×

মুক্তচিন্তা

দুর্ঘটনা কি আমাদের অনিবার্য নিয়তি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ মার্চ ২০১৯, ০৯:০১ পিএম

আবারো নৌকাডুবি, প্রাণহানি ও যাত্রী নিখোঁজের ঘটনা ঘটেছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকার সদরঘাটে একই পরিবারের ছয়জন নৌকাডুবিতে নিখোঁজ হন। তাৎক্ষণিকভাবে একজনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। গত শুক্র ও শনিবার (এই সম্পাদকীয় লেখা পর্যন্ত) পাঁচজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। নিখোঁজ রয়েছেন এক মহিলা। তাকে উদ্ধারে অভিযান চালানো হচ্ছে।

প্রতিনিয়ত নৌকাডুবিতে এভাবে মানুষের মৃত্যু ঘটছে। নদীতে ঝুঁকি নিয়ে ট্রলার চলাচল করলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষও উদাসীন। কর্তৃপক্ষ দায়ভার এড়াতে পারে না। জানা গেছে, বিয়ের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পরিবারটি রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর থেকে নৌকায় রওনা দিয়েছিল বৃহস্পতিবার রাতে। গন্তব্য গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরে। সদরঘাটে নৌকা থেকে নেমে লঞ্চ ধরে শরীয়তপুরে যাওয়ার কথা ছিল তাদের।

কিন্তু তাদের আর শরীয়তপুরের লঞ্চে ওঠার সৌভাগ্য হয়নি। সদরঘাটের কিনারায় ভিড়ানোর আগেই সুরভী-৭ নামের লঞ্চের ধাক্কায় বুড়িগঙ্গায় ডুবে যায় তাদের বহন করা নৌকাটি। তিন শিশুসহ একই পরিবারের ছয়জন তলিয়ে যান পানিতে। শুধু শাহজালাল নামে একজনকে আহত অবস্থায় পানির মধ্য থেকে উদ্ধার করতে পেরেছে নৌপুলিশ। লঞ্চের প্রপেলারের ধাক্কায় তার দুই পা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।

তিনি এখন চিকিৎসাধীন। দেশের যোগাযোগ, যাতায়াত ও ব্যবসা-বাণিজ্যের বড় একটা মাধ্যম হচ্ছে নৌপথ। বিশেষ করে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ক্ষেত্রে। নৌপথে যাতায়াত ব্যবস্থা এখন উন্নত হলেও এ ক্ষেত্রে সার্বিক ব্যবস্থা খুব উন্নত, তা বলা যাবে না। নৌপথে বড় জাহাজ ছাড়াও ছোট ছোট ট্রলার ও ইঞ্জিনচালিত নৌকা চলাচল করে।

দেখা যায়, প্রায়ই ট্রলারগুলো দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। দুর্ঘটনার জন্য ক্ষিপ্র গতির লঞ্চ, বালুবাহী জাহাজের পাশাপাশি নদীর দুই পাড়ে গড়ে ওঠা অবৈধ খেয়াঘাটকেও দুষছে প্রশাসন। নানা সময় দুর্ঘটনা-পরবর্তী তদন্ত প্রতিবেদনে বিষয়গুলো উঠে এলেও সমাধানে কার্যকর কোনো পদক্ষেপই নেয়া হয়নি।

অবৈধ এসব ঘাট দিয়ে যত্রতত্র নৌকা পার হতে গিয়ে ক্ষিপ্র গতির লঞ্চের ঢেউয়ের তোড়ে ঘটছে দুর্ঘটনা। বৃহস্পতিবার দুর্ঘটনার কারণ জানতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। দুর্ঘটনার পর এ ধরনের তদন্ত কমিটি গঠন করা নামেমাত্র বলে মনে হয়। তদন্ত কমিটির সুপারিশ নিয়ে ত্বরিত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এমন খবর শোনা যায় না।

সরকারকে নৌদুর্ঘটনাকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে নৌমন্ত্রণালয় ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়কে পুনর্বাসন কাজে এগিয়ে আসতে হবে। নৌচলাচলের ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ নৌরুটগুলো চিহ্নিত করা প্রয়োজন এবং এর তীরবর্তী লোকালয়গুলোয় উদ্ধার কর্মীদের টাস্কফোর্স গঠন করে এদের নিয়মিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। অগণিত মানুষের নিরাপদ যাতায়াত ও সুষ্ঠু ব্যবসা-বাণিজ্য অব্যাহত রাখতে নৌপথের দিকে নজর দিতে হবে জরুরিভিত্তিতে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App