষের কাছে তো ছিলেনই না।

পর্ব তিন.

যদি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধটা অনেকটা প্রলম্বিত হতো- যেমনটি হয়েছিল ইন্দোচীনে। তবে তার গতিপ্রকৃতি এবং প্রকৃত রাজনৈতিক মেরুকরণ ভিন্নরকম হতো। ভিয়েতনামের বিভক্তি থেকে তাদের জাতীয় যুদ্ধের চরিত্র পরিবর্তন আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় যে স্বাধীনতা ছেলের হাতের মোয়া নয় যে চাহিবামাত্র পাওয়া যায়। বরং চিত্রটা বিপরীত। বাংলাদেশ যা অর্জন করেছে সেটি স্বাভাবিক ঘটনা নয়, ব্যতিক্রম। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে গঠিত মুক্তিবাহিনীতে একদিকে বাঙালি সশস্ত্রবাহিনী তাদের বাহিনী থেকে বিদ্রোহ করে অংশ নিয়েছে, অন্যদিকে সাধারণ ছাত্র-কৃষক অংশ নিয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার সম্মোহনী শক্তিতে পুরো জাতিকে স্বাধীনতামুখী করতে পেরেছিলেন। পাকিস্তান বাহিনীর নির্মম গণহত্যা ও অত্যাচার পুরো বাঙালি জাতিকে পাকিস্তানের বিপক্ষে বাঙালিকে যুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করেছিল। এর মধ্য থেকে যদি মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক শক্তিকে চিহ্নিত করতে যাই তবে সেটির সবচেয়ে বড় উপাদান ছিল বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। আওয়ামী লীগের এমএনএ বা এমপিএ বা দলীয় নেতারা জাতির পিতার নির্দেশে যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের রূপরেখা তৈরি করেছে ছাত্রলীগ।

জয় বাংলা স্লোগান, জয় বাংলা বাহিনী, স্বাধীন বাংলার পতাকা, জাতীয় সঙ্গীত, ইশতেহার সবই জাতির পিতার নির্দেশে ছাত্রলীগ প্রণয়ন ও প্রকাশ করেছে। মুক্তিযুদ্ধের সর্বব্যাপী আন্দোলন ছয় দফা এবং ছয় দফা সংবলিত ১১ দফা নিয়ে আন্দোলনটাও করেছে ছাত্রলীগ। বাস্তবতা হচ্ছে পাকিস্তান সৃষ্টির পর তাকে বাংলাদেশ আন্দোলনে রূপান্তর করার পুরো কাজটাই ছিল ছাত্রদের। কিন্তু ছাত্রলীগ ছাড়া প্রধান ছাত্র সংগঠন ছাত্র ইউনিয়ন ও তার দুটি ধারা ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্র বাংলাদেশ গড়ে তোলার রাজনৈতিক দর্শনে যোগ দেয়নি। ছাত্র ইউনিয়নের একটি অংশ, একটি উগ্রবাদী টুকরা বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছে। ছাত্র ইউনিয়নের একটি অংশ মুক্তিবাহিনীতে যোগ দিয়েছে।

কিন্তু এটি স্পষ্ট যে এই বাহিনীর সব সদস্য বাংলাদেশ রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি বা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন সোনার বাংলার রাজনৈতিক রূপটা উপলব্ধি করতেন না। করার কথাও না। ইপিআর, পুলিশ বা সেনাবাহিনীতে তো রাজনীতি চর্চা হতো না। তারা কেমন করে জানবেন বঙ্গবন্ধু ছয় দফাকে কীভাবে এক দফার পরিপ্রেক্ষিত হিসেবে তুলে ধরেছেন। অন্যদিকে সাধারণ মানুষ ৭০ সালে নৌকায় ভোট দিয়েছে বঙ্গবন্ধুর স্বায়ত্তশাসনের দাবি ছয় দফা বাস্তবায়নের জন্য। ২৫ মাচের পর পাক হানাদাররা দেশজুড়ে নির্মম গণহত্যা করার পরিপ্রেক্ষিতে অনেককেই মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সশস্ত্র হতে হয়েছে। তাদের রাজনীতির পাঠটাওতো অপূর্ণ ছিল। ফলে মুক্তিযুদ্ধের একটি রাজনৈতিক বাহিনী গড়ে তুলতে হলে ছাত্রলীগ ছাড়া আর কোনো উৎস থেকে সেই বাহিনীটি গড়ে তোলা সম্ভব ছিল না। মুজিব বাহিনী সেই বাহিনীই ছিল। নয় মাসে দেশ স্বাধীন না হলে মুক্তিযুদ্ধে মুজিব বাহিনীর অনন্য অংশগ্রহণ বহু গুণ বেশি দৃম্যমান হতো।

মুক্তিবাহিনী একটি নিখাদ রাজনৈতিক বাহিনী না হওয়ার ফলে মুক্তিযুদ্ধের পরে এই বাহিনী তার রাজনৈতিক লড়াইটা শেষ করতে পারেনি। মনে করা হয়ে থাকে যে, নয় মাসের জন্য খণ্ডকালীন একটি কাজে আমরা যোগ দিয়েছিলাম এবং নয় মাস পর সেই কাজটি শেষ হয়ে গেল; যেন একটি প্রকল্প শেষ হলো। মনে করা হয়ে থাকে যে, নানা স্থান থেকে আসা মানুষ একটি কাজ সম্পন্ন করে আবার তাদের স্ব স্ব কাজে ফিরে গেল। আমি মনে করি, আমাদের ক্ষেত্রেও এ ঘটনাটা ঘটেছিল। স্বাধীনতার পর জাতীয় রক্ষীবাহিনী গঠন করে এই মানুষদের একটি সংগঠিত বাহিনীতে একত্রিত করার চেষ্টা ছিল বটে। কিন্তু একদিকে রক্ষীবাহিনীতে অতি সামান্য সংখ্যক যোদ্ধাকে ঠাঁই দেয়া সম্ভব হয়েছিল এবং অন্যদিকে পঁচাত্তরের পটপরিবর্তনের পর সেই প্রচেষ্টা একবারেই বিলীন হয়ে গিয়েছিল। জিয়াউর রহমান রক্ষীবাহিনীকে ধ্বংস করেছিল এমন বিচারে যে সেটি সেনাবাহিনীর বিকল্প ছিল। বাস্তবে একটি প্যারা মিলিশিয়া বাহিনী হিসেবে রক্ষীবাহিনীকে অভ্যন্তরীণ শান্তি বজায়ে বেশি ব্যস্ত থাকতে হয়েছিল।

অন্যদিকে ছাত্রলীগের যে অংশটি মুজিব বাহিনীতে ছিল সেটি আলাদা একটি সংগঠন গড়ে তুলে। বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের নামে পরবর্তী সময় জাসদ গঠন করে। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রায় ৫০ বছর পূর্ণ হতে চললেও জাসদ গঠন-ছাত্রলীগ বিভাজন এবং সেই সময়কার রাজনৈতিক মেরুকরণের বিষয়গুলো এখনো তেমনভাবে আলোচিত হয়নি। আমার নিজের মনে হয়েছে যে একাত্তরে মুজিব বাহিনী গঠন করে যে উদ্দেশ্য সাধনের প্রচেষ্টা ছিল তা ৭২ সালে এসে বিভ্রান্ত হয়ে যায়। মুজিব বাহিনীর আদর্শ স্বাধীনতার পর সমন্বিত ও ঐক্যবদ্ধ থাকলে বাংলাদেশের ইতিহাস হয়তো ভিন্নভাবে প্রবাহিত হতো। দুর্ভাগ্যজনকভাবে মুজিব বাহিনী স্বাধীনতা-উত্তরকালে একটি বিভক্ত শক্তিতে পরিণত হয়। বাংলাদেশে পঁচাত্তর পরবর্তী পশ্চাৎপদতার প্রধানতম কারণ এই বিভক্তি। বঙ্গবন্ধু আজীবন বলে গেছেন তিনি সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস করেন।

সংবিধানে সমাজতন্ত্র স্পষ্টভাবে এখনো উল্লেখিত আছে। সেই সমাজতন্ত্র বৈজ্ঞানিক হবে সেই স্লোগান নিয়ে জাসদ তৈরি করার যৌক্তিকতা এখন তো আমি আর পাইনি। মার্কস এঙ্গেলস, লেনিন, মাওসেতুং, চে গুয়েভারা, রেজিস দেবরেসহ সমাজতান্ত্রিক চিন্তাবিদদের বইপত্র পড়ে আমি সমাজতন্ত্রের বৈজ্ঞানিক সংস্করণ খুঁজে পাইনি। কিন্তু সংবিধানে সমাজতন্ত্র সন্নিবেশিত করার পর সেই সমাজতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করার বঙ্গবন্ধুর প্রচেষ্টার বিপরীতে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র ঘোষণা দিয়ে মুজিব বাহিনীকে বিভক্ত করার কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকতে পারে না।

এ ছাড়াও মুত্তিযুদ্ধের পরপরই এদের সংগঠিত করে রাখার তেমন জোরালো কোনো প্রচেষ্টা ছিল না। কেবল মুজিব বাহিনীর একটি অংশ রাজনৈতিকভাবে জাসদ হিসেবে সংঘবদ্ধ হয়েছিল। জাসদ গঠন সঠিক ছিল কিনা সেটি নিয়ে বিতর্ক হতে পারে তবে এর বাইরে বিশেষ করে আওয়ামী লীগে মুজিব বাহিনীকে রাজনৈতিকভাবে একত্রিত করার কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি। এক সময়ে মুবিবাদ অনেক আলোচিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর বাকশাল ঘোষণা ও বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা একটি দুঃসাহসিক পদক্ষেপ ছিল। কিন্তু এর মাঝেই লুকায়িত ছিল বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ। দুর্ভাগ্যজনকভাবে একে একদলীয় শাসন হিসেবে প্রচার করে অপপ্রচার করা হতে থাকে। কেবল ১৯ সালের মার্চে প্রধানমন্ত্রী দ্বিতীয় বিপ্লব ও বাকশালের কথা বলতে শুরু করেছেন।

জাসদ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন মহিউদ্দিন আহমদ। তিনি তার বইতে মুজিব বাহিনী সম্পর্কে লিখেছেন, “মনি-সিরাজ-রাজ্জাক-তোফায়েল- এই চার যুবনেতা বসে ছিলেন না। ১৭ এপ্রিল ১৯৭১ কুষ্টিয়ার বৈদ্যনাথতলায় ব্যানার্জি নামের এক ভারতীয় সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে তাদের যোগাযোগ হয়। তার মাধ্যমে তাদের সঙ্গে ভারতীয় সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল সুজন সিং উবানের দেখা হয়। তিনি ছিলেন স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্সের ইন্সপেক্টর জেনারেল। তাকে অপ্রচলিত (গেরিলা) যুদ্ধের একজন বিশেষজ্ঞ হিসেবে দেখা হতো। তাকে বাংলাদেশের তরুণদের বিশেষ সামরিক প্রশিক্ষণের দায়িত্ব দেয়া হয়। জেনারেল উবান স্বাধীনভাবেই তার দায়িত্ব পালন করার প্রতিশ্রুতি পেয়েছিলেন। তাকে জবাবদিহি করতে হতো ভারত সরকারের সচিব রামেশ্বর নাথ কাওয়ের কাছে। কাও ছিলেন একই সঙ্গে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এরও (রিসার্চ এন্ড অ্যানালিসিস উইং) পরিচালক। সংস্থাটি ১৯৬৮ সালে সিআইএ (যুক্তরাষ্ট্র) এবং এমআই সিক্সের (যুক্তরাজ্য) আদলে গড়ে তোলার চেষ্টা করা হয়। এর প্রথম প্রকল্পটির নাম ‘বাংলাদেশ’। বাংলাদেশের স্বাধীনতায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর যে অসামান্য সাফল্য, তার পেছনে ‘র’ এর অবদান ছিল অনেকখানি।”

নানা সমীকরণে ভারতের সেনাবাহিনীর এমন একটি বাহিনীর প্রয়োজন ছিল যেটি রাজনীতি সচেতন, মুজিবের অনুগত, সাহসী ও প্রজ্ঞাবান। অন্যদিকে ২৬ মার্চের আগে যারা স্বাধীন সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার লড়াইতে নেতৃত্ব দিয়েছেন তারাও গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসাতে চাননি। তারা খুব ভালো করে জানতেন যে যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে সশস্ত্র হয়েছেন তারা সবাই মুজিবের আদর্শের অনুসারী নন। একাত্তরের ২৫ মার্চের আগে মুক্তিবাহিনীতে যোগদানকারী অনেকেই মুজিবের আদর্শের, স্বায়ত্তশাসনের, ছয় দফার বিরোধিতা করেছেন। বস্তুত তৎকালে সমাজতন্ত্রের ধারাটি উচ্চকিত থাকায় শেখ মুজিবের স্বাধীনতার লড়াই অনেকটাই পুঁজিবাদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব এবং স্বাধীনতার লড়াইটা পাকিস্তানি পুঁজির সঙ্গে বাঙালি পুঁজির বিরোধের ফল হিসেবে চিহ্নিত করা হতো। বিশেষ করে পিকিংপন্থি বাম এবং উগ্র বামেরা এই ধারণা পোষণ করতেন। অনেকেই পরিস্থিতির চাপে পড়েও মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে বাধ্য হন।

মুজিব বাহিনী গঠন প্রসঙ্গে ভারতীয় সংগঠক জেনারেল উবানের বক্তব্য এখানে উদ্ধৃত করা যেতে পারে : ‘গোলযোগের অশান্ত দিনগুলোতে আমরা একদল নিবেদিতপ্রাণ যুবনেতার কথা জানতে পারলাম, যারা বাংলাদেশে বেশ পরিচিত। তারা হলেন শেখ ফজলুল হক মনি, সিরাজুল আলম খান, আব্দুর রাজ্জাক ও তোফায়েল আহমেদ। তাদের মনে হলো অত্যন্ত অনুপ্রাণিত, করতে অথবা মরতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং বাংলাদেশের ভেতরে ও বাইরে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে তাদের নেতৃত্বে গ্রহণযোগ্যতা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত ছিল। দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার হলো, অস্থায়ী সরকার এদের তেমন মর্যাদা দিতে প্রস্তুত ছিল না। তারা চাইছিলেন, এরা মুক্তিবাহিনীর নেতৃত্বে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করবে ও যুদ্ধে অংশ নেবে। কিন্তু এই যুবনেতাদের তাতে দৃঢ় আপত্তি ছিল। (মুজিবের প্রতি তাদের গভীরতার আনুগত্যের ও নৈকট্যের কারণে তারা সবাই পাকিস্তানি সামরিক কর্তৃপক্ষের নির্দেশে জেল খেটেছেন মুজিবের সঙ্গে) তারা মুজিব বাহিনী নামে অভিহিত হতে পছন্দ করলেন। তারা তাদের পুরনো সহকর্মীদের ক্যাডার হিসেবে বেছে বেছে সত্যায়িত করলেন।

ক্যাবিনেট সেক্রেটারিয়েটের সেক্রেটারি শ্রী আর এন কাও এ সময় আমার ঊর্ধ্বতন সিভিলিয়ান কর্মকর্তা ছিলেন। আওয়ামী লীগের যুব উইংয়ের নেতৃত্বে এবং খোদ সংগঠনটি সম্পর্কে বিস্তারিত গোয়েন্দা তথ্য জানার সুযোগ তার হয়েছিল। তার গভীর উপলব্ধি ছিল যে, তিনি আমার তত্ত্বাবধানে যে যুবনেতাদের দিয়েছিলেন, কেবল তাদের দ্বারাই আসল কাজটি হবে এবং তাদের বাংলাদেশের সবচেয়ে স্পর্শকাতর রাজনৈতিক অঞ্চলে কাজ করার জন্য বিশেষ মর্যাদা দেয়া দরকার। তিনি তাদের প্রতি অস্থায়ী সরকারের মন্ত্রীদের ঈর্ষার কথা জানতেন তাদের আপসহীন মনোভাবের জন্য এবং মন্ত্রীদের উচ্চাকাক্সক্ষা ও অভিসন্ধির জন্য।’

ভারতীয় সংগঠকরা যেভাবেই মুজিব বাহিনীর গঠনকে ব্যাখ্যা করুন না কেন, বাংলাদেশের তারুণ্যের নিজস্ব ও আদর্শগত একটি সংগঠন দরকার ছিল বলেই মুজিব বাহিনী গঠিত হয়। মুজিবের নামে বাহিনী গঠন করার চাইতে শ্রেষ্ঠতম কোনো অর্জন আমাদের কাছে মনে হয়নি। এর সবচেয়ে সঙ্গত কারণ হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধে আমাদের যোগদানের ঐকান্তিক প্রেরণাই ছিলেন শেখ মুজিব। বিশেষ করে ৬৮ থেকে ৭১ সময়কালে মুজিবকে সারাদেশের একমাত্র নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হই আমরা।

তার সমসাময়িক নেতা মাওলানা ভাসানী বা মোজাফফর আহমদ বা কমরেড মণি সিংহ আর যাই হোন তাদের অনুসারীদের কাছেও অবিসংবাদিত নেতা ছিলেন না, দেশের মানুষের কাছে তো ছিলেনই না। তার ওপরে ১৯৭০-এর নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর বিজয় সব কিছুকে ছাপিয়ে তাকেই সবার ওপরে স্থাপন করেছিল। আমরা শেখ মুজিবের কথাকে বাণী এবং প্রশ্নাতীত মনে করতাম এবং তিনি আমাদের সামনে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ রাজনৈতিক মহানায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন।

মোস্তাফা জব্বার : তথ্যপ্রযুক্তিবিদ ও কলাম লেখক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App