×

খেলা

এ স্মৃতি ভোলার নয়

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ মার্চ ২০১৯, ০৪:৫৭ পিএম

এ স্মৃতি ভোলার নয়
সবকিছু স্বাভাবিক থাকলে আজকে সফরকারী বাংলাদেশ ও স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার ৩ ম্যাচ সিরিজের শেষ টেস্টের তৃতীয় দিনের বিবরণী লেখার কথা ছিল! কিন্তু ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে শুক্রবার সকালে সংঘটিত হওয়া অনাকাক্সিক্ষত সেই ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর বদলে গেছে দৃশ্যপট। ভয়াল সেই সন্ত্রাসী হামলায় অল্পের জন্য বেঁচে যাওয়া বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা বিশেষ ব্যবস্থায় রবিবার রাতেই দেশে ফিরেছেন। আর প্রিয় ক্রিকেটারদের নিরাপদে দেশে ফেরাতে স্বস্তি নেমে এসেছে টাইগার সমর্থকদের মনেও। এদিকে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন ক্রিকেটারদের নিজেদের পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে বলেছেন। দেশে ফেরার পর মানসিক পরিস্থিতি ও দীর্ঘ জার্নির কথা বিবেচনা করে বাংলাদেশ দলের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ কিংবা অন্য ক্রিকেটারদের বেশিক্ষণ সংবাদ সম্মেলনে রাখা হয়নি। গতকাল সকালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করা এক বার্তায় মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ বলেন, আলহামদুলিল্লাহ! গতকাল রাতে আমরা নিরাপদে বাসায় ফিরেছি। সেদিন মসজিদে হামলায় যারা কাছের মানুষদের হারিয়েছে আল্লাহ তাদের এ শোক সহ্য করার শক্তি দান করুন। আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি যে এখনো বেঁচে আছি। ১৫ মার্চ ২০১৯, এ তারিখটি আমি কখনো ভুলতে পারব না। যে মসজিদে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছিল সেখানেই জুমার নামাজ আদায়ের কথা ছিল বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের। কিন্তু পূর্ব নির্ধারিত সময়ের চেয়ে কিছুটা বিলম্বে তারা মসজিতে পৌঁছান। আর এই বিলম্বের কারণে প্রাণ বাঁচে তামিম-মুশফিকদের। এ ঘটনার চাক্ষুস সাক্ষী টাইগার ওপেনার তামিম ইকবাল। গতকাল ক্রিকেটের জনপ্রিয় ওয়েবসাইট ক্রিকইনফোকে ওই ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন দেশসেরা ওপেনার তামিম ইকবাল। তামিমের বর্ণনায়- মুশফিক ও রিয়াদ ভাই সাধারণত খুতবায় উপস্থিত থাকতে চান। তাই আমরা একটু আগেভাগেই জুমার নামাজে যেতে চেয়েছি। বাস ছাড়ার কথা ছিল বেলা দেড়টায়। কিন্তু রিয়াদ ভাই সংবাদ সম্মেলনে যেতে একটু দেরি করে ফেলেন। সংবাদ সম্মেলন শেষে তিনি ড্রেসিংরুমে ফিরে আসেন। তখন আমরা ফুটবল খেলছিলাম। এতে কয়েক মিনিট দেরি হয়ে যায়। পরবর্তীতে এই ছোটখাটো বিষয়গুলোই শেষ পর্যন্ত আমাদের বাঁচিয়ে দিয়েছে। এরপরই বাসে উঠি। পরিকল্পনা ছিল নামাজ শেষে হোটেলে ফিরব। কারণ দলের ভিডিও বিশ্লেষক শ্রী ও সৌম্য সরকার আমাদের সঙ্গেই ছিল। আর অনুশীলনও ছিল ঐচ্ছিক। আমি সব সময় বাসের বাঁ-পাশের ছয় নম্বর আসনে বসি। মসজিদের কাছাকাছি পৌঁছলে আমরা ডান পাশের জানালা দিয়ে কিছু একটা দেখার চেষ্টা করি। দেখলাম, মেঝেতে একটা দেহ পড়ে আছে। প্রথমে ভেবেছিলাম মাতাল অথবা অজ্ঞান। বাস এগিয়ে গিয়ে মসজিদের কাছাকছি দাঁড়ায়। এমন অবস্থায় আরেকজন লোককে দেখলাম, রক্তমাখা শরীর। ভয়টা তখনই দানা বেঁধে উঠতে শুরু করে। ওই সময় এক নারী আমাদের বলেন, ওখানে যেয়ো না। গোলাগুলি হচ্ছে। তখন আমরা মসজিদ থেকে মাত্র ২০ গজ দূরে। যখন আরো লাশ দেখলাম, বুঝতে পারছিলাম না ঠিক কী করা উচিত। এরপর বাসের মেঝেতে শুয়ে পড়ি। এভাবে সাত-আট মিনিট কাটল। তখন কাছাকাছি কোনো পুলিশ ছিল না। হঠাৎ করেই পুলিশ এলো। তাদের বিশেষ বাহিনী যেভাবে ঝড়ের বেগে মসজিদে ঢুকল আমরা অবাক হয়ে যাই। শরীরের রক্ত হিম হয়ে আসছিল। এরপর বাসচালক বাসটি ১০ মিটারের মতো এগিয়ে নেন। জানি না, তিনি এই কাজটা কেন করলেন। আমরা তখন ভেঙে পড়েছিলাম। বাসচালক দরজা খুললেন। বাস থেকে নেমে কিছুটা এগিয়ে যাওয়ার পর সবাই মাঠের দিকে দৌড়াতে শুরু করি। ওই দিন যেন মত্যুকে খুব কাছ থেকে দেখেছি। এই ঘটনা সারাজীবন ভুলতে পারব না। ক্রাইস্টচার্চের ঘটনার পর ক্রিকেটাররা কী পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গেছেন তা খুব ভালোভাবেই উপলব্ধি করতে পারছেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। তামিম-মুশফিকদের মানসিক অবস্থা বুঝতে পেরে আপাতত তাদের ক্রিকেট নিয়ে ভাবতে নিষেধ করেছেন তিনি, বলেছেন পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে। এ বিষয়ে নাজমুল হাসান বলেন, ওরা যে ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে এসেছে তা আমি তাদের সঙ্গে কথা বলেই বুঝতে পেরেছি। যাই হোক, ওই ঘটনার পর থেকেই তারা দেশে ফেরার অপেক্ষায় ছিল। আর সে জন্য তারা ওই দিন রাতে ঘুমাতেও পারেনি। তারপর আবার লম্বা জার্নি। তারা সবাই ক্লান্ত। অনেকেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। এখনো সবার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়নি। আমি বলেছি, বাসায় যাও। এখন সবকিছু বাদ দিয়ে কিছুদিন নিজেদের মতো করে সময় কাটাও। যেটা করতে ভালো লাগে সেটা কর। খেলাধুলা নিয়ে এ মুহূর্তে চিন্তাভাবনা করতে বলছি না। যদি কারো কোনো সহযোগিতা লাগে আমরা আছি। ক্রিকেটাররা নিরাপদে দেশে ফেরায় স্বস্তি নেমে এসেছে টাইগার সমর্থকদের মধ্যেও। গতকাল বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে বুঝা গেছে, মাহমুদউল্লাহ-মিরাজদের নিরাপদে দেশে ফেরাতেই তারা বেশ স্বস্তিতে আছে। পাশাপাশি এমন ন্যক্কারজনক ঘটনার জন্য নিন্দাও জানান তারা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App