×

জাতীয়

বরিশালের অভয়াশ্রম এলাকায় নিষেধাজ্ঞা মানছেন না জেলেরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ মার্চ ২০১৯, ১১:৪৯ এএম

বরিশালের অভয়াশ্রম এলাকায় নিষেধাজ্ঞা মানছেন না জেলেরা
বরিশালসহ দক্ষিণ উপক‚লের মৎস্য অভয়ারণ্যে নিষেধাজ্ঞার প্রচার-প্রচারণা না থাকায় অবাধে চলছে ইলিশ শিকার। সরকার অভয়াশ্রমগুলোতে সব ধরনের মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেছে। দুমাসের জন্য এ নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে গত ১ মার্চ থেকে। তবে আগামী ১ জুন শুরু হবে ইলিশের ভরা মৌসুম। ২০০৬ সাল থেকে জাটকা সংরক্ষণ ও ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধিতে মার্চ-এপ্রিল দুমাস মেঘনায় চাঁদপুরের ষাটনল থেকে আলেকজান্ডার পর্যন্ত ১০০ কি.মি., মেঘনার চর-ইলিশা থেকে চর পিয়াল ৯০ কি.মি., ভেদুরিয়া ভোলা থেকে পটুয়াখালীর চর রুস্তুম ১০০ কি.মি., পদ্মা নদীর নড়িয়া-ভেদরগঞ্জ উপজেলা থেকে চাঁদপুরের মতলব উপজেলা পর্যন্ত ২০ কি.মি. অভয়াশ্রমে মাছ শিকারে সরকারি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে এ বছর প্রথমবারের মতো যুক্ত হওয়ায় ষষ্ঠ অভয়াশ্রমে বরিশালের হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার কোলঘেঁষে বয়ে যাওয়া মেঘনার শাখা-প্রশাখা এবং সদর উপজেলার কীর্তনখোলা এখন ইলিশের অভয়াশ্রম। এটিকে দেশের ষষ্ঠ ইলিশ অভয়াশ্রম ঘোষণা করেছে মৎস্য অধিদপ্তর। এর আয়তন ৮২ কিলোমিটার। নির্দিষ্ট এ জলসীমায় গত ১ মার্চ থেকে টানা দুমাস সব ধরনের মাছ ধরা বন্ধ থাকার মধ্য দিয়ে অভয়াশ্রমের কার্যকারিতা শুরু হলেও তা জানেন না এখানকার জেলেরা। গতকাল সোমবার সকাল ১০টায় মেঘনার হিজলার অংশে প্রকাশ্যে ইলিশ শিকারের জন্য আসা জেলে বান্দেরহাট এলাকার জয়নাল বলেন, এই এলাকা যে অভয়াশ্রম তা আমাদের জানা নেই। তার মতে ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা তো দূরের কথা হিজলার কোনো জেলেই এই অভয়াশ্রমের খবর জানেন না। একই কথা বললেন মেঘনায় জাল ফেলে অপেক্ষায় থাকা হিজলা-গৌরবদীর জেলে মজু চৌকিদার, কামাল হাওলাদার এবং মেমানিয়ার শান্ত ও জামাল সরদাররা। তাদের মতে, আমরা জাল ফেললে কোস্ট গার্ড, নৌপুলিশ ধাওয়া করে। আমরা তাদের ধাওয়া খেয়েও পেটের দায়ে নদীতে জাল ফেলেছি। তবে এটা যে মৎস্য অভয়ারণ্য এলাকা বা এখন নিষেধাজ্ঞা চলছে তা আপনাদের কাছে শুনলাম। মৎস্য অধিদপ্তরের বরিশালের পরিচালক ড. মো. ওয়াহেদুজ্জামান জানান, গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বরে ষষ্ঠ অভয়াশ্রমের গেজেট প্রকাশ হয়েছে। দেশের অন্য পাঁচটি অভয়াশ্রমের সঙ্গে এ বছর নতুন অভয়াশ্রমেও টানা দুই মাস সব ধরনের মাছ ধরা বন্ধ থাকবে। তিনি বলেন, এই নিষেধাজ্ঞার মূল উদ্দেশ্য হলো জাটকা ইলিশ (৯ ইঞ্চির কম সাইজের) রক্ষা করা। তবে অন্য মাছ ধরার অজুহাতে জেলেরা নদীতে নেমে যাতে জাটকা নিধনের সুযোগ না পায় সে জন্য অভয়াশ্রম জলসীমার মধ্যে সব ধরনের মাছ ধরা বন্ধ রাখা হয়। আর প্রচার-প্রচারণার বিষয়টি আমার জানা নেই। এ বিষয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলতে বলেন। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সাজদার রহমান প্রচার-প্রচারণার বিষয়ে বলেন, রিসার্স এসোসিয়েট ওই এলাকার জেলেদের নিয়ে সভা-সেমিনার করেছে ও প্রচারণা চালিয়েছে। এখন জেলেরা না মানলে তো সমস্যা। আর প্রচারণায় সব জেলেকে নিয়ে আসা কষ্টসাধ্য । কারণ হিসেবে তিনি বলেন, দুর্গম এলাকা হওয়ায় হয়তো এ রকম হয়ে থাকতে পারে। এই উপজেলায় বর্তমানে মৎস্য কর্মকর্তা না থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। তবে বিষয়টি চিন্তার। আমরা দ্রুতই ওই অভয়াশ্রমের ইলিশ রক্ষায় কার্যকরী পদক্ষেপ নেব। মৎস্য কর্মকর্তা (ইলিশ) বিমল চন্দ্র দাস জানান, নতুন যুক্ত হওয়া ষষ্ঠ অভয়াশ্রমের আওতাভুক্ত এলাকার জেলে পল্লীতে সচেতনামূলক সভা ও প্রচার চালানো হয়েছে। লিফলেট বিতরণসহ মাইকিং করা হয়েছে। কি কারণে জেলেরা এখন মিথ্যা বলছে তা বলতে পারছি না। দুর্গম এই নদীপথে অসাধু জেলেরা পালিয়ে মাছ শিকার করলে তা নিয়ন্ত্রণ করা খুবই কষ্টসাধ্য। তারপরও এ পর্যন্ত অভয়াশ্রমের হিজলা অংশ থেকে মাছ ধরায় ১৭ জেলেকে আটক করে জরিমানা আদায় করা হয়েছে। তিনি বলেন, এখন কোস্ট গার্ড, নৌপুলিশ অভিযান চালিয়ে আসছে। নৌবাহিনী যুক্ত হলে অভিযান আরো জোরদার হবে। বিমল চন্দ্র দাস জানান, ষষ্ঠ অভয়াশ্রমের সীমানার মধ্যে তিনটি উপজেলা হচ্ছে মেহেন্দীগঞ্জ, হিজলা ও বরিশাল সদরের আংশিক। এই তিন উপজেলায় তালিকাভুক্ত জেলে আছেন প্রায় ৬০ হাজার। দুই মাসের প্রণোদনা হিসেবে তাদের চাল বরাদ্দের জন্য মৎস্য অধিদপ্তর থেকে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠানো হয়েছে। তবে জেলেদের সংগঠন ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী জেলে সমিতি হিজলা উপজেলার সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার বলেন, মেঘনা ঘেরা হিজলায় এখন পর্যন্ত কোনো প্রচার-প্রচারণা চালায়নি মৎস্য অধিদপ্তর। জেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ষষ্ঠ অভয়াশ্রমের সীমানা হচ্ছে সদর উপজেলার কালাবদর নদীর হরিনগর পয়েন্ট থেকে মেহেন্দীগঞ্জের বামনীরচর পয়েন্ট পর্যন্ত ১৩ দশমিক ১৪ বর্গকিলোমিটার, মেহেন্দীগঞ্জের গজারিয়া নদীর হার্ডপয়েন্ট থেকে হিজলা লঞ্চঘাট পর্যন্ত ৩০ দশমিক ২৭ বর্গকিলোমিটার, হিজলার মৌলভীরহাট পয়েন্ট থেকে মেহেন্দীগঞ্জসংলগ্ন মেঘনার দক্ষিণ-পশ্চিম জাঙ্গালিয়া পয়েন্ট পর্যন্ত ২৬৩ বর্গকিলোমিটার। এ সীমানার মধ্যে নদীগুলো হচ্ছে কালাবদর, আড়িয়াল খাঁ, নয়ভাঙ্গুলি, গজারিয়া ও কীর্তনখোলার আংশিক। মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ষষ্ঠ অভয়াশ্রম ঘোষণার জন্য সংশ্লিষ্ট নদীগুলোতে ২০০৯ সাল থেকে গবেষণা শুরু হয়। ২০১১ সালে এই এলাকার নদীতে ইলিশের বিশাল বিচরণ ক্ষেত্রের সন্ধান মেলে। এলাকাটি অভয়াশ্রম ঘোষণার জন্য ২০১৩ সালে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়। মৎস্য অধিদপ্তর, বিএফআরআই ও ওয়ার্ল্ডফিশের বিশেষজ্ঞ দলের পর্যবেক্ষণ শেষে ২০১৭ সালের ৭ এপ্রিল প্রস্তাবিত অভয়াশ্রমের ম্যাপ তৈরি হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App