×

মুক্তচিন্তা

এমন হত্যা কাম্য নয়

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ মার্চ ২০১৯, ০৮:২৪ পিএম

দেশে রাজনৈতিক কারণে খুনোখুনির ঘটনা কমেছে। তবে বেড়েছে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড। কক্সবাজার, টঙ্গী ও রাজধানী ঢাকায় একই রাতে র‌্যাব, পুলিশ ও বিজিবির সদস্যদের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে ছয়জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে কক্সবাজারের টেকনাফে নিহত দুজনকে মাদক কারবারি এবং পেকুয়ায় নিহত দুজনকে জলদস্যু বলে দাবি বিজিবি ও র‌্যাবের।

অন্যদিকে রাজধানীর ভাসানটেকে নিহত নরসিংদীর এক ব্যক্তিকে সন্ত্রাসী বলে দাবি করছে র‌্যাব। আর টঙ্গীতে নিহত ব্যক্তিকে ছিনতাইকারী বলছে পুলিশ। ঘটনাগুলো গত মঙ্গলবার রাতে ঘটেছে। বিচারবহির্ভূত এমন হত্যাকাণ্ড আমরা চাই না। এই সংস্কৃতি থেকে উত্তরণের পথ বের করতে হবে। জানা গেছে, গত বছর ডিসেম্বর মাসে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন নয়জন।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে চারজন। গত বছরের ডিসেম্বরে অরাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের শিকার ২২৮ জন। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৩২৫ জন। এনকাউন্টারে গত ডিসেম্বরে নিহত হয়েছেন দুজন। চলতি বছরের জানুয়ারিতে নিহত হয়েছে পাঁচজন। গত মঙ্গলবার একরাতে ছয়জন নিহত হয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বরে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ১৯৬টি।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ২৭৬টি। একই সময়ে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ৬১৬ থেকে বেড়ে ৭৯৩টি হয়েছে। এ ছাড়া পারিবারিক দ্বন্দ্ব, প্রেমে ব্যর্থতা, অভিমান, রাগ ও যৌন হয়রানি, পরীক্ষায় খারাপ ফলাফল, এমনকি পছন্দের পোশাক কিনতে না পারার কারণেও আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হচ্ছে।

সমাজে বেড়ে চলেছে এমন অপরাধ। অন্যদিকে সমাজে ভোগবাদী প্রবণতা বাড়াও এর একটি কারণ। সমাজের একাংশ এতটাই ভোগবিলাসী জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে যে, এই সমাজে পারিবারিক কাঠামো থাকলেও তা নামমাত্র। কোনো ধরনের স্বাভাবিক বোঝাপড়া তাদের মধ্যে নেই। ফলে বাবা-মা-সন্তানের মধ্যেও স্নেহের বন্ধন দুর্বল হয়ে যাচ্ছে।

এ ছাড়া চলচ্চিত্র এবং সমাজ বাস্তবতা থেকেও অপরাধের পাঠ নিচ্ছে কিশোর-তরুণরা। অনুকরণের মাধ্যমেও অনেক অপরাধ ঘটছে। এ পরিস্থিতি সামাল দিতে পারিবারিক বন্ধন জোরদার করতে মনোবিজ্ঞানীরা জোর দিচ্ছেন। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বোঝাপড়া বাড়াতে হবে। চাহিদা এবং প্রাপ্তির মধ্যে ব্যবধান কমাতে হবে।

ছোটবেলা থেকেই সন্তানকে নৈতিক শিক্ষা এবং সামাজিক মূল্যবোধ সম্পর্কে শিক্ষা দিতে হবে। ধর্মীয় ও সামাজিক আচার-অনুষ্ঠান এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক তৎপরতা বাড়াতে সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে।

সমাজে বিদগ্ধজন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং বেসরকারি সংস্থা এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। পারিবারিক, সামাজিক অস্থিরতা দেশের আইনশৃঙ্খলার জন্য যেমন অশনি সংকেত হয়ে দেখা দিচ্ছে তেমনি অবক্ষয়ের চরম অবস্থার জানান দিচ্ছে। এ অবস্থা থেকে রক্ষা পেতে পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধ পুনঃপ্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই।

পাশাপাশি আমরা সামাজিক অপরাধের বিরুদ্ধে যেমন ধিক্কার জানাই, তেমনি বন্দুকযুদ্ধ নামক বিনা বিচারে হত্যার প্রতিবাদ জানাই।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App