আমি শেষ বেলার মন্ত্রী, একটু পরেই গোধূলি নামবে
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২ মার্চ ২০১৯, ০৯:৩৯ পিএম
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের দেয়া বক্তব্যটিই আজকের লেখার শিরোনাম হিসেবে যথার্থ। ২০১২ সালে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী হওয়ার পর তিনি উচ্চারণ করেছিলেন শিরোনামে দেয়া বাক্যটি। সেই সময়ের প্রেক্ষাপটে এটা সত্যি, ওবায়দুল কাদের শেষ বেলার মন্ত্রী ছিলেন কিন্তু আমাদের জন্য একরাঙা গোধূলি নিয়ে এসেছিলেন; যা বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার অচলাবস্থা কাটিয়ে আলোর পথ দেখিয়েছিল। ওবায়দুল কাদের যেন জাদুর পরশকাঠি নিয়ে হাজির হলেন, দীর্ঘসময়ের অচলাবস্থা কাটিয়ে পরিবহন ও সেতু বিভাগে আনলেন আমূল পরিবর্তন।
ওবায়দুল কাদের, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। এশিয়ার অন্যতম প্রাচীন রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের পৈতৃক নিবাস নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বড় রাজাপুর গ্রামে। ১৯৫২ সালের ১ জানুয়ারি তিনি জন্মগ্রহণ করেন। মেধাবী শিক্ষার্থী ওবায়দুল কাদের ছাত্রাবস্থায় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯৬৬ সালে ঐতিহাসিক ছয় দফা আন্দোলনে তিনি ছিলেন সক্রিয় সৈনিক। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে তিনি ছিলেন সরব। ওবায়দুল কাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে মুজিব বাহিনীর কোম্পানীগঞ্জ থানার কমান্ডার ছিলেন। পরে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর কারা অন্তরীণ করা হয় তাকে। আড়াই বছরের ওই কারাবাসের সময়েই তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্বাচিত হন। যোগ্য নেতৃত্বের জন্য পরপর দুবার তিনি এই পদে আসীন ছিলেন। তিনি প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ১৯৯৬ সালে। সেবারই তিনি যুব, ক্রীড়া ও সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। পরে অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে ২০০২ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ওবায়দুল কাদের বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে দলের জন্য কাজ করেন। তিনি ২০০৭ সালের ৯ মার্চ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শাসনামলে গ্রেপ্তার হয়ে ১৭ মাস ২৬ দিন কারাগারে ছিলেন। ২০১১ সালের শেষদিকে ওবায়দুল কাদের যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। ২০১৪ সালে আবারো যোগাযোগমন্ত্রী হন তিনি। তার নির্বাচনী এলাকা নোয়াখালী থেকে তিনি তিন-তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
সাধারণত নিজ দলের মন্ত্রীরা অন্য মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে কখনো কথা বলেন না কিন্তু এ ক্ষেত্রে ওবায়দুল কাদের ছিলেন ব্যতিক্রম। যখন জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি করা হলো তখন তিনি অর্থমন্ত্রীর সমালোচনা করে বলেছেন, অর্থমন্ত্রীর অর্থহীন অতিকথনে সরকার বিব্রত। তার অতিকথনের কারণে শেয়ারবাজারে ধস নেমেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আপনারা আমাদের মতো অতি উৎসাহী আওয়ামী লীগার হবেন না। দয়া করে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করুন। মন্ত্রী-এমপিরা সাধারণত দলীয় বিশৃঙ্খলা এবং অনিয়মের বিষয়গুলো এড়িয়ে যায়। কিন্তু ওবায়দুল কাদের ছিলেন এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী। আর এভাবেই ওবায়দুল কাদের জননেতায় পরিণত হন এবং জনপ্রিয়তার শীর্ষে নিজেকে নিয়ে যান। আর তাই প্রধানমন্ত্রী এই ভালো কাজের স্বীকৃতিও ওবায়দুল কাদেরকে দিয়েছেন। জনতার এই মন্ত্রীকেই ২০১৬ সালের ২৩ অক্টোবর দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত করা হয়।
ওবাযদুল কাদের এখন সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন। মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে তিনি সুস্থ হওয়ার পথে। আজকের এই দিনটিতে যখন ওবায়দুল কাদেরের পরিবারের পাশে পুরো দেশ এক থাকার কথা, সবার দোয়া করার কথা সেখানে অনেকেই সোশাল মিডিয়াতে দেখলাম ব্যঙ্গাত্মক শব্দচয়ন করেছেন, রসিকতায় মেতে উঠেছেন। যে মানুষটি নিজের জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছেন, নিজের জীবনের পুরোটা সময় যিনি রাজনীতি করে মানুষের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন তার প্রতি এই অবিচার মানাটা কষ্টকর। সম্মানীয় ব্যক্তিকে সম্মান যদি কেউ না করতে পারেন তবে সে দায় সম্মানীয় ব্যক্তির নয়; বরং সে দায় সেসব মানুষের যারা নোংরামি ও পরশ্রীকাতরতা দিয়ে সমাজকে দুভাগে বিভক্ত করছেন। আমরা সাধারণ জনতা ওবায়দুল কাদেরের পাশে আছি, আমরা আপনার দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি। দ্রুত সুস্থ হয়ে আমাদের মাঝে ফিরে আসুন ওবায়দুল কাদের। আমরা আপনার অপেক্ষায় আছি।
নবেন্দু সাহা জয় : তরুণ রাজনীতিক ও প্রধান সমন্বয়কারী, মুক্তির গান।