×

জাতীয়

বঙ্গবন্ধু মানব দরদি ছিলেন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ মার্চ ২০১৯, ০৩:৪৯ পিএম

বঙ্গবন্ধু মানব দরদি ছিলেন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর কথা উল্লেখ করে বলেন, জাতির পিতা ছোট বেলা থেকেই মানব দরদি ছিলেন। আমার দাদির কাছে গল্প শুনেছি নিজের বই গরীব ছাত্রদের বিলিয়ে দিতেন। নিজের ছাতাও বিলিয়ে দিতেন। অনেক সহপাঠী বিভিন্ন বাসায় লজিং থেকে পড়াশোনা করতেন, তাদেরকে বাড়িতে ডেকে এনে বঙ্গবন্ধু নিজের খাবার ভাগ করে খেতেন। আমার দাদা দাদি সব সময় আমার বাবাকে বকাঝঁকা না করে উৎসাহ দিতেন। বঙ্গবন্ধু যে সারাজীবন রাজনীতি করেছেন তার বাবা-মা সেই সমর্থনটা দিয়ে গেছেন। রবিবার সকালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৯তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবসে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু সমাধী সৌধ কমপ্লেক্সে মসজিদ প্রাঙ্গনে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রাণালয় আয়োজিত শিশু সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে আজকের প্রতিপাদ্য “বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন, শিশুর জীবন করো রঙ্গিন। আমি এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বলতে চাই, আমরা জাতির পিতার ৯৯তম জন্ম শত বার্ষিকী পালন করছি। আগামী বছর আমরা জাতির পিতার জন্মশত বার্ষিকী উদযাপন করবো। ২০২০ সাল থেকে ২০২১ সাল। ২০২১ সালে আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করবো। ২০২০ থেকে ২০২১ এ বছরটাকে আমরা মুজিব বর্ষ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছি। শেখ হাসিনা বলেন, দেশের মানুষ যদি ভাল থাকে, উন্নত জীবন পায়, সেটাই আমাদের সবচেয়ে বড় পাওয়া। সে কারণেই আমরা দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলবো। যেখানে আজকের শিশু আগামী দিনের সুন্দর একটা ভবিষ্যৎ পায়। সুন্দর একটা জীবন পায়। আমাদের লক্ষ্য বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধু যে ভাবে দেখতে চেয়েছিলেন, উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ, সেই বাংলাদেশ গড়ে তোলা। সেই লক্ষ্য সামনে রেখেই কাজ করে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিশুদের আধুনিক প্রযুক্তি, কম্পিউটার শিক্ষা, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম ও কম্পিউটার ল্যাব তৈরি করে দিচ্ছি। আমাদের শিশুদের সাথে যাতে আধুনিক প্রযুক্তির সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তাছাড়া আমরা প্রতিটি জেলায় একটি করে মোট ৬৫টি ভাষা প্রশিক্ষণ ল্যাবসহ সারাদেশে ২ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করেছি। যাতে প্রযুক্তি শিক্ষাতে আমাদের শিশুরা আরও পারদর্শিতা অর্জন করতে পারে। সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা এ পদক্ষেপ নিয়েছি। শেখ হাসিনা আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় পেয়েছিলেন। এরই মধ্যে তিনি এদেশের শিশুদের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অবৈতনিক করে দিয়ে যান, মেয়েদের শিক্ষা মাধ্যমিক পর্যন্ত অবৈতনিক করে দেন। শিশুদের অধিকার যাতে নিশ্চিত হয়, তার জন্য ১৯৭৪ সালে জাতির পিতা এই বাংলাদেশে শিশু আইন প্রণয়ন করেন। তখনও জাতিসংঘ শিশুদের জন্য আইন প্রণয়ন করেনি। জাতিসংঘ আইন করেছিলো ১৯৮৯ সালে। ২০১১ সালে আমরা জাতীয় শিশুনীতি করেছি। শিশুর অধিকার সুরক্ষা, শিক্ষা, খেলাধুলা, শরীর চর্চ্চা, সাংস্কৃতিক চর্চ্চা সব দিকে যেন তারা পারদর্শিতা অর্জন করতে পারে, সে জন্য আমরা বিশেষ দৃষ্টি দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, যে নেতা জন্ম না হলে আমরা স্বাধীন জাতি হিসেবে আত্ম পরিচয়ের সুযোগ পেতাম না। যে নেতা জন্ম না হলে আজ আমরা একটি দেশ পেতাম না। এ দেশের মানুষ ছিলো শোষিত বঞ্চিত, ছিলো ক্ষুধার্ত, দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত। ছোট বেলা থেকে তিনি দারিদ্র পীড়িত মানুষগুলোকে দেখে তার হৃদয় কাঁদতো। তাই তিনি নিজের জীবনের সব কিছু বিলিয়ে দিয়েছেন এদেশের মানুষের জন্য। আর এ কারণেই বছরের পর বছর কারাজীবন ভোগ করেন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে কারাগারে যান, বাংলা মানুষের অধিকারে কথা বলতে গিয়ে তার জীবনে নেমে আসে নির্যাতন। কোন অত্যাচার নির্যাতন বা ফাঁসির দঁড়িও তাকে বাঁধা দিতে পারেনি। তিনি তার সংগ্রাম অব্যাহত রেখে আমাদের স্বাধীন জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে দিয়ে গেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন একটা যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশকে একটি সুন্দর দেশ হিসেবে গড়ে তুলবেন। যে দেশে প্রতিটি শিশু তার জীবন মান উন্নত করতে পারবে, শিক্ষা-দীক্ষা-চিকিৎসা সব দিক থেকে উন্নত জীবন পাবে। এই ছিলো তার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য। কিন্তু সে কাজটাও তিনি করে যেতে পারলেন না। ৭৫ এর ১৫ আগষ্ট কতিপয় বিশ্বাসঘাতকের বুলেটের আঘাতে জাতির পিতাকে নিমর্মভাবে হত্যা করা হয়। আমার মা, আমার ছোট তিন ভাই, আমার একমাত্র চাচা শেখ আবু নাসেরকে হত্যা করা হয়। আমার তিন ফুফুর বাড়িতেও আক্রমণ করা হয়। প্রতিটি বাড়িতেই তারা হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিলো। আমরা দু’বোন বিদেশে ছিলাম বলে বেঁচে যাই। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ হারিয়েছে সব সম্ভবনা, স্বাধীনতার চেতনা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। শেখ হাসিনা ৭৫ এর ১৫ আগষ্টের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘কি দুর্ভাগ্য আমাদের ৭৫ এর পর আমাদের দেশের শিশুরা জানতে পারেনি মুক্তিযোদ্ধা ও বিজয় অর্জন করেছি। ইতিহাস বিকৃতি শুরু হয়েছিলো। তবে সত্যকে কখনো কেউ মিথ্যা দিয়ে ঢেকে রাখা যায় না। সত্যের জয় এক দিন হয়। আর সেটাই প্রমাণ হয়েছে আজকে। সেই সত্য আজকে উদ্ভাসিত হয়েছে। আজ বাংলাদেশের ইতিহাস, আমার দেশের মানুষ জানতে পারছে। প্রধানমন্ত্রী ৭ মার্চের ভাষণের কথা উল্লেখ করে বলেন, জাতির পিতার ৭ মার্চের ভাষণ ৭৫ এর নিষিদ্ধ ছিলো। সে ভাষণ ২১ বছর এ দেশের কোথাও বাজানো যেত না। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মিরা এ ভাষণ বাজাতে গিয়ে অনেকে জীবন দিয়েছে, অনেকে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। তাদের এ আত্মত্যাগের মধ্যদিয়ে সারা বিশ্বে ৭ মার্চের ভাষণ বিশ্ব মর্যাদা পেয়েছে। জাতিসংঘের ইউনেস্কো কর্তৃক আন্তর্জাতিক প্রামাণ্য দলিলে একটা স্থান করে নিতে পেরেছে। যা বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে, যা বিশ্বের আড়াই হাজার বছরের ভাষণগুলোর মধ্যে অন্যতম। সেই ভাষণের মধ্যে মানুষকে উজ্জীবিত করার জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষণ ৭ মার্চের ভাষণ সেই মর্যাদা পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ জাতির পিতার ৯৯তম জন্ম বার্ষিকী। টুঙ্গিপাড়ার এ মাটিতে বঙ্গবন্ধু জন্মগ্রহণ করেছিলেন আর এই মাটিতেই তিনি চির নিদ্রায় শায়িত আছেন। এ মার্চ মাস আমাদের জাতীয় জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাস। এই মাসে জাতির পিতা সেই ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন। এই মাসে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন আর এ মাসেই তিনি স্বাধীনতার ঘোষণার মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে জয়ী হয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র পায়। ভাষণের শেষ পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী কবি সুকান্তের ছাড়পত্র কবিতার কয়েকটি লাইন পড়ে শুনান- “এই বিশ্বকে শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নব জাতকের কাছে এ আমার দৃঢ়। এ অুনষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন গোপালগঞ্জ জেলা শহরের মালেকা একাডেমির পঞ্চম শ্রেণি ছাত্রী লামিয়া সিকদার। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন শিশু আরাফত হোসেন। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান কথা সাহিত্যক সেলিনা হোসেন। এ সময় অনুষ্ঠান মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সচিব কামরুন নাহার ও গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোখলেসুর রহমান সরকার। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গোপালগঞ্জ জেলা ব্রাডিং এর লোগের রেপ্লিকা প্রদান করেন গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোখলেসুর রহমান সরকার। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা “বঙ্গবন্ধুকে লেখা চিঠি” গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন। বঙ্গবন্ধুকে লেখা শ্রেষ্ঠ চিঠি পাঠ করে শুনান যশোরের কেশবপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্রী সাবিনা ইয়াসমিন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App