×

মুক্তচিন্তা

চকবাজার ট্র্যাজেডি: করণীয় কী?

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ মার্চ ২০১৯, ০৮:৪৭ পিএম

ব্যক্তিগত বিষয়-আশয়ের চেয়ে চারপাশের অসংখ্য ঘটনা মনকে বিষণ্ন করে। চকবাজারের ২০ ফেব্রুয়ারি ভয়াবহ আগুনে সর্বশেষ ৭০ জনের মর্মান্তিক মৃত্যুর খবর জানা গেছে। মানুষের পৃথিবীতে বেড়ে ওঠা, দিনযাপন তার স্বাভাবিক জন্মগত অধিকার। যারা প্রকৃতি ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত করল তাদের শনাক্ত করা কঠিন নয়। তাদের শাস্তি কী হবে? রাষ্ট্রযন্ত্র তথা সরকার কি নিরুপায় হয়ে যাবে এসব অপরাধীকে শাস্তি বিধানে। দুর্ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পর সবাই নড়েচড়ে বসে। তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। তদন্ত কমিটি রিপোর্টও দেয়। সুপারিশ বাস্তবায়িত হয় না। অপরাধীরা রাজনৈতিক প্রভাব, ব্যক্তিগত যোগাযোগ ও সমষ্টিগত বাঁধনে এত মজবুত তাদের শাস্তি হয় না।

২০১০ সালের ৩ জুন নিমতলীতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১২৪ জনের মৃত্যু আমাদের নাড়া দিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী স্বজনহারা মেয়েদের দায়িত্ব নিয়ে তাদের পুনর্বাসন ও বিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, অগ্নিনির্বাপণ সংস্থা ও সিটি করপোরেশন তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল। ধারণা করি তদন্ত রিপোর্টের সুপারিশ বাস্তবায়িত হয়নি।

পুরান ঢাকার একেকটি বাড়ি নিশ্চিত মৃত্যুকূপ। জীর্ণ বাড়িতে বাড়িওয়ালা উপরতলায় বসবাস করছেন, নিচে গোডাউন ও শিল্পকারখানার উপাদান উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। সরু সিঁড়ি, ধসে যাওয়া ভবনে নিচে আগুন লাগলে যে কোনো সময় ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটতে বাধ্য।

চকবাজার এলাকায় মিটফোর্ড এলাকা প্রশস্ত, অন্য এলাকা ঘিঞ্জি। পাশাপাশি যান চলাচল উপযোগী নয়। জীর্ণ ভবনের পাশে বিদ্যুতের খুঁটি, রাসায়নিক দ্রব্যাদির গোডাউন দীর্ঘদিন ধরে বিরাজ করছে। এর মধ্যে মানুষ বাস করছে। দুর্ঘটনাকে তারা নিয়তি বলে ধরে নিয়েছে। এটা নিশ্চিত, দাহ্য পদার্থে পুড়ে গেছে অসহায় মানুষের জীবন, স্বপ্ন ও ভবিষ্যৎ।

রাজধানী শহর ঢাকা। এক তিলোত্তমা নগরে পরিণত করার পরিকল্পনা অহোরাত্রি করা হচ্ছে। ঢাকাকে দুই অঞ্চলে বিভক্ত করা হয়েছে। সিটি করপোরেশন, রাজধানী উন্নয়ন করপোরেশন, স্বরাষ্ট্র ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় নগরের সৌন্দর্য, মানুষের জীবন আনন্দময় করার জন্য নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করছে। এর অধিকাংশই কল্পনায় রয়ে যাচ্ছে।

সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা বিরাজ করছে। সমন্বিত উদ্যোগ ফলপ্রসূ হচ্ছে না বলে মনে হয়। পুরান ঢাকার রাসায়নিক কারখানা অন্যত্র সারিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা কার্যকর হয়নি। আট বছর রাসায়নিক পল্লী গঠন কাগুজে কল্পনা হয়ে রয়ে গেছে। ভূমির ব্যবস্থার পাশাপাশি রাসায়নিক কারখানার ভৌত অবকাঠামো তৈরি হয়নি। কারখানা ও গুদামগুলো জনবসতির বাইরে স্থাপন করা জরুরি।

পুরান ঢাকার জীর্ণ ভবন এখনই পরিত্যক্ত ঘোষণা করা জরুরি। বিভিন্ন দাহ্য পদার্থের গোড়াউন দ্রুত সারিয়ে ফেলার ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন। পুরান ঢাকা আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও গৌরবের উত্তরাধিকার। অসংখ্য মানুষের আবাস পুরান ঢাকার অপরিকল্পিত ও অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যু প্রতিরোধে প্রস্তুতি নিতে হবে। সেবামূলক সংস্থার সমন্বিত উদ্যোগ জীবনহানি রোধ করতে পারে।

উন্নত দেশের তালিকায় যুক্ত বাংলাদেশ দুর্যোগ-দুর্বিপাকে ঘুরে দাঁড়ায়- এর অসংখ্য উদাহরণ আমরা তৈরি করেছি। ঘূর্ণিঝড়, খরা, এমনকি মানবিক বিপর্যয় রোহিঙ্গাদের সমস্যা সমাধানে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। আমাদের নতুন ও দৃঢ় প্রস্তুতি সংযুক্ত হোক অগ্নি ও দুর্ঘটনা রোধে।

চকবাজারের দুর্ঘটনার পর গুজব শোনা গেছে আরো কিছু দুর্ঘটনার। এগুলো সত্যি হওয়ার আগেই আমাদের পরিকল্পনায় নিতে হবে ঝুঁকি প্রতিরোধের। ভূমিকম্প, অগ্ন্যুৎপাত, ঘূর্ণিঝড়, এমনকি অক্সিজেন ঘাটতির এই শহরে বৃক্ষরোপণ বাড়াতে হবে। জোরদার করতে হবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। নতুন প্রজন্মের উপযোগী নগর তৈরি করতে না পারলে আমরা অপরাধী হয়ে যাব। প্রয়োজন সেবা সংস্থার সমন্বিত উদ্যোগ। সর্বস্তরের মানুষ ও সংস্থা যৌথভাবে বেঁচে থাকার নিরাপত্তা বিধান করতে পারে। এর বিকল্প নেই।

কবি ও লেখক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App