×

বিশেষ সংখ্যা

প্রতিরোধ যুদ্ধে চট্টগ্রাম

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ মার্চ ২০১৯, ০৩:১৩ পিএম

জালালাবাদের পাহাড়েতে রক্তে লিখেছি কত নাম, চট্টগ্রাম, বীর চট্টগ্রাম।’ ব্রিটিশবিরোধী লড়াই-সংগ্রামের অগ্নিযুগের বীর পুরুষ মাষ্টারদা সূর্যসেনের নেতৃত্বে চট্টগ্রামের বীর সন্তানেরা পরাক্রমশালী ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ভীত কাঁপিয়ে দিয়েছিল ১৯৩০ সালে। দেশপ্রেমের বীরত্বপূর্ণ সেই আত্মত্যাগের নজির দেশ ও জাতির জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল বীর চট্টলা। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালে চট্টগ্রামে সেনা-জনতা সম্মিলিতভাবে ঘটিয়েছিল প্রায় অনুরূপ ঘটনার পুনরাবৃত্তি। ১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল থেকে ২১ এপ্রিল তিনদিন চট্টগ্রাম ছিল স্বাধীন, ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনমুক্ত। চট্টগ্রামে ওই তিনদিন ব্রিটিশের পতাকার পরিবর্তে উড়েছিল স্বাধীন ভারতবর্ষের পতাকা। একইভাবে ১৯৭১-এর ২৫ মার্চ-পরবর্তী তিনদিন হানাদার পাকিস্তানি জান্তা মুক্ত ছিল চট্টগ্রাম। চট্টগ্রামের সর্বত্র উড়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশের মানচিত্র সংবলিত জাতীয় পতাকা। ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি নিশ্চয় ঘটে না। কিন্তু চট্টগ্রামের ইতিহাসে এই দুই পর্বের ঘটনার যোগসূত্রতা অস্বীকারও করা যাবে না। জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের দুই পর্বের সদৃশ চট্টগ্রামের জন্য যেমন গৌরবের। তেমনি আমাদের ভূ-খন্ডের জন্যও। একাত্তরের মার্চের উত্তাল দিনগুলোতে অবাঙালি বিহারি অধ্যুষিত পাহাড়তলীস্থ অয়্যারলেস কলোনি, শেরশাহ কলোনি এবং ফিরোজশাহ কলোনির অবাঙালিদের বাঙালিবিরোধী নির্মম তাণ্ডবে স্থানীয় বাঙালিরা ক্ষোভে ফেটে পড়েছিল। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতা-সমর্থনে, এমন কি অস্ত্র জোগানের মাধ্যমে অবাঙালি বিহারিদের দৌরাত্ম্যের সীমা-পরিসীমা ছিল না। কৈবল্যধাম মন্দিরসহ হিন্দু স¤প্রদায়ের বাড়িতে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বেপরোয়া হামলা-লুণ্ঠন চালায় তারা। ২ ও ৩ মার্চ রেলওয়ে কলোনি, অয়্যারলেস কলোনি এবং শেরশাহ কলোনি এলাকায় চট্টগ্রামের সামরিক প্রশাসক কর্নেল ফাতেমির নেতৃত্বে পাঠান সেনারা এবং অবাঙালি বিহারিরা যৌথভাবে বাঙালিদের আবাসে-স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ, নারী-শিশু নির্বিশেষে বাঙালি হত্যা সংঘটিত করে। চট্টগ্রামে মার্চের শুরু থেকেই ঘটতে থাকে এমনি নানা অঘটন। অসহযোগ আন্দোলন, হরতাল-অবরোধে বিস্ফোরণোন্মুখ চট্টগ্রামে গঠিত হয় ‘চট্টগ্রাম সংগ্রাম পরিষদ’। স্বাধীনতার জন্য চট্টগ্রাম কলেজ এবং মেডিকেল কলেজে শুরু হয় রাজনৈতিক দীক্ষা ও অস্ত্রের প্রশিক্ষণ। অগণিত ছাত্র-শ্রমিক-জনতা প্রশিক্ষণে অংশ নেয়। স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর প্রশিক্ষণ হয় আগ্রাবাদ স্কুল মাঠে, কলোনি মাঠে, জাতিতাত্তি¡ক জাদুঘর প্রাঙ্গণে। নির্বাচিত জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত চট্টগ্রাম সংগ্রাম পরিষদের আদেশ-নির্দেশেই একাত্তরের মার্চের অগ্নিঝরা দিনগুলোতে চট্টগ্রামের পুরো প্রশাসন পরিচালিত হয়েছিল। পাকিস্তানি সামরিক সরকারের ন্যূনতম নিয়ন্ত্রণ-ভ‚মিকা ছিল না। ১৯৭১-এর ২৫ মার্চের কালরাতে সেনানিবাস, ইপিআর, পুলিশ লাইনসহ দেশজুড়ে পাকিস্তানি হানাদাররা শুরু করে নারকীয় গণহত্যা। নিরস্ত্র ঘুমন্ত বাঙালি সেনা, ইপিআর, পুলিশের ওপর অতর্কিত হামলা ও হত্যাকাণ্ডের ন্যায় চট্টগ্রাম সেনানিবাসেও চালিয়েছিল একই কায়দায় গণহত্যা। প্রকৃতপক্ষে মার্চের শুরুতেই চট্টগ্রামে এমভি সোয়াত জাহাজ থেকে অস্ত্র নামানোকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছিল সর্বস্তরের ছাত্র-জনতার প্রতিবাদ-প্রতিরোধ। ২ মার্চ থেকে ২৪ মার্চ পর্যন্ত সর্বস্তরের জনতার সম্মিলিত প্রতিরোধে এমভি সোয়াত জাহাজ থেকে অস্ত্র খালাস করা সম্ভব হয়নি। বন্দরে নোঙর করা এমভি সোয়াত জাহাজ থেকে অস্ত্র খালাসের বিরুদ্ধে স্থানীয় ছাত্র-জনতা চট্টগ্রাম রেডিও অফিস থেকে দেওয়ানহাট মোড়সহ বন্দরে আসা-যাওয়ার সকল পথে ব্যারিকেড গড়ে তুলেছিল। জনতার সুকঠিন বেষ্টনী ভেদ করে সোয়াত জাহাজের অস্ত্র স্থানীয় অস্ত্রাগারে এবং ঢাকার সেনানিবাসে নেয়া সঙ্গত কারণেই সম্ভব হয়নি। চট্টগ্রাম বন্দরের শ্রমিক সংঘের তৎকালীন সভাপতি এম আর সিদ্দিকীসহ জহুর আহমেদ চৌধুরী, এম এ হান্নান প্রমুখ অস্ত্র খালাসের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ ভ‚মিকা রেখেছিলেন। ২৫ মার্চ রাতে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে ঘুমন্ত ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের বাঙালি সেনাদের ওপর অতর্কিত আক্রমণে হতবিহব্বল বাঙালি সেনারা ঝাঁকে ঝাঁকে গুলির মুখে আত্মরক্ষার্থে ক্রলিং করে কেউ অস্ত্র নিয়ে কেউবা অস্ত্র ছাড়াই রাতের অন্ধকারে পশ্চিমের পাহাড়-জঙ্গল ডিঙিয়ে বহু কষ্টে মিরসরাই-সীতাকুণ্ডের বিভিন্ন লোকালয়ে এসে আশ্রয় নেয় এবং স্থানীয় জনগণের কাছে ঘটনা সবিস্তারে বর্ণনা করে। স্থানীয় মানুষ তাদের আশ্রয়, খাবার ও বিশ্রামের বন্দোবস্তে পূর্ণ সহায়তা করে। সকালেই লোকমুখে নৃশংস ঘটনার সংবাদ মিরসরাই-সীতাকুণ্ড এলাকার সর্বত্র দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। নিশ্চিত মৃত্যুর মুখ থেকে রক্ষা পাওয়া বাঙালি সেনাসদস্যরা স্থানীয়দের মাধ্যমে সংগঠিত হতে থাকে। ওদিকে হালিশহর ইপিআর ক্যাম্পের সদস্যরা এবং সেনানিবাস থেকে ট্যাঙ্কের গোলা ও গুলির মুখ থেকে বেঁচে পালিয়ে আসা সেনাদের সমন্বয়ে চট্টগ্রাম শহরের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে চট্টগ্রাম সংগ্রাম পরিষদ। জাতীয়-প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচিত সদস্যবৃন্দ, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও ছাত্র-জনতার সম্মিলিত অংশগ্রহণে তখন চট্টগ্রাম ছিল সম্পূর্ণরূপে হানাদারমুক্ত। চট্টগ্রামের নিয়ন্ত্রণ পাকিস্তানি হানাদাররা নিতে পারেনি। সেনানিবাসে অবরুদ্ধ থেকেছে। একইভাবে অবরুদ্ধ অবস্থায় বিহারি অধ্যুষিত ফিরোজশাহ কলোনি, শেরশাহ কলোনি এবং অয়্যারলেস কলোনিতে বসবাসকারী অবাঙালি বিহারিরাও। চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র থেকে দুপুরে এবং কালুরঘাট বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র থেকে শেষ বিকেলে স্বাধীনতা ঘোষণা বিপন্ন দেশ-জাতিকে উজ্জীবিত ও নতুন পথের দিশা দিয়েছিল। বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র থেকে সর্বস্তরের জনগণকে যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে লালদীঘি ময়দানে সমবেত হবার আহবান জানালেও; পরবর্তীতে অপর এক ঘোষণায় তা বাতিল করে দেয়া হয়। ২৬ থেকে ২৮ মার্চ দুপুর পর্যন্ত সারা চট্টগ্রাম ছিল হানাদার পাকিস্তানি নিয়ন্ত্রণ মুক্ত। চারদিকে চলছিল প্রতিরোধ যুদ্ধের প্রস্তুতি। ২৮ মার্চ ঢাকা ট্রাঙ্ক রোড ধরে কুমিল্লা সেনানিবাস থেকে আগত বিশাল সাঁজোয়া পাকবাহিনীর আগমনের সংবাদ সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছিল। শুভপুর ব্রিজ থেকে মিরসরাইয়ের বিভিন্ন স্থানে এবং সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়া, কুমিরা, জোড়া-আমতল, মাদামবিবির হাট, ভাটিয়ারী, ফৌজদার হাট, নিউ পতেঙ্গা, পাকিস্তান বাজার, দক্ষিণ সলিমপুরের ঢাকা ট্রাঙ্ক রোডের পূর্ব ও পশ্চিম পাশের সুবিধাজনক স্থানে সেনা ও ইপিআর জোয়ানদের সমন্বয়ে প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নেয়া দলগুলো তাদের পরিমিত গুলি ও হালকা অস্ত্র নিয়ে নিশ্চিত মৃত্যু উপেক্ষা করে কুমিল্লা থেকে আগত পাকিস্তানি বিশাল সাঁজোয়া বাহিনীর বিরুদ্ধে বীর বিক্রমে লড়াই করেছিল। বিশাল সাঁজোয়া বাহিনীর বিরুদ্ধে মাত্র এক-দুই ঘণ্টার বেশি তারা টিকতে পারেনি, পারা সম্ভবও ছিল না। প্রতিরোধ যুদ্ধ ত্যাগে সে দিন একজনেরও আত্মরক্ষার্থে পালিয়ে যাবার নজির দেখা যায়নি। জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে লড়াই করে আত্মদান করেছিল দেশপ্রেমিক প্রতিরোধ যোদ্ধারা। হানাদার বাহিনী যে সকল স্থানে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে সে সমস্ত এলাকা নির্বিচারে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দিয়েছিল। প্রতিরোধ যুদ্ধের বাধা অতিক্রম করে কুমিল্লা থেকে আগত সাঁজোয়া পাকিস্তানি বাহিনী সন্ধ্যার পূর্বেই চট্টগ্রাম শহরে ঢুকে পড়ে এবং ওইদিনই তিনদিনের পাকিস্তানি হানাদার মুক্ত স্বাধীন চট্টগ্রামের পতন ঘটে। পাকিস্তানি হানাদারদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায় স্বাধীন চট্টগ্রাম। ভীতসন্ত্রস্ত শহরের মানুষ পরিবার পরিজন নিয়ে সমুদ্রের তীর-গ্রামের মেঠোপথ ধরে পায়ে হেঁটে আত্মরক্ষার্থে শহর ছেড়ে শহরতলি ও গ্রাম অভিমুখে কাফেলার ন্যায় ছুটে আসে। গ্রামগুলো অপরিচিত লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। স্থানীয়রা যে যার সাধ্যানুযায়ী তাদের সাহায্য-সহযোগিতাসহ আশ্রয় প্রদান করে। সে বছর টমেটো এবং কহির মাত্রাতিরিক্ত ফলনের কারণে মানুষের প্রাণ রক্ষা সহজ হয়েছিল। ভাতের সঙ্গে টমেটোর ঝোল এবং কহির ভাজি-নিরামিষ দুর্গত মানুষের খাদ্যতালিকায় ছিল একমাত্র বস্তু। চট্টগ্রাম শহরের নিয়ন্ত্রণের পরই হানাদার বাহিনী নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। পথ-ঘাট, পাকিস্তানি বিরোধীদের এবং সংখ্যালঘুদের খুঁজে খুঁজে চিনিয়ে দেবার ঘৃণিত কাজে যুক্ত হয় কনভেনশন মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলামী দলের নানা স্তরের নেতাকর্মীসহ বিহারিদের একটি বিরাট অংশ। বাঙালি কারো জীবনই নিরাপদ ছিল না। নিমর্ম হত্যাযজ্ঞে কত মানুষ প্রাণ দিয়েছে তার সংখ্যা কোনোদিন নিরূপণ সম্ভব হয়নি এবং হবারও নয়। চট্টগ্রাম সেনানিবাস থেকে জীবন নিয়ে পালিয়ে আসা ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের এক সেনার কাছে জেনেছিলাম ২৫ মার্চ দিনে তাদের দীর্ঘ সময় মাত্রাতিরিক্ত পিটি, প্যারেড করানো হয়। অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রমে এমনিতেই তারা ছিল ক্লান্ত এবং বিছানায় গিয়েই ঘুমিয়ে পড়ে। সুযোগের মওকায় ঘুমিয়ে থাকা বাঙালি সেনাদের ব্রাশফায়ারে-ট্যাঙ্কের গোলা নিক্ষেপে হত্যা করে এবং অনেকে গুলির শব্দে দিশেহারা হয়ে এদিকে সেদিকে ছুটোছুটিতে গুলিবদ্ধ হয়ে প্রাণ হারায়। সে নিজে এবং অনেকে ক্রলিং করে বহু কষ্টে সেনানিবাস ছেড়ে রাতের অন্ধকারে পাহাড়-জঙ্গল অতিক্রম করে বেহুঁশের মতো এখানে এসেছে। চট্টগ্রাম সেনানিবাস থেকে পশ্চিমের পাহাড় ডিঙিয়ে সে কীভাবে এসেছে নিজেই তা জানে না। সেনাসদস্যটি আরো বলেছিলেন, “পূর্ব পাকিস্তানের সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ বাঙালি অফিসার এবং ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টাল সেন্টারের কমান্ডার বিগ্রেডিয়ার এম আর মজুমদারকে জোরপূর্বক ২৪ মার্চ হেলিকপ্টারে তুলে ঢাকায় নিয়ে গেছে। বিগ্রেডিয়ার মজুমদার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশ অমান্য করে এমভি সোয়াত জাহাজ থেকে অস্ত্র-গোলাবারুদ নামাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। এমন কি নানা কৌশল অবলম্বন করে অস্ত্রবাহী জাহাজের অস্ত্র খালাসে বাধা দিয়েছিলেন।” বিগ্রেডিয়ার মজুমদারের পরিণতি নিয়ে বলেছিলেন তার শঙ্কার কথাও। রাজনৈতিক এবং সামরিক নেতৃবৃন্দের থেকে কোনো বার্তা তাদের না দেয়ায় ক্ষোভও প্রকাশ করেছিলেন। পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতির আশঙ্কা সেই সেনাসদস্য বুঝে ছিলেন সেটা অকপটে স্বীকার করেছিলেন। সেই সেনাসহ বেশ ক’জন সেনা আমাদের ফৌজদারহাটস্থ (দরফ খান) বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। পরবর্তীতে প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নিতে তারা ২৮ তারিখ দুপুরের আগে সেই যে চলে গিয়েছিল আর ফেরেনি। প্রতিরোধ যুদ্ধে তাদের পরিণতি ঘটেছিল অবধারিত মৃত্যু। মৃত্যু উপেক্ষা করে তাদের আত্মদান আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অসামান্য ইতিহাসই বটে। যার সাক্ষী বহন করে আছে নিউ পতেঙ্গার পূর্ব পাশে ফৌজদার হাট ক্যাডেট কলেজ সংলগ্ন আত্মদানকারী কতিপয় বীর যোদ্ধার সমাধিস্থল। হাবিলদার আবুল বাশারের নেতৃত্বে কুড়ি-বাইশজনের দলটি দুইভাগে ভাগ হয়ে একদল ফৌজদার হাটবাজারের দিকে এবং অপর দলটি নিউ পতেঙ্গা সংলগ্ন ঢাকা ট্রাঙ্ক রোডের পশ্চিম পাশের সুবিধাজনক স্থানে-গাছের ওপর পজিশন নিয়ে উত্তর দিক থেকে আগত পাকিস্তানি সাঁজোয়া বাহিনীর বিরুদ্ধে বীর বিক্রমে আমৃত্যু প্রতিরোধ লড়াই চালিয়েছিল। প্রতিরোধ যুদ্ধে আক্রান্ত পাকিস্তানি বাহিনী নির্বিচারে নৃশংস তাণ্ডব চালিয়ে ঢাকা ট্রাঙ্ক রোডের দুই পাশের সকল হাট-বাজার, দোকান-স্থাপনা গান পাউডার ছিটিয়ে আগুনে পুড়িয়ে দেবার কারণে প্রতিরোধ যুদ্ধে আত্মদানকারী সংখ্যাগরিষ্ঠ বীর শহীদদের লাশের চিহ্নও খুঁজে পাওয়ার উপায় ছিল না। স্থানীয় কতিপয় যুবকের অসীম সাহসিকতায় মাত্র ক’জনের মৃতদেহ কবরস্থ করা সম্ভব হয়েছিল। যাঁদের কবর এখনো ফৌজদার হাট ক্যাডেট কলেজ সংলগ্ন ঢাকা ট্রাঙ্ক রোডের পূর্ব পাশে দেয়াল ঘেরা অবস্থায় রয়েছে। প্রতিরোধ যুদ্ধের একমাত্র এই স্মৃতিচিহ্নে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণে সরকারের প্রতি স্থানীয়রা জোর দাবি করে আসছে। মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বপূর্ণ প্রতিরোধ যুদ্ধের ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার জন্য স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ সরকারের এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের আশু কর্তব্য বলেই বিবেচনার দাবি রাখে। নয়তো বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যাবে প্রতিরোধ যুদ্ধে আত্মদানকারী দেশপ্রেমিক বীরদের আত্মত্যাগের বীরত্বপূর্ণ ইতিহাস। যেটি দেশপ্রেমিক কারো কাছেই কাক্সিক্ষত হতে পারে না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App