×

জাতীয়

স্বাধীনতা দিবস আজ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ মার্চ ২০১৯, ১০:৩১ এএম

স্বাধীনতা দিবস আজ
‘পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত জ্বলন্ত/ঘোষণার ধ্বনি-প্রতিধ্বনি তুলে/ নতুন নিশান উড়িয়ে, দামামা বাজিয়ে দিগি¦দিক/ এই বাংলায় / তোমাকে আসতেই হবে, হে স্বাধীনতা।’ একাত্তরের ২৬ মার্চ তমসাঘন অন্ধকার রাত্রি পেরিয়ে দিগ্বিদিক যুদ্ধের দামামা বাজিয়ে বাংলায় এসেছিল স্বাধীনতা। পরাধীনতার শেকল ভেঙে অমূল্য ঐশ্বর্য, অনন্য সম্মান স্বাধীনতার সূর্যকে ছিনিয়ে আনতে তিরিশ লাখ মুক্তিকামীর রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল বাংলার সবুজ ঘাস। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, সুরমা পেরিয়ে রক্তের ধারা মিশে গিয়েছিল বঙ্গোপসাগরে। ভয়াল কালরাত্রির পোড়া মাটি, লাশ আর জননীর কান্না নিয়ে রক্তে রাঙা নতুন সূর্য উঠেছিল এদিন। রাতের চুপিসারে হানা দেয়া মৃত্যু আর ধ্বংসস্ত‚পের ভেতর দিয়ে রক্তিম সেই নতুন সূর্য। ভীতবিহ্বল মানুষ দেখল লাশপোড়া ভোর। আকাশে কুণ্ডুলী পাকিয়ে উঠছে ধোঁয়া। পুড়ছে স্বাধীন বাংলার মানচিত্র আঁকা লাল-সবুজ পতাকা। জ্বলছে মায়ের শাড়ি, বোনের রঙিন জামা। চোখে জল। বুকে আগুন। জ¦লে উঠল মুক্তিকামী মানুষের চোখ, গড়ে তুলল প্রতিরোধ। মৃত্যুভয় তুচ্ছ করে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে ট্যাঙ্কের সামনে এগিয়ে দিল সাহসী বুক। সময়ের হাত ধরে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে নতুন সূর্যোদয়ের সেই দিন আজ। দুইশ বছরের দাসত্ব আর ২৪ বছরের শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে নিজেকে মুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস নেয়ার দিন। আজ মহান ২৬ মার্চ। বাঙালির স্বাধীনতা দিবস। নানা আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ মর্যাদাশীল অসাম্প্রদায়িক, জঙ্গিবাদমুক্ত গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার শপথ নেবে জাতি। ইতিহাস গড়ার ইতিহাস : বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের বিজয় অর্জনের ইতিহাস শুধু একাত্তরেই সীমাবদ্ধ নয়। দীর্ঘ সংগ্রাম আর ত্যাগের ফসল। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের এক বছরের মধ্যেই রাষ্ট্রভাষা প্রশ্নে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী আঘাত করে আমাদের মাতৃভাষা বাংলার ওপর। শুরু হয় শোষণ-বঞ্চনার করুণ ইতিহাস। বিক্ষুব্ধ বাঙালির জাতীয় চেতনার প্রথম স্ফুরণ ছিল ‘উর্দুই পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা’ ১৯৪৮ সালে ঢাকায় জিন্নাহর এমন ঘোষণার প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে, যা বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারি রক্তাক্ত পরিণতি পায়। ১৯৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট, ’৬৬-এর ৬ দফা, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান এবং ’৭০-এর নির্বাচনে বিজয় ছিল জাতির আকাক্সক্ষার প্রতিফলন। পাকিস্তানি শাসকচক্র ওই বিজয় প্রত্যাখ্যান করলে একাত্তরের ১ মার্চ থেকে বঙ্গবন্ধুর ডাকে অসহযোগ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ঘনিয়ে আসে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসমুদ্রে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বজ্রকণ্ঠে উচ্চারিত হয় স্বাধীনতার অমোঘ বাণী, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে মূলত সেদিনই মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু হয়। কিন্তু বাঙালিকে স্তব্ধ করতে ২৫ মার্চ কালরাতে ইতিহাসের জঘন্যতম গণহত্যায় মেতে উঠে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা। মধ্যরাতে গ্রেপ্তার করা হলো বঙ্গবন্ধুকে। পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তারের আগ মুহূর্তে মধ্যরাতে অর্থাৎ ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে ধানমন্ডির বাসভবন থেকে বঙ্গবন্ধু আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। শুরু হয় হানাদারদের কবল থেকে দেশকে মুক্ত করার চূড়ান্ত প্রতিরোধ লড়াই মুক্তিযুদ্ধ। নয় মাস ধরে চলা সে মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্বিচার গণহত্যা, নারী ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ আর লুটপাটের কলঙ্কিত অধ্যায়ের বিপরীতে রচিত হয়েছিল ইতিহাসের আরেকটি মহান অধ্যায়। সে অধ্যায়ে ছিল মুক্তিকামী বাঙালির অসম সামরিক শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধজয়ের বীরত্বগাথা। ১৭ এপ্রিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি করে গঠিত হয় স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী সরকার। অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে পরিচালিত মুক্তিযুদ্ধ সফলতার দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ৩০ লাখ প্রাণের বিনিময়ে আসে বিজয়। ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ডের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজির নেতৃত্বে বিকেল ৪টা ৩১ মিনিটে আত্মসমর্পণ করে ৯১ হাজার ৫৪৯ হানাদার সেনা। পৃথিবীর মানচিত্রে জন্ম নেয় বাংলাদেশ নামে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। বাঙালি জাতি পায় লাল-সবুজের একটি জাতীয় পতাকা, জাতীয় সঙ্গীত এবং মানচিত্র। কর্মসূচি : মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশে বাণী দিয়েছেন। পৃথক পৃথক বাণীতে তারা দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও শোষণমুক্ত সুখী-সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। এ লক্ষ্যে সবাইকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সরকারি কর্মসূচির পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সূর্যোদয়ের লগ্নে তেজগাঁও পুরনো বিমানবন্দর এলাকায় ২১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিনের কর্মসূচির সূচনা হবে। সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী সূর্যোদয়ের লগ্নে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। এরপর শ্রদ্ধা জানাবে বিভিন্ন দল, সংগঠন ও সর্বস্তরের মানুষ। আওয়ামী লীগের কর্মসূচি : সূর্যোদয়ের ক্ষণে বঙ্গবন্ধু ভবন, কেন্দ্রীয় ও দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা জানানোর পর জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন। সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানানো। সকাল ১০টায় টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধিতে শ্রদ্ধা জানানো। পরদিন বুধবার বিকেল সাড়ে ৩টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভা। এতে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App