×

জাতীয়

‘নারীকে বৈষম্যে রেখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়’

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ মার্চ ২০১৯, ১১:১১ পিএম

‘নারীকে বৈষম্যে রেখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়’

দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক নারী, তাদের বৈষম্যে রেখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। ঘরে-বাইরে সবখানে বৈষম্যের শিকার হলে নারীরা এগোতে পারবেন না। তবে নানা বাধা-বিপত্তি ও বৈষম্যের পরও বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীর অগ্রগতি হয়েছে। তা অব্যাহত রাখতে হবে। যারা বলেন, নারীদের তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়লেই চলবে, তাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। এই যুদ্ধে জয় হলেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন হবে।

বিশ্বনারী দিবস-২০১৯ উপলক্ষে ভোরের কাগজের আয়োজনে শনিবার বেলা ১১টায় ৩ জন ভাষাসৈনিক ও একজন ক্রীড়া সংগ্রামীকে সম্মাননা এবং ৪ জন উদীয়মান নারীকে উৎসাহ স্মারক প্রদান অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্তের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন- বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক ও মুক্তিযোদ্ধা রোকেয়া কবির, মোহাম্মদী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুবানা হক, পারসেনা হেয়ার এন্ড বিউটি লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক কানিজ আলমাস খান, শিক্ষক ও আইনজীবী ব্যারিস্টার ড. তুরিন আফরোজ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের প্রোভোস্ট অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা।

সম্মাননাপ্রাপ্ত কৃতী নারীরা হলেন- ভাষাসৈনিক ড. শরিফা খাতুন, মনোয়ারা ইসলাম ও আয়েশা আক্তার খাতুন বেলু, কলসিন্দুর স্কুল এন্ড কলেজের সহকারী অধ্যাপক ও কলসিন্দুর নারী ফুটবল দলের ম্যানেজার ক্রীড়া সংগ্রামী মালা রানী সরকার, ট্রাভেলস অব বাংলাদেশের প্রধান ডা. সাকিয়া হক এবং তার তিন ভ্রমণসঙ্গী ডা. মানসী সাহা, সিলভী রহমান ও শামসুন নাহার সুমা।

অতিথিদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেন ভোরের কাগজের বিজ্ঞাপন উপব্যবস্থাপক ফেরদৌস আক্তার বিথী, সহসম্পাদক নাসরিন পারভীন ও বিজ্ঞাপন সহকারী সাবিনা ইয়াসমীন।

অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রতিপাদ্য তুলে ধরে বক্তব্য দেন ভোরের কাগজের প্রতিবেদক রুমানা জামান। ভাষাসৈনিক শরিফা খাতুনের অবদান তুলে ধরেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদন ঝর্না মনি, প্রতিবেদক মরিয়ম মনি সেঁজুতি তুলে ধরেন ভাষাসৈনিক মনোয়ারা ইসলামের কৃতিত্ব। এ ছাড়া জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক সেবিকা দেবনাথ ভাষাসৈনিক আয়েশা আক্তার খাতুন বেলুর জীবনী পড়ে শোনান। ক্রীড়া সংগ্রামী মালা রানী সরকারের সংগ্রামের ইতিহাস তুলে ধরেন সহসম্পাদক শ্রাবণী হালদার। এ ছাড়া ট্রাভেলস অব বাংলাদেশের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন সম্পাদনা সহকারী তানজিয়া মুসতারী। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ভোরের কাগজের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক শরীফা বুলবুল।

অতিথির বক্তব্যে রোকেয়া কবির বলেন, নারী আন্দোলনের জন্য অনেক কথা শুনতে হয়েছে। আন্দোলন করে কি হয়েছে, কি পেয়েছি, এমন অনেক কথা। তবে ৩ প্রজন্মের ফলাফল বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় নারীরা পর্যায়ক্রমে অনেক এগিয়েছে। তিনি বলেন, প্রতিটা ক্ষেত্রে নারীদের অবস্থানের পরিবর্তন ঘটেছে। তার পরও তাদের ৩ ধরনের বাধার সম্মুখীন হতে হয়। পরিবার, সমাজ, স্বামী- এই ৩ ধরনের বাধা পেরিয়ে কাজ করতে হয় নারীকে। এসব বাধা দূর করার পাশাপাশি নারীর প্রতি সব ধরনের বৈষম্যের অবসান ঘটানোর আহ্বান জানান তিনি।

কানিজ আলমাস খান বলেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক কিছু বদলে যাচ্ছে। সেগুলো মানিয়ে নিয়েই চলতে হবে। পারিবারিক ও সামাজিক সহযোগিতা পেলে দেশের নারীরা আরো দ্রুত এগিয়ে যাবে।

তুরিন আফরোজ বলেন, একটি সফল মানুষকে প্রতিটি ক্ষেত্রে পরীক্ষা দিতে হয়। এ ক্ষেত্রে নারীদের আরো বেশি সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। সমাজ, পরিবার এমনকি নিজের বিরুদ্ধেও পরীক্ষা দিতে হয়। আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে ধর্ষণকে ‘গণহত্যা’ পর্যায়ের অপরাধ হিসেবে প্রমাণ করতে কঠোর পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

রুবানা হক, বর্তমানে দেশের নারীরা যতটুকু এগিয়েছে তা একদিনের ফসল নয়। দীর্ঘদিনের পরিশ্রমে সমাজে নারীদের শক্তিশালী অবস্থান হয়েছে। নারীরা যেভাবে সমাজ ও সংসার একসঙ্গে মোকাবেলা করছে তা প্রশংসনীয়।

ড. জিনাত হুদা বলেন, শহর ও গ্রাম সবখানেই নারীরা সংগ্রামী। সে ক্ষেত্রে আমাদের দেশের নারীর অগ্রযাত্রা আরো প্রশংসনীয়। নারীর অগ্রযাত্রায় সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে প্রথম এবং বিশ্বের ৫ম বাংলাদেশের নারীরা। দেশের নারীরা সংখ্যায় ও যোগ্যতায় দুদিক থেকেই এগিয়েছে।

শ্যামল দত্ত বলেন, সমাজের বিভিন্ন অসঙ্গতি নিয়ে ভোরের কাগজ কাজ করে থাকে। স্বাধীনতার ৪৭ বছর পার করেও চাঁদপুরের একটি ইউনিয়নের মেয়েরা ভোট দিতে পারে না- এটা আমাদের জন্য খুবই লজ্জার। সেখানে বলা হচ্ছে, নারীদের ভোট দেয়া হারাম। এ যুগেও এ রকম গোঁড়ামি টিকে থাকার কথা ভাবাই যায় না। নারী-পুরুষ একসঙ্গে দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, শুধু স্বাধীন হলেই হবে না, মুক্তিও হতে হবে। শুধু আইন-কানুুন দিয়ে বেশি দূর এগিয়ে যাওয়া যাবে না। দরকার সামগ্রিক পরিবর্তন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App