×

মুক্তচিন্তা

বিশ্ব নারী দিবস ও নারীর পুষ্টি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ মার্চ ২০১৯, ০৮:৪৭ পিএম

একজন নারী তার জীবনে মূলত তিনটি চরিত্র বা ভূমিকা পালন করে- প্রথমত একজন কিশোরী মেয়ে, দ্বিতীয়ত একজন স্ত্রী এবং অতঃপর একজন শিশুর মা। শুধু তাই নয়, মানব জাতিতে শুধু নারীরাই মানব শিশু ১০ মাস গর্ভে ধারণ করে সন্তান জন্ম দান করে এবং শিশুর জন্ম হওয়ার পরপরই ওই শিশুকে নিজের দুগ্ধ পান করাতে হয় শিশুর গঠন বৃদ্ধির জন্য। পুরুষরা তা করে না বা করতে পারে না।

এ ছাড়া একজন নারীর বয়ঃসন্ধির সঙ্গে সঙ্গে শারীরিক গঠন ও অভ্যন্তরীণ গঠন এবং হরমোনাল জনিত পরিবর্তন হয়, সে ক্ষেত্রে একজন নারীর শিশুকাল থেকেই শরীরের পুষ্টি প্রদান বা গ্রহণের জন্য যথেষ্ট খেয়াল রাখা একান্ত প্রয়োজন।

একটি মেয়ে শৈশব থেকে তার বয়ঃসন্ধি ঘটে বা কিশোরীতে রূপান্তরিত হয় ১০ থেকে ১৩ বছর বয়সের মধ্যে। এই সময়টি শারীরিক ও মানসিক উভয় দিকেই তার নানা পরিবর্তন দেখা যায় এবং শরীর দ্রুত বৃদ্ধি পেতে তাকে।

তাই ঠিক এই সময়টা সঠিক পুষ্টি না পেলে শরীর গঠনে ঘাটতি দেখা দেবে এবং বিভিন্ন সময়ে নানা ধরনের জটিলতা যেমন- কম শক্তি, কর্ম ক্ষমতা স্বল্পতা, দুর্বল হাড়-গঠন, বুদ্ধি স্বল্পতা, সন্তান ধারণ দুর্বলতা, সন্তান দুগ্ধপানে অক্ষমতা, বিভিন্ন নারীজনিত অসুখ ইত্যাদি দেখা দেবে।

তাই এই ১ বয়সের কিশোরী মেয়েদের প্রতিদিন ১৬০০-২২০০ কিলোক্যালরি যুক্ত ভাত, মাছ-মাংস, সবজি, ব্রেড, দুধ, দুগ্ধজাত খাবার, ডিম, নানা প্রকার দেশি ফলমূল খেতে হবে এবং যাতে সব ধরনের ব্যালেন্স পুষ্টি যেমন- বিশেষ শক্তি (কার্বোহাইড্রেট), ফ্যাট বা তেল, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, আয়রন, জিঙ্ক, ফলিক এসিড থাকে তা খেয়াল রাখতে হবে।

বিশেষ করে কিশোরী গর্ভবতী বা কিশোরী দুগ্ধ দানকারী মা তাদের ক্ষেত্রে আরো পুষ্টি যত্ন নিতে হবে।একজন পূর্ণ বয়স্ক নারী বিবাহিতা বা অবিবাহিতা, কর্মজীবী- সবাইকেই সচেতন থাকতে হবে শরীরের গঠন ও পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে। যে কোনো নারীকেই দৈনিক নানা রকম কাজ করতে হয়।

শরীরের উচ্চতা অনুসারে ওজন ও পুষ্টি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। যাতে পুষ্টির অভাবে বিবাহিত জীবনে কোনো প্রকার শারীরিক জটিলতা দেখা না দেয়। নারী দেহে ফ্যাট বা অতিরিক্ত মোটা হওয়া সবচেয়ে ক্ষতিকর, এতে বিয়ের পর সন্তান ধারণে বা সন্তান না হওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

আবার কম খাবার খেয়ে বেশি চিকন নারীদেরও পুষ্টির অভাবে রক্ত শূন্যতা, কর্ম ক্ষমতা স্বল্পতা, সন্তান ধারণ জটিলতা, অপুষ্টি সন্তান প্রসব, নবজাত শিশুকে দুগ্ধদানে ব্যর্থতাসহ নানা ধরনের জটিলতা দেখা দেয়। যা অনেক সময় ব্যয়বহুল অপুষ্টি জীবনে পরিণত হয়।

একজন পূর্ণ বয়স্ক (১৯-৩০ বছর) নারী অবিবাহিতা হলে প্রতিদিন ২০০০ কিলোক্যালরি, বিবাহিতা হলে ২০০০-২২০০ কিলোক্যালরি এবং কর্মজীবী হলে ২৪০০ কিলোক্যালরি, (৩১-৫০ বছর) অবিবাহিতা হলে ১৮০০ কিলোক্যালরি, বিবাহিতা হলে ২০০০ কিলোক্যালরি এবং কর্মজীবী হলে ২২০০ কিলোক্যালরি, (৫১+ বছর) অবিবাহিতা হলে ১৬০০ কিলোক্যালরি, বিবাহিতা হলে ১৮০০ কিলোক্যালরি এবং কর্মজীবী হলে ২০০০-২২০০ কিলোক্যালরি যুক্ত খাবার এবং যাতে সব ধরনের ব্যালেন্স পুষ্টি যেমন- বিশেষ শক্তি (কার্বোহাইড্রেট), ফ্যাট বা তেল, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, আয়রন, জিঙ্ক, ফলিক এসিড থাকে তা খেয়াল রাখতে হবে।

একজন গর্ভবতী মায়ের ক্ষেত্রে দৈনিক অতিরিক্ত ৫০০ কিলোক্যালরি এবং দুগ্ধ দানকারী মায়েদের ১০০০ কিলোক্যালরি খাবার খেতে হবে। এসব খাবারে অবশ্যই সব ধরনের ব্যালেন্স পুষ্টি যেমন- বিশেষ শক্তি (কার্বোহাইড্রেট), ফ্যাট বা তেল, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, আয়রন, জিঙ্ক, ফলিক এসিড, হাই ফাইবার ইত্যাদি থাকতে হবে।

আর এসব পুষ্টি পাওয়া যাবে ভাত-রুটি, ব্রেড-ওটস, মাছ-মাংস, মুরগি, শাকসবজি, মিষ্টি আলু, দুধ, দুগ্ধজাত খাবার যেমন- বাটার, ঘি, চিজ, পুডিং, দই, প্লান্ট বেজ হাই ফাইবার ও প্রোটিন যুক্ত খাবার যেমন- ব্রকলি, গ্রিন পিচ, ডাল শিম, নানা রকম সিজনাল দেশি ফলমূল, ডাব-পানি এবং প্রচুর পানি ইত্যাদি থেকে।  সঠিক পুষ্টি ও শক্তিযুক্ত খাবারে মা ও গর্ভের শিশু দুজনই সুস্থ ও সবল থাকে।

আমাদের দেশে মায়েরা নিজেদের শরীরের বা খাবারের ওপর বেশি খেয়াল না রেখে সন্তান, স্বামী ও অন্য সদস্যদের প্রতি খাবারের বেশি যত্ন নেয়; কিন্তু এটি কোনো মানবিক বিষয় নয়, একজন দায়িত্বশীল নারী বা মা তাকে অবশ্যই পুষ্টিকর ও প্রয়োজনীয় খাবার খেতে হবে, যাতে সে সুস্থ থাকে এবং সংসারের বা অফিসের সব কাজ সম্পন্ন করে সবাইকে সুস্থ রাখতে পারে। সুস্থ মা-ই পারে একটি সুস্থ জাতি উপহার দিতে।

জীনাত লায়লা বানি : ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনিস্ট ও পুষ্টিবিদ, বাংলাদেশ স্পেশিয়ালাইজড হাসপাতাল লি.

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App