নিরাপদ খাদ্য ও পানির নিশ্চয়তা বিধান জরুরি
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯ মার্চ ২০১৯, ০৯:০৭ পিএম
মানুষের জীবনের জন্য পানি ও খাদ্য অপরিহার্য। কিন্তু সব পানি যেমন পানের যোগ্য নয়, তেমনি সব খাবার স্বাস্থ্যের জন্য সুখকর নয়। এক কথায় বলা যায়, একমাত্র বিশুদ্ধ পানিই কেবল পানের যোগ্য। ঠিক তেমনি সব খাদ্য স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ নয়। শুধু স্বাস্থ্যসম্মত, নিরাপদ খাদ্যই জীবনকে বাঁচাতে, রোগমুক্ত রাখতে সক্ষম।
কিন্তু বাস্তবে প্রতিদিনের খাদ্যই যদি বিষাক্ত হয়, পানি দূষিত, পানের অযোগ্য হয় তাহলে ফলাফল কী দাঁড়ায়? জীবনকে বাঁচাতে সহায়তার পরিবর্তে জীবনকে প্রতি মুহূর্তে হুমকির মুখে ঠেলে দেয়। অথচ আমাদের বাঙালির প্রধান খাদ্য ভাত। এটি সত্য, আমরা এখন চালসহ সব রকমের খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, সেই খাদ্য কতটুকু নিরাপদ, মানসম্মত, স্বাস্থ্যসম্মত এটা প্রশ্নাতীত নয়। বরং হলফ করে বলা যায়, আমরা প্রতিদিন যা খাচ্ছি তার নব্বই ভাগই অস্বাস্থ্যকর, অনিরাপদ। কিন্তু ভেজাল, অনিরাপদ খাদ্য, পানির পরিবর্তে বিশুদ্ধ পানি, স্বাস্থ্যসম্মত ভেজালমুক্ত নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে সরকারের নানামুখী তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।
বিশেষ করে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত, জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত নিয়মিত টহল কার্যক্রম অব্যাহত রাখলেও বাস্তবে এই কার্যক্রম প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। উচ্চ ফলনশীল ধান দেশে বিপ্লব ঘটিয়ে দিয়েছে। কিন্তু অধিক ফসল উৎপাদন করতে গিয়ে আমরা যে জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছি, তা কি কেউ ভেবে দেখেছি?
ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরির গবেষণায় যে তথ্য মিলেছে, তা রীতিমতো ভয়াবহ। গবেষণার জন্য চালের যে ২৩২টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল, তার ১৩১টিতে মিলেছে বিভিন্ন মাত্রায় ক্রোমিয়াম। ১৩০টিতে পাওয়া গেছে ক্যাডমিয়াম ও সিসা। ৮৩টিতে মিলেছে আর্সেনিকের অস্তিত্ব। কী সাংঘাতিক!
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্রোমিয়াম, ক্যাডমিয়াম, সিসা ও আর্সেনিক মানুষের শরীরে ঢুকলে তা বের হতে পারে না। সব ক’টিই দীর্ঘমেয়াদে কিডনি, লিভার ও মস্তিষ্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এ ছাড়া ক্যান্সারসহ নানা ধরনের ক্রনিক রোগের বড় উৎস হচ্ছে এসব রাসায়নিক। এক কথায় এগুলোর সব ক’টিই ধীরে ধীরে মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে সক্ষম।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চালে ক্যাডমিয়ামের প্রধান কারণ জমিতে নিম্নমানের টিএসপি সার প্রয়োগ এবং গার্মেন্ট, ওষুধ কারখানা, টেক্সটাইল ও ট্যানারির অপরিশোধিত বর্জ্য। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি কীটনাশকের যথেচ্ছ ব্যবহারের পরিণতি কমবেশি সবাইকেই ভোগ করতে হচ্ছে।
এ ক্ষেত্রে শিশুরা সবচেয়ে বিপজ্জনক পর্যায়ে রয়েছে। বেঁচে থাকার জন্য আমাদের যে খাদ্য গ্রহণ করতে হয়, সে খাদ্যই যদি রোগাক্রান্ত হওয়ার কারণ হয়। কাজেই আমাদের খাদ্য বিষমুক্ত করার সব ব্যবস্থা এখনই নিতে হবে। বিষাক্ত কীটনাশক ও সার ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। কারখানার বর্জ্য ব্যবস্থাপনায়ও শৃঙ্খলা আনতে হবে।
বিষমুক্ত খাদ্য নিশ্চিত করতে কঠোর পদক্ষেপের কোনো বিকল্প নেই। খাদ্যে ভেজাল, অনিরাপদ খাদ্য উৎপাদন, বাজারজাত, বিক্রি শত ভাগ বন্ধে প্রশাসন, পণ্যের উৎপাদনকারী, বিক্রেতা, মজুতকারী প্রভৃতিকে কঠোরভাবে শাস্তির আওতায় আনা জরুরি। একই সঙ্গে পানি দূষণকারী, দূষিত পানি বিক্রি, মজুতকারী, উৎপাদনকারীকে শাস্তির আওতায় আনা জরুরি।
নতুবা ভেজাল, নি¤œমানের অনিরাপদ খাওয়ার খেয়ে, দূষিত পানি পান করে নানা রকম প্রাণঘাতী রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। যা বিভিন্ন সময়ে চিকিৎসক, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলে আসছেন। ভেজাল, পচাবাসি খাবার এবং দূষিত পানি পান করে শিশু, নারী, বয়োবৃদ্ধসহ সব শ্রেণির মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে ক্যান্সারসহ নানা মৃত্যুঘাতী রোগে।
এই অবস্থা থেকে মানুষকে পরিত্রাণে এখনই প্রয়োজন সম্মিলিত ও সমন্বিত প্রচেষ্টা। নিরাপদ খাদ্য, পানীয় নিশ্চিত করা না গেলে মানুষ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতি বছর আমাদের খাদ্য বাবত যে অর্থ খরচ হবে তার চেয়ে ওষুধপথ্যে অর্থ ব্যয় বাড়বে অনেক বেশি।
ফারিহা হোসেন : ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক, ঢাকা।