×

মুক্তচিন্তা

নির্বাক চেয়ার সব জানে শুধু বলতে পারেনা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ মার্চ ২০১৯, ০৯:১৯ পিএম

কিছুদিন আগে এক অতিরিক্ত সচিবের আমন্ত্রণে সচিবালয়ে গিয়ে দেখি অনেক নির্বাক চেয়ার বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। শুধু নেই সেই অতিরিক্ত সচিব। তাকে দুর্নীতির দায়ে ওএসডি করা হয়েছে। অথচ কেউ কোনোদিন বুঝতে পারেনি, চেয়ারের জোরে তিনি হয়েছিলেন দুর্নীতিগ্রস্ত। নির্বাক সিঁড়ি এবং সবই জানে নির্বাক চেয়ারগুলো। প্রসঙ্গক্রমে একটি গ্রিক প্রবাদ বলা যেতে পারে। ‘অগ্নি এবং লোভকে কখনো বাড়তে দিতে নাই।’ সেই অতিরিক্ত সচিবের যাবতীয় অপকর্ম জেনেছে নির্বাক চেয়ার। শুধু বলতে পারেনি।

সিঁড়ি এবং চেয়ার সবই জানে। শুধু জানে না বা পারে না কথা বলতে, সিঁড়ি যদি কথা বলতে পারত সে অবশ্যই জানিয়ে দিত, তার বুকের উপর পা দিয়ে কত লোক এলো আর গেল কতজন। কেউবা গিয়েছেন মধ্যরাতে পরস্ত্রীর হাত ধরে, আবার কেউবা মদ্যপবস্থায় নিজের ফ্ল্যাটের কলিং বেল না টিপে টিপেছেন ৩ তলার অন্য ফ্ল্যাটে। সেই মধ্যরাতেই ধরাধরি মারামারি শেষ অবধি সেই অভিজাত এলাকায় পুলিশের আগমন, পুলিশ পুরো ঘটনা শুনলেও, নির্বিকার কিছু না বলেই ফিরে যেতে হয়েছিল কেননা যিনি ৩ তলার দক্ষিণ দিকের কলিং বেলে টিপ দিয়ে ভেবেছিলেন এটি তারই ফ্ল্যাট আসলে তার ফ্ল্যাটটি ছিল উত্তরের ফ্ল্যাটটি। পুলিশ ঠিকই এসেছিল, উত্তরের ফ্ল্যাটটি যার তিনি রাজনীতিবিদ তার প্রভাব-প্রতিপত্তি অকল্পনীয় তাই তিনি কাউকে ভয় পাবেন এমন মানুষ তিনি নন। দক্ষিণ দিকের ফ্ল্যাটের যিনি কর্ণধার তিনি একদা প্রভাব-প্রতিপত্তির সঙ্গে রাজনীতি করেছেন আইনের ঊর্ধ্বে উঠে গিয়ে বিদেশ থেকে গম চিনি আনিয়ে, গম চিনির জাহাজ যেদিন ধরা পড়ল বাংলাদেশের ঢাকা শহরের দক্ষিণ দিকের বুড়িগঙ্গা নামের এক নদীতে, সেই দিন থেকে সেই প্রাক্তন প্রতাপশালী অপাঙ্ক্তেয় হয়ে গেলেন, তার দল থেকে তখন তাকে জনগণ উপাধি দিলেন চিনি চোর মন্ত্রী।

আজ মধ্যরাতে উত্তর এবং দক্ষিণ দিকের দুই ফ্ল্যাটের কর্ণধারদের কিছুই বলতে পারলেন না, পুলিশ যে গতিতে এসেছিলেন তারচেয়ে দ্রুত গতিতেই তাদের ফিরে যেতে হয়েছিল সেই মধ্যরাতে। অথচ উত্তরের সেই চিনি চোর একদিন বিশাল শ্রমিক নেতা ছিলেন। টঙ্গীর শিল্প এলাকায় ছিল তার প্রচণ্ড প্রভাব। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে তিনি বার-কয়েক বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে শেষ রক্ষা পেয়েছিলেন মন্ত্রী হয়ে ঘটনাগুলো গত শতকের এবং এই শতকের কিয়ৎকাল। গোড়ার দিকে।

সেই রাতে সিঁড়ি সবই জানল, দেখল, শুনল এবং পুলিশ নির্বিকার রূপে ফিরে যাওয়ার সময় নাকি বলেছিলেন একজন প্রাক্তন ডাকসাইটে শিক্ষামন্ত্রী। তবে শেষদিকে চিনি চোর হিসেবে সমাদৃত হয়েছিলেন, অপরজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এবং একটি রাজনৈতিক দলের নেতা যিনি একদা চোরাচালানিতে একাধিকবার জেলে গিয়েছিলেন এবং পরস্ত্রীর সঙ্গে সঙ্গ দেয়ার অপরাধেও ছিলেন স্বনামধন্য। যথন তিনি জেলখানা থেকে বেরিয়ে আসতেন, তখন তার পোষ্যরা তাকে জেল গেটে গিয়ে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করতেন এবং পরের দিন বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ছবি ছাপা হতো, অমুক রাজনীতিবিদ ছাড়া পেয়েই তিনি উপস্থিত সুধামণ্ডলীদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে গিয়ে বলেছেন, সামনে আসছে সুদিন, আমাকে অন্যায়ভাবে আর কেউ জেল, জুলুম, হাজত খাটাতে পারবে না।

আমি অচিরেই ভোটে দাঁড়াব, আপনারা আমার- পরের কথাটুকু আর বোঝা যায়নি, রাজপথে জ্যাম লেগে যাওয়ায় গাড়ির হর্নের শব্দে চাপা পড়েছিল তার অমূল্য বাণী। সেই বাণী বিতরণকারী আজকে যখন মধ্যরাতে, ওই দক্ষিণের ফ্ল্যাটের কলিং বেল টিপে ছিল তখনো সিঁড়ি হেসেছিল। অভিজাত এলাকায় বিভিন্ন বাড়ির সিঁড়ির ভেতরে আবার শ্রেণিভেদ আছে, যেমন বারিধারার সিঁড়িগুলো খুব দাম্ভিক কেননা ওই সব সিঁড়ির টাইলসগুলো আনানো হয়েছিল সুদূর ইতালি থেকে, সাত সমুদ্র পাড়ি দিয়ে ওরা এসে উঠেছিল বারিধারায়, সেই টাইলসওয়ালা সিঁড়িগুলো ভীষণ দাম্ভিক, চুপচাপ থাকতেই ভালোবাসে। ওই অভিজাত এলাকায় আরো আছে গুলশান, বনানী, ধরা যেতে পারে গুলশান এবং বনানীর নব্য ধনীদের বাড়িতে ভারতীয় অথবা শ্রীলঙ্কার নি¤œ দামের টাইস দিয়েই নির্মিত হয়েছিল নির্বাক সিঁড়িগুলো, যেহেতু টাইলসগুলো ইউরোপ থেকে আসেনি, সেই ইউরোপিয়ান টাইলসগুলো, তারা ফিরেও তাকায়নি, ভারতীয় বা শ্রীলঙ্কান টাইলসের দিকে উপরন্তু ভারতীয় শ্রীলঙ্কান টাইলসগুলো খুবই মনোকষ্টে ছিল একই জাহাজে।

বারিধারার একটি বিশেষ বাড়ির, বিশেষ ব্যক্তির বাড়ির দিকে দীর্ঘশ্বাস ফেলে এখনো তাকিয়ে থাকে, এশীয় টাইলসগুলো- বারিধারার যে বাড়িটির দিকে তাকায়, সেই বাড়িটিতে যিনি বসবাস করেন তিনি একদা স্বৈরাচারী এক সময়ের প্রেমিক খণ্ডকালীন কবি এবং দীর্ঘ কয়েক বছর তিনি কাটিয়েছিলেন বাংলাদেশের বিভিন্ন কারাগারে, তারই এক সময়ের ভাবীর নির্দেশে। সিঁড়ির কথাও জানে। আজ থেকে ৫০-৬০ বছর আগে কিংবা পুরান ঢাকায় বিভিন্ন বাড়িতে, বাড়ির মালিকরা বিদেশি টাইলস তাদের বাড়ির সিঁড়িতে, মেঝেতে, দিতে না পেরে কেউ কেউ কোনো কোনো বাড়িওয়ালা হয়তো ব্যবহার করেছিলেন মোজাইক।

সেই মোজাইকের দানাগুলো আসত পশ্চিম পাকিস্তানের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে, করাচির সমুদ্রবন্দর হয়ে তৎকালের পূর্ব পাকিস্তানের চট্টগ্রামের সমুদ্রবন্দর হয়ে আসত ঢাকায় মোজাইক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল নগণ্য বলা যেতে পারে। পুরান ঢাকায় কিছু কিছু বনেদি হিন্দুদের বাড়িতে ব্যবহার হতো বিদেশি টাইলস এবং দিল্লি আগ্রার শ্বেত পাথরের কারুকাজ করা শিলাখণ্ডিত সাদা, নীল, সবুজ, কালো রঙের পাথর তবে সেগুলো টাইলস ছিল না কোনোদিন, ঢাকার সূত্রাপুর, বাংলাবাজার, ওয়ারী, গ্র্যান্ড এরিয়া নামে। (আজকে যাকে বলা হয় গেণ্ডারিয়া) যে অভিজাত এলাকাটি এখনো বর্তমান যেমন রূপচাঁদ ভবন কিংবা আহসান মঞ্জিল এবং সদরঘাটের জনসন রোডে অবস্থিত ব্রহ্মসমাজের ভবনটির সিঁড়িতে প্রায় ৫০-৫৫ বছর আগেই চোখে পড়েছিল শ্বেত পাথরের সিঁড়ি। আমার মনে হয় সে কালের পূর্ববঙ্গের মানুষদের শত ইচ্ছা থাকলেও তারা তাদের বাড়িতে দিতে পারেননি, শ্বেত পাথরের টাইলসের এবং মোজাইকের মেঝে, সিঁড়ি। তখন তাদের আশ্রয় নিতে হয়েছে কালো লাল সিমেন্টের মিশ্রণে অথবা শুধু কালো সিমেন্টের নিট ফিনিশিং দিয়ে সাজাতে হয়েছে, মেঝে এবং সিঁড়ি।

পুরান ঢাকার বেগম বাজারের বিশিষ্ট জুতার ব্যবসায়ী হাজি নিয়াজের বড় বোনের নামে চকবাজারের ভেতরে এক সময়ে তিনটি জুতার দোকানের নামই ছিল জিনাত সু স্টোর। সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন জেলা থেকে ওই জিনাত সু স্টোর থেকে কখনো নগদে আবার কখনো বাকিতে জুতা নিয়ে যেতেন ব্যবসায়ীরা, হাজি নিয়াজ মোহাম্মদের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছিল ১৯৬৭ সালে, আমি তখন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। আমাদের সহপাঠী মোহাম্মদ ইকবাল, বাড়ি নাজিমউদ্দিন রোডের জেলখানার পেছনের দিকে, ইকবালই একদিন নিয়াজ মোহাম্মদের বাড়িতে নিয়ে গেলেন। নিয়াজ তখনো স্কুলের গণ্ডি পার হননি, যেহেতু বেগম বাজার চক বাজারে ইকবালের পিতার দোকান ছিল কিনা মনে না থাকলেও মনে আছে বন্ধু ইকবালের পিতা পাকিস্তানের করাচিতে, পূর্ব পাকিস্তানের পান রপ্তানি করতেন। যেহেতু নাজিমউদ্দিন রোড এবং বেগম বাজারের দূরত্ব খুব একটা বেশি না হওয়ায় পাড়া-প্রতিবেশী নিয়াজের সঙ্গে তাদের নবকুমার স্কুলে পাঠকালে বন্ধুত্ব হয়েছিল, যদিও ইকবাল, নিয়াজ মোহাম্মদের চেয়ে বছর দুয়েকের বড় ছিলেন। ইকবাল একদিন আমাকে গাজী আজিজুর রহমান, দেলোয়ার হোসেন, খলিলুর রহমান নামের এক সহপাঠীকে তাদের নাজিমউদ্দিন রোডের বাড়িতে নিমন্ত্রণ জানালো, আমরা বন্ধুরা ভীষণ খুশি।

খুশি হওয়ার নেপথ্যের বিষয়টি, ইতোপূর্বে কোনোদিন কোনো খোদ ঢাকাইয়াদের বাড়িতে যাওয়ার এবং খাবার সুযোগ হয়নি, সেই সুযোগই করে দিয়েছিল সহপাঠী ইকবাল। ইকবালদের বাড়ির গেটে বিশাল একটি বস্তা ঝুলানো এবং আমরা বাড়ির উঠানের দিকে তাকিয়ে দেখি অনেকগুলো ছাগল, ভেড়া এবং চারদিকে দুর্গন্ধময়। চার বন্ধুর ভেতরে গাজী আজিজ ফিসফিসিয়ে আমাকে জানাল, তার বমি বমি লাগছে দুর্গন্ধে। এমন সময় ইকবালের মা বেরিয়ে এলেন এবং ইকবালের সঙ্গে আদি ঢাকাইয়া ভাষায় যা বললেন তার মমার্থ, তোর বন্ধুদের নিয়ে ঘরে যা। ঘরে গিয়ে দেখি মেঝে লাল এবং কালো সিমেন্টের মিশ্রণে, মাঝখানের মেঝেতে ফুল আঁকানো এবং দেখতে সুন্দর, নিট ফিনিশিংয়ের মেঝে যেন তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে সেই ড্রয়িং রুমের সোফার ওপর দেখলাম একটি ছাগল নিশ্চিন্তে চোখ বুঁজে কি যেন ভাবছে। অথচ সোফাটাকে হয়তো দয়াবশ হয়ে ভিজিয়ে দেয়নি।

আমাদের গল্পগুজবের ভেতরে কেউ টেরই পেলাম না, ছাগল-ভেড়ার প্রাকৃতিক কৃতকর্মের কোন দুর্গন্ধ। আর তক্ষুনি ছুটে এল বাতাসের কাঁধে ভর দিয়ে পোলাও বিরানি, রেজালার সুগন্ধ। আদি ঢাকাবাসীদের আপ্যায়নের কোনো তুলনা হয় না বিশেষত অতিথিদের। উপরন্তু তারা যদি আমন্ত্রিত হন। সেই বিরানি পোলায়ের গন্ধ এখনো যেন পাই। পাই একই সঙ্গে ইকবালদের বাড়ির প্রবেশ পথে ছালা, বস্তা, টচের এবং ছাগল-ভেড়ার স্মৃতি, সুখময় গন্ধ। ওইদিনই বিকেল বেলায় ইকবাল নিয়ে গেল তারাই বন্ধু নিয়াজ মোহাম্মদের বাড়িতে। বেগম বাজারের চাপা গলির ভিতরের দোতলায়। হয়তো ইকবাল আগে থেকে জানিয়েছিল তার অনুজপ্রতিম নিয়াজ মোহাম্মদকে।

সেখানে গিয়ে দেখি বেশ জমজমাট রাতের খাবারের সুব্যবস্থা। নিয়াজের পিতা এবং মাতা উভয়েই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছিলেন, নিয়াজের স্কুল জীবনেই। যথারীতি রাত্রাহার শেষ করে যখন আমরা ৬ জন চকবাজারের মোড়ে এলাম তখন একজন ভদ্রলোকের কাছ থেকে জানতে চাইলাম এখন রাত ক’টা বাজে। তিনি জানালেন রাত সাড়ে নয়টা। যেহেতু তখনকার দিনে আমাদের হাতে ঘড়ি ছিল না। তবে সামনেই পড়েছিল চকবাজারের তিন মাথার মোড়ে একটি ভাঙা নির্বাক চেয়ার। সেই ১৯৬৭/৬৮ সাল থেকে হাজি নিয়াজের সঙ্গে অগ্রজ-অনুজের সম্পর্ক, নিয়াজের মাধ্যমেই পুরান ঢাকার মোগলটুলির বিখ্যাত চাল, ডাল ব্যবসায়ী হাজি মোহাম্মদ আবদুল্লার সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল। আবদুল্লাহ মোটা এবং কালো বর্ণের ছিলেন এবং বিশাল হৃদয়ের মানুষ ওই আবদুল্লাহ ইকবাল, নিয়াজ, আলমগীর, ইসাহাক, ইতোমধ্যে পুরান ঢাকায় আবদুল্লাহ এবং ইসাহাক পাড়ি দিয়েছেন অনন্তে।

মহান মুক্তিযুদ্ধে পুরান ঢাকার এবং নতুন ঢাকার অনেক কলেজ বন্ধুকেই হারিয়েছি, যারা মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিলেন দক্ষিণ মৈশণ্ডির, ইসলামপুরের, লালবাগের অনেক বন্ধুরা যুদ্ধে গিয়ে আর ফিরে আসেনি। আবদুল্লাহ সম্ভবত জনগন্নাথ কলেজে পড়ত কিন্তু পড়ালেখায় না থেকে, ব্যবসায় নাম লিখিয়েছিলেন সেই মুক্তিযুদ্ধের অনেক আগেই। যেহেতু ব্যবসাটি ছিল তাদের দুই পুরুষের।

দিন কয়েক পরে ইকবাল জানাল আজ ১০ নয়া পয়সা দিয়ে আমরা কার্ড খেলব নিয়াজদের বাড়ির গলির ভেতরের একটি ছোট ঘরে। গেলাম, গিয়ে দেখি অচেনা-অজানা কয়েকটি মুখ। ইকবাল এবং নিয়াজ পরিচয় করিয়ে দিল- আলমগীর এবং মোশারফ খানের সঙ্গে আমি বাদে সবাই যখন ১০ পয়সার তাস/কার্ড খেলায় নিমগ্ন তখন পাশের একটি দোকান থেকে একটি কাঠের চেয়ার এনেছিল। নির্বাক চেয়ার সবই দেখল সেই তাস খেলায় কে হারল আর কে জিতল। এক সময় হার-জিতের সেই খেলা শেষ হতেই মাত্র ৮ আনা পয়সা দিয়ে রিকশায় চকবাজার থেকে চলে এলাম মালিবাগের ভাড়া বাসায়। সেই ১৯৬৭/৬৮ (আমার কলেজ জীবনের শিক্ষা বছর ১৯৬৫-৬৭) সাল থেকেই সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে বিহারিদের তাড়নায় বাঙালিরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিল, ব্যবসাবাণিজ্য, সিনেমা হল, এমনকি বায়তুল মোকাররম ‘রমনা ড্রাই ক্লিনার্স’ও ছিল বোম্বাইয়াদের, ওই রমনা ড্রাই ক্লিনার্সের ক্যাশ কাউন্টারে সেই প্রথম একজন সুশ্রী বোম্বাইয়া মেয়েকে বসিয়েছিলেন রমনা ড্রাই ক্লিনার্সের মালিক পক্ষ। সাধারণ চেয়ারের চেয়ে ওই চেয়ারটি বেশ লম্বা থাকায় মেয়েটি সবার দৃষ্টিতেই পড়ত। রমনার জেনারেল পোস্টাফিসের বিপরীতে ‘গ্যানিস’ সুপার মল থাকলেও ছিল না কোনো সেলস গার্ল। ছিল ঢাকা শহর বসবাসের একটি শান্তি শিক্ষা নগর। আজকের সচিবালয় ছিল ইডেন বিল্ডিং পরবর্তী, সেক্রেটারিয়েট, পরবর্তী সময় সচিবালয়।

চাকরি সূত্রে একাধিকবার সেই সচিবালয়ের বিভিন্ন সচিবের কাছে যেতে হতো। তাদের ভেতরে যারা সিএসপি ছিলেন তাদের আচার-আচরণগুলো সুপ্রিয়। তারা হয়তো আমাকে জানতেন গদ্যকার-পদ্যকার হিসেবে। কিছুদিন আগে এক অতিরিক্ত সচিবের আমন্ত্রণে সচিবালয়ে গিয়ে দেখি অনেক নির্বাক চেয়ার বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। শুধু নেই সেই অতিরিক্ত সচিব। তাকে দুর্নীতির দায়ে ওএসডি করা হয়েছে। অথচ কেউ কোনোদিন বুঝতে পারেনি, চেয়ারের জোরে তিনি হয়েছিলেন দুর্নীতিগ্রস্ত। নির্বাক সিঁড়ি এবং সবই জানে নির্বাক চেয়ারগুলো। প্রসঙ্গক্রমে একটি গ্রিক প্রবাদ বলা যেতে পারে। ‘অগ্নি এবং লোভকে কখনো বাড়তে দিতে নাই।’ সেই অতিরিক্ত সচিবের যাবতীয় অপকর্ম জেনেছে নির্বাক চেয়ার। শুধু বলতে পারেনি।

মাকিদ হায়দার : কবি ও প্রাবন্ধিক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App