×

জাতীয়

উত্তাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ মার্চ ২০১৯, ১০:৪৫ এএম

উত্তাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
উত্তাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
দাবি আদায়ের লক্ষ্যে মিছিল, স্লোগান, অনশন আর সংবাদ সম্মেলনে উত্তাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এর মধ্যে বারবার সিদ্ধান্ত বদল করছেন নবনির্বাচিত ভিপি নুরুল হক নুর। ভিপি পদ থেকে অব্যাহতি নেবেন, নাকি এ পদে শপথ নেবেন সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আরো দুয়েক দিন সময় চেয়েছেন তিনি। তবে আবার ৩১ মার্চের মধ্যে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন তিনি। আর আগামী শনিবারের মধ্যে পুনঃতফসিলের দাবি জানিয়েছে বাম জোট। একই দাবিতে আমরণ অনশন করছেন ৬ শিক্ষার্থী। তবে পুনর্নির্বাচনের দাবি নাকচ করে ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান বলেছেন, ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেন, ডাকসু নির্বাচন সফল করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাড়ে চারশ শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর শ্রম-সময় ও মেধার যে খরচ হয়েছে, তার প্রতি অসম্মান জানাতে পারি না। গতকাল বুধবার উপাচার্য ভবনে নুরুল হকসহ ডাকসু নির্বাচনে অংশ নেয়া ৫ প্যানেলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপের পর সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থিতিশীল, সুশৃঙ্খল ও ভালো একটি একাডেমিক পরিবেশ বিরাজ করছে। এখানে কেউ কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তা সহ্য করবে না। অপরাধমূলক কোনো কাজ সংঘটিত হলে, সেসবের বিরুদ্ধে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। ৩১ মার্চের মধ্যে পুনর্নির্বাচনের দাবি নুরের : সাধারণ শিক্ষার্থীদের দেয়া ভোটকে শ্রদ্ধা জানিয়ে ডাকসুর সব পদেই ৩১ মার্চের মধ্যে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন ডাকসু নির্বাচনে বিজয়ী ভিপি নুরুল হক। গতকাল দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুহসীন হলে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ছাত্রলীগ ছাড়া প্রতিটি ছাত্র সংগঠনই ফের নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে। সাধারণ ছাত্রদের প্রতিনিধি হিসেবে আমিও চাই, প্রশ্নবিদ্ধ এ নির্বাচন বাতিল করে ফের নির্বাচন দেয়া হোক। বর্তমান নির্বাচিত ভিপি হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন কিনা? জানতে চাইলে তিনি বলেন, যারা আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন তারা বললে আমি শপথ নেব, নয়তো নেব না। দুয়েক দিনের মধ্যেই বিষয়টি আপনারা জানতে পারবেন। কারণ ডাকসু নির্বাচনের শুরুতেই আমাদের কাছে মনে হয়েছিল এটি একটি ছকের নির্বাচন, আমরা বোঝাতে চেয়েছি এ প্রক্রিয়ায় একটি সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তারপরও আমরা নির্বাচনে এসেছিলাম। তিনি বলেন, রোকেয়া হলে অনিয়মের খবর পেয়ে আমরা সেখানে গেলে শোভন ভাইয়ের নেতৃত্বে ‘লেডিগুন্ডারা’ আমার ওপর হামলা চালায়। ছেলেদের হলগুলোতে ছাত্রলীগের কর্মীরা লাইনে দাঁড়িয়ে অনর্থক সময় ক্ষেপণ করেছেন। কলঙ্কিত এ নির্বাচন আমরা বর্জন করেছিলাম। শত কারচুপির পরও আমাকে তারা হারাতে পারেনি। এ পর্যায়ে ছাত্রলীগ ছাড়া প্রতিটি ছাত্র সংগঠন ফের নির্বাচনের দাবি জানিয়ে ভিসিকে ৩ দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছেন। ৩ দিনের মধ্যে পুনঃতফসিলের বামদের দাবি : আগামী শনিবারের মধ্যে পুনঃতফসিলের দাবি করেছে বাম জোট। বাম ছাত্রজোটের ভিপি প্রার্থী লিটন নন্দী বলেন, আগামী ৩ দিনের মধ্যে যদি ডাকসু নির্বাচন বাতিল করে পুনঃতফসিল দেয়া, নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে যুক্তদের পদত্যাগ এবং মামলা প্রত্যাহার না হয়, তাহলে ঢাবির গৌরব রক্ষার্থে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় অচল করে দিতে বাধ্য হব। গতকাল উপাচার্যের কার্যালয়ে স্মারকলিপি দেয়ার পর তিনি বলেন, আমরা উপাচার্যকে বলেছি, আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে, সেগুলো প্রত্যাহার করতে হবে। যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিতিশীল করতে চায় তাদের ছাড় দেয়া হবে না। তাদের বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল অ্যাক্টে মামলা দেয়া হবে। এ সময় অরণি সেমন্তি বলেন, শনিবার পর্যন্ত আল্টিমেটাম দেয়া হয়েছে, এর মধ্যে পুনঃতফসিল ঘোষণা না করলে এবং কারচুপির সঙ্গে জড়িতদের পদত্যাগ, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার না করলে কঠোর আন্দোলনে যাব। আমরণ অনশনে ৬ শিক্ষার্থী : পুনঃতফসিলের দাবিতে রাজু ভাস্কর্যের সামনে আমরণ অনশন শুরু করেছেন ৬ শিক্ষার্থী। গত মঙ্গলবার রাতে এই অনশন শুরু করেন ৪ শিক্ষার্থী। পরে তাদের সঙ্গে যোগ দেন আরো দুজন। অনশনরত শিক্ষার্থীরা হলেন ভূতত্ত্ব বিভাগের আল মাহমুদ ত্বাহা, দর্শন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের অনিন্দ্য মণ্ডল, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শোয়েব মাহমুদ, পপুলেশন সায়েন্সের দ্বিতীয় বর্ষের মাঈন উদ্দীন, কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তাওহীদ তানজিম এবং গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের রাফিয়া তামান্না। তাদের মধ্যে তাওহীদ স্বতন্ত্র জোটের প্যানেল থেকে ডাকসুর পরিবহন সম্পাদক পদে এবং অনিন্দ্য, শোয়েব ও মাঈন উদ্দিন হল সংসদের বিভিন্ন পদে প্রার্থী ছিলেন। গতকাল সকালে ডাকসুর সাবেক ভিপি সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম অনশনরত শিক্ষার্থীর দাবির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন। প্রভোস্টের পদত্যাগের দাবিতে রোকেয়া হলে রাতভর বিক্ষোভ : এদিকে কারচুপির অভিযোগ এনে পুনর্নির্বাচন ও প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. জিনাত হুদার পদত্যাগ দাবিতে রাতভর বিক্ষোভ করেছেন রোকেয়া হলের ছাত্রীরা। ছাত্রলীগ সমর্থক ছাড়া বাকিরা এই আন্দোলনে অংশ নেন। গত মঙ্গলবার রাত ১০টার পর থেকে হলের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন তারা। চলে ভোররাত পর্যন্ত। আন্দোলনে অংশ নেয়া এক শিক্ষার্থী বলেন, সারা রাত ছাত্রীরা বিক্ষোভ করেছেন। প্রভোস্টের কোনো খোঁজ নেই। রাতে প্রক্টরকে একাধিকবার ফোন দিয়ে আসার অনুরোধ জানালে তিনিও সাড়া দেননি। পরে বিক্ষোভের খবর পেয়ে রোকেয়া হল সংসদ নির্বাচনের চিফ রিটার্নিং অফিসার ফারহানা ফেরদৌসীসহ কয়েক জন আবাসিক শিক্ষক সেখানে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। এদিকে রোকেয়া হলের মেয়েদের এই দাবিগুলোর সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন শামসুন নাহার হল সংসদের নবনির্বাচিত সাংসদরা। শামসুন নাহার হল সংসদের ভিপি ইমি ও জিএস আফছানা বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং ছাত্রীদের আন্দোলনের সঙ্গে সহমত পোষণ করেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App