×

জাতীয়

চুড়িহাট্টা ট্র্যাজেডির ১ মাস

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ মার্চ ২০১৯, ১০:৫৮ এএম

চুড়িহাট্টা ট্র্যাজেডির ১ মাস
রাজধানীর চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ধ্বংসস্তূপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আলোচিত হাজি ওয়াহেদ ম্যানশন ভবন। ভবনটির নিচতলায় পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া একটি দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে কান্না করছেন সাদা পাঞ্জাবি পরা এক লোক। তার কান্না দেখে লোকের জটলা বেঁধে গেছে। সবাইকে কালো শোকের ব্যানারে তার ২ ছেলের ছবি দেখিয়ে আর্তনাদ করছেন আর ছেলেদের ফেরত চাচ্ছেন তিনি। কাছে যেতেই কান্নাবিজড়িত কণ্ঠে তিনি বলতে থাকেন, ২০ ফেব্রুয়ারি আগে দুনিয়াটা ছিল নক্ষত্র আর এখন পানির সমুদ্র হয়ে গেছে। আমি রাতে ঘুমাতে পারি না। কত কষ্ট পেয়ে ছেলে দুইটা চলে গেছে। যখনই মনে আসে সান্ত্বনা খুঁজতে এখানে ছুটে আসি। কেন এমন হলো বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। বারবার মূর্ছা দিতে দিতে সাহেব উল্লাহ নামে ওই ব্যক্তি ভোরের কাগজকে বলেন, ওয়াহেদ ম্যানশন ভবনের নিচ তলায় ‘এমআর টেলিকম সার্ভিসিং সেন্টার’ নামের ওই দোকানে ব্যবসা করত তার দুই ছেলে মাসুদ রানা ও মাহবুবুর রহমান রাজু। সারা জীবনের সঞ্চয় দিয়ে এখানে ব্যবসা খুলেছিলেন তারা। ৩৫ লাখ টাকার বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ও ব্যবসায়িক মালামাল মজুদ করা ছিল। ছেলেদের সঙ্গে সেগুলোও ছাই হয়ে গেছে। এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন চান্দিরঘাটের একটি ভাড়া বাসায়। ছেলেদের মৃত্যুর পরে দাফনের জন্য মাত্র ২০ হাজার টাকা করে পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ক্ষতিগ্রস্ত সব পরিবারকে পুনর্বাসনের দাবি জানান তিনি। ফাল্গুন বেগম নামে এক স্বজন বলেন, অগ্নিকাণ্ডে তার ভাই অপু রায়হান, মো. আলী ও ভাতিজা আরাফাত নিহত হয়। এরপর থেকে প্রতিদিন নিজের ছেলেকে স্কুলে দিয়ে ওয়াহেদ ম্যানশনের সামনে দুই ভাই ও ভাতিজাকে খোঁজেন তিনি। শুধু সাহেব উল্লাহ কিংবা ফাল্গুন বেগমই নয়, ভয়াবহ এই অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের স্বজনরা প্রায় প্রতিদিনই ভিড় করেন চুড়িহাট্টায়। পোড়া স্ত‚পের মধ্যে খোঁজেন স্বজনদের আর্তনাদ। এদিকে, অগ্নিকাণ্ডের প্রায় ১০ দিন পরে উন্মুক্ত করে দেয়া হয় চুড়িহাট্টার রাস্তা। আগের মতোই চলাচল বেড়েছে সাধারণ মানুষের। চলছে রিকশাও। সংস্কার করা হয়েছে বেশ কয়েকটি দোকান। ক্ষতিগ্রস্ত দুইটি বাড়ির সংস্কার চলছে। তবে যায়নি পোড়া গন্ধ ও শোকের ছায়া। অপরদিকে, অগ্নিকাণ্ডের পরে পুরান ঢাকা থেকে কেমিক্যাল গোডাউন সরানোর ঘোষণা দিলেও জায়গা জটিলতায় এখনো গতি পায়নি বিষয়টি। তবে, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারসহ বেশিরভাগেরই দাবি গোডাউন অন্যত্র স্থানান্তরের। গতকাল দুপুরে সরেজমিন দেখা যায়, পোড়ার ক্ষত নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ওয়াহেদ ম্যানশন। এটির দোতলায় এখনো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে হাজার হাজার ঘাতক স্প্রের ক্যান। ভবনটির মূল গেটের অধিকাংশ দোকান পোড়া অবস্থাতেই আছে। দোকানগুলোর ভেতরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে পোড়া বোতল, ক্যামিকেলের কৌটা ও কারপেট। ৪ তলা ভবনটি এখনো ঘোর অন্ধকারে। আশপাশের ভবনগুলোরও একই অবস্থা। ওয়াহেদ ম্যানশনের মূল সিঁড়িসংলগ্ন মদিনা ডেকোরেটরের বিপরীত পাশের ভবনে বসবাস শুরু করেছে বাসিন্দারা। সংস্কার করা হয়েছে বিদ্যুতের লাইনও। তবে, আতঙ্ক কাটেনি প্রতিবেশীদের। এখনো ঘুমের ঘোরে আঁতকে উঠেন তারা। এদিকে এই ভয়াবহ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় সিলিন্ডার থেকে আগুনের সূত্রপাত উল্লেখ করায় সুযোগ নিচ্ছেন অভিযুক্তরা। ইতোমধ্যেই মামলার এজাহারনামীয় আসামি ওয়াহেদ ম্যানশনের মালিক মো. হাসান ও সোহেল ওরফে শহীদ হাইকোর্ট থেকে তিন সপ্তাহের জামিন পেয়েছেন। তদন্ত কর্মকর্তা চকবাজার থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মুরাদুল ইসলাম ভোরের কাগজকে বলেন, ঘটনার পরে মানুষের মুখের কথায় মামলাটি করা হয়েছিল। এখন যদি তদন্তে প্রমাণিত হয় ওয়াহেদ ম্যানশন থেকেই আগুন লেগেছিল তাহলে আসামিদের ছাড় দেয়া হবে না। উল্লেখ্য, গত ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে চুড়িহাট্টার ৬৪ নম্বর হাজি ওয়াহেদ ম্যানশন থেকে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এরপরেই একের পর এক বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে পুরা এলাকা। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত মোট ৭০ জন নিহত হয়েছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App