×

অর্থনীতি

বিপথে মিউচুয়াল ফান্ড

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ মার্চ ২০১৯, ১২:৫৭ পিএম

বিপথে মিউচুয়াল ফান্ড
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত মিউচুয়াল ফান্ড বিপথে পরিচালিত হচ্ছে। বাইরের দেশে মিউচুয়াল ফান্ড শেয়ারবাজারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যারা শেয়ারবাজার ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করে বিনিয়োগ করতে পারেন না, তারা সাধারণত মিউচুয়াল ফান্ডের মাধ্যমে বিনিয়োগ করেন। কিন্তু বাংলাদেশে মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। তালিকাভুক্ত অধিকাংশ মিউচুয়াল ফান্ডই রয়েছে দুরবস্থার মধ্যে। ফলে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের শেষে রয়েছে এসব ফান্ড। এর ফলে নতুন বা সাধারণ বিনিয়োগকারীরা প্রতিনিয়ত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) তালিকাভুক্ত ৩৮টি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৩২টি ফান্ডের বাজার মূল্য অবহিত মূল্যের নিচে। তালিকাভুক্তির পর থেকে লসের মধ্যে নিমজ্জিত ফান্ডের সংখ্যাই বেশি। যার কারণে মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করে বিনিয়োগকারীরা কোনো মুনাফা পাচ্ছে না। পুুঁজিও হারাতে হচ্ছে। যার কারণে নতুন বিনিয়োগকারী বাজারে আসছে না। আসলেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। মিউচুয়াল ফান্ডের দুরবস্থার জন্য বাজার পরিস্থিতি যেমন দায়ী তেমন ফান্ড ব্যবস্থাপকদের দায়ও কম নয় বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। একই সঙ্গে নিয়ন্ত্রক সংস্থার দিকেও আঙুল তুলছেন অনেকে। কারণ আগে অনুমোদন দেয়া ফান্ড লাভজনক করতে না পারলেও একই ম্যানেজারকে একাধিক মিউচুয়াল ফান্ড পরিচালনার অনুমোদন দিচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটি এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। তবে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বর্তমানে শেয়ারবাজারের সবচেয়ে বড় সমস্যা ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী নির্ভরতা। এ বিষয়ে বিএসইসির চেয়ারম্যান খায়রুল হোসেন সম্প্রতি বলেছেন, বাংলাদেশের শেয়ারবাজার এখনো ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীনির্ভর, যা বাজারের মূল সমস্যা। বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান মির্জা আজিজুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী নির্ভরতা এবং মিউচুয়াল ফান্ডের কার্যকার ভূমিকা রাখতে না পারা বাজারের টানা পতনের একটি কারণ হতে পারে। তবে আমি মনে করি, এ সমস্যার সমাধানের জন্য বাজারে ভালো ভালো শেয়ার আনতে হবে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. বখতিয়ার হাসান বলেন, বাইরের উন্নত শেয়ারবাজারে দেখা যায় মিউচুয়াল ফান্ড খুব ভালো রিটার্ন দেয়। বাজারের রিটার্ন থেকে মিউচুয়াল ফান্ডের রিটার্ন অনেক বেশি। কিন্তু বাংলাদেশে দেখা যায় মার্কেটের রিটার্নের থেকেও মিউচুয়াল ফান্ডের রিটার্ন কম। ফলে বিনিয়োগকারীরা মিউচুয়াল ফান্ডে আগ্রহ দেখায় না। আবার মিউচুয়াল ফান্ডের মূল কাজ বিনিয়োগ করা হলেও, এখানে ফান্ডগুলো ট্রেডিংনির্ভর। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মিউচুয়াল ফান্ডের এ দুরবস্থার কারণ হলো- ফান্ড ম্যানেজাররা চরমভাবে ব্যর্থতার পরিচয় দেন। তাদের দক্ষতার অভাব রয়েছে, রয়েছে প্রফেশনাল লোকেরও অভাব। অথচ মিউচুয়াল ফান্ড কার্যকর ভ‚মিকা রাখতে পারলে বাজারের এমন পতন হতো না। বাইরের দেশে দেখা যায়, বাজারের ৩০-৪০ শতাংশই মিউচুয়াল ফান্ড। সুতরাং এ মিউচুয়ার ফান্ড বিক্রির চাপ না বাড়ালে বাজারে সেল (বিক্রি) প্রেসার কম থাকে। ডিএসইর সাবেক এক সভাপতি বলেন, আমাদের দেশে মিউচুয়াল ফান্ড লভ্যাংশ হিসাবে বোনাস শেয়ার দেয়। কিন্তু বাইরের দেশে মিউচুয়াল ফান্ড বোনাস বা স্টক লভ্যাংশ হিসাবে দেয় না। একমাত্র বাংলাদেশেই মিউচুয়াল ফান্ড লভ্যাংশ হিসাবে স্টক দেয়। এটি সম্পূর্ণ মিনিংলেস (অর্থহীন)। মিউচুয়াল ফান্ডের স্টক দেয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে। ডিবিএ সভাপতি শাকিল রিজভি বলেন, আমাদের বাজারে মিউচুয়াল ফান্ডগুলো খুব একটা ভ‚মিকা রাখতে পারছে না। ফলে মিউচুয়াল ফান্ডের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ কম। মিউচুয়াল ফান্ড যাতে বাজারে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে, সেজন্য উদ্যোগ নিতে হবে। বোনাস দেয়ার পথ বন্ধ করতে হবে। ডিএসইর সাবেক পরিচালক খুজিস্তা নূর-ই-নাহরিন বলেন, আমাদের দেশে মিউচুয়াল ফান্ডগুলো তাদের পক্ষে নিয়ম-কানুন করেছে। বাইরের দেশে মিউচুয়াল ফান্ডের সম্পূর্ণ অংশ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে। কিন্তু আমাদের দেশে এর একটি মাত্র অংশ বিনিয়োগ করতে পারে। এ কারণে মিউচুয়াল ফান্ডগুলো এখানে ওইভাবে সাপোর্ট দিচ্ছে না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App