×

মুক্তচিন্তা

শিক্ষকের উন্নত জীবন শিক্ষার উন্নতি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ মার্চ ২০১৯, ০৮:৩৭ পিএম

সরকারি মাধ্যমিকের শিক্ষক হিসেবে একজন বাংলাদেশি উচ্চতর ডিগ্রি থাকা সত্ত্বেও কঠিন যুদ্ধে উত্তীর্ণ হয়ে তবেই পান প্রবেশাধিকার। এরপরও তাদের নিয়মিত নানাবিধ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিজেকে সময়োপযোগী করে তুলতে হয়। শ্রেণিকক্ষ ছাড়াও সরকারি নানাবিধ দায়িত্ব তাদের পালন করতে হয়।

এসবও হাসিমুখে মাথা পেতে নেন তারা এবং অত্যন্ত দক্ষতা ও যোগ্যতা দিয়ে সম্পন্ন করেন। এত কিছুর পরও কোনো শিক্ষক দুর্নীতিগ্রস্ত এমন প্রমাণ পাওয়া ভার। তবে সাম্প্রতিক সময়ে কিছু দুর্নীতি প্রকাশিত হচ্ছে। আর সেটা হলো প্রাইভেট কোচিং। মহামান্য আদালত কোচিং বাণিজ্যের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছেন। তবে কোনটা প্রাইভেট কোচিং বা কোনটা কোচিং বাণিজ্য তা সুস্পষ্ট না হলেও এ নিয়ে জনমনে পক্ষে-বিপক্ষে নানা মতামত পত্রিকার পাতায় বা অন্যান্য যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে খুব দেখা যাচ্ছে।

মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীও এ বিষয়ে তার অভিমত দিয়েছেন। তিনি শিক্ষা পরিবারের অভিভাবক, তিনি যে করেই হোক তার পরিবারের সর্বোচ্চ সুরক্ষা ও উন্নতি ভাববেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু একজন শিক্ষক নানাবিধ কারণে প্রাইভেট পড়াতে বাধ্য হন। প্রাইভেট পড়ায়। এ জন্য তাদের পারিবারিক ও সামজিক জীবন ব্যাহত হয়। আমি হলফ করে বলতে পারি আর যাই হোক শিক্ষকরা লোভী বা দুর্নীতিবাজ নন। এখনো তাদের পরিবারের জন্য নিজস্ব মাথা গোঁজার ঠাঁই তৈরি করতে পেনশনের টাকার ওপরই নির্ভর করে থাকতে হয়। তাদের কোনো সুযোগই নেই কোনো অসদুপায়ে রাতারাতি কোটিপতি হয়ে যাওয়া বা ফ্ল্যাট, বাড়ির মালিক হয়ে যাওয়া। যেখানে আমরা প্রায় প্রতিদিনই পত্রিকা খুললেই দেখতে পাচ্ছি বিভিন্ন সরকারি অফিসের পিয়ন, অফিস সহকারী শত ছাড়িয়ে হাজার কোটি টাকার মালিক হয়ে গেছেন।

অথচ দুদক পড়ে আছে মাধ্যমিকের শিক্ষকদের নিয়ে। একজন সরকারি মাধ্যমিকের শিক্ষক আজীবন অতিসাধারণ জীবনযাপন করবেন এটাই যেন তাদের নিয়তি হয়ে গেছে। অথচ উন্নত বিশ্বে দেখা যায় সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চাইতেও বেশি সম্মানজনক চাকরি মাধ্যমিক এবং নিম্নমাধ্যমিকের। তাদের সুযোগ-সুবিধাও সর্বোচ্চ। উন্নত দেশগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়া সহজ কিন্তু প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষক হওয়া কঠিন।

আর আমাদের দেশে অতিরিক্ত সুযোগ-সুবিধা তো দূরের কথা সরকারি মাধ্যমিকের শিক্ষকরা তাদের ন্যায্য পাওনা থেকেই বঞ্চিত বছরের পর বছর। আমি আবারো বলছি সরকারি মাধ্যমিকের শিক্ষকরা অত্যন্ত মেধাবী। তাদের মাঝে যে সৃষ্টিশীলতা আছে তা বাঁচিয়ে রাখতে তাদের মাথার ওপর আকাশটাকে উন্মুক্ত করতে হবে। উন্নত দেশের মতো সর্বোচ্চ মর্যাদাকর পেশা হিসেবে শিক্ষকতাকে ঘোষণা করে শিক্ষক এবং তাদের পরিবারের দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে। আর এমনটা হলেই মেধাবীরা এ পেশায় আসা সম্মানের মনে করবে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষাগুরুর সর্বোচ্চ মর্যাদার এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। নিজে প্রধানমন্ত্রী হয়েও নিজের শিক্ষকের সঙ্গে লাল-গালিচায় এক সঙ্গে হাঁটেননি এমনকি তার শিক্ষকের কাঁধের চাদরটি পড়ে যেতে দেখে পরম মমতায়, ভালোবাসায় গায়ে জড়িয়ে দিয়েছেন। একজন শিক্ষকের জীবনে সর্বোচ্চ প্রাপ্তি এটাই।

সরকারি মাধ্যমিক পরিবারের শিক্ষকরাও আশায় বুক বেঁধে আছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ২০১২ সালে ঘোষিত শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির সফল বাস্তবায়ন। সরকারি মাধ্যমিকের শিক্ষকরা আশায় বুক বেঁধে আছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একটি নির্দেশনার জন্য।

সরকারি মাধ্যমিকের প্রতিটি শিক্ষক বিশ্বাস করেন তাদের পেশাগত যে কোনো সমস্যা সমাধান করে সম্মানজনক জীবনের নিশ্চয়তা একমাত্র মমতাময়ী প্রধানমন্ত্রীই দেবেন। শিক্ষকের জীবনমান উন্নত এবং নিষ্কণ্টক হলেই পরবর্তী প্রজন্মের মেধাবীরা এই পেশায় আসতে আগ্রহী হবে। আর এই মেধাবী শিক্ষকের হাতেই গড়ে উঠবে বাংলাদেশের মেধাবী আগামী।

সহশিক্ষক, মোহাম্মদপুর কমার্শিয়াল ইনস্টিটিউট সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App