×

মুক্তচিন্তা

উত্তরণের পথ খুঁজুন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ মার্চ ২০১৯, ০৯:১৭ পিএম

ব্যাংকিং খাতে অনিয়ম, দুর্নীতি হলে শুধু দেশের ভেতরে নয়, বিদেশেও আস্থার সংকট সৃষ্টি হয়, রাষ্ট্রের সুশাসন প্রশ্নের মুখে পড়ে। বিগত পাঁচ বছরে ব্যাংকিং খাতে এত কেলেঙ্কারি ঘটেছে যে, ব্যাংকের ওপর মানুষের আস্থাই নষ্ট হয়ে গেছে। এই সংকট উত্তরণও সহজ নয়। নতুন করে খেলাপি ঋণের বিপদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ব্যাংকগুলোর প্রভিশন ও মূলধন ঘাটতি।

এটি তখনই ঘটে যখন কোনো ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ এমন হারে বেড়ে যায়, যার বিপরীতে সংস্থান রাখার মতো যথেষ্ট মুনাফা হয় না। গতকাল প্রকাশিত ভোরের কাগজের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রবল মূলধন ঘাটতিতে ভুগছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো। এই মূলধন ঘাটতি পূরণের জন্য সম্প্রতি দেড় হাজার কোটি টাকা ছাড় দেয়া হয়েছে চাহিদা মোতাবেক।

কিন্তু রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংক সরকারের কাছে প্রায় ১৯ হাজার কোটি টাকা চেয়েছে। ঘাটতি পূরণের সবচেয়ে বেশি অর্থ চেয়েছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। এ জন্য ব্যাংকটির প্রয়োজন ৭ হাজার ৯৩৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। এরপরের অবস্থানে রয়েছে জনতা ব্যাংক। এই ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতি পূরণে প্রয়োজন ৬ হাজার কোটি টাকা। বেসিক ব্যাংকের দরকার ৪ হাজার কোটি টাকা।

আর রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক মূলধন ঘাটতি পূরণে চেয়েছে ৭৭৫ কোটি টাকা। অন্যদিকে গ্রামীণ ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধনের সরকারি অংশ পূরণেও প্রয়োজন আরো ১ কোটি ১২ লাখ টাকা। ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে মূলধন ঘাটতি পূরণে এই অর্থ চাওয়া হয়েছে। বর্তমানে ব্যাংকগুলোর মোট ঋণের ১০ দশমিক ৩০ শতাংশ খেলাপি।

এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৯ হাজার ৬০৮ কোটি টাকা। অভিযোগ রয়েছে, শীর্ষ আমলা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ম্যানেজ করে ব্যাংকগুলোতে শীর্ষ নির্বাহী পদে বসে আছেন। ফলে অদক্ষতার কারণে এ খাতে চরম সংকট তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠছে বারবার। ব্যাংকে অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ও পরিপালন যদি সঠিকভাবে না হয়, তাহলে ব্যাংকিং খাতে সুশাসন আশা করা যায় না।

ব্যাংকিং খাতকে দুর্নীতি, অনিয়ম ও সংকট থেকে উদ্ধারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যেখানে যৌক্তিক ভূমিকা রাখার কথা, সেখানে উল্টো তারা একের পর এক অবিবেচনাপ্রসূত পদক্ষেপ নিয়ে চলেছে। বস্তুত বর্তমানে কিছু ব্যাংক যে তারল্য সংকটে ভুগছে, এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে তাদের নিয়ম লঙ্ঘনের কারণেই। যারা নিয়মের বাইরে গেছে তারাই তারল্য সংকটে পড়েছে।

অতিমাত্রায় খেলাপি ঋণ এবং সবকিছু খতিয়ে না দেখে বেপরোয়া ঋণ বিতরণের কারণে এমনটি হয়েছে। আমরা মনে করি, ব্যাংকিং খাতে অনিয়ম-দুর্নীতি প্রতিরোধে দুর্নীতিবাজদের শাস্তি এবং খেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়াটা জরুরি হয়ে পড়েছে।

খেলাপি ঋণ, সংস্থান ঘাটতি, মূলধন ঘাটতি এসব মারাত্মক উপসর্গের সঙ্গে যদি সুশাসন ঘাটতির মতো ব্যাধি যুক্ত হয়, সেটি আমাদের ব্যাংকিং সেক্টরের জন্য কোনো সুখবর বয়ে আনতে পারে না। দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি এ খাতটিকে শক্ত ভিত্তির ওপর তুলে আনতে না পারলে আমাদের যাবতীয় অর্থনৈতিক অর্জন হুমকির মুখে পড়বে, এটি বিবেচনায় রেখেই সব পক্ষকে উপলব্ধি করতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App