×

অর্থনীতি

শর্তের বেড়াজালে নারী উদ্যোক্তাদের ব্যাংকঋণ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ মার্চ ২০১৯, ১২:৫৭ পিএম

শর্তের বেড়াজালে নারী উদ্যোক্তাদের ব্যাংকঋণ
নারী উদ্যোক্তারা ব্যাংক ঋণ পেতে দিনের পর দিন নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। সরকার তাদের জন্য সহজ শর্তে ও কম সুদে ঋণ দিতে নীতিমালা প্রণয়ন করলেও এর শতভাগ সুবিধা পাচ্ছেন না তারা। নানা শর্তের বেড়াজালে ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে ভোগান্তিতে পড়ছেন। এ ছাড়া ব্যাংকের কর্মকর্তারা কাগজপত্র সংকট কিংবা অসম্পূর্ণ হওয়ার অজুহাতে ঋণ দিতে টালবাহানা করছেন। অনেক ব্যাংক কর্মকর্তা ঋণ দিতে শুধু ঘুষই দাবি করেন না রয়েছে আরো অনেক আবদার। এসব কারণে অনেক নারী ব্যবসা ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। আবার কেউ কেউ এনজিও থেকে চড়া সুদে ঋণ নিচ্ছেন। সুদ পরিশোধে হিমশিমও খাচ্ছেন। উন্নয়নশীল দেশ গড়তে সরকার ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে নারীদের ব্যবসা সংক্রান্ত বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। পরবর্তীতে সহজ শর্তে ঋণ দেয়ার কঠোর নির্দেশ থাকলেও হয়রানির অভিযোগ উঠেছে ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। বারিধারা ডিওএইচএস নারী উদ্যোক্তা শারমিন আক্তার বলেন, ব্যাংক আমাকে ঋণ দিতে নানা অজুহাতে বহু দিন ঘুরিয়েছে। পরবর্তীতে আমার চাহিদা মতো টাকাও দেয়নি। আইটি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত আফরোজা খান। ব্যবসা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে তার প্রতিষ্ঠান এসজিএসের নামে ৫ লাখ টাকা এসএমই ঋণ নিতে অগ্রণী ব্যাংকে আবেদন করেন। এ জন্য তার ফ্ল্যাটের কাগজপত্র জমা দেন। কিন্তু যৌথ মালিকানার অজুহাতে তা বাতিল করে দেয় ব্যাংক। এরপর আবার চাহিদামাফিক কাগজপত্র জমা দেন। প্রায় এক বছর অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত ঋণ পাননি তিনি। বিরক্ত হয়ে ব্যবসা গুটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আফরোজা। অনলাইন প্রতিষ্ঠান গুটিপার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তাসলিমা মিজি জানালেন, ব্যবসা শুরুর দিকে একটি বেসরকারী ব্যাংক থেকে ঋণ নেন তিনি। ঋণ পেলেও প্রথমে তার আবেদন নাকচ করা হয়। তিনি বলেন, প্রথমে আমার ফাইলটা ফেরত পাঠিয়ে দেয় ওরা। তারা ঋণ দিতেই চায় না। আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের আদেশের কথা বললাম। তারা তখন বলে মেয়াদ নেই, আরো নানা অজুহাত দেখিয়ে ফাইল ফেরত পাঠায়। পরে ওই ব্যাংকেরই এক উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাকে দিয়ে বারবার বলিয়ে ফাইলটার কাজ শুরু করা হয়। রি- পেমেন্টসের বিষয়ে তাদের নিশ্চয়তা দেয়া হয়। এরপর আমার ফাইল ওরা আবার রিভিউ করে।’ আরেক উদ্যোক্তা আসিফা রহমান। ২০১৬ সাল থেকে নিজ উদ্যোগে ব্যবসা শুরু করেন। গত বছরের শুরুতে একটি বেসরকারি ব্যাংকের অনুক‚লে এসএমই ঋণের জন্য আবেদন করেন তিনি। কাগজপত্রের জটিলতা দেখিয়ে এখন পর্যন্ত সে ঋণ অনুমোদন দেয়া হয়নি। গত ২ মার্চ এক অনুষ্ঠানে নারী উদ্যোক্তাদের সংগঠন ওমেন এন্টারপ্রিনিওয়ার্স নেটওয়ার্ক ফর ডেভেলপমেন্ট এসোসিয়েশনের (ওয়েন্ড) প্রেসিডেন্ট ড. নাদিয়া বিনতে আমিন বলেন, নারী উদ্যোক্তাদের জন্য সরকার সহজ শর্তে ও কম সুদে ঋণ প্রদানের নীতিমালা প্রণয়ন করলেও এর শতভাগ সুবিধা পাচ্ছেন না উদ্যোক্তারা। নানা শর্তের বেড়াজালে ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে ভোগান্তিতে পড়ছেন তারা। এ বিষয়ে সরকারের নীতিমালা আরো সহজীকরণের মাধ্যমে কার্যকর বাস্তবায়ন চায় নারী উদ্যোক্তারা। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের পুনঃঅর্থায়ন তহবিলের ঋণসীমা ২৫ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক কোটি করার দাবি করা হয়। একই সঙ্গে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ব্যাংকের হেল্প ডেস্কগুলোর কার্যকর করার দাবিও জানান তিনি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্যাংক ঋণ নিয়ে প্রতিটি উদ্যোক্তারই রয়েছে বিচিত্র অভিজ্ঞতা। উদ্যোক্তারা বলছেন, অনেক ব্যাংক কর্মকর্তা ঋণ দিতে শুধু ঘুষই দাবি করেন না। থাকে আরো অনেক আবদার। এসব কারণে অনেক নারী ব্যবসা ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। তারা বলছেন, ব্যাংক ঋণ যেন সোনার হরিণ। ঋণ নিতে গিয়ে হয়রানির শিকার হয়ে বাধ্য হয়ে অনেকেই ইদানিং এনজিও থেকে ঋণ নিচ্ছেন। জাতীয় শিল্পনীতি-’১৬ অনুযায়ী, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতে কমপক্ষে ১৫ শতাংশ ঋণ নারী উদ্যোক্তার মধ্যে বিতরণ করতে হবে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী ’১৮ সালের ৬ মাসে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতে (এসএমই) ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যে ঋণ বিতরণ করেছে, তার মধ্যে নারীরা পেয়েছেন মাত্র ৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে উইমেন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি (বিডবিøউসিসিআই) উইমেন চেম্বারের সহসভাপতি হাসিনা নেওয়াজ বলেন, এসএমই খাতের জন্য ঋণের মোট বরাদ্দের ১৫ শতাংশ পাওয়ার কথা নারী উদ্যোক্তাদের। সেই ঋণ ব্যাংকগুলো দিচ্ছে ঠিকই, কিন্তু তা পাচ্ছেন মূলত ঢাকার বড় কয়েকজন। ব্যাংকগুলো নিয়ম রক্ষায় ঋণ দিয়ে শুধু কোটা পূরণ করছে। জানা গেছে, গ্রাহক ঋণ পাচ্ছে না অথচ ব্যাংকে অলস টাকার পাহাড়। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে অতিরিক্ত তারল্য ছিল ১ লাখ ২৬ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা। বর্তমানে তা আরো বেড়েছে। এ টাকা মূলত অলস অর্থ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App