×

মুক্তচিন্তা

পাহাড়ে আর কত রক্ত ঝরবে?

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ মার্চ ২০১৯, ০৯:২৫ পিএম

নির্বাচনী সহিংসতায় রক্তাক্ত হলো রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি। দ্বিতীয় ধাপে উপজেলা নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষে নির্বাচনী সরঞ্জাম নিয়ে যাওয়ার পথে সোমবার সন্ধ্যায় বাঘাইছড়িতে দুর্বৃত্তরা দুটি গাড়িতে ব্রাশফায়ার করে। এতে অন্তত ৭ জন নিহত হয়েছেন। হামলাকারীদের দ্রুত শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা জরুরি।

সবুজ পাহাড়ে এমন রক্তাক্ত ঘটনা নতুন নয়। গত ১৫ মাসে ৫৮ জন নিহত হয়েছেন বলে তথ্য রয়েছে। সর্বশেষ রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়িতে রক্তপাতের ঘটনা ঘটল। জানা গেছে, উপজেলা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে ভোট গণনা শেষে সোমবার সন্ধ্যার দিকে উপজেলার সাজেক বাঘাইহাট থেকে দীঘিনালা ফেরার পথে এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।

বাঘাইছড়ির সাজেকের কংলাক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট গণনা শেষে সেখানে দায়িত্বরত প্রিসাইডিং অফিসারসহ অন্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা নির্বাচনী সরঞ্জাম নিয়ে দুটি জিপ গাড়িতে করে বিজিবির প্রহরায় খাগড়াছড়ির দীঘিনালা ফিরছিলেন। জিপ গাড়ি দুটি বাঘাইছড়ি ৯ কিলোমিটার নামক এলাকায় যাওয়ার পর ওতপেতে থাকা দুর্বৃত্তরা গাড়ি দুটি লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি ব্রাশফায়ার করতে থাকে।

কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই গুলিতে ঘটনাস্থলেই ছয়জন এবং পরে আরো একজন নিহত হন। নিহতদের মধ্যে চারজন আনসার সদস্য। তাদের মধ্যে দুজন নারী। এই ঘটনার পরদিন রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুরেশ কান্তি তঞ্চঙ্গ্যাকে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।

বাঘাইছড়ি হামলার জন্য সন্তু লারমার জনসংহতি সমিতিকে দায়ী করেছে প্রয়াত এম এন লারমার অনুসারী জনসংহতি সমিতির নেতারা। সন্তু লারমার দল তা অস্বীকার করেছে। এসব হামলার ঘটনা মূলত তিনটি আঞ্চলিক দলের মধ্যে সীমাবদ্ধ। এগুলো হচ্ছে- ইউপিডিএফ, ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক এবং জনসংহতি সমিতি (এমএন লারমা)।

এই তিনটি দলের মধ্যে এক পক্ষে ইউপিডিএফ এবং আরেক পক্ষে রয়েছে ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক ও জনসংহতি সমিতি (এম এন লারমা)। একবার এক বা দুই দলের কেউ আক্রান্ত হলে পরেরবার তাদের প্রতিপক্ষের কেউ হামলার শিকার হচ্ছে। তবে কোনো পক্ষই ঘটনার দায় স্বীকার করে না। পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনায় হতাহত হচ্ছে সাধারণ মানুষও।

১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির আওতায় সে সময়কার বিচ্ছিন্নতাবাদী শান্তিবাহিনীর দুই হাজার সশস্ত্র কর্মী অস্ত্র সমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন।

অবসান ঘটে অব্যাহত রক্তপাতের। সন্দেহ নেই, দীর্ঘদিন চলা সংঘাতময় পরিস্থিতির শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তির এই ঘটনা সমকালীন বিশ্ব পটভূমিতে একটি অনন্য ঘটনা। সে দিন এ চুক্তি স্বাক্ষর না হলে আজকের পরিস্থিতি কী হতো তা কল্পনা করাও কঠিন। আজ সে ভয়ঙ্কর অবস্থা বিরাজ করছে না সত্য কিন্তু পাহাড়ে পূর্ণ শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তা বলা যাবে না।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে পার্বত্য অঞ্চলে শান্তি বজায় রাখতে সরকারকে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। আঞ্চলিক গ্রুপগুলোর সন্ত্রাসী তৎপরতা নিয়ন্ত্রণ করে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা দিতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App