×

অর্থনীতি

রাসায়নিক আমদানি দশ বছরে বেড়েছে তিনগুণ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ মার্চ ২০১৯, ০২:৪১ পিএম

রাসায়নিক আমদানি দশ বছরে বেড়েছে তিনগুণ
দেশীয় ও বিদেশি বাজারে পণ্য সরবরাহকারী বিভিন্ন শিল্প খাতের ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণে গত এক দশকে রাসায়নিক আমদানি বেড়েছে তিনগুণ। খাত সংশ্লিষ্টরা বলেন, রাসায়নিকের প্রধান ক্রেতা তৈরি পোশাক ও টেক্সটাইল শিল্প। এরপরই রয়েছে ফার্মাসিউটিক্যালস, ফুড প্রসেসিং, প্রসাধনী এবং টয়লেটিজ্র, চামড়া এবং প্লাস্টিক খাত। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১৭ হাজার ৫৪৮ কোটি টাকা মূল্যের রাসায়নিক দ্রব্য আমদানি হয়েছিল, যা ২০০৭-০৮ অর্থবছরে ছিল মাত্র ৬ হাজার ১০৩ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বরে আমদানি এর আগের বছরের তুলনায় ১২ শতাংশ বেড়ে ৭ হাজার ৭৭২ কোটি টাকা হয়েছে। পুরান ঢাকা ভিত্তিক বাংলাদেশ কেমিক্যাল ও পারফিউমারি মার্চেন্ট এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আরিফ হোসেন মাসুদ বলেন, এটি একটি বিশাল বাজার। ক্রমবর্ধমান শিল্পায়নের জ্বালানি শক্তি হিসেবে রাসায়নিক এবং তার বাণিজ্যের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। গত মাসে পুরান ঢাকার চকবাজারের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ফর নতুন করে আবাসিক এলাকায় রাসায়নিকের ব্যবসা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ওই আগুনে ৭০ জনের প্রাণহানি ঘটে। ২০১০ সালের নিমতলী অগ্নিকাণ্ডের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম রাসায়নিক থেকে সৃষ্ট দুর্যোগ। নিমতলীর অগ্নিকাণ্ড মারা যায় ১২৪ জন। এই খাতের ব্যবসায়ীরা বলেন, ঢাকা শহরের পুরনো অংশ, বিশেষ করে লালবাগ, হাজারীবাগ, সদরঘাট ও সিদ্দিক বাজার এলাকায় দাহ্যসহ অদাহ্য রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবসায়ের প্রধান কেন্দ্র হয়ে ওঠে। এখানকার দোকান এবং গুদাম বিভিন্ন শিল্পের চাহিদা পূরণের জন্যই গড়ে উঠেছে। মাসুদ বলেন, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ঢাকার পুরনো অংশ থেকে তারা ইতোমধ্যে ২৯টি ঝুঁকিপূর্ণ রাসায়নিক পদার্থকে অন্য জায়গায় স্থানান্তরিত করেছে। সরকার যদি আমাদের জন্য একটি নির্দিষ্ট এলাকা বরাদ্দ করে তবে আমরা বাকি রাসায়নিক এবং আমাদের ব্যবসায়কে সেখানে স্থানান্তরিত করব। তিনি বলেন, টেক্সটাইল ও তৈরি পোশাক খাতগুলো আমদানিকৃত রাসায়নিক দ্রব্যগুলোর প্রধান ক্রেতা। তারা কাপড় ধোয়া এবং রং করার জন্য রাসায়নিক ব্যবহার করে থাকে। এ ছাড়া ফার্মাসিউটিক্যালস এবং ফুড প্রসেসিং শিল্প, সার এবং কৃষি খাত, চামড়া ও প্লাস্টিকের পণ্যগুলোতে অনেক রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়। তিনি বলেন, রং তৈরির জন্য রাসায়নিকের প্রয়োজন হয়। পাশাপাশি প্রসাধনী এবং ঘরের যতেœ ব্যবহৃত পণ্য তৈরির জন্য রাসায়নিক প্রয়োজন। স্থানীয় কিছু শিল্পের চাহিদা পূরণের জন্য দেশীয় রাসায়নিক কারখানা গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখছে। যন্ত্রপাতি এবং ফোম তৈরি শিল্পও রাসায়নিকের বড় ক্রেতা। আর এই বিপুল চাহিদার কারণেই রাসায়নিকের বাজার তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় একটি বহুজাতিক কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, গত আট বছরে রাসায়নিকের বাজারে প্রায় বার্ষিক ৮ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এখানে বাজার প্রায় ২.৫ বিলিয়ন ডলারের। বণিক সমিতির উপদেষ্টা এনায়েত হোসেন মারুফ বলেন, কোনো শিল্প নেই যেখানে রাসায়নিকের প্রয়োজন হয় না। রুটি তৈরি, চকোলেট, কাগজ, ইলেকট্রনিক্স থেকে শুরু করে ফসল ও মাছ চাষের জন্য সব খানেই রাসায়নিকের প্রয়োজন। তিনি বলেন, মাটির মিনারেলের ঘাটতি মেটাতে কয়েক হাজার টন বোরন আমদানি করা হয়। বোরনের ব্যবহার ফসল উৎপাদন বাড়ায়। আমরা অনেক সফলতা অর্জন করেছি কিন্তু ২০১০ সালে নিমতলীতে বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ড সেগুলোকে আড়াল করেছে। বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস এসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, রপ্তানি-ভিত্তিক মিলগুলো বন্ডেড গুদামের সুবিধার জন্য প্রয়োজনীয় রাসায়নিক আমদানি করে। তবে এ ধরনের রাসায়নিক দ্রব্যাদি পুরান ঢাকার দুর্ঘটনার জন্য দায়ী নয়। পুরান ঢাকার রাসায়নিক দ্রব্যগুলো মূলত ছোট শিল্পের জন্য প্রয়োজন। এই ব্যবসায় নিরাপত্তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তবে দুঃখের বিষয় হলো পুরান ঢাকায় রাসায়নিক ব্যবসায় কোনো নিরাপদ কর্মপরিবেশের প্রতি নজর দেয়া হয় না। তিনি বলেন, রাসায়নিকের ব্যবসার ভালো সম্ভাবনা রয়েছে। সরকারের উচিত পুরান ঢাকা থেকে ব্যবসা স্থানান্তর করা। একটি নিরাপদ শিল্পাঞ্চল তৈরি করা। বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাসায়নিক প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দা সুলতানা রাজিয়া বলেন, টেক্সটাইল শিল্পের সম্প্রসারণ দেশের রাসায়নিকের চাহিদা বাড়িয়ে দিয়েছে। এ খাতের সম্প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে রাসায়নিকের চাহিদাও বৃদ্ধি পাবে। ফার্মাসিউটিক্যালস খাতও দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে। এ খাতেও বিপুল পরিমাণ রাসায়নিক প্রয়োজন হয়। ফলে এই দাহ্য পদার্থের ব্যবসার জন্য সরকারের উচিত হবে নিরাপদ একটি বিশেষায়িত অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App