×

মুক্তচিন্তা

নাশকতার অভিযোগ খতিয়ে দেখুন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ মার্চ ২০১৯, ০৮:৪৪ পিএম

বুধবার রাতে মিরপুরে ভাসানটেক বস্তিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। পুড়ে গেছে হাজারখানেক বস্তিঘর। আগুনের হাত থেকে জীবন বাঁচাতে দৌড়ে নিরাপদ জায়গায় যাওয়ার সময় মায়ের কোল থেকে পানিতে পড়ে দুই শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। গৃহহীন হয়ে পড়েছেন অন্তত ২ হাজার বস্তিবাসী। এমন ঘটনা মর্মান্তিক।

বস্তিবাসী অভিযোগ করেছেন, মার্চে বস্তি উচ্ছেদ করার পাঁয়তারা চলছিল। এটি দুর্ঘটনা নয়, নাশকতা। তাদের উচ্ছেদ করতে কোনো মহল বস্তিতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। ঘটনা তদন্তে ফায়ার সার্ভিসের তরফ থেকে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমরা চাই, সুষ্ঠু তদন্তে আগুনের ঘটনা নাশকতা কিনা তা খতিয়ে দেখা হোক।।

পুরান ঢাকার চকবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের এক সপ্তাহ না পেরোতেই ভাসানটেকে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা সত্যিই দুঃখজনক। এক বছর আগেও ওই বস্তিতে আগুনে শতাধিক ঘর পুড়ে গিয়েছিল। ঢাকা সিটি করপোরেশনের হিসাব অনুযায়ী ঢাকায় ছোট-বড় ১১০টি বস্তি রয়েছে। এসব বস্তি গড়ে উঠেছে সরকারি জায়গায়।

এর মধ্যে রেলওয়ের জায়গার ওপরই গড়ে উঠেছে অন্তত ৭০টি বস্তি। অন্যান্য বস্তি সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের জায়গার ওপর গড়ে উঠেছে। ঢাকায় বস্তিতে বসবাস করছেন অন্তত ২ লাখ দরিদ্র মানুষ। বস্তিবাসীর অনেকেই ভোটার। ঢাকায় থাকা বস্তির মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অধীনে রয়েছে ২৪টি।

আর বাকিগুলো ঢাকা দক্ষিণ সিটির অধীনে। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা মৌলিক এ অধিকারের মধ্যে অন্যতম বাসস্থান। আর এটি নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের। বস্তিবাসী তাদের এ অধিকার থেকে বঞ্চিত এবং কোনো ধরনের রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা তারা পান না।

ইতোমধ্যে বস্তিবাসীর পুনর্বাসনে সরকার নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে। বস্তিবাসীর পুনর্বাসন করতে ভাসানটেকে বিশাল সরকারি জায়গার ওপর ভবন নির্মাণের কাজ অব্যাহত। ইতোমধ্যেই বহু ভবন গড়ে তোলা হয়েছে। ২০৪১ সাল নাগাদ এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। এতে বস্তিবাসী নিরাপদে মাথা গোঁজার ঠাঁই পাবেন। তবে এই প্রকল্পে ২ লাখ বস্তিবাসী আবাসের সুযোগ পাবেন না। সে ক্ষেত্রে নতুন প্রকল্প নিয়েও ভাবতে হবে।

শহরের অপরিহার্য অংশ শ্রমজীবী নিম্নবিত্ত মানুষের জন্য নিরাপদ আবাসনের ব্যবস্থা করা এখন সময়ের দাবি। সাধারণত বস্তিঘরগুলো তৈরি হয় তীব্রভাবে দাহ্য টিন-বাঁশ, পলিথিন দিয়ে। একটি ঘরের কোথাও আগুন লাগা মানে নিমেষে লাগোয়া সব কিছু পুড়ে নিঃশেষ হয়ে যাওয়া। আর বস্তিবাসী একেবারেই প্রান্তিক আয়ের মানুষের এই মাথা গোঁজার আশ্রয়েই থাকে তাদের সহায়-সম্বল সব কিছু। রাজধানীতে জীবন-জীবিকার সুযোগ যেমন বেশি, তেমনি মানুষের বিড়ম্বনা ও বিপন্নতারও অন্ত নেই।

প্রান্তিক মানুষের আবাসনের অসহায়ত্ব ও অনিরাপত্তা এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি। স্বল্প আয়ের মানুষের আবাসন সমস্যার সমাধানে সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে। বস্তিবাসীর সার্বিক জীবনমানের উন্নয়নে বড় ধরনের পদক্ষেপ নেয়া না হলে তাদের বিপন্নতার স্থায়ী সমাধান হবে না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App