×

বিশেষ সংখ্যা

মুক্তিযুদ্ধ: রক্তের রাখি বন্ধন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৬:৫৯ পিএম

মুক্তিযুদ্ধ: রক্তের রাখি বন্ধন

আজ স্বদেশ ফেরার পালা। একদিন টাবডুয়াতে এসেছিলাম কাঁচামাল। আজ ফিরে যাচ্ছি দুর্দান্ত গেরিলা যোদ্ধা হিসেবে। শত্রুর মুখোমুখি হওয়ার তীব্র আকাক্সক্ষায় সবাই উন্মুখ। এমনি সময় না জানি কোন অবিমৃষ্যকারীর দুষ্কর্মের জন্য আমাদের আবার বকাঝকা খেতে হবে। তবে মেঘের ফাঁকে রোদের ঝলকও দেখতে পাই। ‘ফল-ইন’-এর সামনে এসে দাঁড়ালেন মেজর দেবদাস। টাবডুয়া মিলিটারি একাডেমির সবেধন নীলমণি একমাত্র বাঙালি অফিসার। তাও মেডিকেল কোরের। বাঙালিত্বের কী বিরাট আকর্ষণ, কী দুরন্ত এর প্রাণশক্তি এই বহু দূরদেশে অবস্থিত টাবডুয়া এসে তা বুঝতে পারি অস্থি-মজ্জায়। যখনই কোনো দুঃসংবাদ কিংবা বিপদ সমাগত মেজর দেবদাস সাক্ষাৎ দেবতার মতো আমাদের মাঝে হাজির। একে তো বাঙালি, তার ওপরে নাম দেবদাস।

দ্রুতবেগে ছুটে আসা টেনটির গতি শ্লথ হয়ে এলো। শেষ পর্যন্ত লক্ষ্নৌর আউটার স্টেশনে এসে ‘ডেডস্টপ’ হয়ে গেলে। আমরা যারা দীর্ঘ সময় ধরে আঁকাবাঁকা পথে ট্রেনটির ছন্দায়িত চলার গতির সঙ্গে ঝিমিয়ে পড়েছিলাম, ট্রেনটি থামার সঙ্গে সঙ্গেই এলার্ট হয়ে যাই। মুহূর্তেই বেজে উঠল পরিচিত বাঁশির হুইসেল।

বুঝতে পারলাম মেজর এইচ জি গুরাং আমাদের ‘ফল-ইন’ করতে বলছেন। উত্তর প্রদেশের দেরাদুনস্থ বিশ্বখ্যাত টান্দুয়া মিলিটারি একাডেমিতে সাময়িক প্রশিক্ষণ নেয়ার সময় দীর্ঘ তিন মাস ধরে প্রতিদিন এই হুইসেলের শব্দ শুনে ঘুম থেকে জেগে এসেম্বলিতে জড় হয়েছি। আবার একই বাঁশির শব্দ শুনে রাতে ব্যারাকে ঘুমাতে গিয়েছি।

১৯৭১ সাল। বাংলাদেশের মানুষ মহান মুক্তিযুদ্ধে লিপ্ত। আগস্টের প্রথম দিকে আমরা আগরতলা থেকে সোভিয়েত ইউনিয়নের একটি পরিবহন বিমানে দেরাদুনে আসি। সেখান থেকে সামরিক ট্রাকে চড়ে টান্দুয়া মিলিটারি একাডেমি। আমাদের রিক্রুট করা হয়েছিল বাংলদেশ লিবারেশন ফোর্সের সদস্য হিসেবে। সংক্ষেপে বলা হত বিএলএফ।

তবে বাংলাদেশের মানুষের কাছে বিএলএফ-এর পরিচয় ছিল মুজিব বাহিনী নামে। এই মুজিব বাহিনীর ট্রেনিংপ্রাপ্ত ১৫তম ব্যাচের তিনশ গেরিলা যোদ্ধা নিয়ে ট্রেনটি ভারতের শাহরানপুর শহরের একটি স্টেশন থেকে যাত্রা শুরু করেছিল। এই বিশেষ ট্রেনটির গন্তব্য ছিল আগরতলা। সেখান থেকে সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধারূপে আমাদের বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ইনডাক্ট করার কথা।

মেজর গুরাং-এর বাঁশির হুইসেল শুনে আমরা ট্রেন থেকে নেমে ‘ফল-ইন’ হলাম প্রশস্ত প্রান্তরে। আমাদের বলা হলো প্রচণ্ড বাতাসের জন্য চলন্ত ট্রেনে রান্নার অসুবিধা হচ্ছে। অতএব, সিদ্ধান্ত হচ্ছে এখানে ট্রেনটি ঘণ্টা দুয়েক অপেক্ষা করবে। রান্নার পর মধ্যাহ্নভোজ শেষে ট্রেনটি পুনরায় গন্তব্যের দিকে যাত্রা করবে।

আমাদের বলা হলো, আমরা ইচ্ছা করলে ট্রেনেই সময় কাটাতে পারি এবং এটাই কাম্য। তবে কেউ চাইলে একটু এদিক সেদিক ঘুরেফিরে দেখতে পারে। সেই সঙ্গে আমাদের কঠোরভাবে সতর্ক করে দেয়া হয়েছিল আমরা যেন দূরে কোথাও না যাই। নিষ্প্রয়োজনে স্থানীয় লোকদের সঙ্গে ‘বাতচিৎ’ না করি। বিশেষ করে নিজেদের পরিচয় কিংবা গন্তব্যস্থান নিয়ে কথা না বলা ভালো।

যা হোক, নির্দিষ্ট সময়েই আমরা সবাই ট্রেনের কাছে পৌঁছে গেলাম। দীর্ঘক্ষণ ঘোরাঘুরির ফলে সবাই ক্ষুধার্ত ছিলাম। ট্রেনের কাছে আসতেই ‘কিচেন বগি’ থেকে খাবারের সুঘ্রাণ নাসিকা রন্ধ্রে প্রবেশ করায় ক্ষুধার তীব্রতা আরো বেশি অনুভূত হতে লাগল। আমরা যখন খেতে যাওয়ার জন্য উসখুস করছি তখনই আমাদের বুক কাঁপিয়ে বাঁশির হুইসেল বেজে উঠল।

এবার বাঁশি বাজলেন মেজর রূপ সিং। এই বাঁশির হুইসেলে আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়লাম। নিশ্চয়ই কোনো এক অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটিয়েছে আমাদের কোনো সহযোদ্ধা এবং দেশে ফেরার পথে হয়তো আবার বকাঝকা খেতে হবে। যা হোক হুইসেল বাজার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের ‘ফল-ইন’ হতে হলো।

আজ স্বদেশ ফেরার পালা। একদিন টাবডুয়াতে এসেছিলাম কাঁচামাল। আজ ফিরে যাচ্ছি দুর্দান্ত গেরিলা যোদ্ধা হিসেবে। শত্রুর মুখোমুখি হওয়ার তীব্র আকাক্সক্ষায় সবাই উন্মুখ। এমনি সময় না জানি কোন অবিমৃষ্যকারীর দুষ্কর্মের জন্য আমাদের আবার বকাঝকা খেতে হবে। তবে মেঘের ফাঁকে রোদের ঝলকও দেখতে পাই। ‘ফল-ইন’-এর সামনে এসে দাঁড়ালেন মেজর দেবদাস। টাবডুয়া মিলিটারি একাডেমির সবেধন নীলমণি একমাত্র বাঙালি অফিসার। তাও মেডিকেল কোরের।

বাঙালিত্বের কী বিরাট আকর্ষণ, কী দুরন্ত এর প্রাণশক্তি এই বহু দূরদেশে অবস্থিত টাবডুয়া এসে তা বুঝতে পারি অস্থি-মজ্জায়। যখনই কোনো দুঃসংবাদ কিংবা বিপদ সমাগত মেজর দেবদাস সাক্ষাৎ দেবতার মতো আমাদের মাঝে হাজির। একে তো বাঙালি, তার ওপরে নাম দেবদাস। কিসের মেজর, আমরা সবাই তাকে ডাকতাম দেবদা বলে। এটা তিনি আশাও করতেন বটে। আর যখন লাক্ষ্নৌর রেল স্টেশনে আমরা অজানা অমঙ্গল চিন্তায় অধীর অপেক্ষমাণ তখন এই ভেবে সান্ত¦না পেলাম যে বকা খেলেও বাঙালির মুখ থেকে বকা খাব। আর দেবদা কতটুকুই বা বকতে পারবেন?

মনের এই বিক্ষিপ্ত অবস্থায় দেখলাম একদল মহিলা আমাদের দিকে এগোচ্ছেন। এবার আর বিপদ অজানা রইল না। এমন একটি আশঙ্কা আমরা শুরুতেই করেছিলাম। ট্রেন থামার সঙ্গে সঙ্গেই কয়েকজনকে দেখলাম নিকটস্থ কলোনির দিকে যেতে। সন্দেহ হয়েছিল তারা কি জানি কী করে বসে। এবার মহিলাদের আসতে দেখে আমরা নিশ্চিত হলাম আমাদেরই কোনো কোনো বন্ধু যারা পার্শ্ববর্তী কলোনিতে গিয়েছিল, না জানি তারা কী গর্হিত কাজই করে ফেলেছে।

কিন্তু মহিলাদের মিছিলটি খুব কাছে এলে কেমন জানি অন্য একটি আবহ, অন্য একটি মেজাজ অনুভূত হলো। সবাই সুন্দর করে পরিপাটি সাজে সজ্জিত। প্রত্যেকের হাতে আল্পনা আঁকা ডালা-কুলা। একটু আবেগ ও কম্পন জড়িত কণ্ঠে মেজর দেবদাস সামরিক কায়দায় একটি ছোট্ট ভূমিকা দিতে গিয়ে বললেন, আগত এই মহিলারা নিকটস্থ সেন্ট্রাল গভর্নমেন্টের কর্মচারীদের আবাসিক কলোনির বাসিন্দা। তোমাদের কয়েকজন ছেলে ওই কলোনিতে গিয়ে জল খেতে চাইলে মহিলারা জানতে পারেন এই ট্রেনে করে জয় বাংলার মুক্তিযোদ্ধারা ট্রেনিং শেষে স্বদেশে শত্রুর সঙ্গে যুদ্ধ করতে যাচ্ছে।

এতদিন তারা পত্র-পত্রিকা কিংবা রেডিও-টিভিতে মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বপূর্ণ যুদ্ধের কথা পড়েছে কিংবা শুনেছে। আজ তাদের সৌভাগ্য হয়েছে বীর বাঙালি মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে থেকে দেখার। তাই তারা তোমাদের এক নজর দেখতে ও আশীর্বাদ করার জন্য এখানে উপস্থিত হয়েছেন।

এরই মধ্যে দেবদা একজন প্রৌঢ় গোছের মহিলাকে ইঙ্গিত করলেন। তিনি সামনে এসে অত্যন্ত প্রফুল্লচিত্তে বললেন, ‘তোমরা আমাদের ভাই ও সন্তানতুল্য। তোমাদের বীরত্বপূর্ণ সংগ্রাম ও যুদ্ধজয়ের খবরে গোটা বিশ্ব আজ মুগ্ধ। আমরা তোমাদের বিজয় কামনা করি। তোমাদের শুভ কামনা করি।

আমরা আরো আনন্দিত এই জন্য যে আজ ভাই ফোঁটার দিন, রাখিবন্ধনের দিন। তাই আমরা শুভ কামনায় রাখি বেঁধে দিতে এসেছি তোমাদের কোমল-কঠিন হাতে, আজ ভাই ফোঁটা দিয়ে শুভ কামনার সিঁদুর পরিয়ে দিতে চাই তোমাদের প্রশস্ত ললাটে।’ এরপরই প্রতি লাইনে দু’জন করে মহিলা হাতে ডালা-কুলা নিয়ে আমাদের প্রত্যেককে রাখি বেঁধে দিতে লাগলেন এবং একই সঙ্গে ললাটে সিঁদুরের ফোঁটা।

দীর্ঘদিন আমরা দেশান্তরী। প্রিয় মাতৃভূমিতে মা, বোন, ভাবীদের রেখে এসেছি সম্পূর্ণ অরক্ষিত অবস্থায়। আমরা অনেকেই তাদের বর্তমান অবস্থা জানি না। লক্ষ্নৌর রেল স্টেশনে ছুটে আসা সরকারি আবাসিক কলোনির মাতা-ভগ্নিদের দেখে আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে স্বদেশের ভূমিতে অরক্ষিত অবস্থায় ফেলে আসা মা-বোনদের মুখ।

সেই আকুল আবেগমাখা লক্ষ্নৌর স্টেশন ছেড়ে এসেছি আমরা ৪৭ বছর আগে। এর মধ্যে ভারত-বাংলাদেশের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে কত জল। আঘাত হেনেছে কত জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, খরা ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়। ৪৭ বছর পেরিয়ে এলেও মনে হয় এই সেদিনের কথা। আমরা আমাদের স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছি তিরিশ লাখ প্রাণের বিনিময়ে। একই সঙ্গে আমাদের মাতৃভূমিকে হানাদারমুক্ত করতে আত্মবির্সজন দিয়েছে সাড়ে এগার হাজার ভারতীয় সৈন্য। পরদেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য এই আত্মদান নিঃসন্দেহে বিরল এবং অনন্য গৌরবের। এই রক্তের রাখি বন্ধনের মধ্য দিয়ে সূচনা হয়েছে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে মৈত্রীর সেতুবন্ধ।

আমরা যখন বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের কথা বলব তখন অবশ্যই সাড়ে এগারো হাজার ভারতীয় জওয়ানের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করব, বিবেচনায় আনব। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমাদের অবশ্যই সাহসী হতে হবে, দৈন্য ঘুচাতে হবে। আমাদের কোনো একটি স্বাধীনতা দিবস বা বিজয় দিবসে আমরা কখনই মিত্র বাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ডের প্রধান লে. জে. আরোরাকে আমন্ত্রণ জানাতে পারিনি, কিংবা ভারতীয় যোদ্ধাদের স্মরণে এখন পর্যন্ত কোনো স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করতে পারিনি। এই দৈন্যতা বীরের জাতি হিসেবে আমাদের জন্য গ্লানিকর। ইতিহাসের তাগিদে এটা আমাদের করা দরকার।

আমরা শৌর্যবীর্যশালী বীরের জাতি। আমাদের সম্মানবোধ রয়েছে। স্বাধীনতার পর চট্টগ্রাম বন্দরকে মাইনমুক্ত করতে সোভিয়েত নৌবাহিনীর একটি দল আসে। এই দলের অন্যতম সদস্য রেটকিন মাইন অপসারণ করতে গিয়ে প্রাণ হারান। তার স্মরণে চট্টগ্রাম বন্দরে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়। রেটকিনের আত্মত্যাগের দিনে প্রতি বছর শত শত মানুষ গিয়ে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আসে। এটাই শোভন, এটাই আমাদের কর্তব্যবোধ। একই কারণে আমাদের স্বাধীনতার বেদিমূলে আত্মোৎসর্গকৃত সাড়ে এগারো হাজার ভারতীয় বীরের জন্য গড়ে তোলা উচিত ছিল এক বিশাল স্মৃতিসৌধ। আজ পর্যন্ত তা সম্ভব হয়নি।

তবে সুখের কথা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেয়ার পর আমরা ক্রমান্বয়ে আমাদের ইতিহাসের দায়বদ্ধতা থেকে ভারমুক্ত হচ্ছি। ইতোমধ্যে এশিয়ার লৌহমানবী ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীসহ অনেক ভারতীয় রাজনৈতিক নেতা, সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তা, শিক্ষাবিদ ও বুদ্ধিজীবীদের আমরা স্বাধীনতার পদকে ভূষিত করে কিছুটা হলেও পরিতৃপ্তি খুঁজে পেয়েছি।

একই সঙ্গে আজ ভারতকেও একটি ধ্রুব সত্য অনুধাবন করতে হবে। তারা আমাদের বিশাল প্রতিবেশী। কাজেই আমাদের মনস্তাত্ত্বিক বিষয়টিকে উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ তাদের থাকতে পারে না। সব দ্বিপক্ষীয় সমস্যা ছোট কিংবা বড় সবগুলোই আমাদের অনুকূলে সমাধান করার উদ্যোগ নিতে হবে ভারতকে। বাংলাদেশকে যদি তার সমস্যা সমাধানের জন্য অন্য কারো দ্বারস্থ হতে হয় সেটা ভারতের জন্যও হবে দুঃখ ও বেদনার, রাজনৈতিক পরাজয়ও।

অতএব এটা পরিষ্কার যে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের সেতুবন্ধ কেবল প্রচলিত রাষ্ট্রাচার, কূটনৈতিক কলাকৌশল ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সুনির্দিষ্ট পরিভাষার মাধ্যমে সম্ভব নয়। এই দুই বন্ধুপ্রতিম দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে অবশ্যই কিছু আবেগের স্থান থাকতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App