×

মুক্তচিন্তা

সোনালি আঁশের সুদিন ফিরে আসুক

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ মার্চ ২০১৯, ০৮:৪০ পিএম

বুধবার সারাদেশে তৃতীয়বারের মতো পালিত হয়েছে জাতীয় পাট দিবস। এই দিবস পালন উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পাটশিল্পকে লাভজনক পণ্য হিসেবে বিকশিত করতে গুরুত্ব দিয়েছেন।

অন্যান্য রপ্তানিমুখী পণ্য যে প্রণোদনা পাচ্ছে, পাটপণ্যের ক্ষেত্রেও সেরূপ প্রণোদনা দেয়া হবে। পাটপণ্য দিয়ে বিশ্ববাজার দখল করতে হবে। পাটের হৃত গৌরব পুনরুদ্ধারে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলে আমরা মনে করি। এক সময় পাটকে বলা হতো সোনালি আঁশ।

তদানীন্তন পাকিস্তানের অর্থনীতিতে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান উৎস ছিল পাট রপ্তানি। দেশ স্বাধীনের পরও প্রধান অর্থকরী ফসল ছিল সোনালি আঁশ পাট। তখন দেশে ৮৭টি পাটকল ছিল। কিন্তু আশির দশক থেকেই দাতা সংস্থাগুলোর পরামর্শে তৎকালীন সরকারগুলোর নেয়া বৈরী সিদ্ধান্তে একের পর এক বন্ধ হতে থাকে পাটকল, নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করে দেয়া হয় বৃহৎ পাটকলগুলো।

এর ফলে বাংলাদেশ হারায় তার বিশ্ব পাটের বাজার। দেশেও পাটজাত পণ্যের ব্যবহার উঠে যায়। সেই জায়গা দখল করে নেয় আমদানি করা কৃত্রিম তন্তু। দ্রব্য মোড়কে, বাজার-সওদা করতে পলিথিন প্যাকেট ও ব্যাগ অনিবার্য হয়ে পড়ে। এই সর্বগ্রাসী পলিথিন ব্যাগ তো এখন দেশের পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি।

তবে স্বস্তির ব্যাপার হলো রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে পরিস্থিতি উল্টো বাঁক নেয়। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার পাট শিল্পের সুদিন পুনরুদ্ধারে মনোযোগী হয়েছে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে পাঁচটি বন্ধ পাটকল চালু করেছে। এর ফলে প্রায় ১০ হাজার নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টারের (জেডিপিসি) মাধ্যমে এরই মধ্যে প্রায় ৬৫০ জন বেসরকারি উদ্যোক্তা সৃষ্টি হয়েছে। এসব উদ্যোক্তা প্রায় ২৮০ ধরনের পাটের পণ্য তৈরি, বাজারজাত এবং রপ্তানি করছে। সম্প্রতি পাট থেকে জুট পলিমার তৈরির পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়েছে। এটা দিয়ে পলিথিন ব্যাগের বিকল্প ‘সোনালি ব্যাগ’ তৈরি করা হচ্ছে।

উদ্যোগগুলো পাটশিল্পে আশাব্যঞ্জক সৃষ্টি হয়েছে। পাটের সম্ভাবনাগুলো বিকশিত করে অর্থনীতিতে গতি সঞ্চারে পাট খাতের উদ্যোগগুলো সমন্বিত করার লক্ষ্যে দেশে তৃতীয়বারের মতো জাতীয় পাট দিবস পালন একটি আশাপ্রদ ব্যাপার। এ দিবসকে কেন্দ্র করে উদ্যোক্তাদের পুরস্কৃত করা হচ্ছে।

পাটের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে দেশের জুটমিলগুলোকে প্রযুক্তিনির্ভর করার তাগিদও দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, কৃষক যেন পাটের ন্যায্যমূল্য পায়, পাট চাষে উৎসাহী হয় সে ব্যবস্থা করতে হবে।

বন্ধ পাটকল চালু করা, কাঁচাপাট ও পাটজাতপণ্যের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা, পাট শ্রমিকদের মজুরি সময়োপযোগী করা, পাট নিয়ে ব্যাপক গবেষণার মাধ্যমে উন্নত জাতের পাটবীজ উদ্ভাবন, উন্নতমানের পাটজাত পণ্য উৎপাদন এবং দেশীয় পাটপণ্যের আন্তর্জাতিক বাজার সম্প্রসারণে সরকার ও সংশ্লিষ্টরা সচেষ্ট থাকলে পাটের সুদিন ফেরার প্রত্যাশা করাই যায়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App