×

জাতীয়

জেট ফুয়েলের দাম বাড়ানোয় বিপাকে দেশীয় এয়ারলাইন্স

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ মার্চ ২০১৯, ০৩:৫৪ পিএম

জেট ফুয়েলের দাম বাড়ানোয় বিপাকে দেশীয় এয়ারলাইন্স
আন্তর্জাতিক বাজারে দাম না বাড়লেও হঠাৎ করেই জেট ফুয়েলের দাম বাড়িয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। এতে বিপাকে পড়েছে দেশীয় এয়ারলাইন্সগুলো। এমনিতেই দেশে জ্বালানি তেলের দাম বেশি বলে তা কমানোর দাবি জানিয়ে আসছিলেন এ খাত সংশ্লিষ্টরা। এখন উল্টো দাম বাড়ানোয় লোকসানের আশঙ্কা করছেন তারা। দেশের উড়োজাহাজগুলোকে জ্বালানি তেল সংগ্রহ করতে হয় বিপিসির অধীন পদ্মা অয়েল কোম্পানি থেকে। গত ৫ মার্চ ওই কোম্পানির ডেপুটি ম্যানেজার মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম স্বাক্ষরিত এক নোটিসে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর কথা জানানো হয়। এতে বলা হয়, উড়োজাহাজের (জেট এ-১) ফুয়েলের প্রতি লিটারের দাম আন্তর্জাতিক রুটে ৬৮ ইউএস সেন্ট নির্ধারণ করা হয়েছে, যা আগে ছিল ৬২ সেন্ট। আর অভ্যন্তরীণ রুটে প্রতি লিটার জ্বালানির দাম নির্ধারণ করা হয় ৭২ টাকা, যা আগে ছিল ৬৭ টাকা। এভাবে হঠাৎ করে শুধু জেট ফুয়েলের দাম কেন বাড়ানো হলো এয়ারলাইন্স সংশ্লিষ্টদের তা বোধগম্য হচ্ছে না। কেননা, আন্তর্জাতিক বাজারে অনেক আগেই তেলের দাম কমে এসেছে। এ কারণে দাম কমানোর দাবি করে আসছিলেন তারা। কিন্তু বিপিসি করেছে উল্টোটা। ফলে কোটি কোটি টাকা লোকসানের পাশাপাশি বিদেশি এয়ারলাইন্সের কাছে ব্যবসা হারোনার ঝুঁকিতে রয়েছে বিমানসহ দেশীয় সব এয়ারলাইন্স। জানা গেছে, প্রতিবেশী দেশ ভারতে জ্বালানি খরচ ৩০ শতাংশ কম। বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক রুটে প্রতি লিটার ৬৮ ইউএস সেন্ট দাম নির্ধারণ করে দেয়া হলেও কলকাতায় তার দর ৫৩ ইউএস সেন্ট। মালয়েশিয়া বা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতেও জেট ফুয়েলের দাম অনেক কম। এ কারণে আন্তর্জাতিক রুটের ফ্লাইটগুলো ভারত বা কাছাকাছি কোনো দেশ থেকে জ্বালানি পূর্ণ করে নেয়। আর বাংলাদেশের এয়ারলাইন্সগুলোকে অসম প্রতিযোগিতায় পড়তে হয়। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে ৭৫ শতাংশ ফ্লাইট পরিচালিত হয় বিদেশি এয়ারলাইন্স দিয়ে। ফলে দেশে তেলের দাম বাড়লেও তাদের কোনো সমস্যা হবে না। কিন্তু দেশীয় এয়ারলাইন্সগুলোকে যেহেতু দেশের ভেতর থেকে তেল সংগ্রহ করতে হয়, তাই তাদের খরচ অনেক বেড়ে যাবে। টিকেটের দাম বাড়িয়ে ঘাটতি পূরণের চেষ্টা করলে যাত্রীরা বিদেশি এয়ারলাইন্সের দিকে ঝুঁকবে। সব মিলিয়ে লোকসানের মুখে পড়তে হবে দেশীয় বিমান সংস্থাগুলোকে। এ প্রসঙ্গে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (মার্কেটিং ও জনসংযোগ) কামরুল ইসলাম বলেন, ফ্লাইট অপারেশনে ৪০-৪৫ শতাংশ খরচ হয় জ্বালানি তেলের পেছনে। ফলে আমাদের খরচ বেড়ে যাবে। অন্যদিকে টিকেটের দাম বাড়ালে আমরা যাত্রী হারাব। এ নিয়ে আমরা দুঃশ্চিতায় আছি। তিনি জানান, এখনো বর্ধিত হারে বিল পরিশোধ করা শুরু করেননি তারা। এ নিয়ে পদ্মা অয়েলের কাছে আপত্তি জানানো হয়েছে। তবে যদি শেষ পর্যন্ত বেশি বিল পরিশোধ করতেই হয়, তবে সেটা হবে লোকসানের। তিনি বলেন, তেলের দাম ১ সেন্ট বাড়ালেই বছরে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে ৬ কোটি টাকা। সেখানে ৫-৬ সেন্ট বাড়ানোর কথা বলা হচ্ছে। একই ধরনের বক্তব্য পাওয়া যায় নভোএয়ারের কাছ থেকেও। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক শাকিল মেরাজ বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় বেশি দাম দিয়েই আমরা এতদিন জ্বালানি সংগ্রহ করে এসেছি। নতুন করে দাম বাড়ানোয় এয়ারলাইন্সের সার্বিক ব্যয়ের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এ প্রসঙ্গে বিপিসির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, অনেক দিন ধরেই জ্বালানি তেলের ওপর ভর্তুকি দিয়ে আসছিল সরকার। এই ভর্তুকি কমাতে জেট ফুয়েলের দাম বাড়ানো হয়েছে। এখন আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কম থাকার পরও কেন তা বাড়ানো হলো? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যখন বিশ্ববাজারে তেলের দাম অনেক বেড়ে গিয়েছিল, তখন কিন্তু সরকার দাম তেমন একটা বাড়ায়নি। ফলে বেশি ভর্তুকি দিতে হয়েছে। এখন সেটা সমন্বয়ের চেষ্টা করা হচ্ছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App