×

বিনোদন

মুুক্তিযুদ্ধের ছবি দর্শকের কাছে পৌঁছাচ্ছে তো?

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ মার্চ ২০১৯, ০২:৫৬ পিএম

মুুক্তিযুদ্ধের ছবি দর্শকের কাছে পৌঁছাচ্ছে তো?

ভুবনমাঝি ছবির দৃশ্য

মুক্তিযুদ্ধের ওপর নির্মিত শেষ মুক্তি পাওয়া ছবি ‘পোস্টমাস্টার ৭১’। গত বছরের বিজয় দিবসে এটি মুক্তি পায়। ছবিটি মুক্তি পায় মাত্র দুটি সিনেমা হলে- স্টার সিনেপ্লেক্স এবং বলাকা। এটাকে নিয়মরক্ষার মুক্তিই বলা যেতে পারে। জনপ্রিয় চলচ্চিত্র তারকারা থাকার পরও ছবিটি স্বল্প পরিসরে মুক্তি পাওয়ায় অনেকেই অবাক হয়েছেন। কিন্তু অবাক হওয়ার এই ব্যাপারটি গা সওয়া হয়ে গেছে সবার। মুক্তিযুদ্ধের ছবি সারাদেশের সিনেমা হলগুলোতে মুক্তি পাবে না, এটাই ধরে নেন সবাই। ‘পোস্টমাস্টার ৭১’ এর আগে মুক্তিযুদ্ধের ছবি মুক্তি পেয়েছিল ‘আঁখি ও তার বন্ধুরা’। এই ছবিটিও খুব বেশি সিনেমা হলে মুক্তি পায়নি। মাত্র ৭/৮টি সিনেমা হলে মুক্তি পায়। একে তো মুক্তিযুদ্ধের ছবি, তার ওপরে শিশুতোষ গল্প, ফলে বেশি হল জোটাতে পারেননি নির্মাতা মোরশেদুল ইসলাম। গত ৪/৫ বছরের মধ্যেই আরো কয়েকটি মুক্তিযুদ্ধের ছবি নির্মাণ করেছেন এই পরিচালক। ‘অনিল বাগচির একদিন’সহ অন্য ছবিগুলো পুরস্কার প্রতিযোগিতায় ভালো ফল করলেও দর্শক টানার বেলায় এগুলোর রয়েছে ব্যর্থতা। ২০১৭ সালের অন্যতম আলোচিত ছবি ‘ভুবনমাঝি’ একই ব্যর্থতার দোষে দুষ্ট। যদিও রিলিজের সময় মুক্তিযুদ্ধের অন্য ছবিগুলোর চেয়ে বেশি সিনেমা হল পেয়েছিল এই ছবিটি। ‘ভুবনমাঝি’ ১৩/১৪টি সিনেমা হলে মুক্তি পায়। তবে ছবিটি পশ্চিমবঙ্গে মুক্তি পাওয়ায় দেশের বাইরের কিছু দর্শক বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে অনুভব করতে পেরেছেন। বিদেশে বাংলাদেশি সিনেমা ধীরে ধীরে দর্শক তৈরি করছে। অন্যান্য ঘরানার ছবির মতো মুক্তিযুদ্ধের ছবিও বিদেশের দর্শকরা দেখতে পাবেন। কিন্তু যেখানে দেশের দর্শকরাই এখনো মুক্তিযুদ্ধের ছবি দেখতে পাচ্ছেন না, সেখানে বিদেশের দর্শকদের চিন্তাকে এখনই আমলে আনতে রাজি নন চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে মুক্তিপ্রাপ্ত মুশফিকুর রহমান গুলজার পরিচালিত ‘লাল সবুজের সুর’ মুক্তি পেয়েছিল মাত্র একটি সিনেমা হলে। রাজধানীর রাজিয়া সিনেমা হলে প্রতি সপ্তাহেই পুরনো অশ্লীল ছবি প্রদর্শিত হয়। মুক্তিযুদ্ধের ছবি এরকম একটি সিনেমা হলে মুক্তি পাওয়া ছিল অসম্মানজনক। তারপরও নিয়মরক্ষার জন্যই একটি সিনেমা হলে মুক্তি দিয়ে দায় সারেন নির্মাতা। সাম্প্রতিক বছরে নির্মিত মুক্তিযুদ্ধের ছবিগুলো এরকম একটি দুটি সিনেমা হলে মুক্তি পেয়েছে নয়তো টেলিভিশনে প্রিমিয়ার হয়েছে। সারাদেশের সিনেমা হলগুলোতে একটি মুক্তিযুদ্ধের ছবিও পৌঁছেনি। মুক্তিযুদ্ধের ছবি এমনিতেই নির্মিত হয় কম। কোনো বছর দুটি, কোনো বছর তিনটি, কোনো বছর একটি ছবিও নির্মিত হয়। এসব ছবির বেশির ভাগই সরকারি অনুদানে নির্মিত হয়ে থাকে। ব্যক্তিগত পুঁজিতে নির্মিত ছবির সংখ্যা একেবারেই কম। ইদানীং ছবির উৎপাদন কমে গেছে। কমে গেছে মুক্তিযুদ্ধের ছবি নির্মাণ। এই দুঃসময়েও যে দুয়েকটি ছবি নির্মিত হচ্ছে সেগুলো দর্শক অবধি যাচ্ছে না। একটি দুটি সিনেমা হলে মুক্তি পাচ্ছে ছবি। সেই হলগুলোতেও ছবি ‘হাউসফুল’ হচ্ছে না, সংকট থেকে যাচ্ছে দর্শকের। কারণ খুঁজতে গেলে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা জানান, মুক্তিযুদ্ধের ছবিতে বিনোদনের উপকরণ কম থাকায় হল মালিকরা ছবি চালাতে আগ্রহী হন না। হল মালিকদের অনাগ্রহের কারণেই দর্শকরা মুক্তিযুদ্ধের ছবি দেখতে পান না। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে হল মালিকরা মুক্তিযুদ্ধের ছবি চালাতে চান না। মুক্তিযুদ্ধের ছবিতে ব্যবসা হয় না বলে হল মালিকরা চাহিদা দেখান না। হল মালিকদের এমন মানসিকতার কারণে নির্মাতারা মুক্তিযুদ্ধের ছবি নিয়ে দর্শকদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না। দর্শকরা বঞ্চিত হচ্ছেন মুক্তিযুদ্ধের গৌরবজনক ইতিহাস রুপালি পর্দায় দেখা থেকে। চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, মুক্তিযুদ্ধের ছবির দিকে সরকার সুনজর দিলে অবস্থার পরিবর্তন হতে পারে। বাধ্যতামূলকভাবে সিনেমা হলে চালানোর নির্দেশনা দিলে দর্শকরা মুক্তিযুদ্ধের ছবি বড় পর্দায় দেখার সুযোগ পেতে পারেন, ছোটপর্দায় মুক্তিযুদ্ধের বিশালতা না দেখে সিনেমা হলের বড় পর্দায় মুক্তিযুদ্ধের ছবি দেখে নয়ন-মন সার্থক করতে পারেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App