×

বিনোদন

এ কেমন অভিষেক!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ মার্চ ২০১৯, ০৪:৫৬ পিএম

এ কেমন অভিষেক!
প্রথম ছবিতে কেউ পাননি মনের মতো চরিত্র। কারো চরিত্রের গুরুত্ব ছিল অল্প। আবার কারো প্রথম ছবি শুরু হয়েও শেষ হয়নি। জমকালো অভিষেকের অভিজ্ঞতা থেকে তারা হয়েছেন বঞ্চিত। একটা সময় চলচ্চিত্রে তারা অবস্থান তৈরিতে সমর্থ হলেও রুপালি পর্দায় পা ফেলেই বাজিমাত করতে পারেননি। অভিষেকে অতৃপ্ত তারকাদের কথা নিয়ে এই প্রতিবেদন। লিখেছেন মাহফুজুর রহমান
তাহসান কণ্ঠশিল্পী পরিচয়ে আটকে থাকার পাত্র ছিলেন না তাহসান। গান গাওয়ার পাশাপাশি অভিনয়টাকেও সমানতালে চালিয়ে গেছেন তিনি। রুপালি পর্দায় নিজেকে ঝালিয়ে নেয়ার বাসনা থেকেই ইফতেখার আহমেদ ফাহমির ‘টু বি কন্টিনিউড’ করতে রাজি হয়েছিলেন তাহসান। মন্দভাগ্যের জেরে সেই ছবি থেকে সরে আসতে হয়েছিল তাকে। পূর্ণিমার বিপরীতে দেখার মতো একটা অভিষেক হতে পারত তাহসানের। সেই মওকা ফসকে গেলেও অর্ধযুগের প্রতীক্ষা বিফলে যায়নি তার। কলকাতার নন্দিত নায়িকা শ্রাবন্তীর বিপরীতে ঠিকই একদিন নিজের অভিষেক ঘটিয়ে ফেললেন তাহসান! সদ্য মুক্তি পাওয়া ‘যদি একদিনে’ ঢাকা-কলকাতার মেলবন্ধন জমে ক্ষীর! দেরিতে হলেও অবশেষে তাহসানের ভাগ্যে সিনেমাভিষেকের শিকে ছিঁড়ল। আরিফিন শুভ শুভ হয়তো ভাবতেই পারেননি তিনি কখনো এফডিসির প্রথম সারির নায়ক হবেন। যদি ভাবতে পারতেন, তবে হয়তো খিজির হায়াত খানের স্পোর্টস সিনেমা ‘জাগো’তে এগারো জন খেলোয়াড়ের একজন হয়ে অভিষেকের মতো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাটি ঘটাতেন না। তার অভিষেক ছবি হিসেবে মোস্তফা কামাল রাজের ‘ছায়াছবি’-ই ছিল সঠিক নিশানা। সেই ছবি পিছিয়ে গেল (পরে আটকে গেল চিরদিনের জন্য)। আর ঝটপট মুক্তি পেয়ে গেল ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী’। সিনেমা পেল ভরসা করার জন্য এক যোগ্য যুবক। জয়া আহসান দুই বাংলায় এখন সমান কদর জয়া আহসানের। এমন দাপুটে অভিনেত্রীর অভিষেক ছবির নাম বলতে গেলে তার ভক্তরা থতমত খাবেন। মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর অভিষেক ছবি ‘ব্যাচেলর’কে অপি করিমের অভিষেক ছবি হিসেবে সবাই জানেন। এটা যে জয়া আহসানেরও অভিষেক ছবি! প্রথম ছবিতে গুরুত্বপূর্ণ কোনো চরিত্রে ছিলেন না তিনি। নুরুল আলম আতিকের ‘ডুবসাঁতার’-ই তার প্রথম ছবি। ডিজিটাল এই ছবিটিও জয়ার ক্যারিয়ারে সেই দুর্দান্ত সূচনা এনে দিতে পারেনি, যা দিয়েছে সেলুলয়েডে নির্মিত নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চুর ‘গেরিলা’। ‘ব্যাচেলর’ মুক্তি পাওয়ার অর্ধযুগ পর জয়ার ‘অসমাপ্ত অভিষেক’ পূর্ণতা পায় ‘গেরিলা’য়। ইমন ও বিন্দু লাক্স সুপারস্টার হওয়ার দৌলতে দারুচিনি দ্বীপের নায়িকা বনে গেলেন মম। প্রতিযোগিতার অন্যতম সুন্দরী বিন্দুকে নিতে হলো বান্ধবীর চরিত্র। এই বিন্দুই পরবর্তী সময়ে প্রধান নায়িকা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেন। ‘পিরিতির আগুন জ¦লে দ্বিগুণ’ ছবিতে বিন্দুর নায়ক ইমনেরও নীরবে অভিষেক ঘটেছিল ‘দারুচিনি দ্বীপে’। ‘এক বুক ভালোবাসা’ ছবিতেই ইমন পেয়েছিলেন সার্থক অভিষেকের সাধ। যদিও ইমনের প্রথম বাণিজ্যিক ছবি হিট হয়নি, কিন্তু পায়ের নিচে শক্ত প্ল্যাটফর্ম এই ছবি থেকেই পেয়ে যান। অপু বিশ্বাস প্রথম ছবিতে ইমন পেয়েছিলেন ছোট ভাইয়ের ছোট চরিত্র। দ্বিতীয় ছবিতেই অপু বিশ্বাস তার নায়িকা। এক লাফে অনেক দূর ছুটে যান ইমন। ইমনের ভাগ্যের সঙ্গে হুবহু মিলে যায় অপুর ভাগ্য। তার প্রথম ছবি আমজাদ হোসেনের ‘কাল সকালে’। নায়িকা শাবনূরের বান্ধবীর চরিত্র। এমন অভিষেক কেই বা চায়! অপু তার দ্বিতীয় ছবিতেই পেয়ে গেলেন দর্শকদের সেই অভ্যর্থনা যা একজন নায়িকার পরম কাক্সিক্ষত। এফ আই মানিকের ‘কোটি টাকার কাবিন’ থেকেই শুরু হলো অপুর আসল পাঁচালি। ববি ববিকে এখন প্রথম কাতারের নায়িকা হিসেবে ভাবা হয়। অথচ অভিষেক ছবিতে তিনি ছিলেন আইটেম গার্লের চেয়ে একটু বেশি। ইফতেখার চৌধুরীর ‘খোঁজ দ্য সার্চ’-এ দর্শকরা বলতে গেলে খুঁজেই পাননি ববিকে। এই নায়িকারই জীবন বদলে দেন তার প্রথম ছবির পরিচালক ইফতেখার চৌধুরী। তার পরিচালিত ‘দেহরক্ষী’ ছবিতে ববি প্রথম হিট ছবির স্বাদ পান। এটিই অভিষেক ছবি হলে ববি হয়তো খুঁজে পেতেন অভিষেকের খাঁটি আনন্দ। তিন্নি মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’-এ চুপচাপ অভিষেক ঘটে গিয়েছিল শ্রাবস্তী দত্ত তিন্নির। তখন বোঝা যায়নি এই মডেল অভিনেত্রীই পরবর্তী সময়ে শাকিব খানের বিপরীতে বাণিজ্যিক অভিষেক ঘটাতে পারবেন। ক্যারিয়ার নিয়ে বরাবর উদাসীন তিন্নি। বাণিজ্যিক সিনেমায় পা ফেলতে গিয়েও তিনি লেট লতিফ। ছবিটি চলল না আর তিনিও এক সময় হারিয়ে গেলেন। মিলন টেলিভিশনের শক্তিমান অভিনেতা আনিসুর রহমান মিলন। ছোটপর্দায় তার উত্থান বিস্ময়কর। বিস্ময়কর বড়পর্দায়ও। চরিত্রাভিনেতা থেকে মিলন নায়ক হোন। সুচন্দার ‘হাজার বছর ধরে’ ছবিতে মিলনের ছিল না কেন্দ্রীয় চরিত্র। এই মিলনই পরবর্তী সময়ে তাক লাগিয়ে দেন। প্রথমে অ্যান্টি-হিরো (দেহরক্ষী), তারপর প্রধান নায়ক (ব্ল্যাকমেইল)। অভিষেক তাক লাগানো সম্ভব না হলেও মিলন পরে সিনেমায় নিজের একটি জায়গা করে নিতে পেরেছেন। মোশরাররফ করিম ও রুমানা দুজনেরই প্রথম ছবি তৌকীর আহমেদের ‘জয়যাত্রা’। রুমানার চরিত্রটির গুরুত্ব থাকলেও মোশাররফ ছিলেন একটি অনুল্লেখ্য চরিত্রে। তখনো মোশাররফের ক্যারিয়ারে টার্নিং পয়েন্ট আসেনি। অথচ ‘জয়যাত্রা’কেই অফিসিয়ালি মোশাররফের প্রথম ছবি বলা উচিত। তার সার্থক অভিষেক ঘটেছিল মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বারে’। আর রোমানা ‘এক টাকার বউ’ ছবিতে বাণিজ্যিক ছবির নায়িকা হিসেবে যাত্রার সঙ্গে সঙ্গে হিট ছবিও নিজের ঝুলিতে পোরেন। অপূর্ব ছোটপর্দার অপ্রতিদ্বন্দ্বী রোমান্টিক নায়ক অপূর্বর সিনেমায় অভিষেক হতে পারত জাঁকজমকপূর্ণ। অথচ তার প্রথম ছবিটি শুরু হয়েছিল নাটক হিসেবে। হুট করে সেটা ছবিতে রূপান্তর হয়ে যায়। ফলে আশিকুর রহমান পরিচালিত ‘গ্যাংস্টার রিটার্নস’ কাঙ্খিত আলোচনা তৈরি করতে পারেনি। অপূর্বর প্রথম ছবি যে প্রত্যাশা তৈরি করতে পারত, তার কিছুই ঘটেনি ‘গ্যাংস্টার রিটার্নসে’। মেঘলা মুক্তা ‘আমি শুধু চেয়েছি তোমায়’ ছবিতে মেঘলা মুক্তার চরিত্র ছিল বান্ধবীর। কয়েক বছর পেরিয়ে গেলেও নায়িকা হওয়ার সুযোগ মেলেনি তার। এই নায়িকাই নিজের অভিষেক ঘটিয়ে ফেলেছেন দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমায়। গত বছর তার অভিনীত একটি তেলেগু ছবি মুক্তি পায়। এই ছবিতে নায়িকা হয়ে দেশের মিডিয়ায় হৈচৈ ফেলে দিয়েছেন মেঘলা। এটাই অভিষেক ছবি হলে কত না খুশি হতে পারতেন মেঘলা! অভিষেক ছবিতে বাজিমাতের ঘটনা সবার বেলায় ঘটে না। মেঘলাও এই দুর্ভাগাদের তালিকায় একজন। মেহজাবীন মন্দ কপালের একখানা দৃষ্টান্ত হয়েই রয়ে গেলেন মেহজাবীন। লাক্স সুন্দরী প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুবাদে ইমপ্রেস টেলিফিল্মের একটি ছবিতে নায়িকা হওয়া খুব বড় ঘটনা ছিল না তার জন্য। সালাহউদ্দিন লাভলুর ‘ওয়ারীশে’ আরিফিন শুভর সঙ্গে অভিষেক হতে পারত মেহজাবীনের। অনেক আলোচনার এই ছবিটি মহরতের পরও শুটিং ফ্লোরে গড়াতে পারেনি। এমনকি শুটিংয়ের আগেই বাদ দেয়া হয় মেহজাবীনকে। নিজের ঘর ইমপ্রেস থেকে অভিষেক হলো না মেহজাবীনের। তিনি ঘর বদল করলেন। ইমপ্রেসের ‘লাল টিপ’ করে আলোচিত স্বপন আহমেদের দ্বিতীয় ছবি ‘পরবাসিনী’তে নাম ভ‚মিকায় জমকালো অভিষেকের স্বপ্ন দেখেছিলেন মেহজাবীন। তার আশার গুড়েবালি ঢেলে মেহজাবীন ও নিরবকে ছেঁটে ফেলে ছবির কাজ এগিয়ে নেন স্বপন। পরপর দুটো আঘাতে অভিনেত্রী এতটাই ভেঙে পড়েন যে, আর কখনো তিনি সিনেমামুখো হননি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App