×

অর্থনীতি

৩ বছরে কর অব্যাহতি দ্বিগুণ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ মার্চ ২০১৯, ০১:০৬ পিএম

৩ বছরে কর অব্যাহতি দ্বিগুণ
শিল্প খাতে কর অব্যাহতির পরিমাণ তিন বছরে দ্বিগুণ হয়েছে। যার কারণে রাজস্ব আদায়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে কর অব্যাহতির প্রভাব মূল্যায়ন করার আহবান জানানো হয়েছে। অব্যাহতিপ্রাপ্ত খাতের মূল্যায়ন হওয়া জরুরি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। একই সঙ্গে কর অব্যাহতির সময় নির্দিষ্ট করে দেয়ার কথাও বলেছেন তারা। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বিভিন্ন শিল্প খাতে ৪৪ হাজার ১১৭ কোটি টাকার কর অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, এটি সরকারি ব্যয়। সরকার এই অর্থ সাধারণ মানুষের জন্য ব্যয় করতে পারত। রাজস্ব বৃদ্ধির ধীরগতির পেছনের প্রধান কারণগুলোর এটি একটি। কর ব্যয় যুক্তিসঙ্গত পর্যায়ে রাখতে হবে। অন্যথায়, এটি ধারাবাহিকভাবে বাড়বে এবং তারপর রাজস্বের জন্য সমস্যা তৈরি করতে পারে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তারা বলেন, অতীতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেমন বস্ত্র, টেক্সটাইল, ফার্মাসিউটিক্যালস, পোল্ট্রি, মোবাইল ও কম্পিউটার তৈরি এবং জাহাজ নির্মাণের ক্ষেত্রে কর ছাড় দেয়া হতো না। যার কারণে সেই সময়ে এসব খাত থেকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব পেয়েছে সরকার। কিন্তু প্রতি বছর রেকর্ড কর অব্যাহতি দেয়ার কারণে রাজস্ব আদায়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। গত বছর কর ছাড় উপভোগের শীর্ষে ছিল মূলধন যন্ত্রপাতি, প্রতিরক্ষা আইটেম এবং শিল্প কাঁচামাল। ত্রাণসামগ্রী আমদানি, ক‚টনৈতিক মিশন কর্তৃক পণ্য আমদানি এবং সংসদ সদস্যদের গাড়ি আমদানির জন্য মোটা অঙ্কের রাজস্ব ছাড় দিতে হয় সরকারকে। কর্মকর্তারা বলছেন, রাজস্ব হারানো পরিমাণ হিসাব করা হয়েছে পূর্বঘোষিত কর ছাড়ের খাত বাদে। তারা বলেন, আয়কর ও ভ্যাটের কর অবকাশ বিবেচনায় নেয়া হলে সামগ্রিক কর অব্যাহতির পরিমাণ অনেক বেশি হবে। আমদানির জন্য শুল্ক ছাড়ের পরিমাণ ২০১৪-১৫ অর্থবছরে মোট কর সংগ্রহের ১৭ শতাংশ ছিল। এই হার বাড়তে শুরু করে ২০১৬-১৭ অর্থবছর থেকে। গত অর্থবছরে এই হার বেড়ে দাঁড়ায় ২২ শতাংশ। আহসান এইচ মুনসুর বলেন, পূর্ববর্তী বছরে কর ব্যয়ের মোট পরিমাণ সম্পর্কে বাজেটে স্পষ্ট বক্তব্য থাকা উচিত। সরকারের উচিত সংসদ সদস্যদের নোটিস দিয়ে এ খাতে কী পরিমাণ অর্থ ব্যয় হচ্ছে সেটি জানানো। দ্বিতীয়ত, প্রস্তাবিত কর অব্যাহতির জন্য নতুন কর ব্যয় কত হবে তা সরকারকে অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে। করের ব্যয়ের প্রতিটি আইটেম পরিষ্কার করতে হবে। না হলে এই অর্থ সম্পূর্ণ আলোচনার বাইরে থাকবে। এ মুহূর্তে এ বিষয়ে সচেতনতা নেই উল্লেখ করে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, তথ্য প্রকাশ করা হলে সরকার, আইন প্রণেতারা এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্যরাসহ সবাই বিভিন্ন ছাড়ের ফলে করের ব্যয় সম্পর্কে সচেতন হবে। তিনি প্রতিটি খাতে প্রদেয় কর ছাড়ের মূল্যায়ন এবং প্রতি তিন বছরে শিল্পায়নের ওপর এর প্রভাব মূল্যায়ন করার আহবান জানিয়ে বলেন, কোন খাতকে কত বছর ধরে কর সুবিধা দেয়া উচিত সে বিষয়ে একটি নীতি থাকা উচিত। কিন্তু আমাদের এমন কিছুই নেই। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সিনিয়র গবেষক তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, আমদানি ব্যয় বাড়ার পাশাপাশি কর অব্যাহতিও বাড়ছে। প্রায়শই বাংলাদেশে করের ছাড়পত্র যথাযথ যাচাই ছাড়াই দেয়া হয়। এর জন্য কর ব্যয় ও সুবিধা পর্যালোচনা করা হয় না। বাংলাদেশের নিম্ন কর-জিডিপি অনুপাতের পরিপ্রেক্ষিতে, এই কর ছাড় পুনর্বিবেচনা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এদিকে এনবিআর সূত্রে জানা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে আমদানি পর্যায়ে কর ছাড়ের পরিমাণ ২৭ হাজার ১০৮ কোটি টাকা, যা মোট কর সংগ্রহের ২৩ শতাংশ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App