×

মুক্তচিন্তা

নিমতলী থেকে চকবাজার এভাবে আর কতকাল?

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৮:২৬ পিএম

পুরান ঢাকার চকবাজার। রাজধানী ঢাকার জনবহুল এলাকার অন্যতম ব্যস্ত ব্যবসাকেন্দ্র। সরু রাস্তা, অলিগলি, পুরান ঢাকা ঘিঞ্জি সব ভবন। নিচে কারখানা, দোকানপাট, গুদাম; উপরে অগণিত মানুষের বসবাস। দোকানে, গুদামে মালপত্রে ঠাসা। কেমিক্যাল, দাহ্য পদার্থে ভরপুর।

বেশির ভাগ ভবনের একদিকে মানুষের বসবাস, অন্যদিকে কেমিক্যালের গোডাউন। আবাসিক এলাকায় এ ধরনের রাসায়নিকের মজুদ পৃথিবীর আর কোথাও নেই- এ কথা নিশ্চিত করে বলা যায়। নিমতলীর ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ক্ষত না শুকাতেই ভয়াবহ অগ্নিকা-ের পুনরাবৃত্তি ঘটল সেই পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টায়।

আর অগ্নিকাণ্ডের নেপথ্যে সেই কেমিক্যাল গোডাউন, ঘিঞ্জি আবাসিক এলাকায় দাহ্য পদার্থের বিশাল মজুদ। ২০ ফেব্রুয়ারি রাত ১০টা। সারা ঢাকা শহর প্রস্তুত মহান ভাষা দিবস একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরের জন্য, ঠিক তখন ব্যস্ত চকবাজারে যানজটের মাঝে গ্যাস সিলিন্ডার ভর্তি একটি পিকআপ ভ্যানের সঙ্গে সিএনজি অটোরিকশার ধাক্কায় সিলিন্ডারগুলো বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়। চারদিকে প্রাইভেটকার, পিকআপ ভ্যান, মোটরসাইকেল, রিকশার ছোটাছুটির মাঝে আগুন ছড়িয়ে পড়তে থাকে। আগুন লাগে পার্শ্ববর্তী দোকানপাট, বসতবাড়িতে।

চকবাজারের অসংখ্য রাসায়নিক কারখানা ও গুদামের দাহ্য পদার্থে অগ্নিকা- দ্রুত ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। চকবাজারের কেমিক্যাল গুদামে রাখা বডি স্প্রে ও এয়ার ফ্রেশনারের বোতল একের পর এক বিস্ফোরিত হতে থাকলে পাশের ভবনগুলো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়ে যায়। পুড়ে অঙ্গার হলো ৬৯টি তরতাজা প্রাণ।

নয় বছর আগে ২০১০ সালের ৩ জুন ঠিক একইভাবে পুরান ঢাকার নিমতলীতে কতিপয় লোভী ও অপরিণামদর্শী মানুষের অসচেনতার কারণে ১২৪ জন মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছিল। পুরান ঢাকার মতো ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় গড়ে ওঠা প্লাস্টিক ও পলিথিন কারখানা, রাসায়নিক গুদামে দাহ্য পদার্থ মজুদের পরিণতি যে কত ভয়ঙ্কর হতে পারে নিমতলী আর সাম্প্রতিক চকবাজার ট্র্যাজেডি এর জ্বলন্ত প্রমাণ।

২০১০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সময় বেঁধে সরকার ব্যবসায়ীদের সব রাসায়নিক দোকান ও গুদাম অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দিলেও এ ব্যাপারে তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। ২০১১ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঢাকা মহানগরের আবাসিক এলাকা থেকে ৮০০টি রাসায়নিক কারখানা ও গুদাম কামরাঙ্গীর চর ও কেরানীগঞ্জে সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

এ ব্যাপারে একটি টেকনিক্যাল কমিটিও গঠন করা হয়। ২০১৪ সালের মধ্যে কেরানীগঞ্জে ২০ একর জমির ওপর রাসায়নিক পল্লী স্থাপনের সিদ্ধান্ত হলেও তা বাস্তব রূপ নেয়নি। এ পল্লীতে ১৭টি ভবনে ১০৭৯টি শিল্প প্রতিষ্ঠান ঝুঁকিমুক্তভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনার কথা ছিল।

পুরান ঢাকার সব রাসায়নিক কারখানা, গুদাম ও দোকান উচ্ছেদ এবং সব প্রকার রাসায়নিক দ্রব্য উৎপাদন, বিপণন, গুদামজাতকরণ ও সরবরাহের ক্ষেত্রে সরকারের নীতিমালা প্রণয়ন, বাস্তবায়ন, রাসায়নিক দ্রব্যের জন্য শহরতলিতে পৃথক শিল্পনগরী প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা নেয়া হয়। রাসায়নিক কারখানা ও গুদাম নিরাপদ স্থানে সরিয়ে না নেয়া পর্যন্ত শ্রেণিবিন্যাস অনুযায়ী লাল, হলুদ বিপদ সংকেতযুক্ত সাইনবোর্ড প্রদর্শন বাধ্যতামূলক করাসহ হোল্ডিংয়ে লোকজন বসবাস নিষিদ্ধ ঘোষণার সিদ্ধান্ত হলেও বাস্তবায়ন হয়নি।

বর্তমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সাফল্যকে অগ্নিনির্বাপণের কাজে লাগানোর উদ্দেশ্যে আধুনিক অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রপাতি দিয়ে দক্ষ জনবল কাঠামো গড়ে তোলার লক্ষ্যে দমকল বাহিনীকে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ প্রদান করার ব্যবস্থা নেয়াও জরুরি। পুরান ঢাকার ঘনবসতিপূর্ণ প্রতিটি পাড়া, মহল্লায় স্থানীয়ভাবে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে জনগণের মাঝে ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টি করা অত্যাবশ্যক।

পশ্চিম মালিবাগ, ঢাকা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App