×

অর্থনীতি

বন্ডেড পণ্যের অপব্যবহার রোধে অটোমেশন প্রকল্প নিচ্ছে সরকার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ মার্চ ২০১৯, ১২:০৯ পিএম

বন্ডেড পণ্যের অপব্যবহার রোধে অটোমেশন প্রকল্প নিচ্ছে সরকার
বন্ড সুবিধার অপব্যবহার রোধে মাঠে নেমেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এ লক্ষ্যে বন্ডের আওতায় আমদানি করা পণ্য পাচার বা খোলাবাজারে বিক্রি বন্ধে বন্ড অটোমেশন প্রকল্প নিতে যাচ্ছে সরকার। এ লক্ষ্যে সম্প্রতি স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠকসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে এনবিআর। এদিকে অসাধু চক্রের অপতৎপরতা মোকাবেলায় দীর্ঘদিন ধরে দেশীয় শিল্প কারখানার মালিকরা বন্ড সুবিধার অপব্যবহার রোধে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানিয়ে আসছেন। এনবিআরের গ্রেড-১ এর মেম্বার সুলতান মো. ইকবাল সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছে, বন্ড সুবিধার অপব্যবহার রোধে আমরা জিরো টলারেন্স নীতিতে কাজ করছি। যারা বন্ড সুবিধার অপব্যবহার করেছেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে এ সুবিধাকে আধুনিকায়ন বা অটোমেশন করা হবে। এ বিষয়ে গত সপ্তাহে একটি প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এখন আমরা প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছি। এ বিষয়ে গবেষণা করা হচ্ছে। এ জন্য সাইনেসিস নামে একটি আইটি ফার্মকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ফার্মটি বিশে^র অন্যান্য দেশ কীভাবে বন্ড সুবিধা দেয় সে বিষয়ে গবেষণা করে মতামত দেবে। তিনি বলেন, বন্ড খাতে অটোমেশন বাস্তবায়ন করতে আমাদের অন্তত ২ বছর সময় লাগবে। আর বাস্তবায়ন করতে পারলে আমাদের সেবা খাতে নানা অভিযোগ আর থাকবে না। পাশাপাশি শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করা পণ্য খোলাবাজারে যাওয়াও বন্ধ হবে। সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরেই এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী বন্ডের আওতায় পণ্য আমদানি করে পাচার বা খোলাবাজারে বিক্রি করছে। এ অবৈধ কাজ বন্ধের লক্ষ্যে বন্ড সুবিধার ব্যবহারে সব কার্যক্রম ডিজিটাল করতে হবে। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে এনবিআরের সঙ্গে আলোচনা চলছে। আগামী ২১ মার্চ একটি বৈঠকও হবে। সেখানে বন্ড সুবিধার অপব্যবহার রোধে করণীয় বিষয়ে আলোচনাসহ স্টেকহোল্ডারদের কাছ থেকে পরামর্শ নেয়া হবে। এ ছাড়া ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের কমিশনারের নেতৃত্বে সাতটি প্রিভেনটিভ টিম মাঠে কাজ করছে। রাতে অভিযান পরিচালনা করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পণ্য জব্দ করা হচ্ছে। পরে ওই সব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ‘দ্য কাস্টমস অ্যাক্ট-১৯৬৯, বন্ডেড ওয়্যারহাউস বিধিমালা-২০০৮’-এর আওতায় বিভাগীয় মামলা হয়। একই সঙ্গে তাদের বন্ডিং কার্যক্রম ও আমদানি-রপ্তানির তথ্য খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ফলে অসাধু ব্যবসায়ীদের তৎপরতা অনেকটা কমেছে। এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, রপ্তানিমুখী শিল্প কারখানাগুলো পুনঃরপ্তানির শর্তে শুল্কমুক্ত বন্ড সুবিধায় পণ্য আমদানির সুযোগ পায়। এসব কাঁচামাল বা পণ্য সরকার-নির্ধারিত গুদামে (বন্ডেড ওয়্যারহাউস) রক্ষিত থাকে। কিন্তু এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী দেশে শুল্কমুক্ত পণ্য এনে অবৈধভাবে অপসারণের মাধ্যমে তা খোলাবাজারে বিক্রি করে দিচ্ছে। বন্ড সুবিধায় আনা কাপড়, প্লাস্টিক দ্রব্য, কাগজপণ্য, ডুপ্লেক্স বোর্ড, আর্ট কার্ড, কার্ড বোর্ড, বৈদ্যুতিক পাখা, পেডিং (বেজার বা জ্যাকেট তৈরির কাঁচামাল) ইত্যাদি দ্রব্য ও পণ্য ওয়্যার হাউসে যাওয়ার আগেই খোলাবাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। জানা গেছে, বন্ড সুবিধার পণ্য কালোবাজারে বিক্রি এবং চোরাকারবারি ঠেকাতে গত দেড় মাসে ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট ২৬টি ঝটিকা অভিযান চালিয়েছে। এতে ৪০টি প্রতিষ্ঠানের ৩০ কোটি টাকার অনিয়ম উদ্ঘাটন করা হয়েছে। তবু ঠেকানো যাচ্ছে না অসাধু চক্রকে। শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা পণ্যে তারা সয়লাব করছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার বাজার। পুরান ঢাকার ইসলামপুর, নয়াবাজার, চকবাজার মোড়েও খোলাবাজারে বিক্রি হচ্ছে বন্ড সুবিধায় আমদানি করা পণ্য। আর বন্ডেড পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে ক্ষতির মুখে পড়ছে দেশীয় শিল্প প্রতিষ্ঠান। এ কারণে প্রত্যাশিত রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ায় বাধাগ্রস্ত হচ্ছে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা। উল্লেখ্য, দেশে বর্তমানে ৬ হাজার ৫৬৫টি প্রতিষ্ঠানের নামে বন্ড লাইসেন্স থাকলেও অনিয়মের কারণে ১ হাজার ৭৫৭ প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স স্থগিত করেছে কাস্টমস। আবার কারখানা বন্ধ থাকার পরও বন্ড লাইসেন্স আছে ২ হাজার ৪৩৮টি পোশাক ও প্যাকেজিং কারখানার।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App