×

জাতীয়

কমলগঞ্জে সনাতন ধর্মালম্বীদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ মার্চ ২০১৯, ০৩:৩৮ পিএম

কমলগঞ্জে সনাতন ধর্মালম্বীদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মুন্সীবাজার ইউনিয়নের বাসুদেবপুর গ্রামে স্কুল পড়ুয়া ছাত্রী প্রেম প্রস্তাবে সাড়া না দেয়ায় সনাতন ধর্মালম্বী মালাকার সম্প্রদায়ের তিন পরিবারের ঘরের দরজা- জানালায় গো-মাংস, নারী ভড়ি, কাঁচা চামড়া ও হাড় টাঙ্গিয়ে রেখেছে পার্শ্ববর্তী গ্রামের বখাটে দুই যুবক। বাড়ির দরজা থেকে পুলিশ মাংস উদ্ধার করে থানায় জিডি করেছে। এ ঘটনায় স্থানীয় সনতন ধর্মালম্বীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। এদিকে মানষিক ভাবে ভেঙ্গেপড়া পরিবারকে সান্তনা দিতে রবিবার সকালে তাদের বাড়ি পরিদর্শনে যা মৌলভীবাজার, শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ পূজা উদযাপন পরিষদ, কমলগঞ্জ হিন্দু বোদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের নেতারা। অপর দিকে তারা যাতে মানষিক ভাবে ভেঙ্গে না পড়েন তাই আশে পাশের গ্রামের মুসলমান সম্প্রদায়ের মুরব্বীরাও তাদের বাড়িতে গিয়ে সান্তনা দেন এবং ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত দুই বখাটের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আর্কশন করেন। শ্রীমঙ্গল পূজা উদযাপন পরিষদের নেতা ভানু লাল রায় জানান, শুক্রবার ভোররাতে কমলগঞ্জ উপজেলার মুন্সীবাজার ইউনিয়নের বাসুদেবপুর গ্রামের প্রণয় মালাকারের বাড়িতে ঘটনাটি ঘটে। স্থানীয় ইউপি সদস্য নওরোজ মিয়া জানান, করিমপুর গ্রামের সাদত মিয়া (১৯) নামের এক বখাটে তার সহযোগী সজিব মিয়াকে নিয়ে গ্রামের শফিক মিয়ার বিয়ে বাড়ির একটি অনুষ্ঠান থেকে জবাই হওয়া গরুর পরিত্যক্ত মাংস, পা, হাড়, মাথা, দাঁত, চামরা ও ভড় সংগ্রহ করে শুক্রবার ভোররাতে বাসুদেবপুর গ্রামের পরমেশ্বর মালাকার (৫০), প্রণয় মালাকার (৪৫) ও বীরেন্দ্র মালাকার (৫২) এর ঘরের দরজায় ঝুঁলিয়ে রাখে। সকালে ঘুম থেকে উঠার পর প্রথমে অধীর মালাকার বিষয়টি দেখতে পেয়ে বাড়ির লোকজনসহ আশপাশ এলাকার লোকদের অবহিত করেন। এসব গো-মাংসের বর্জ দেখে বাড়ির লোকজন হতবাক হয়ে উঠে। তারা গো-মাংস রাখা ওই দরজা ব্যবহার করতে না পেরে দুপুর পর্যন্ত ঘরে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। পরে বিষয়টি জানতে পেরে বেলা ১২টায় পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে দরজা থেকে গো-মাংস সরিয়ে ফেলে এবং ধোঁয়ামুছা করে ঘরের লোকজন বের হন। এদিকে এটি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত বলে স্থানীয় সনাতন ধর্মালম্বীসহ ওই বাড়ির লোকজন সহজে মেনে নিতে পারছেন না। বাসুদেবপুর গ্রামের পরমেশ্বর মালাকার বলেন, তাঁর মাতৃৃহারা দশম শ্রেণি পড়ুয়া ভাতিজির সাথে পার্শ্ববর্তী করিমপুর গ্রামের চেরাগ মিয়ার বখাটে ছেলে সাদত মিয়া (১৯) দীর্ঘদিন ধরে প্রেমের প্রস্তাবসহ উত্ত্যক্ত করে আসছে। মেয়েটি এ ঘটনা তার কাকিমাকে বলার পর সামাজিকভাবে ছেলের অভিভাবকদের জানানো হয়। এরপর ক্ষুব্ধ হয়ে সাদত অন্য একটি ছেলেকে নিয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে তারা মনে করছেন। তিনি আরও বলেন, সকালে ঘটনাটি জানাজানি হলে এবং গ্রামবাসী ঘটনার কারণ খোঁজে বের করার কথা বলার পর সাদতের বড় ভাই হায়দর মিয়া তাদের বাড়িতে এসে তার ভাই এঘটনার সাথে জড়িত বলে জানায় এবং ক্ষমা চায়। পার্শ্ববর্তী এলাকার খায়রুল ইসলামসহ স্থানীয় মুসলিমরাও এঘটনার তীব্র নিন্দা ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন। মুন্সীবাজার ইউনিয়নের স্থানীয় ইউপি সদস্য নুরুজ্জামান নওরোজ বলেন, বিষয়টি স্পর্শকাতর বিধায় আমার পক্ষে সামাজিকভাবে শেষ করা সম্ভব হয়নি তবে এটি সমাধানের জন্য তিনি উপজেলা চেয়ারম্যানের দারস্থ হয়েছেন। কমলগঞ্জ উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ-খ্রিস্টান-ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নিরঞ্জন দেব ও উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল চন্দ্র দাস বলেন, এটি ধর্মীয় অনুভূতিতে মারাত্মক আঘাতের ঘটনা। তারা এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে বলেন, ভবিষ্যতে যাতে এ ধরণের নাক্কারজনক ঘটনা না ঘটে সেদিকে সকলের সজাগ দৃষ্টি প্রয়োজন। মুন্সীবাজার ইউপি চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মোতালিব তরফদার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এ ঘটনাটি আমার ইউনিয়নের জন্য একটি কলংকজনক বিষয়। আমরা সবাই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে বিশ্বাসী। এখানে সকল ধর্মের মানুষ বহুদিন সুন্দরভাবে সহাবস্থান করে আসছে। বিষয়টি সামাজিকভাবে স্থানীয় মায় মুরব্বীরা বসে সমাধাণের জন্য চেষ্টা চলছে। সামাজিতভাবে সম্মানজনক সমাধাণ না হলে পুলিশ আইনানুগ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। অভিযোগ বিষয়ে পার্শ্ববর্তী করিমপুর গ্রামে গিয়ে অভিযুক্ত সাদত মিয়াকে পাওয়া যায়নি। তবে সাদতের মা নাজমা বেগম স্কুল পড়ুয়া ছাত্রীর সাথে প্রেম কিংবা উত্ত্যক্তের প্রস্তাব নাকচ করে বলেন, আমার ছেলে না বুঝে যে ঘটনা ঘটিয়েছে এজন্য আমরা পারিবারিকভাবে শাস্তি দিয়েছি এবং পঞ্চায়েতের মায়মুরুব্বিরা বৈঠকে বসে যে শাস্তি দিবেন সেটি মেনে নেব। কমলগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) সুধীন চন্দ দাস বলেন, এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তরা বাদী না হওয়ায় পুলিশ বাদী হয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরী করা হয়েছে। তবে কয়েকটি বিষয়কে সামনে নিয়ে পুলিশ গুরুত্বের সাথে তদন্ত করছে এবং এব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশেকুল হক বলেন, বিষয়টি খুবই দু:খজনক। বিষয়টি নিয়ে যাতে কেহ কোন ধরণের সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে না পেরে সেজন্য কমলগঞ্জ থানার ওসিকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হয়েছে। ইতিমধ্যে পুলিশের পক্ষ থেকে থানায় জিডি করা হয়েছে। পুলিশ এ ঘটনায় তৎপর রয়েছে বলে তিনি জানান। একই সাথে তাদের সান্তনা দিতে তিনিও সরজমিনে একবার যাবেন বলে জানান।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App