×

মুক্তচিন্তা

পাকিস্তানিত্ব একটি মানসিক ব্যাধি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ মার্চ ২০১৯, ০৯:২২ পিএম

ভেতরে আমরা পাকিস্তানি নাগরিকদের সরাসরি মোকাবেলা করি না, কিন্তু আমাদের যেসব নাগরিক প্রবাসে থাকেন তারা পাকিস্তানি প্রবাসীদের সংস্পর্শে এলে কী রকম পরিস্থিতি তৈরি হয় সেসব আমরা হরহামেশাই শুনে থাকি। আমার কাছে পাকিস্তানি-বাঙালি মতান্তরের অসংখ্য ঘটনার বিবরণ আছে, যাতে বিশেষ করে পাকিস্তানের কিছু কিছু মানুষের আচার-আচরণ অদ্ভুত ও কিম্ভূতকিমাকার মনে হয়েছে। ওদের অনেকেই মনে করে, বাংলাদেশটা এখনো পাকিস্তানেরই অংশ। ওরা আমাদের ছোট করে দেখার চেষ্টা করে।

ঢাকার মাঠে বা বাইরে যখন পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশ ছাড়া অন্য কোনো দেশের ক্রিকেট খেলা থাকে তখন বোঝা যায় পাকিস্তানের প্রেমে পড়া এমনকি আমাদের কিছু কিছুু তরুণ-তরুণীর মানসিক রোগ হিসেবে দেখা দেয়। ঢাকার মাঠেও আফ্রিদি, ম্যারি মি এমন ব্যানার দেখা গেছে। এই সেদিন শ্রীলঙ্কার সঙ্গে পাকিস্তান যখন খেলেছে তখনো বিপুলসংখ্যক দর্শক পাকিস্তানের পতাকা হাতে তাদের সমর্থন দিয়েছে। কারো কারো মতে, খেলার সঙ্গে রাজনীতির কী সম্পর্ক? আমার এই নিবন্ধে আমি দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখাতে চাই যে, পাকিস্তানিরা খেলোয়াড় হোক আর অন্য কিছু হোক, ওরা সভ্য মানুষ হতে পারেনি। কেউ কেউ এমন প্রশ্ন করেন, এটি কেমন করে সম্ভব হয়।

খুব সাম্প্রতিককালে পাকিস্তান বাংলাদেশের সঙ্গে যেসব আচরণ করেছে তাতে আমাদের ছেলেমেয়েরা কেমন করে ওদের পতাকা হাতে নেয়। আমি আসলে পাকিস্তানিত্বকে একটি মানসিক ব্যাধি হিসেবে বিবেচনা করি। এটির শেকড় অনেক গভীরে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনেও নৌকার বিরুদ্ধে ২৮ শতাংশ ভোট পড়েছিল। ওরা পাকিস্তানি ছিল। মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানিদের সঙ্গে একটি বিশাল বাংলাদেশি বাহিনী পাকিস্তানিত্ব ধারণ করেছিল। সেই ধারাবাহিকতা আজো বাংলাদেশ থেকে বিদায় নেয়নি। এমনকি এবার ভারত-পাকিস্তান অস্ত্রের ঠোকাঠুকিতে একদল মানুষকে ভারত বিদ্বেষ ও পাকিস্তানপ্রীতি দেখাতে দেখা গেছে।

বাংলাদেশের রাজনীতি ও জীবনধারায় পাকিস্তান প্রসঙ্গ নিত্যদিনের শব্দ। আমরা বোধহয় পাকিস্তানিদের প্রসঙ্গ আলোচনা ছাড়া একটি রাতেও ঘুমাতে পারি না। ঘরে-বাইরে টিভিতে-পত্রিকায় সর্বত্র ওরা আলোচনায় থাকে। আমাদের রাজনীতি থেকে ধর্ম পর্যন্ত সর্বত্রই পাকিস্তান প্রসঙ্গটি আলোচিত হয়েই আসছে। বলা যেতে পারে, বাংলাদেশের রাজনীতির প্রধান প্রসঙ্গ পাকিস্তান। পাকিস্তানের পক্ষে-বিপক্ষে রাজনীতির চক্র ঘুরে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে বাংলাদেশকে ইসলামী রিপাবলিক বানানোর চেষ্টা, জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটানো, ধর্মান্ধতা রপ্তানি করা বা আইএসআইয়ের সহায়তায় পুরো দেশটাকে অস্থির করার ব্যাপার তো আছেই, দেশে কিছু রাজনীতিক আছেন যারা পাকিস্তানি দালালও। এই দালালদের রাজনৈতিক প্লাটফরম আছে। আছে জোট। এ জন্য এদের বিপক্ষে অবস্থান নিতে হয় মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষ শক্তিকে। এ জন্যই মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের কথা বলা মানেই এখন কার্যত পাকিস্তানের বিপক্ষে লড়াই করা।

সেই যে ১৯৪৮ সাল থেকে এই লড়াই শুরু হয়েছে, বায়ান্নর, ঊনসত্তরের আন্দোলন বা একাত্তরের যুদ্ধে তাদের পরাজিত করেও তার সমাপ্তি আমরা ঘটাতে পারিনি। এ যেন এক রাক্ষসের গল্প, যার কোনো বিনাশ নেই। রাজপুত্তুর রাক্ষসকে মেরে ফেলে, কিন্তু সেই রাক্ষসের রক্ত থেকে আবার নতুন রাক্ষস জীবিত হয়ে ওঠে। যেখানেই রাক্ষসের রক্তের ফোঁটা পড়ে সেখান থেকেই জন্ম নেয় পাকিস্তানি রাক্ষস। বাঙালিকে প্রতিদিনই এসব রাক্ষসকে মোকাবেলা করতে হয়। পাকিস্তান কেবল যে জাতিগতভাবে আমাদের নিপীড়ক তাই নয়, এখনো একাত্তরে তারা এই দেশটির ওপর যে নির্যাতন ও গণহত্যা চলিয়েছিল তার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেনি।

পাকিস্তানের দালাল গোলাম আযম বা অন্য যুদ্ধাপরাধীরা ফাঁসির কাষ্ঠে লটকেও একাত্তরের ভুলের কথা স্বীকার করে না। বরং বাংলাদেশে আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে ফাঁসি দেই আর চোখের পানি ফেলে পাকিস্তানিরা। এমনকি গোলাম আযমের গায়েবানা জানাজা হয় পাকিস্তানে এবং পাকিস্তানের সরকারি নেতারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরোধিতা করে। তবে ওখানেও কিছু কিছু লোক হয়তো ব্যক্তিগতভাবে বাংলাদেশে পাকিস্তানের ভূমিকা নিয়ে দুঃখবোধ করে থাকেন। পাকিস্তানের সাংবাদিক হামিদ মিরের মতো লোকরা আছেন, যারা পাকিস্তানের একাত্তরের ভূমিকা নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন। আবার তারাই বাংলাদেশে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে কষ্ট পান। সাধারণভাবে পাকিস্তানিরা পশ্চাৎপদ মানসিকতার অধিকারী। তারা অনেকাংশেই ধর্মান্ধ ও গোঁড়া। মৌলবাদের ধারক ও জঙ্গিবাদের উৎস হিসেবে দেশটির কুখ্যাতি আছে।

বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীর বিচারও পাকিস্তানকে সম্পৃক্ত করে। কি অদ্ভুত কাণ্ড! পাকিস্তান যুদ্ধাপরাধীর বিচার নিয়ে আরো বাড়াবাড়ি করেছে। এর বাইরেও তারা বাংলাদেশে তাদের হাইকমিশনের মাধ্যমে জঙ্গিদের মদদ দেয়ায় বাংলাদেশ পাকিস্তানি কূটনীতিককে বহিষ্কার করতে বাধ্য হয়েছে। এর বিপরীতে পাকিস্তান বাংলাদেশি এক নারী কূটনীতিককেও প্রত্যাহার করতে নির্দেশ প্রদান করে। ২০১৯ সালে পাকিস্তানি ওয়েবসাইট থেকে বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণা চালানোর জন্য তাদের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে এনে সতর্ক করতে হয়েছে। অনেকেরই এমন ধারণা হতে পারে যে বিষয়টি কেবল রাষ্ট্রীয় পর্যায়েই রয়েছে এবং পাকিস্তানিরা ব্যক্তিগতভাবে অনেক ভালো মানুষ। কিন্তু আমাদের সামনে যেসব দৃষ্টান্ত প্রকাশিত হয় তাতে বোঝা যায় যে পাকিস্তানিরা বদলায়নি হয়তো বদলাবেও না। সম্প্রতি অধ্যাপিকা মাহফুজা বেগম একটি টিভির টকশোতে জানান, সৌদি আরবে হজ করতে যাওয়া এক বাংলাদেশি নিজের পরিচয় বাংলাদেশি হিসেবে দেয়ার পরও তার পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা এক পাকিস্তানি তাকে ‘পূর্ব পাকিস্তানি’ দাবি করে। বোঝা যায় যে এটি তাদের নোংরা মানসিকতার প্রকাশ।

এমন অভিজ্ঞতা আমাদের জীবনে অহরহ পাচ্ছি। মাঝে মধ্যে পাকিস্তানের নাগরিকদের আচার-আচরণ আমাদের ব্যক্তিজীবনকেও সম্পর্কযুক্ত করে। ভেতরে আমরা পাকিস্তানি নাগরিকদের সরাসরি মোকাবেলা করি না, কিন্তু আমাদের যেসব নাগরিক প্রবাসে থাকেন তারা পাকিস্তানি প্রবাসীদের সংস্পর্শে এলে কী রকম পরিস্থিতি তৈরি হয় সেসব আমরা হরহামেশাই শুনে থাকি। আমার কাছে পাকিস্তানি-বাঙালি মতান্তরের অসংখ্য ঘটনার বিবরণ আছে, যাতে বিশেষ করে পাকিস্তানের কিছু কিছু মানুষের আচার-আচরণ অদ্ভুত ও কিম্ভূতকিমাকার মনে হয়েছে। ওদের অনেকেই মনে করে, বাংলাদেশটা এখনো পাকিস্তানেরই অংশ। ওরা আমাদের ছোট করে দেখার চেষ্টা করে। এমনকি বাংলাদেশের মুসলমানদের ওরা মুসলমান বলে গণ্য করে না। একাত্তরেও ওরা আমাদের হত্যা করেছে- আমরা মুসলমান নই বলে। আমাদের মা-বোনদের ইজ্জত নিয়েছে এই বলে যে, ওরা বিধর্মী। অন্যদিকে ওদের ধর্মান্ধতা, গোঁড়ামি বা কুসংস্কার ওরা আমাদের ওপরও চাপাতে চায়।

একটি সত্য ঘটনা ও ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার বিবরণ দিয়ে পাকিস্তানিদের সাধারণ মানসিকতার পরিচয় তুলে ধরতে চাই। আমার বড় মেয়ে সাবরিনা শারমিন পেশায় ডাক্তার। অভিজ্ঞতাটি ওর। সে এমএসএফ নামক একটি আন্তর্জাতিক এনজিওতে কাজ করে। এনজিওটির কাজের ক্ষেত্র স্বাস্থ্যসেবা। দুনিয়া জোড়াই তাদের কাজ। বাংলাদেশেও রয়েছে তাদের মিশন। তবে আমার মেয়ের কাজের শুরু আফগানিস্তান থেকে। ওখানকার মা ও শিশুদের সেবা করতে গিয়েই সে এমএসএফের সঙ্গে প্রথম পরিচিত হয়। সেখানে থাকতেই তার কিছু নতুন অভিজ্ঞতা হতে থাকে।

তার নতুন অভিজ্ঞতা হতে থাকে যে, দুনিয়ার সব জায়গায় মুসলমানত্ব বাংলাদেশের মতো নয়। তার আচার-আচরণ ও কাপড়-চোপড়ে পরিবর্তন আনতে হয়। আফগানিস্তানে বোরখা না পরলেও মাথায় ওড়না পেঁচাতে হতো। সেবারই প্রথম আমার মেয়ে নারীদের পশ্চাৎপদতা কাকে বলে তা স্বচক্ষে দেখে। আফগান মেয়েরা নিজেরাই যে তাদের সম্পর্কে ধারণা রাখে না, সেটি সে বুঝতে পারে। তখনই তার নিজের দেশকে নিয়ে গর্ব করার মতো একটি দৃশ্যমান অবস্থা তৈরি হয়। এখনকার অবস্থা তাকে আরো গৌরবান্বিত করে। যখন সে দেখে তার নিজের দেশের ৫৩ শতাংশ শিক্ষার্থী মেয়ে তখন তার করুণা হয় আফগান মেয়েদের জন্য। পাকিস্তানের মালালাদের লড়াই যে তার নিজের রাষ্ট্র ও সমাজের চরম পশ্চাৎপদতারই প্রকাশ, সেটিও সে এখন ভালোই বোঝে। ঘটনাচক্রে সেই পাকিস্তানিদের নিয়ে তার অভিজ্ঞতা সত্যি দুঃখজনক।

পাকিস্তানকে নিয়ে সে প্রথম সমস্যায় পড়ে আফগানিস্তানে গিয়েই। কাবুল থেকে সে সচরাচর দিল্লি হয়ে দেশে ফিরত। একবার তার মনে হলো সড়কপথে খাইবারপাস হয়ে পাকিস্তানের ভেতর দিয়ে করাচি এসে সেখান থেকে আকাশপথে ঢাকা আসবে। খাইবারপাস হয়ে চলার রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতাটি সে পেতে চেয়েছিল। জিপে করে সে পাকিস্তানে পৌঁছেছিল। বিপত্তি হলো তখন যখন সে খাইবারপাস দিয়ে পেশোয়ার পৌঁছায়। ওখানে এসেই সে পড়ে গেল গোলাগুলিতে। কোনো মতে পালিয়ে সেবার সে ঢাকা এসেছিল। এরপর সে এমএসএফকে জানিয়েছে, দুনিয়ার যে কোনো দেশে ওকে ওরা পাঠাতে পারে কেবল পাকিস্তান ও আফগানিস্তান ছাড়া। পাকিস্তানের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা সে বলেছে। আফগানিস্তানের বিপদটা তালেবানদের চেয়েও বেশি তার হিটিংবিহীন শীতকালে। তবে ওর ধারণা আফগানিস্তানের চেয়ে অনেক বেশি ভয়ঙ্কর পাকিস্তান। একবারের অভিজ্ঞতাই তাকে সারা জীবনের জন্য পাকিস্তানবিমুখী করে দিয়েছে।

দ্বিতীয়বার সে বিপদে পড়ে পাকিস্তান নয়, পাকিস্তানিকে নিয়ে। তখন সে ওজবেকিস্তানে। প্রজেক্ট সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পেয়েছিল সেবার। ছোটখাটো দেখতে বলে সবারই ধারণা ছিল ওর বয়স অনুপাতে দায়িত্বটা বেশি বড় হয়ে গিয়েছিল। তবে সবাই ওকে মেনেই কাজ করছিল। বিপত্তি বাধালেন পাকিস্তানের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অবসরপ্রাপ্ত মহাপরিচালক জাভেদ সাহেব। তিনি কোনোভাবেই সাবরিনাকে পিসি (প্রকল্প সমন্বয়কারী) হিসেবে মানতে রাজি নন। প্রথমত তিনি মনে করতেন সাবরিনার বয়স কম, ওর পিসি হওয়ার মতো যোগ্যতা নেই। কিন্তু দ্বিতীয় কারণটি ভয়াবহ। তিনি মনে করতেন, বাংলাদেশের একটি মেয়ে পিসি হতে পারে না। বাংলাদেশে তার অ্যালার্জি। মেয়েতেও তার অ্যালার্জি। কয়েক সপ্তাহ ধরে জাভেদ সাহেব এমএসএফ কর্তৃপক্ষকে বোঝাতে চাইলেন যে, মেয়েদের এ ধরনের নেতৃত্বের কাজ দেয়া যায় না। যদি দিতেই হয় তবে ইউরোপ বা আমেরিকার কোনো মেয়েকে দেয়া হোক, বাংলাদেশের নয়। কিন্তু এমএসএফ তার কথা শুনল না।

সাবরিনাকেই প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটরের দায়িত্বে রাখা হলো। এর পরের ঘটনাটি আরো ভয়াবহ। এক সময়ে এমএসএফ একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সেই অনুষ্ঠানে তাদের কর্মীদের নিজেদের জাতীয় সঙ্গীত গাইবার ব্যবস্থা করা হয়। সবাই তাদের জাতীয় সঙ্গীত গায়। সাবরিনাও গায়। বর্ণানুক্রমিক বলে তার পালা এলো সবার আগে। যখন পাকিস্তানের পালা এলো তখন জাভেদ সাহেব সাবরিনাকে পাকিস্তানের জাতীয় সঙ্গীত গাইতে বলল। সাবরিনা বলল, দুনিয়ার সব দেশের জাতীয় সঙ্গীতের প্রতিই আমার শ্রদ্ধা আছে। আপনি যখন পাকিস্তানের জাতীয় সঙ্গীত গাইবেন তখনো আমি দাঁড়াব। যদিও আমি লক্ষ করেছি যে, যখন আমি আমার জাতীয় সঙ্গীত গেয়েছি তখন আপনি দাঁড়াননি- ওটা আপনার হীনমন্যতা।

কিন্তু আমি আপনার জাতীয় সঙ্গীতকে সম্মান করি। আমি দাঁড়াচ্ছি। কিন্তু আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্ম নেয়া মানুষ হিসেবে পাকিস্তানের জাতীয় সঙ্গীত গাইতে জানি না। জানার ইচ্ছাও নেই। জাভেদ সাহেব এরপর হৈচৈ লাগিয়ে দিলেন এবং এমএসএফের পদস্থ কর্মকর্তাদের এসে তাকে শান্ত করতে হয়েছে। তিনি যেসব কথা বলেছেন তা আমরা বস্তুত বাংলাদেশের পাকিস্তানপন্থি রাজনীতিকদের মুখে শুনি। পাকিস্তান ভাঙার পেছনে ভারতের হাত থাকা থেকে শুরু করে বাঙালিরা যে মুসলমান নয় সেটি তিনি বললেন। এরপর জাভেদ সাহেবের স্ত্রী এসেছিলেন উজবেকিস্তানে। মজার কাণ্ড হলো, তার স্ত্রীর সঙ্গে কোনো পুরুষ মানুষ কথা বলতে পারেনি বা দেখাও করতে পারেনি। তার মতে, কোনো অমুসলমান নারীও তার সঙ্গে দেখা করতে পারবে না। এমনকি সাবরিনাকেও তিনি তার স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে দেননি। তার মতে, সাবরিনা বাঙালি বলে মুসলমান নয়।

সেদিন যখন মেয়ের সঙ্গে একাত্তরের মার্চ, বাংলাদেশের স্বাধীনতা আর মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কথা বলছিলাম তখন মেয়ে বলেছিল, বাবা তোমার জীবনের সবচেয়ে সেরা কাজটি বোধহয় এটি, তোমরা পাকিস্তান থেকে আমাদের জন্মভূমিটাকে আলাদা করতে পেরেছিলে। নইলে কীভাবে যে ওদের সঙ্গে এক দেশের নাগরিকের পরিচয় দিতাম সেটাই ভাবতে পারি না। আমাকে যদি কেউ পাকিস্তানি বলত তবে মনে হতো একটা চরম গালি দিল কেউ। আমার মেয়ের উপলব্ধিটা পুরো দেশের সব সন্তানের হোক, সেই কামনা করি। লেখাটি শেষ করার আগে জন্মের পর থেকে একাত্তর, তারপর এবং সাম্প্রতিককালে পাকিস্তান সরকার ও সেই দেশের জনগণ বাংলাদেশের সঙ্গে যে ধরনের আচরণ করে যাচ্ছে তাতে এই জঘন্য দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক ও অন্যান্য সম্পর্ক বহাল রাখার কোনো যৌক্তিক কারণ আছে কিনা সেই প্রশ্নটি রেখে যেতে চাই।

মোস্তাফা জব্বার : তথ্যপ্রযুক্তিবিদ ও কলামিস্ট।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App