×

মুক্তচিন্তা

এই আগ্রাসন রুখতে হবে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ মার্চ ২০১৯, ০৮:৫৯ পিএম

মরণ নেশা ইয়াবা দেশের তরুণ সমাজকে গিলে খাচ্ছে। মুড়ি-মুড়কির মতো সর্বত্র ইয়াবা পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে আইস ও এমডিএমএ নামে পরিচিত নতুন মাদকের কারখানা খোদ ঢাকায় আবিষ্কার করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। স্বাভাবিকভাবে সচেতন মহলসহ অভিভাবকদের মনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বেড়েছে।

গতকালের ভোরের কাগজের প্রধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে নতুন মাদক আইস পিলসহ রাকিব উদ্দিন নামে একজন মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে এবং তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ঝিগাতলার ৭/এ নম্বর সড়কের ৬২ নম্বর বাসার বেজমেন্টে আইস পিল তৈরির একটি ল্যাবের সন্ধান পাওয়া যায়।

ওই ল্যাবে আইস মাদক তৈরি করা হতো। তবে ল্যাবের মালিক ও আইস তৈরির মূলহোতা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। ক্ষতিকর বিবেচনায় আইস ও এমডিএমএ মাদক ইয়াবার চেয়েও ভয়াবহ ক্ষতিকর। মাদকের এই আগ্রাসন দেশের যুবসমাজকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে সৃষ্টি করছে অবক্ষয়।

দেশের আইনশৃঙ্খলার জন্যও তা মূর্তমান হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আনুমানিক হিসাবে দেশে মাদকসেবীর সংখ্যা প্রায় ৫২ লাখ। প্রতি বছর ৫ লাখ তরুণ-তরুণী মাদকাসক্তিতে জড়িয়ে পড়ছে। মাদকাসক্তের ৪১ ভাগই বেকার এবং এদের মধ্যে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৪ ভাগ। মাদক নিয়ে যে ভয়াবহতার কথা আমরা বলছি, তার সূচনা গত শতকের আশির দশকের গোড়ার দিকে।

একে একে আমাদের সমাজে অনুপ্রবেশ করল হেরোইন, কোকেন ও ফেনসিডিল। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি অনুপ্রবেশ করল ইয়াবা। হালের ফ্যাশন সিসা, ইয়াবা সহজলভ্য হয়ে গেছে। এর মধ্যে নতুন করে আইস যুক্ত হয়ে পড়েছে। বলাই বাহুল্য, থানা পুলিশকে হাত করেই চলছে এই ব্যবসা। এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত রাজনীতি-ঘনিষ্ঠ প্রভাবশালী ব্যক্তিরাও।

অন্ধকারাচ্ছন্ন হচ্ছে দেশ-জাতির ভবিষ্যৎ। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের পথ খুঁজতে শুভবোধসম্পন্ন ও দায়িত্বশীল সবার যূথবদ্ধ প্রয়াস জরুরি। ইতোমধ্যেই স্থানীয়ভাবে রাজনৈতিক পরিচয়ধারী অনেক ব্যক্তির নাম ইয়াবা গডফাদার হিসেবে প্রকাশ পেয়েছে, অনেকে আটকও হয়েছেন। অনেকে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করেছেন।

এতকিছুর পরও মাদক ব্যবসা-বিস্তার রোধে সরকারের ঘোষিত নানা উদ্যোগ সত্ত্বেও মাদকের বাণিজ্যের ভিত নাড়ানো যাচ্ছে না। সমাজপতি, রাজনীতিক, সরকারি কর্মজীবী, পুলিশ সবাই যখন ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত হয়ে পড়েন, তখন মাদক ঠেকানো যাবে কীভাবে? এই প্রশ্ন বারবার সামনে আসছে।

দেশের বিরাটসংখ্যক তরুণশক্তি নিয়ে আমরা স্বপ্ন দেখছি, অথচ প্রতিনিয়ত মাদকের নেশায় ধ্বংস হচ্ছে তারুণ্য, জাতির ভবিষ্যৎ। তারুণ্যগ্রাসী ইয়াবা, আইস বিস্তার এখন জাতীয় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত। এসব থাবা রুখতে হবে যে কোনো মূল্যে। প্রশাসনিক কঠোর অবস্থান, রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং জনসচেতনতাই পারবে ইয়াবার শিকড় উপড়ে ফেলে এর বিস্তার ঠেকাতে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App