×

মুক্তচিন্তা

সড়কে শৃঙ্খলা কি ফিরবে না?

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ মার্চ ২০১৯, ০৮:৩৯ পিএম

রাজধানীর প্রগতি সরণির জেব্রাক্রসিংয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় ফের শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার সকালে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) ছাত্র আবরার আহমেদ চৌধুরী রাস্তা পার হওয়ার সময় পাল্লাপাল্লি করে আসা দুই বাসের চাপায় প্রাণ হারান। এ ঘটনা ছাড়াও ওইদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়কে আরো ১৩ জনের প্রাণহানি ঘটেছে।

পুরো রাষ্ট্রযন্ত্র এবং সমাজব্যবস্থাকে ঝাঁকুনি দেয়া নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের পরও আমাদের সড়ক ও গণপরিবহন ব্যবস্থায় তেমন কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন আসেনি। প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা সম্যক উপলব্ধি করে সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮-এর অনুমোদন দিয়েছিলেন।

তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, পরিস্থিতির উন্নতি তো দূরের কথা ন্যূনতম শৃঙ্খলা নেই কোথাও। আবরার নিহত হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনে নামেন। বিইউপি ছাড়াও নর্থসাউথ, ইনডিপেনডেন্ট, ইস্ট ওয়েস্ট ও আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরাও যোগ দেন।

গতকালও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাজধানীতে অন্যান্য কলেজ, স্কুলের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমেছে। এ সময় তারা নিরাপদ সড়কের দাবিতে চালকের ফাঁসিসহ ৮ দফা দাবি জানান। তাদের দাবিগুলো যৌক্তিক। এই দাবিগুলোর সঙ্গে আমরাও সহমত পোষণ করছি।

গত বছর ২৯ জুলাই শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টেনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী বাসচাপায় নিহত হওয়ার ঘটনার পর সারাদেশে বিক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ দেখেছি। বোধ-বুদ্ধিসম্পন্ন প্রতিটি মানুষই আজ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। পিঠ যেন দেয়ালে ঠেকে গেছে। ভাবতে অবাক লাগে যে, সড়ক-মহাসড়কে শৃঙ্খলা ও জননিরাপত্তার বিষয়টি দেখভাল করার জন্য সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্তৃপক্ষ আছে।

কিন্তু তাদের চোখের সম্মুখেই চলছে বাসে বাসে রেষারেষি, প্রাণঘাতী প্রতিযোগিতা এবং স্বেচ্ছাচারিতা। সেই সঙ্গে ফিটনেসবিহীন লক্কড়ঝক্কড় বাস এবং ড্রাইভিং লাইসেন্সবিহীন অদক্ষ চালকদের দাপট তো আছেই। আর এই বিশৃঙ্খলার বলি হচ্ছে সাধারণ মানুষ। ক্ষতিগ্রস্তরা বিচার তো পাচ্ছেনই না, উল্টো হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

স্বভাবতই প্রশ্ন সামনে আসে, কেউ অপরাধ করলে তাকে কি শাস্তি দেয়া যাবে না? শাস্তি দিলে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করে তা থেকে ফায়দা নেয়া হবে? পরিবহন শ্রমিকরা এই ঔদ্ধত্য ও সাহস কোথায় পায়? আইন-আদালত-প্রশাসনকে অবজ্ঞা করে চালিত পরিবহন খাতে এমন নৈরাজ্য সমাজব্যবস্থায় একটি মারাত্মক হুমকি।

চালকরা আর চালক থাকবেন না, খুনের লাইসেন্সধারীতে পরিণত হয়ে চরম বেপরোয়া ও ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করবেন। আইন ও বিচারিক কার্যক্রমের ব্যাপারে সড়ক-তা-বে যে সমাধান নেই, সেই বোধোদয় সংশ্লিষ্টদের হওয়া দরকার। যেভাবেই হোক, দেশের পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

এখন ভরসার জায়গা সম্ভবত একটাই, সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক মহল। জঙ্গি ও মাদকের মতো এই বিষয়টিকেও তারা গুরুত্বের সঙ্গে দেখার সময় হয়েছে। আর ছাড় নয়। শিক্ষার্থীরা আমাদের সে আশার জায়গাটা বারবার মজবুত করে দিয়েছে। এখন শুধু কার্যকরের সময়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App