×

খেলা

চলে গেলেন ক্রিকেটের ফেরিওয়ালা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ মার্চ ২০১৯, ০৩:২৮ পিএম

চলে গেলেন ক্রিকেটের ফেরিওয়ালা
ক্রিকেটের ফেরিওয়ালা আলতাফ হোসেন আমাদের ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে গেছেন ২৬ ফেব্রুয়ারি। বছরখানেক ধরে শারীরিকভাবে বেশ অসুস্থ ছিলেন তিনি। মাঝে কিছুদিন শারীরিক জটিলতা নিয়ে ঢাকায় একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরে কিছুটা সুস্থ হয়ে বাসায় চলে গিয়েছিলেন। জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত সাবেক ক্রিকেটার ও ক্রিকেট কোচিংয়ের অগ্রদূত সৈয়দ আলতাফ হোসেনকে বর্তমান তরুণ প্রজন্মের অনেকে হয়তো চিনবেন না। তিনি ছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের কারিগর ও নেপথ্যের এক নায়ক। বাংলাদেশের ক্রিকেট উত্থানে তার অবদান কখনো ভুলবে না এ দেশের ক্রিকেটাঙ্গন। জীবনের পুরোটা সময় তিনি ক্রিকেটের ফেরিওয়ালা ছিলেন। ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে গেলে তাৎক্ষণিক হাসপাতালে নেয়া হয় তাকে। কিন্তু আর জ্ঞান ফেরেনি, চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন আলতাফ হোসেনকে। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারপ্রাপ্ত আলতাফ হোসেনের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। আলতাফ হোসেনের জন্ম হয়েছিল অবিভক্ত ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। দেশভাগের সময় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় দুই ভাইকে হারানোর পর মাকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকায় চলে আসেন তিনি। ১৯৫৪ সালে কায়েদে আজম ক্লাবে শুরু করেন ঘরোয়া ক্রিকেট ক্যারিয়ার। ছয় ফুটের ওপরে লম্বা আর সুঠামদেহী আলতাফ হোসেন খেলোয়াড়ি জীবনের শুরুতে ছিলেন পেস বোলার। ক্যারিয়ারের প্রায় প্রথম থেকেই বোলিংয়ের সূচনা করতেন তিনি। ডানহাতি মিডিয়াম পেসার হিসেবে তখন তার খ্যাতি ছিল দেশজুড়ে। ১৯৬১ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত টানা আট বছর পূর্ব পাকিস্তানের হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে কায়েদ-ই আজম ও আইয়ুব ট্রফি খেলেছেন। ১৯৬৫ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পাকিস্তানের টেস্ট স্কোয়াডে প্রথম বাঙালি ক্রিকেটার হিসেবে দলভুক্ত হয়েছিলেন আলতাফ হোসেন। এই দলের অধিনায়ক ছিলেন পাকিস্তানের কিংবদন্তি ক্রিকেটার হানিফ মোহাম্মদ। স্কোয়াডে ডাক পেলেও অবশ্য সে সময় টেস্ট খেলা হয়নি আলতাফ হোসেনের। তবে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে তখন বৈষম্যের মাঝেও তাকে ডাকতে বাধ্য হয়েছিল পাকিস্তানের ক্রিকেট বোর্ড। খেলোয়াড়ি জীবনে ঢাকার ক্রিকেটের অন্যতম বড় তারকা ছিলেন আলতাফ হোসেন। খেলেছেন মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব, ঢাকা ওয়ান্ডারার্স, পিডব্ডি, ইস্ট পাকিস্তান জিমখানা ও শান্তিনগরের মতো ক্লাবে। খেলোয়াড়ি জীবন শেষে কিছুদিন পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের আম্পায়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও এক সময় জড়িয়ে পড়েন কোচিংয়ে। স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে ২৫ বছর কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। কোচিংকে তিনি দিয়েছিলেন ভিন্ন মাত্রা। আর এর প্রস্তুতি হিসেবে ভারতের পাতিয়ালায় ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব স্পোর্টস থেকে কোচিং কোর্স করেন তিনি। এ ছাড়া ইংল্যান্ড থেকেও কোচিং কোর্স করে এসেছেন। বাংলাদেশের ক্রিকেটে আলতাফ হোসেনের অবদান অনস্বীকার্য। তার হাত ধরে বাংলাদেশে বহু ক্রিকেটার গড়ে উঠেছিলেন। ১৯৭০ সালের মাঝামাঝি আলতাফ হেসেনের পরামর্শ, পরিচর্যায় পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত তারকা রকিবুল হাসান, শফিকুল হক হীরা, ইউসুফ, জাহাঙ্গীর শাহ বাদশাহ, ওমর খালেদ রুমি, মাইনুল হক মাইনু, আশরাফুল হক, এনায়েত হোসেন সিরাজ থেকে শুরু করে ইশতিয়াক আহমেদ, সামিউর রহমান সামি, জালাল ইউনুস, আহমেদ ইকবাল বাচ্চু, সদরুল আনাম, আনোয়ারুল আমিন আজহার। এরপর আশির দশকের গাজী আশরাফ হোসেন লিপু, নেহাল হাসনাইন, গোলাম নওশের প্রিন্স, গোলাম ফারুক সুরু, মিনহাজুল আবেদিন নান্নু, আমিনুল ইসলাম বুলবুল, আকরাম খান এমনকি খালেদ মাহমুদ সুজন, ইমরান হামিদ পার্থ, মীর জিয়াউদ্দীন শোভনরাও সৈয়দ আলতাফ হোসেনের সান্নিধ্য পেয়েছেন। নিজেকে উন্নত করেছেন। তার হাত ধরেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে হাঁটতে শুরু করে বাংলাদেশ। ১৯৮৬ সালে শ্রীলঙ্কায় আর ১৯৯০ সালে ভারতে অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপে তার অধীনেই অংশ নেয় বাংলাদেশ। কামরুজ্জামান ইমন

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App