×

জাতীয়

যানজটে দমকল দ্রুত পৌঁছাতে পারে না

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ মার্চ ২০১৯, ১২:১০ পিএম

যানজটে দমকল দ্রুত পৌঁছাতে পারে না

আবু নাঈম মো. শহিদুল্লাহ সাবেক মহাপরিচালক, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স

এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয় গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে। কিন্তু ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি পৌঁছায় দেড়টার দিকে। ভবনটির চারদিকে প্রশস্ত সড়ক থাকা সত্ত্বেও কেন ফায়ার সার্ভিস দেরিতে পৌঁছল এ নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। এ ছাড়া রাজধানীতে যেসব উঁচু উঁচু ভবন নির্মাণ হচ্ছে, সেগুলোর আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা যে খুবই নাজুক ও অপ্রতুল এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডে তা প্রমাণ হয়ে গেছে। বিষয়গুলো নিয়ে ভোরের কাগজের সঙ্গে কথা বলেছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবু নাঈম মো. শহিদুল্লাহ। তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মরিয়ম সেঁজুতি
ভোরের কাগজ : এফআর টাওয়ারের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ৬ ঘণ্টার বেশি সময় লাগায় ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আপনার মতে সক্ষমতা কতখানি আছে? আবু নাঈম : আইন আর চোখের সামনে ঘটে যাওয়া দৃশ্য দেখলেই বোঝা যাচ্ছে এর মধ্যে কত পার্থক্য। যার কারণে আজ এত মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। বহুতল ভবনে প্রতি পাঁচ তলা পরপরই একটি রিফিউজ এরিয়া থাকার কথা। এই রিফিউজ এরিয়া এমনভাবে থাকবে যেখানে আগুন তো দূরের কথা ধোঁয়া পর্যন্ত পৌঁছতে পারবে না। আজকের পরিস্থিতিতে দেখলাম, এর কিছুই এখানে হয়নি। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, এসব ভবনের জন্য নিয়মিত ফায়ার ড্রিল করার কথা। যাতে আগুন লাগলে কেউ আতঙ্কিত না হন। যদি নিয়মিত মহড়া করা হতো, তবে মানুষ এত আতঙ্কিত হতো না, এত মৃত্যুও ঘটত না। প্রশ্ন উঠেছে কেন এত সময় ধরে আগুন জ¦লল, কেন ৬ ঘণ্টা লাগল আগুন নিয়ন্ত্রণে? এর কারণ হিসেবে আমি মনে করি, ইদানীং অফিসগুলোকে আমরা এত বেশি ডেকোরেটেড করি, কার্পেট থেকে শুরু করে ফার্নিচার, ইন্টেরিয়র সবকিছুতে যে মেটেরিয়াল ব্যবহার করি তা আগুনকে জ¦লতে আরো বেশি সাহায্য করছে। ভো.কা : ভবনের চারদিকে প্রশস্ত সড়ক থাকা সত্তে¡ও কেন ফায়ার সার্ভিস দেরিতে পৌঁছল? উঁচু ভবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতাই বা কতটুকু? আবু নাঈম : ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি যত দ্রুত পৌঁছবে তাদের কাজও তত বেশি কমে যায়। এ জন্য তাদের মধ্যে কখনোই দেরিতে আসার প্রবণতা কাজ করে না। কল পাওয়ার ১০ থেকে ১২ সেকেন্ডের মধ্যে তারা প্রথম গাড়ি নিয়ে বের হয়ে যাবে। সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্স। তবে তাদের দ্রুত ঘটনাস্থলে যাওয়ার পথে সবচেয়ে বড় বাধা কাজ করে ঢাকা শহরের ট্রাফিক জ্যাম। জ্যামকে কাভার করেই তাদের ঘটনাস্থলে পৌঁছতে হয়। প্রত্যেক স্টেশনেই একটি গাড়িতে যে পরিমাণ ফায়ার কর্মী থাকা দরকার তারা ওই পরিমাণ লোক ইউনিফর্ম পরে ওখানে অবস্থান করেন। যখনই কল আসে তখনই তারা মুহূর্তের মধ্যে বের হয়ে যান। কিন্তু কোনো দুর্ঘটনাস্থলে সাংবাদিকরাও যখন অনেক বেশি যেতে থাকেন, দেখবেন কত বেশি জ্যাম থাকে। আর ফায়ার সার্ভিসের স্পেশাল গাড়িগুলো যখন আসে; তখনো এদের প্রচুর জ্যাম ঠেলে আসতে হয়। কেননা গাড়িগুলোর আকার অনেক বড়, ফলে জ্যামও পড়ে বেশি। তা ছাড়া আমাদের দেশে তো এখনো সার্ভিস লেন হয়নি যে, দ্রুততার সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্স, ইমার্জেন্সি ভেহিকেল কিংবা ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঘটনাস্থলে পৌঁছে যাবে। কিন্তু দেরিতে পৌঁছানোর বিষয়ে বরাবরই আমাদের দোষ দেয়া হয়। যাদের স্বজন বিপদে আছে, তাদের তো মনে হবেই যে কেন আসছে না! প্রকৃতপক্ষে ফায়ার সার্ভিস কখনোই দেরিতে পৌঁছায় না। এ জন্য সবার আগে প্রয়োজন ঢাকা শহরের রাস্তাগুলোর পরিধি আরো বাড়ানো। যদি রাস্তাঘাট বড় করা সম্ভব না হয়, তবে এমন সুউচ্চ ভবন তৈরির অনুমতি না দেয়াই ভালো। ভো.কা : বহুতল ভবনগুলোতে ফায়ার সেফটির বিষয়ে কতখানি গুরুত্ব দেয়া হয় বলে আপনি মনে করেন। আবু নাঈম : প্রত্যেক বহুতল ভবনে অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থার যেসব জিনিসপত্র থাকার কথা, সেসব যদি সত্যিকারভাবে থাকে; তবে প্রত্যেকটি ফ্লোর কিন্তু একটা করে ফায়ার স্টেশন হয়ে যায়। সেখানের জিনিসপত্র দিয়ে তারা নিজেরাই আগুন নিভাতে পারে। ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি আসতে যে সময়টা লাগে সে সময় পর্যন্ত তো ফাইট করতে হবে। আজকের ঘটনায় আমরা দেখলাম, এক ফ্লোর থেকে আরেক ফ্লোরে আগুন পৌঁছে গেল, কিন্তু কেন? যদি আগুন লেগেই যায়, তবে তা অন্য ফ্লোরে যাওয়ার কথা নয়। এই ভবনে দুটো সিঁড়ি থাকলেও যে পরিমাণ প্রশস্ত থাকার কথা তা ছিল না। একটাতে ছিল চার ফুটের একটু বেশি, আরেকটিতে ছিল ২ ফুটের কিছু বেশি। এসব সিঁড়িতে কিন্তু কোনোভাবেই ধোঁয়া পৌঁছানোর কথা নয়। ধোঁয়া যদি সিঁড়িতে না পৌঁছাতো, তাহলে কিন্তু উপর তলাগুলোতে ধোঁয়া যেত না। অর্থাৎ ওই বিল্ডিংয়ে কোনো ধোঁয়া প্রতিরোধক ছিল না কিংবা ফায়ার ডোর এমনভাবে ছিল না। ভো.কা : প্রতিনিয়ত যে পরিমাণ অগ্নিকাণ্ডে ঘটছে, তাতে সাধারণ মানুষকে আপনি কোন ধরনের সচেতনতার কথা বলবেন? আবু নাঈম : আমাদের খেয়াল রাখতে হবে বাসাবাড়ির গ্যাসলাইন বা গ্যাসের বার্নার প্রতিনিয়ত চেক করছি কিনা? ইলেক্ট্রিকের যন্ত্রাংশ পরীক্ষা করছি কিনা। আমার বাসার যে সিঁড়ি আছে সেটি দিয়ে জরুরি মুহূর্তে আমি বের হতে পারছি কিনা। বাসায় অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র আছে কিনা। পাশাপাশি একটি দুর্ঘটনা ঘটলে আমরা যাতে নিরাপদে নেমে আসতে পারি সেই সুবিধা আছে কিনা। অফিসগুলোর এক্সিট পয়েন্টগুলো স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে আছে কিনা। এসব বাস্তবায়নের কর্তৃপক্ষ যারা আছে, যেমন সরকার, সিটি করপোরেশন, পরিবেশ অধিদপ্তর, ফায়ার ব্রিগেড এবং রাজউক সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। ঠিকমতো কাজ করলেই আমরা নিরাপদ ও সুন্দর পরিবেশে থাকতে পারব।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App