×

জাতীয়

রেকর্ড কিপারের সুদ ব্যবসায় সর্বশান্ত ব্যবসায়ীরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ মার্চ ২০১৯, ১২:২৮ পিএম

রেকর্ড কিপারের সুদ ব্যবসায় সর্বশান্ত ব্যবসায়ীরা
সিরাজগঞ্জের অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট (দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল) আদালতের রেকর্ড কিপার আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে রমরমা সুদের ব্যবসার অভিযোগ উঠেছে। তার কারনে সিরাজগঞ্জ শহরের অন্তত: ২০জন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এখন ভবঘুরে। টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় বর্তমানে প্রত্যেকের মাথার উপরে ঝুলছে একাধিক মামলা। রোববার সকালে শহরের “মিডিয়া হোমে” ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করেন। লিখিত বক্তব্যে শহরের “চারুতা” কাপড়ের ব্যবসায়ী আরিফুল ইসলাম রাজু অভিযোগ করে বলেন, আমিনুল ইসলাম আদালতের রেকর্ড কিপারের পাশাপাশি তার নামে মেসার্স গুলে জান্নাত ট্রেডার্স নামে একটি ট্রেড লাইন্সেস আছে। ওই ট্রেড লাইন্সেসের প্যাড ব্যবহার করে তিনি সুদের ব্যবসা করে থাকেন। আমি নিজেও ব্যবসা করার জন্য আমিনুল ইসলামের কাছ থেকে ৩০০টাকার নন-জুডিশিয়াল সাদা ষ্ট্যাম্পে সই দিয়ে ও সাদা চেক প্রদান করে শতকরা ১৫ টাকা হারে সুদে ৩ লাখ ৪৫ হাজার টাকা নিয়েছিলাম। এ পর্যন্ত ৮ লাখ টাকা সুদ দিয়েছি এবং আসল টাকার মধ্যে ফেরত দিয়েছি ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। অথচ বাকি টাকার জন্য সে আমার বিরুদ্ধে ১৭ লাখ টাকার একটি মামলা করেছেন। তিনি আরও বলেন, আমিনুল ইসলামের সহযোগী সাব জজ (চৌহালী) আদালতের জারী কারক এবং বর্তমানে প্রেশনে যুগ্ন জেলা ও দায়রা জজ (২য়) আদালতের নিম্মমান সহকারী হিসাবে কর্মরত শামিমা আরজু রুনুকে দিয়েও সে ১৮ লাখ টাকা দাবীর একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করেছেন। যে কারনে আমি এখন সর্বশান্ত। পাশাপাশি মাথার উপরে ঝুলছে ২টি মামলা। সংবাদ সন্মেলনে উপস্থিত শহরের এস,এস রোডের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী রাসেল আহম্মেদ অভিযোগ করে বলেন, ৩০০টাকার নন-জুডিশিয়াল সাদা ষ্ট্যাম্পে সই দিয়ে ও সাদা চেক প্রদান করে ব্যবসা করার জন্য আমিনুল ইসলামের কাছ থেকে সুদে ২০ হাজার টাকা নিয়েছিলাম। সুদাসলে সব টাকা পরিশোধ করেছি। আরও মাত্র ৫ শত টাকা পাবে। তারপরও ওই সাদা ষ্ট্যাম্প ও সাদা চেক ব্যবহার করে আমার বিরুদ্ধে সে দেড় লাখ টাকা জালিয়াতির মামলা করেছে। লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, সরকারী চাকুরীর পাশাপাশি রমরমা সুদের ব্যবসা করে আমিনুল ইসলাম ইতোমধ্যেই বেশ কয়েকটি বসতবাড়ি ও কোটি কোটি টাকার ধন-সম্পদের মালিক হয়েছেন। তার মালিকানায় ঢাকার ডেমরাতে একটি, সিরাজগঞ্জ শহরের দিয়ারধানগড়া ও কাজিপুর মোড়ে ২টি, বগুড়ার সেনানিবাস এলাকায় একটি ও তার নিজ গ্রাম কাজিপুরের সূবর্ণগাতিতে একটি মোট ৫টি বসতবাড়ি রয়েছে। এছাড়াও প্রায় কোটি টাকা মূল্যের ২৫/৩০ একর জাগয়া রয়েছে তার। পাশাপাশি সুদের ব্যবসার টাকা আদায়ের নামে সে এ পর্যন্ত প্রায় ২০জন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে অন্তত: ১৫টি মামলা দায়ের করেছেন। তার ক্ষমতার দাপটের কারনে এ সকল ব্যবসায়ীরা এখন সর্বশান্ত। এ সকল বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে অন্তত: ৮জন ব্যবসায়ী যুগ্ন সচিব, আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রনালয়, যুগ্ন সচিব (প্রশাসন) জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়, জেলা প্রশাসক-সিরাজগঞ্জ, জেলা ও দায়রা জজ-সিরাজগঞ্জ এবং দুর্নীতি দমন কমিশনসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে পত্র প্রেরণ করেছেন বলে সংবাদ সন্মেলনে জানানো হয়। সুদের ব্যবসার অভিযোগ অস্বীকার করে আদালতের রেকর্ড কিপার ও সিরাজগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেসি সরকারী কর্মচারী কল্যাণ সমিতির সভাপতি আমিনুল ইসলাম জানান, সরকারী চাকুরীর পাশাপাশি আমার গার্মেন্টস ব্যবসা রয়েছে। সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছে মূলত: গার্মেন্টস পন্য সরবরাহ করে থাকি। অনেকের সাথে পাটনারে ব্যবসা রয়েছে। লেনদেনগুলো মূলত ব্যবসা সংশ্লিষ্ট। সরকারী চাকুরী করার কারনে ঝামেলা এড়াতে কোন শো-রুম করা হয়নি। গ্রামে ও শহরে মিলে আমার ২টি বাড়ি রয়েছে। অন্যগুলো আত্বীয়-স্বজনের। কাউকে হয়রানী করার জন্য মামলা করিনি। পাওনা টাকা উত্তোলনের জন্য মামলা করেছি। আমিনুলের সহযোগী সাব জজ (চৌহালী) আদালতের জারী কারক এবং বর্তমানে প্রেশনে যুগ্ন জেলা ও দায়রা জজ (২য়) আদালতের নিম্মমান সহকারী হিসাবে কর্মরত শামিমা আরজু রুনু জানান, আমি আমিনুল ভাইয়ের সাথে পাটনারে ব্যবসা করি। জমি ক্রয়ের জন্য নিজে ৬ লাখ ও আমিনুল ভাই ১২ লাখ মিলে ব্যবসায়ী আরিফুল ইসলাম রাজুকে ১৮ লাখ টাকা দিয়েছি। এ সংক্রান্ত বিষয়ে ৩০০ টাকার ষ্ট্যাম্পে অঙ্গীকারনামা আমাদের কাছে সংগ্রহিত রয়েছে। যা দিয়ে মামলা করেছি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App