×

মুক্তচিন্তা

শহীদ মিনারের জন্য আর কত অপেক্ষা?

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৮:৩৯ পিএম

মিনার শুধু ভাষা সংগ্রামের স্মারকই নয়; সব অন্যায়, অত্যাচার, অবিচার, শোষণ, দুঃশাসন অবসানের জন্য সংগ্রামের প্রতীক। দেশের আগাম প্রজন্মের মধ্যে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধের সঙ্গে সঙ্গে দেশাত্মবোধ, ইতিহাস-ঐতিহ্য চেতনা জাগ্রত করার প্রয়োজনে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার থাকা বাঞ্ছনীয়।

দেশে সরকারিভাবে প্রত্যেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করার নির্দেশনা রয়েছে। আর এ দিবস পালন মানেই শহীদদের স্মরণে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা। অথচ দুঃখজনক হলো, রাষ্ট্রভাষা বাংলা প্রতিষ্ঠার ৬৭ বছর পেরিয়ে এসেও এখনো আমাদের দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় শহীদদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি।

গতকাল সহযোগী একটি দৈনিকের খবরে বলা হয়েছে, নীলফামারীর সৈয়দপুরে প্রাথমিক, মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ-মাদ্রাসা কিন্ডারগার্টেন মিলে ২৩৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাত্র ১৮টিতে শহীদ মিনার রয়েছে। তবে কোনো মাদ্রাসায় শহীদ মিনার নেই। বাগেরহাট চিতলমারীতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং কলেজসহ মোট দেড় শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই শহীদ মিনার নেই।

সাতক্ষীরার তালায় ৭০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৩৫টি মাদ্রাসা, ১৩টি মহাবিদ্যালয় ও ২১১টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে নন-এমপিও ১২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, ২৮টি মাদ্রাসা ও ১৮১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোনো শহীদ মিনার নেই। চাঁপাইনবাবগঞ্জ শিবগঞ্জ উপজেলায় প্রায় ৪শ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন ধরনের সহ¯্রাধিক প্রতিষ্ঠান থাকলেও শহীদ মিনার রয়েছে মাত্র গুটি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে।

পিরোজপুর মঠবাড়িয়ায় ২০৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আজো গড়ে ওঠেনি ভাষার শহীদ মিনার। খোঁজ নিলে জানা যাবে, দেশের তৃণমূল পর্যায়ের অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবস্থা একই। দেশের অন্যান্য এলাকা নিয়েও একই চিত্র পাওয়া গেছে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের রিপোর্ট থেকে।

বায়ান্নর ভাষা শহীদ স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ শহীদ মিনার আজ জাতি, ধর্ম, বর্ণ, দল, মত, শ্রেণি, পেশা নির্বিশেষে সব মানুষের মিলনমেলা ও মিলনতীর্থ হিসেবে পরিণত হয়েছে। সব আন্দোলন-সংগ্রামের সূতিকাগার উঠছে এই শহীদ মিনার। আজকের শিশু আগামী দিনের ধারক, বাহক; তারাই ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। তাদের হাতে থাকবে সমাজ উন্নয়ন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রযন্ত্র পরিচালনার দায়িত্ব।

তাদের মধ্যে মাতৃভাষার প্রতি সম্মান-ভালোবাসা জন্ম দেয়া, ভাষা-সংস্কৃতির জন্য আত্মোৎসর্গ করা, শহীদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ জাগ্রত করা, তাদের দেশাত্মবোধে উদ্বুদ্ধ করার ক্ষেত্রে শহীদ মিনার একটা বড় ভূমিকা রাখতে পারে। সেই জন্যই প্রত্যেক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার থাকা জরুরি।

এটাও লক্ষণীয় যে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যে শহীদ মিনারগুলো রয়েছে, সেগুলো ২১ ফেব্রুয়ারিসহ বিশেষ কয়েকটি দিন ছাড়া সারা বছর থাকে অবহেলা ও দৈন্যদশায়। আমরা মনে করি, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ভাষা দিবসের গুরুত্ব ও যথার্থতা জানাতে দেশের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার স্থাপনের পাশাপাশি স্থাপিত শহীদ মিনারগুলো সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া জরুরি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App