×

মুক্তচিন্তা

নৃশংসতার গল্প এবং একজন ‘রাষ্ট্রহীন’ শামীমা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ মার্চ ২০১৯, ০৯:৫৩ পিএম

শামীমার গল্প হতেই পারে যুদ্ধে পরাজিত-নির্যাতিত-নিগৃহীত কিশোরীর শাসরুদ্ধকর এক আইএসে সদস্যের ভয়ঙ্কর চিত্রগাথার মূর্ত প্রতীক, তার বর্ণনায় অগণিত কিশোরীদের চোখ খুলে যেতে পারে- তাদের হৃদয়ের মাঝে জন্ম নিতেই পারে উগ্র সন্ত্রাসী কিংবা সন্ত্রাসবাদের প্রতি চরম ঘৃণা। এই বোধে বিশ্বের অগণিত তরুণীদের জাগিয়ে দেয়া হবে।

আইএস জঙ্গিদের এখন শেষ প্রদীপগুলো নিভে যাচ্ছে। ইসলাম কিংবা মুসলমানদের নিগৃহীত হওয়ার বাহানা দিয়ে সারা পৃথিবীর মুসলমান বিশেষত তরুণদের আকৃষ্ট করেছে তারা। ধর্মের এক ভ্রান্ত ধারণা দিয়ে তারা হাজার হাজার জঙ্গিকে সংযুক্ত করেছে তাদের সঙ্গে এক সময়। তারা ধর্মকে ব্যবহার করেছে, চালিয়েছে নৃশংসতা, যুদ্ধের ময়দানে এরা উন্মাদনা দেখিয়েছে, সারা পৃথিবীতেই এরা ছিল এক ঘৃণিত নাম।

এই ঘৃণার মধ্য দিয়েই এরা আকৃষ্ট করেছে মুসলমান তরুণদের। ধর্মের অপব্যাখ্যায় কিছু কিশোরী-তরুণীরা যেন বাঁধ ভেঙেছে। সত্যি কথা বলতে কি যুদ্ধের ময়দানে এরা পুরুষ আইএসদের সহযোগিতা করেছে, ধর্মীয় লেবাস পরে এরা একের পর এক বিয়ে করেছে আইএস সহযোদ্ধাদের। এই আইএস যোদ্ধা কোনো দেশের নাগরিক সেটা তাদের কাছে কোনো প্রশ্নই ছিল না, কোনো সংস্কৃতির উত্তরাধিকার বহন করছে ওই পুরুষ, তাও তাদের খোঁজ নেয়ার বিষয় ছিল না। এর পেছনে ছিল শুধুই আবেগ, শুধুই বিকৃত করা ধর্মের হাতছানি এবং স্বাভাবিকভাবেই এই তরুণ-তরুণীরা শিকার হয়েছে বিকৃত লালসার যুবকদের জীবন যৌবন উপভোগ হওয়ার পণ্য হিসেবে। সবকিছুই হয়েছে ধর্মীয় অপব্যাখ্যায়। আইএসের যুক্ত হওয়ার ধাক্কাটি লাগে ব্রিটেনেও। ব্রিটিশ হোম সেক্রেটারি সাজিদ জাভিদের তথ্যানুযায়ী প্রায় ৯০০ ব্রিটিশ নাগরিক আইএসে যোগ দেয় বিভিন্ন সময়ে। এরা সিরিয়ায় যুদ্ধ করেছে কিংবা আইএস সহযোগী হিসেবে কাজ করেছে। শুধু ব্রিটেন নয়, আমেরিকারসহ পশ্চিমের বিভিন্ন দেশের স্থায়ীভাবে বাস করা নাগরিকদের হাজার হাজার মানুষ গেছে সিরিয়ায় যুদ্ধক্ষেত্রে।

বিশ্ব রাজনীতির পালাবদলে এখন তাদের উন্মাদনা মিইয়ে যাচ্ছে। বিদেশি বেনিয়াদের হাতের পুতুল হিসেবে পৃথিবীর মঞ্চে রক্তের হোলিখেলার ফান্ডিং হয়তো নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে, নতুবা খেলার আপাতত বিরতি টানতে চাইছে বিশ্ব মোড়লরা, তাইতো আইএস এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতেও নেই। যদিও ধারণ করা হচ্ছে, এখনো ১৮ হাজারের মতো আইএস জঙ্গি ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ইরাক ও সিরিয়ায়।

আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে না থেকেও ক’দিন থেকে ব্রিটিশ মিডিয়া আর রাজনীতিকে নতুন মাত্রা দিয়েছে বাংলাদেশি মা-বাবার ১৯ বছরের কন্যা ব্রিটেনে জন্ম নেয়া এবং বেড়ে ওঠা শামীমা। তার আরো কয়েকজন বান্ধবীর সঙ্গে মাত্র ১৫ বছর বয়সে যে পাড়ি দিয়েছিল সিরিয়ায়। কি এক অদৃশ্য আবেগ তাকে হাতছানি দিয়েছিল মাত্র ১৫ বছর বয়সে। ইউটিউব ফেসবুক কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিশ্বব্যাপী সংযোগে কিংবা স্থানীয় কারো আশ্রয়-প্রশ্রয়-প্ররোচনায় উড়াল দিয়েছিল এই মেয়েটি সিরিয়ায়, তা-কি এখন সে স্মৃতির গহিনে গিয়ে স্মরণ করতে পারবে। যে সময়টাতে স্কুলে কিংবা পরিবারে শাসন পাওয়ার কথা, শুদ্ধ চর্চায় এগিয়ে যাওয়ার কথা, সে সময়টাতেই ওই মেয়েটা কার প্ররোচনায় হারিয়ে গেল। একটা অন্ধ চোরাবালিতে সে ক্রমশ তলিয়ে যেতে থাকল। ধর্মীয় আবরণে কেন যে এক ধরনের ধর্মীয় লেবাসের যৌনকর্মী হয়ে গেল, তা কি ভেবে দেখে ওই সমাজ কিংবা রাষ্ট্র। তাঁর কষ্ট কি একবার ভেবে দেখছে আমাদের রাষ্ট্র।

এই ব্রিটেনে স্কুলের একটা শিশু-কিশোর কিংবা কিশোরীকে নিয়ে তার অভিভাবক দুদিন বেশি ছুটি কাটালে স্কুলের আইনের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয় অভিভাবকদের। অথচ শামীমা পরিবার-স্কুল সব কিছু ফাঁকি দিয়ে এই অল্প বয়সে (যখন কোথাও যেতে হলে তার অভিভাবক প্রয়োজন) ব্রিটেনের মতো দেশের ইমিগ্রেশনের চোখে আঙুল দিয়ে পালিয়ে যায়। একটা মেয়ে শামীমা, যাদের এই ব্রিটেনে টিনএজার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। পরিবার-সমাজ-রাষ্ট্র কিংবা তার শিক্ষায়তন তাকে বেঁধে রাখতে পারেনি, বলতেই হয় প্রচলিত সমাজ কিংবা রাষ্ট্র ব্যর্থ হয়েছে এই কিশোরীকে পাহারা দিতে। এ ব্যর্থতার দায় কোনোভাবেই আমরা অর্থাৎ সমাজ কিংবা রাষ্ট্র এড়াতে পারে না। অথচ তার যে পাপ, সেই পাপে তাকে রাষ্ট্রহীন করে দিলো ব্রিটেনের মতো গণতান্ত্রিক এবং সভ্য একটা রাষ্ট্র। ব্রিটেনের মতো একটা রাষ্ট্র, যেখানে প্রতিদিন উচ্চারিত হচ্ছে বিশ্বসভ্যতা নিয়ে অনেক অনেক কথা। সামাজিক মূল্যবোধ শিখে নেয়ার জায়গা হিসেবে এ দেশের স্কুলগুলোকে আমরা একটা পরিবারের মতোই মনে করি। অথচ শামীমা তার পরিবার কিংবা তার শিক্ষাঙ্গন উভয় জায়গাতেই এই মূল্যবোধের মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠতে পারেনি।

এই ব্রিটেনের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগোষ্ঠী, যারা আইএসকে মনে প্রাণে ঘৃণা করেন এবং পারিবারিকভাবে তারা তাদের সন্তানদের ইসলামি মূল্যবোধকে ধারণ করিয়েও উগ্র ইসলাম উগ্র হিন্দু কিংবা যে কোনো উগ্রতাকে চিহ্নিত করাতে পারছেন। যে কোনো সাম্প্রদায়িকতা কিংবা বর্ণবাদের বিরুদ্ধে অবস্থানের শিক্ষা দিতে পারছে তারা তাদের সন্তানদের। সেখানে শামীমার মতো আরো কিছু কিশোরী এই শিক্ষা পায়নি। শামীমা বেঁচে আছে। কিন্তু তার বন্ধুদের অনেকেই হারিয়ে গেছে চিরতরে। নিহত হয়েছে অনেকেই। কেউ কেউ হয়তো ধুঁকে ধুঁকে শিবিরের মাঝেই সম্মানজনক নিগ্রহের মধ্য দিয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে।

এই ব্রিটেন, যেখানে শিশুরা বেড়ে উঠছে সরকারেরই প্রত্যক্ষ অভিভাবকত্বে, সরকারের অনুদানে যেখানে শৈশব থেকে শুরু করে এমনকি উচ্চশিক্ষা নিয়ে বেরুচ্ছে, সেখানে সরকারের দায় ও, অধিকারও আছে আইনিভাবেই। এই দায় থেকেই বলি কিংবা অধিকারের কারণেই বলি শামীমাদের রক্ষা করতে হবে। সেজন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যখন শামীমার নাগরিকত্ব বাতিল করলেন, তখন এই রাষ্ট্রের নাগরিকরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সে সিদ্ধান্তকে গ্রহণ করতে পারেনি। মুসলিম কমিউনিটিতেও আছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। তার বয়সী অনেক তরুণীরা তাকে ঘৃণা করছে, এমনকি বাঙালি কমিউনিটিতেও আছে তার প্রতি ঘৃণা, যেমন আছে অন্যান্য কমিউনিটিতেও। অর্থাৎ শামীমাকে কেউ বাঙালি-সাদা-মুসলিম এই নির্দিষ্ট গণ্ডির মাঝে রাখেনি। তাকে তারা শুধুই দেখছে একজন ব্রিটিশ বংশোদ্ভূত আইএস হিসেবে। আর সে কারণেই একজন ব্রিটিশ আইএসের বিচার চাইছে ব্রিটিশ নাগরিকদের একটা বিরাট অংশ।

শামীমার নাগরিকত্ব বাতিলকে যেমন মেনে নিতে পারেনি শামীমা, ঠিক তেমনি এদেশে প্রধান বিরোধী দলের নেতা জেরেমি করবিনও শামীমার বিচার চাইছেন। তিনি শামীমাকে ব্রিটেনের ফিরিয়ে এনে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর পক্ষে বলেছেন। শামীমার পক্ষে কথা বলছেন এই রাষ্ট্রের অনেক গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক। শামীমার পিতা আহমদ আলীও তার মেয়ের বিচার চাইছেন, তবে রাষ্ট্রহীন করে নয়। কারণ ব্রিটেনের আইনানুযায়ী একজন ব্রিটিশ নাগরিকের নাগরিকত্ব বাতিল করতে পারে রাষ্ট্র, তবে যদি এ নাগরিকের রাষ্ট্রহীন হওয়ার ঝুঁকি না থাকে। কিন্তু শামীমাতো সিরিয়ার নাগরিক না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একটা বিভ্রান্তিতে ফেলে দিয়েছিলেন ব্রিটিশ নাগরিকদের। তিনি বলেছিলেন শামীমার বাংলাদেশের নাগরিকত্বও আছে। কিন্তু বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী পরিষ্কার বলেছেন, শামীমার বাংলাদেশের নাগরিকত্ব নেই। তার বাবা-মা কখনো শামীমার বাংলাদেশি নাগরিকত্বের জন্য আবেদনও করেননি। শামীমা জন্মেছেন এ দেশে, তার এই ১৯ বছর বয়সকালে তিনি কখনো বাংলাদেশে যাননি। সুতরাং তার বাংলাদেশি নাগরিক হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। অতএব এটা পরিষ্কার, যুক্তরাজ্য তার নাগরিকত্ব বাতিল করলে শামীমা রাষ্ট্রহীন মানুষ হয়ে যাবে।

আর তাই স্বাভাবিকভাবেই এটা কোনো প্রশ্ন নয়, এটাই আন্তর্জাতিক আইন, শামীমাকে রাষ্ট্রহীন করা যাবে না। তাছাড়া রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কোনো কাজ করেছেন এমন কোনো অভিযোগও তো তার বিরুদ্ধে নেই। রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যায়, এমন কোনো নাশকতা কিংবা উগ্র কোনো কার্যক্রম চালালে অর্থাৎ রাষ্ট্রদ্রোহের মতো কোনো কাজ করলে রাষ্ট্র তার প্রতি মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে হয়তোবা, কিন্তু ১৫ বছর অর্থাৎ কিশোর থাকাকালীন দেশের বাইরে গিয়ে সরাসরি অপপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার ব্যাপারটা যেখানে অস্পষ্ট, সেখানে আইনের মারপ্যাঁচে পুরোপুরি ফলপ্রসূ না হওয়ার সম্ভাবনা আছে রাষ্ট্রের।

আইএসের সঙ্গে শামিল হতে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে কয়েক হাজার উগ্র নাগরিক সেখানে গিয়েছিল। ধারণা করা হচ্ছে শুধু ব্রিটেন থেকে যাওয়া ৯০০ জন আইএস সদস্যের মাঝে ২০ শতাংশ ব্রিটিশ নাগরিক যুদ্ধকালীন সিরিয়ায় নিহত হয়েছে, এর মাঝে ৪০ শতাংশ যুক্তরাজ্যে ফেরত এসেছে। এরাতো এখানেই উঠছে অপরাধীর কাঠগড়ায়। যদি তাই হয়, তাহলে শামীমার মতো কিশোরী, যে মাত্র ১৫ বছর বয়সে দেশ ছেড়েছিল, তাকে ফিরিয়ে আনতে বাধা কোথায়। ওই কিশোরীর তখনকার বোধ আর এখনকার মেজাজ ভিন্ন। সে এখন নিজেই স্বীকার করছে আইএস সদস্য হিসেবে সিরিয়ায় যাওয়া ছিল তার এক ভ্রান্তি। বলছে, সে সিরিয়ায় কোনো অপরাধে জড়ায়নি। স্বামী-সংসার করেছে। আমরা সে কথাটাকে গুরুত্ব দিতে চাই না। সে অপরাধ করেছে কি-না আদালত দেখবে, আইন দেখবে। সে বিচারে তার দণ্ড হবে। প্রচলিত আইনতো তাই বলছে। উল্লেখ করতে পারি, আইএসের দুর্ধর্ষ হিংস্র ব্রিটিশ ‘জিহাদী জন’ হিসেবে পরিচিত ব্রিটিশ নাগরিকের অপরাধ বিশ্বব্যাপী ঘৃণা কুড়ানোর পরও তার হিংস্র কার্যক্রমের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তাকে বিয়ে করার ইচ্ছে প্রকাশ কিংবা আইএসের পক্ষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা করার অপরাধে ব্রিটেনের একজন মহিলার চার বছরের জেল হয়েছে। এ নিয়ে কেউ কোনো প্রশ্ন তোলেনি। কারণ আইনের প্রতি শ্রদ্ধা অবিচল এ দেশের প্রত্যেকটা নাগরিকের।

আর সে কারণেই শামীমা কিশোরী হলেও মানবতাবিরোধী কার্যকলাপে তার অংশগ্রহণ প্রমাণিত হতেই পারে। একজন মানুষের আইনের আশ্রয় নেয়া যেমন তার অধিকার এবং তেমনি রাষ্ট্রের নাগরিককে আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোও রাষ্ট্রের নীতি-নৈতিকতা। ব্রিটেনের মতো আইনের শাসনের দেশে তা আরো বেশি প্রযোজ্য।

শামীমার গল্প হতেই পারে যুদ্ধে পরাজিত-নির্যাতিত-নিগৃহীত কিশোরীর শাসরুদ্ধকর এক আইএসে সদস্যের ভয়ঙ্কর চিত্রগাথার মূর্ত প্রতীক, তার বর্ণনায় ব্রিটেন তথা বিশ্বের অগণিত কিশোরীদের চোখ খুলে যেতে পারে- তাদের হৃদয়ের মাঝে জন্ম নিতেই পারে উগ্র সন্ত্রাসী কিংবা সন্ত্রাসবাদের প্রতি চরম ঘৃণা। আমরা বিশ্বাস রাখতে চাই, শামীমাকে ব্রিটেনে ফিরিয়ে এনে কাঠগড়ায় তোলে এই বোধে বিশ্বের অগণিত তরুণীদের জাগিয়ে দেয়া হবে। শামীমাও তার কৈশোরিক ভ্রান্তিতে পাওয়া শাস্তির মধ্য দিয়েই সেও দাঁড়াতে পারবে এবং নতুন করে সারা বিশ্বের মানবতার মাঝে নতুন বার্তা দিবে, যা হবে উগ্রতা আর জঙ্গিবাদের বিপরীতে।

ফারুক যোশী : কলাম লেখক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App