জমকালো আয়োজনে নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটে বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উদযাপিত
শামীম আহমেদ
প্রকাশ: ২৮ মার্চ ২০১৯, ১০:৩২ এএম
জমকালো আয়োজনে নিউইয়র্কের স্টেট সিনেটে ৮ম বারের মতো পালিত হলো বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। আজ ২৭ মার্চ বুধবার এ উপলক্ষে দিনব্যাপী একাধিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের রাজধানী আলবেনিতে স্টেট সিনেটের ক্যাপিটাল হিল, এ্যাসেম্বলী হল এবং লবি হলের খোলা চত্বরে পৃথক পৃথক আয়োজনে সিনেট ও এ্যাসেম্বলীর স্পিকার, সিনেটর, এ্যাসেম্বলীম্যান ছাড়াও শতাধিক বাংলাদেশী-আমেরিকান রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, সমাজকর্মী, সাংস্কৃতিক কর্মী, ক্রীড়াবিদ, সাংবাদিকসহ প্রবাসীরা উপস্থিত ছিলেন। স্টেট সিনেটর লুইস সেপুল ভিদা ও এসেম্বলীওমেন কারিনাজ রেইসের সহযোগিতায় নিউইয়র্কের ব্রঙ্কসের ১৪টি সংগঠন সম্মিলতভাবে এই বিরল অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
ক্যাপিটাল হিলের উচ্চকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদ সিনেট ও নি¤œকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদ এ্যাসেম্বলী অধিবেশনের আজকের কার্যক্রম পবিত্র কোরআন তেলওয়াতের মাধ্যমে শুরু হয়। তেলওয়াত শেষে আহলে বায়াত মিশন ফাউন্ডেশনের হেড অব ইসলামিক এ্যাফেয়ারর্স মুফতি মোহাম্মদ আনসারুল করিমবিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় এক আল্লাহর অনুশাসন মেনে চলা এবং বিশ্বের সকল মানুষের প্রতি নি:শর্ত এবং নি:স্বার্থ ভালোবাসা এবং অন্যের ভুল-ত্রæটি ক্ষমা করতে নবীজী (সা:) এর নীতিকে গ্রহণ করার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন। একই সঙ্গে ইসলাম কোন সন্ত্রাস এবং জঙ্গীবাদ সমর্থন করেনা বলে তিনি জানান। সিনেট ও এ্যাসেম্বলী অধিবেশনের শুরুতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস পালন উপলক্ষ্যে আলাদা আলাদা রেজুলেশন গৃহীত হয়। রেজুলেশনে বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রেক্ষাপট, মুক্তিযুদ্ধে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসামান্য অবদান, পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বর্বরতম গণহত্যার কথা উল্লেখ করা হয়। পরে উভয় কক্ষের জনপ্রতিনিধিরা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। একই সঙ্গে তাদের বক্তব্যে নিউইয়র্কে মূল ধারার রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ পরিবর্তনে বাংলাদেশী কম্যুউনিটির অর্থপূর্ণ অবদানের উচ্ছ¡সিত প্রংশসা করেন। জনপ্রতিনিধিরা আগামীদিনে আমেরিকান জনগণের সেবা ও তাদের জীবনমান এবং ভাগ্য উন্নয়নে স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে বাংলাদেশী-আমেরিকানদের প্রস্তুতি গ্রহণ করার আহŸান জানান। পরে সিনেট ভবনের লবি হলে শুরু হয় সিনেটর লুইস সেপুলভিদা ও এ্যাসেম্বলীম্যান কারিনাজ রেইস এর আয়োজনে বাংলাদেশ ইনডিপেনডেন্ড ডে সেলিব্রেশন। অনুষ্ঠান উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব নজরুল হকের প্রাণবন্ত সঞ্চালনায় স্বাধীনতা দিবস পালনের এই অসামান্য আয়োজনে আলোচনায় অংশ নেন, সিনেটর লুইস সেপুলভিদা, এসেম্বলীম্যান কারিনাজ রেইস, স্টেট সিনেটর জন লু, জামাল বেইলি, রক্সান প্রসাদ, এ্যাসেম্বলী ম্যান মার্ক ক্রিসপো,ভিক্টর পিচাডো, বাংলাদেশ স্বাধীনতা দিবস উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক মাহবুব আলম, প্রধান সমন্বয়ক আবদুস শহিদ, যুগ্ম আহবায়ক ফরিদা ইয়াসমিন, কোষাধ্যাক্ষ মঞ্জুর চৌধুরী জগলু। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন মূল ধারার রাজনীতিবিদ আইনজীবি এন মজুমদার, রাজনৈতিক নেতা ও সমাজকর্মী আব্দুর রহিম বাদশা, বীর মুক্তিযোদ্ধা তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী, শাহেদ আহমেদ, এ ইসলাম মামুন, মোঃ শামীম মিয়া, জালাল উদ্দিন চৌধুরী, সাপ্তাহিক পরিচয় পত্রিকার সম্পাদক নাজমূল আহসান, টাইম টিভি ও বাংলা পত্রিকার সিইও আবু তাহের, ইউএসএ অনলাইন ও জনতার কন্ঠের সম্পাদক শাখাওয়াত সেলিম, বাংলাদেশ ডে উদযাপন কমিটির সদস্য সাইদুর রহমান লিংকন, সাধারন সম্পাদক পল্লব সরকার।
এ সময় আমেরিকান সমাজ ও কম্যুউনিটিতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার জন্য বেশ কয়েকজন বাংলাদেশী-আমেরিকানের হাতে প্রক্লেমেশন ও এ্যাচিভমেন্ট সার্টিফিকেট তুলে দেন সিনেটর ল্ইুস সেপুলভিদা ও এসেম্বলীম্যান কারিনাজ রেইস। এরপর ফরিদা ইয়াসমিনের নেতৃত্বে নিউইয়র্কের আলোচিত সাংস্কৃতিক সংগঠন বাংলাদেশ একাডেমি অব ফাইন আর্টের (বাফা) শিল্পীদের পরিবেশনায় শুরু হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। তাদের নাচ, গান, আর কবিতা আবৃত্তি দর্শকদের অবিভ‚ত করে।
এর আগে সকাল ৯টায় নিউইয়র্কের ব্রঙ্কস থেকে দুটি বাসে করে আয়োজক ১৪টি সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার শতাধিক প্রবাসী বাংলাদেশী নিউইয়র্কের রাজধানী শহর আলবেনির উদ্দেশ্যে রওয়ানা করেন। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে বাস দুটি ক্যাপটাল হিলে পৌচ্ছলে সিনেটর লুইস সেপুলভিদা ও তার ব্যক্তিগত ৫ কর্মকর্তা আগতদের স্বাগত জানান। নিরাপত্তা তল্লাশি শেষে প্রথমে অতিথিদের নিয়ে যাওয়া হয় এ্যাসেম্বলীর অধিবেশন কক্ষে। প্রত্যেকের গলায় লাল সবুজ রঙের উত্তরীয় এবং গায়ে জড়ানো স্বাধীনতার পোশাক এক বিরল দৃশ্যের অবতারনা হয়। সেখানকার আনুষ্ঠানিকতা ও দুপুরের খাবারের বিরতির পর উৎসব মুখর পরিবেশে সিনেট অধিবেশন কক্ষে প্রবেশ করেন প্রবাসী বাংলাদেশীরা। সেখানেও এ্যাসেম্বলী অধিবেশনের মতোই পবিত্র কোরআন তেলওয়াতের মাধ্যমে অধিবেশন শুরু হয়।
সকালে যাত্রা পথে বাসের মধ্যে শামীম মিয়ার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন, মাহবুবুল আলম, আব্দুস শহিদ, জুনেদ আহমেদ চৌধুরী, আব্দুর রহিম বাদশা, ব্রঙ্কসের প্রথম মহিলা সংগঠনের বাফার ফরিদা ইয়াসমিন, বীর মুক্তিযোদ্ধা তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী, বাংলাদেশ সোসাইটি অব ব্রঙ্কস এর সভাপতি শাহেদ আহমেদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু কাউসার চিশতি, বাংলা পত্রিকা ও টাইম টিভির সিইও আবু তাহের, পরিচয় পত্রিকার সম্পাদক নাজমুল আহসান, কম্যুউনিটি এ্যাক্টিভিস্ট মোতাসিম বিল্লাহ তুষার, ইউএসএ নিউজ অলাইন ও জনতার কন্ঠের সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন সেলিম, পার্কচেষ্টার জামে মসজিদের সভাপতি আলাউদ্দিন, খালেদ আহমেদ ও ফাতিহা বেগম, ঢাকা ব্যাংকের ম্যানেজার আনোয়ার হোসেন রনি, প্রফেসর আমিনুল হক চুন্নু, আলী আহমেদ।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ২৪ মার্চ ব্রঙ্কেসের হোয়াইট প্লেইনস রোডের বেঙ্গল রেস্টুরেন্টে নিউইয়র্ক প্রবাসী বাংলাদেশীদেও এক অনুষ্ঠানে নিউইয়র্কে বহুল পরিচিত প্রয়াত সমাজকর্মী ও ব্যবসায়ী তৎকালীন স্টেট সিনেটর রুবিন ডিয়াজের কাছে স্টেট সিনেটে বাংলাদেশ ইনডিপেনডেন্ড ডে পালনের প্রস্তাব করেন। ওই প্রস্তাব গ্রহণ করে রুবিন ডিয়াজ বাংলাদেশী কম্যুউনিটির জন্য এই অসামান্য সুযোগ সৃষ্টি করে দেন। ওই সভায় মূল ধারার রাজনীতিবিদ আব্দুস শহিদ, মাহবুব আলম, এন মজুমদার, নজরুল হকসহ বহুসংখ্যক কম্যুউনিটি এ্যাক্টিভিস্ট জাকির খানের সঙ্গে এই কন্ঠে কন্ঠ মিলিয়ে এই প্রস্তাবের পক্ষে সমর্থন জোগান।