×

জাতীয়

কাদের ছিলেন স্বাস্থ্য সম্পর্কে উদাসীন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ মার্চ ২০১৯, ১০:৫০ এএম

তিনি ম্যানেজমেন্ট মাস্টার। দুঃসময়ের কাণ্ডারি। অনেকেই তাকে ডাকে ‘ফাটাকেষ্ট’ নামে। মিনিস্টার ফাটাকেষ্টর মতোই দায়িত্ব পাগল তিনি। সমান তালে দাপিয়ে বেড়ান দলে এবং সরকারে। দল গোছানো, তৃণমূলের কোন্দল মেটানো, নির্বাচন, মন্ত্রণালয় ঠিক রাখা, সড়কের দায়িত্ব, পদ্মা সেতুর মহাযজ্ঞ শেষ করা কাজের কি শেষ আছে? কিন্তু সব সামলাতে গিয়ে নিজের শরীর সামলানোর কথাই বেমালুম ভুলে গেলেন তিনি। শুনলেন না চিকিৎসকের নির্দেশ। বরং মুখের হাসিটুকু অটুট রেখে বললেন, আল্লাহ ভরসা। কিচ্ছু হবে না। সামনে জাতীয় নির্বাচন। আগে ভালোয় ভালোয় নির্বাচন শেষ হোক। এরপর সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রয়োজনে স্ট্যান্টিং, বাইপাস কিংবা ওপেন হার্ট সার্জারি করব। কাজ পাগল এই মানুষটি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এতটাই নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে উদাসীন ছিলেন তিনি। কাজ আর দায়িত্বের মধ্যেই ডুবে থাকা ছিল তার স্বভাব। একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগেই মাইল্ড হার্ট অ্যাটাক করেছিলেন তিনি। ওই সময় তার হার্টে দুটি ব্লক ধরা পড়েছিল। তখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসকরা তাকে দ্রুত চিকিৎসার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি হেসে উড়িয়ে দেন। বলেছিলেন, নির্বাচনের পরে দেখা যাবে। কিন্তু নির্বাচনের পরও আর চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়ার সময় হয়ে ওঠেনি তার। জাতীয় নির্বাচন শেষেও নতুন মন্ত্রিসভা গঠনসহ নানা কাজে ব্যস্ত থাকায় আর হাসপাতালমুখী হননি কাজ পাগল এই মানুষটি। নিয়মিত হাঁটলেও তার ডায়াবেটিস ছিল অনিয়ন্ত্রিত। হার্টের দুটি ব্লক তো আগেই ছিল। এদিকে তিনি যে মাইল্ড হার্ট অ্যাটাক করেছেন এবং ব্লক ধরা পড়েছে সে তথ্যও মিডিয়াসহ অন্য কোথাও প্রকাশ করতে চিকিৎসকদের নিষেধ করেছিলেন কাদের। ওই সময় চিকিৎসকরা তাকে জোরে বক্তৃতা না করা, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা ও প্রাত্যহিক জীবনযাপন এবং খাবার গ্রহণে সাবধানতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছিলেন। এ ছাড়া তিনি অতিমাত্রায় ধূমপায়ী। চিকিৎসকরা ধূমপানের বিষয়ে কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন। বিএসএমএমইউয়ের একাধিক চিকিৎসক ভোরের কাগজকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। কিন্তু নিজের কঠিন অসুখ গোপন রেখে দল এবং সরকারের উন্নয়নের জন্য দিন-রাত ক্লান্তিহীনভাবে ছুটে চলছেন একাত্তরের মুজিব বাহিনীর যোদ্ধা ওবায়দুল কাদের। সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ওবায়দুল কাদেরের স্বাস্থ্য সম্পর্কে উদাসীনতার বিষয়টি গতকাল সোমবার সংবাদ সম্মেলনেও তুলে ধরেছেন বিএসএমএমইউ উপাচার্য ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া। উপাচার্য বলেন, তার শ্বাসকষ্ট ছিল। ব্লাড প্রেসার ও ডায়াবেটিসও সবসময় নিয়ন্ত্রণে থাকত না। আগেও তার হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল। তখন চিকিৎসকরা তাকে রিং পরানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন। ২০ ডিসেম্বর তিনি আমার এখানে এলে আমি মেডিকেল বোর্ড গঠন করে তাকে চিকিৎসা নেয়ার পরামর্শ দেই। মেডিকেল বোর্ড তাকে তখনই হাসপাতালে ভর্তির কথা বলেছিলেন। উনি বলেছিলেন, আমি তো ভালো আছি। এ ছাড়া সামনে ৩০ তারিখ নির্বাচন। নির্বাচনের পরপরই হাসপাতালে ভর্তি হবেন। তবে নির্বাচনের পর তিনি আসেননি। প্রসঙ্গত, গত রবিবার ভোরে শ্বাসকষ্ট নিয়ে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে ভর্তি হন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। পরে এনজিওগ্রামে তার হৃৎপিণ্ডের রক্তনালিতে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর মধ্যে একটি ব্লক স্টেন্টিংয়ের মাধ্যমে অপসারণ করার পর তার অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেও পরে আবার অবনতির দিকে যায়। চিকিৎসকরা তখন কৃত্রিমভাবে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্ত নেন। ৬৭ বছর বয়সী এই রাজনীতিবিদকে তখন থেকেই ক্রিটিক্যাল করোনারি কেয়ার ইউনিটে ভেন্টিলেশনে (কৃত্রিমভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস দেয়ার ব্যবস্থা) রাখা হয়। সিঙ্গাপুর থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে একটি চিকিৎসক দল ওই দিন সন্ধ্যায় ঢাকায় এলেও সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে যাত্রা পিছিয়ে দেন বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের চিকিৎসকরা। গতকাল উপমহাদেশের প্রখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ দেবী শেঠী এসে ওবায়দুল কাদেরকে দেখে যান। এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App