×

মুক্তচিন্তা

প্রধানমন্ত্রীর চাওয়া দুদক প্রধানের পাওয়া এবং দুই ঘটনা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৯:১৭ পিএম

‘দেশকে এমনভাবে গড়ে তুলব, যেন সমগ্র বিশ্ব অবাক হয়ে এ দেশের দিকে তাকিয়ে থাকে। কোনো নামও চাই না, ধন সম্পদও চাই না, কিচ্ছু চাই না।’ প্রধানমন্ত্রীর এই কথার পর ভাষার মাস শেষে স্বাধীনতার মাস সামনে রেখে প্রশ্ন জাগে, চকবাজারে বিস্ফোরণ ও ঢাকা বিমানবন্দরের ঘটনার পর ‘প্রভাবশালীদের’ নয়ছয়, ফাঁকফোকর, গাফিলতি, গণবিরোধী অশুভ-অবৈধ কাজ থেকে কি জাতি এই সরকারের ৫ বছরের অভিযাত্রায় আদৌ মুক্তি পাবে? যদি না পায় তবে আরো আরো অভাবিত, অপ্রত্যাশিত, অনভিপ্রেত, দুর্ভাগ্যজনক মর্মান্তিক ঘটনার জন্য দেশবাসীকে প্রস্তুত থাকতে হবে।

‘চারদিন পর বাংলাদেশ আবার আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে’- এই শিরোনামের সংবাদ পড়ে যে কোনো পাঠকেরই বুঝতে অসুবিধা হবে না, কোন দুই সংবাদের কথা বলা হচ্ছে। একটি চরম শোকাবহ ও মর্মান্তিক, অনেকটাই একইভাবে একই স্থানে জীবন্ত মানুষ দগ্ধ হওয়ার পুনরাবৃত্তি।

অন্যটি যারপরনাই শঙ্কা ও ভয়ের, ভিন্নস্থানে ভিন্নভাবে বিমান ছিনতাই করে মানুষকে জিম্মি করার পুনরাবৃত্তি। ২০১০ সালে পুরান ঢাকার ঘিঞ্জি ও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা নিমতলীতে রাসায়নিক দ্রব্যের গুদাম থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়ার কারণে ১২৪ জনের দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যু হয়েছিল। প্রায় নয় বছর পর প্রায় ২ কিলোমিটার দূরে ৬৯ জনের জীবন প্রদীপ নিভে গেল।

তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী রাসায়নিক দ্রব্যের গুদাম সরিয়ে নেয়ার কথা থাকলেও অনুমান করতে কষ্ট হয় না, ২০১০ সালে রাসায়নিক গুদাম যতগুলো ও যত পরিমাণ দ্রব্য ছিল, তার চাইতেও বেশি সংখ্যা ও পরিমাণে বিস্ফোরক বেড়েছে পুরান ঢাকায়। বলাই বাহুল্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের চোখের সামনেই তা বেড়ে উঠেছে।

একইভাবে ৪২ বছর আগে ১৯৭৭ সালে তখনকার পরিস্থিতি অনুযায়ী বিমানবন্দরে যে ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল, এখনকার জঙ্গি ইস্যু থাকার কারণে পরিস্থিতির তুলনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা তারচাইতে যে দুর্বল হয়েছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনায় আরো একটি মিল কতটুকু কি আছে, তার হিসাব তেমনভাবে না মিলিয়েও বলছি, ওই ঘটনার দুদিন পর প্রেসিডেন্ট জিয়া ঢাকা এয়ারপোর্ট হয়ে চট্টগ্রাম গিয়েছিলেন আর এবারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে দিন চট্টগ্রাম বিমানবন্দর হয়ে ঢাকা এসেছেন, সেই দিনই ছিনতাইয়ের ঘটনা সংঘটিত হলো।

ইতোপূর্বে ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়ার ঘটনায় যন্ত্রপাতি সম্পর্কে অবহেলার কারণে ২০১৮ সালে এপ্রিল মাসে ৩ জনের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন দাখিলের অনুমতি দেয় আদালত। ১৮ জুন ওই তিনজনেরও জামিন হয়ে যায়। এখন ওই মামলার অবস্থা কি জানি না।

পূর্বাপর এসব ঘটনা স্মরণে এনে অন্য সব চিন্তা বাদ দিয়ে কেন যেন মনে হচ্ছে, দেশের মানুষের যেমন তেমনি প্রধানমন্ত্রীরও জীবনের নিরাপত্তা নেই।

প্রশ্ন হলো, সাধারণ মানুষের জীবনের নিরাপত্তা যদি না থাকে, তবে প্রধানমন্ত্রীর জীবনের নিরাপত্তা থাকবে কি! আর এর উল্টো প্রধানমন্ত্রীর জীবনের নিরাপত্তা না থাকলে সাধারণ মানুষের জীবনের নিরাপত্তা থাকার তো প্রশ্নই ওঠে না! প্রকৃত বিচারে যে কোনো রাষ্ট্রে নিরাপত্তার বিষয়টা হলো সামগ্রিক।

সাধারণ মানুষের জীবনের দাম না থাকলে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ব্যক্তিরও নিরাপত্তা শিথিল হয়ে যায়। ২৪ ফেব্রুয়ারি পত্রপত্রিকার খবরে জানা গিয়েছিল যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চট্টগ্রাম সফর উপলক্ষে নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা হয়েছে পুরো চট্টগ্রাম শহর।

আগ্রহোদ্দীপক ব্যাপার হলো, চট্টগ্রাম শহর নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা থাকলেও ঢাকা শহর এবং এমনকি বিমানবন্দর আসলে নিরাপত্তা চাদরে ঢাকা তো দূরের কথা, সাধারণ নিরাপত্তা ব্যবস্থাও ছিল না। যদি থাকত তবে চিহ্নিত আসামি মাহাদী আসলই হোক আর নকলই হোক পিস্তল নিয়ে বিমানে উঠতে পারত না।

প্রসঙ্গত, বিগত নির্বাচনের আগে ভারতীয় গণমাধ্যম ইকোনমিক টাইমসের খবর থেকে জানা যায় যে, আইএসআইর সাবেক কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট জেনারেল নাভিদ মোক্তারের নেতৃত্বে কিছু এজেন্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিল। বাংলাদেশের নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের কিছু সদস্য নাকি ওই পরিকল্পনায় যুক্ত ছিল।

সরকার তাদের বন্ধু সহযোগীদের নিয়ে নাকি ওই হত্যা পরিকল্পনা বানচাল করে দেয়। এই সম্পর্কে অবশ্য পরে আর কিছু জানা যায়নি। অতীতে বারবার বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যার বড় বড় প্রচেষ্টা নেয়া হয়েছে।

এই অবস্থায় দেখা যাচ্ছে, নিরাপত্তার চাদর বিষয়ে এত ঢাকঢোল পেটানোর পরও প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা ব্যবস্থায় যেমন খোদ রাজধানীতেই ফাঁকফোকর থেকে যাচ্ছে, তেমনি তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী রাজধানী থেকে রাসায়নিক বিস্ফোরক দ্রব্য সরানোর ক্ষেত্রেও গাফিলতি চরমে উঠেছে।

সর্বনিম্ন থেকে সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত যখন নিরাপত্তা ব্যবস্থার ফাঁকফোকর, অবহেলা ও গাফিলতি নিয়ে সংশ্লিষ্ট সবার জবাবদিহিতা জনগণ চাইছিল, তখন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দুই মন্ত্রীর কথায় বিচলিত কিংবা হতবাক হতেই হয়।

চুরিহাট্টার হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটার পর পরই বিস্ফোরণের উৎস নিয়ে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ হুমায়ূন বলেছেন, ‘অগ্নিকাণ্ডের জন্য কেমিক্যাল দায়ী নয়। রাসায়নিক থেকে আগুন, এটা ভুল তথ্য। গ্যাসের স্বল্পতার জন্য রেস্তোরাঁয় গ্যাস সিলিন্ডার আনা হয়েছিল বেশকিছু। সেখান থেকেই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। সেখানে পারফিউম কসমেটিকসের গোডাউন আছে। তাতে রাসায়নিকের কোনো ব্যাপার নেই।’

শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্রাথমিক তদন্তও একই কথার প্রতিধ্বনি করে। ঘটনাস্থলে জড়ো হওয়া বাড়ির মালিকদের একাংশ ও ব্যবসায়ীদের কথায়ও একই ধরনের সুর ছিল। উল্টোদিকে আগুনের উৎস সম্পর্কে জানতে সাতদিন সময় লাগবে কথাটি বলার সঙ্গে সঙ্গে ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ বলে, সুগন্ধিগুলো তো অতি দাহ্য রাসায়নিক। ঘটনার পর পরই শিল্প মন্ত্রণালয় ১২ সদস্যের, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ৫ সদস্যের ও ফায়ার সার্ভিস ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

এদিকে ঢাকা বিমানবন্দরের নিরাপত্তার ফাঁকফোকর বিষয়টি সুস্পষ্ট হলেও বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টার পর বিমানবন্দর পরিদর্শন শেষে বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, সচিব মহীবুল হক ও সিভিল অ্যাভিয়েশনের চেয়ারম্যান এস নঈম হাসান সেখানেই প্রেস ব্রিফিং করেন।

‘নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ত্রুটি পান নাই’ মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, ‘এখানে এমন কোনো লিকেজ ছিল না বা নেই যে একজন যাত্রী এভাবে বিমানে উঠতে পারেন।’ সচিব বলেন, ‘সেটা অস্ত্র কিনা আমরা ওয়াকিবহাল না। খেলনা পিস্তল কিনা- যে কোনো কিছু হতে পারে।’ চেয়ারম্যান ‘সো কলড হাইজ্যাকার’ বলে মন্তব্য করেন।

এমন সব ধরনের হৃদয়বিদারক বা অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটলে প্রশ্নটা প্রতিবারই ওঠে এবং এবারো উঠেছে, মন্ত্রী বা কর্তাব্যক্তিরা কেন তদন্তের আগে দায় এড়ানো বা বিষয়টাকে তুচ্ছ করে দেয়ার জন্য উপরোক্ত ধরনের কথা বলেন? আর তদন্তের পর রিপোর্টের ফলাফল বাস্তবায়ন হয় না কেন কিংবা রিপোর্টইবা আলোর মুখ দেখে না কেন? মানুষের সমালোচনার মুখ বা ক্ষোভ কমানোর উপায় যেন ওই তদন্ত কমিটি।

বলাই বাহুল্য সিস্টেমের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত রয়েছে ঘুষ-দুর্নীতির ভূত। ছোট একটা অভিজ্ঞতার কথা বলি, মাস দেড়েক আগে একজনকে রিসিভ করতে গিয়েছিলাম এয়ারপোর্টে। সেখানে প্রবেশ করতে টিকেট কাটতে হয়। প্রবেশ করার প্রয়োজন ছিল না।

একজন কাছে এসে নামমাত্র টাকায় প্রবেশের বিষয়ে যা বললেন, তাতে আমার আক্কেল গুড়–ম! কেউ কেউ ঢুকছে! মনে মনে ভেবেছি, এ তো বেহুলা-লক্ষ্মীন্দরের লোহার বাসর ঘরের অদৃশ্য ছিদ্র নয়, প্রকাশ্য ফাটল! আর পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিক বিস্ফোরক দ্রব্যের গুদাম বা কারখানা সরানোর প্রতিবন্ধকতার কাজে যে বাম হাতের নয়-ছয় কাজ কারবার হয়েছে, তা তো দেশবাসী কারো না বুঝার কথা নয়।

প্রসঙ্গক্রমে স্বাভাবিকভাবেই নিমতলী ঘটনার সময়কার শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়–য়ার কথা আসে। কেননা এবাবের ঘটনার পর তিনি কার্যত পরবর্তী শিল্পমন্ত্রী আমীর হোসেন আমুর ওপর দায় চাপিয়েছেন। নিমতলীর ঘটনার পর অন্তত আড়াই বছর তিনি মন্ত্রী ছিলেন। তাই তিনিও দায় অস্বীকার করতে পারেন না। কিন্তু দায় নেয়াটাই তো সমস্যা!

এদিকে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম চুড়িহাট্টা অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পরিসংখ্যান ব্যুরো, সিটি করপোরেশন, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ প্রশাসনকে দায়ী করেন। কথাটা শুনতে খারাপ শোনালেও বলতেই হয়, আমি-আপনিসহ এলাকার মানুষও কি এজন্য দায়ী নয়? অন্যায়-অবৈধ-অনায্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী জাতি আমরা! কিন্তু কেন যেন প্রতিবাদ নামে অস্ত্রটাই আমরা জাতি হিসেবে হারিয়ে ফেলছি! কেন? এই প্রশ্নের মুখোমুখি আজ আমাদের হতেই হবে।

মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের জাতীয় মূলধারার প্রধান রাজনৈতিক দলেরই কর্তব্য এই প্রতিবাদী মানসিকতাকে সামনে নিয়ে আসা। কিন্তু করা হচ্ছে কি! উল্লিখিত সবাইকে দায়ী করে এইচ টি ইমাম ‘প্রভাবশালী কারা’ প্রশ্নটি তুলে বলেছেন, ‘তাদের তো খুঁজে বের করা উচিত ছিল।’

আগের প্রভাবশালীদের এখন খুঁজে পাওয়া যাবে কিনা কে জানে, তবে এখন থেকে এমন ‘প্রভাবশালী’, যারা সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের বিরুদ্ধে নানা অবৈধ উপায়ে কাজ করে তাদের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি নিয়ে খুঁজলে থলের বিড়াল বের হয়ে আসবে বলেই ধারণা করি।

করা হবে কি তা? উল্লেখ্য, এবারে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে দক্ষ, সেবামুখী ও জবাবদিহিমূলক প্রশাসনের লক্ষ্য ও পরিকল্পনায় যে চারটি পয়েন্টস অঙ্গীকার করা হয়েছে, তা অনুসরণ করলে ‘প্রভাবশালী’ খুঁজে পেতে কারোই অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।

বিষয়গুলো হলো- এক. আধুনিক, প্রযুক্তিনির্ভর, দক্ষ, দুর্নীতিমুক্ত, গণমুখী প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা; দুই. প্রশাসনের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, ন্যায়পরায়ণতা, সেবাপরায়ণতা নিশ্চিত করা; তিন. সিদ্ধান্তগ্রহণ ও বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা, দুর্নীতি, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, সর্বপ্রকার হয়রানির অবসান করা; চার. নিয়মানুবর্তী এবং জনগণের সেবক হিসেবে প্রশাসনকে গড়ে তোলা।

ইতোমধ্যে নতুন সরকারের দুই মাস হয়ে গেল, হানিমুন পিরিয়ড এখনো কাটেনি। কথায় বলে এই সময়ে কঠিন ও জটিল কাজও সহজ-সরল হয়ে যায়। এই অবস্থায় দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, ‘পদ্ধতিগত কারণেই দেশে ঘুষ খাওয়া সবচেয়ে সহজ কাজ।’ তিনি আরো বলেন, ‘ঘুষখোরদের আইনের আওতায় এনে লজ্জা পাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

 যেসব কর্মকর্তা ঘুষ খান কিংবা দুর্নীতি করেন, তারা যেমন অসৎ, আবার যারা দায়িত্ব পালন করেন না কিংবা করতে পারেন না, তারাও অসৎ।’ দুদক প্রধানের কথা থেকে বোঝা যাচ্ছে, সর্ষেতেই রয়েছে ভূত। প্রশ্ন হলো দুদক প্রধান কি জানেন তার প্রতিষ্ঠানে ভূতগুলো কে বা কারা? দেয়ালে কান পেতে আয়নায় মুখ দেখলে সবই কিন্তু সুস্পষ্ট হয়ে যাবে।

প্রশ্ন হলো বিরল ব্যতিক্রম বাদে বিষয়টা কি এমন সব প্রবাদ যে, সর্ব অঙ্গে ব্যথা ওষুধ দিব কোথা কিংবা লোম বাছতে কম্বল উজাড়! দুদক প্রধানের কথার সূত্র ধরে বলি, দুর্নীতি দমন কমিশনের চাইতে শক্তিশালী সংস্থা দেশে আর বোধকরি নেই। তাই ওই সংস্থা দিয়েই শুরু হোক না ‘প্রভাবশালী’ খোঁজা কিংবা ‘জিরো টলারেন্স’ ব্যাপারটা।

দুদক চেয়ারম্যান যে দিন উল্লিখিত মূল্যবান কথাগুলো বলেছেন, সেই দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামে পতেঙ্গায় কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নির্মাণের খননকাজ ও লালখান বাজার-বিমানবন্দর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণকাজ উদ্বোধন করতে গিয়ে বলেছেন, ‘দেশকে এমনভাবে গড়ে তুলব, যেন সমগ্র বিশ্ব অবাক হয়ে এ দেশের দিকে তাকিয়ে থাকে। কোনো নামও চাই না, ধন সম্পদও চাই না, কিচ্ছু চাই না।’

প্রধানমন্ত্রীর এই কথার পর ভাষার মাস শেষে স্বাধীনতার মাস সামনে রেখে প্রশ্ন জাগে, চকবাজারে বিস্ফোরণ ও ঢাকা বিমানবন্দরের ঘটনার পর ‘প্রভাবশালীদের’ নয়ছয়, ফাঁকফোকর, গাফিলতি, গণবিরোধী অশুভ-অবৈধ কাজ থেকে কি জাতি এই সরকারের ৫ বছরের অভিযাত্রায় আদৌ মুক্তি পাবে? যদি না পায় তবে আরো আরো অভাবিত, অপ্রত্যাশিত, অনভিপ্রেত, দুর্ভাগ্যজনক মর্মান্তিক ঘটনার জন্য দেশবাসীকে প্রস্তুত থাকতে হবে।

শেখর দত্ত : রাজনীতিক ও কলাম লেখক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App